Alapon

জমিয়তে তালাবা আমাদের জন্য নিয়ামতস্বরূপ



১৯৪১ সালে ২৬ আগস্ট উপমহাদেশে জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহর জাগরণী সংগঠন জামায়াতে ইসলামীর জন্ম হয় পৃথিবী বিখ্যাত ইসলামিক স্কলার ও সংগঠক মাওলানা সাইয়েদ আবুল আ'লা মওদূদী রহ.-এর হাত ধরে।

অল্প সময়ের মধ্যেই মুসলিমদের মধ্যে সাড়া পড়ে যায়। বহু জিন্দাদিল মুসলিম এমন একটি সংগঠন ও নেতার জন্য অপেক্ষা করছিল। তারা তাদের প্রাণের কাফেলায় যোগদান করে। তখন ছাত্র ও বয়স্করা একইসাথে কাজ করতো।

কিছুদিন পর দেখা গেল ছাত্র ও যুবকদের গতির সাথে বয়স্করা পেরে উঠছেন না। তাই ছাত্র ও তরুণদের গতি অটুট রাখার জন্য জামায়তে ইসলামীর মজলিশে শুরা ১৯৪৭ সালে ছাত্র ও তরুণদের জন্য একই আদর্শের পৃথক সংগঠন অনুমোদন করে।

নতুন সংগঠনের নাম রাখা হয় ইসলামী জমিয়তে তালাবা (ইসলামী ছাত্রসংঘ)। সেসময় উপমহাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে জোরালেভাবে কমিউনিস্ট আন্দোলনের তৎপরতা বেড়ে গিয়েছিলো। মাওলানা মওদূদী আগামী প্রজন্মকে নাস্তিক্যবাদী চিন্তার হামলা থেকে মুসলিমদের চেতনা রক্ষা করার জন্যও এই তরুণ সংগঠনকে বিশেষভাবে দায়িত্ব দেন।

১৯৪৭ সালের ২৩ ডিসেম্বর লাহোরে এই সংগঠনের যাত্রা শুরু হয়। আজ ২৩ ডিসেম্বর। ইসলামী জমিয়তে তালাবার ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। আল্লাহ তায়ালা এই সংগঠনকে কবুল করুন।

ইসলামী জমিয়তে তালাবার ১ম কেন্দ্রীয় সভাপতি ছিলেন জাফরুল্লাহ খান। আমাদের শহিদ মতিউর রহমান নিজামী ছিলেন ইসলামী জমিয়তে তালাবার ১৩তম কেন্দ্রীয় সভাপতি।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর সোভিয়েত ইউনিয়ন খুব শক্তিশালী ছিল। ট্রেন্ডি আদর্শ হিসেবে সবাই কম্যুউনিজম গ্রহণ করেছে বিশেষ করে এই উপমহাদেশের মানুষরা। আফগানিস্তানের মুসলিমরা দলে দলে সবাই কমিউনিস্ট হয়ে সেখানে কমিউনিজমের বিপ্লব করেছে।

৪৭ এ পাকিস্তান গঠনের পর এই আদর্শ সেখানে নিষিদ্ধ হলেও গোপনে এই আদর্শের প্রচার চলতে থাকে। এই আদর্শ যুবক ও ছাত্র সমাজের কাছে বেশ প্রিয় হয়। আওয়ামীলীগ ও মুসলিম লীগে এই আদর্শের ব্যাপক মানুষ ঘাপটি মেরে ছিলো। বিশেষ করে উচ্চশিক্ষার প্রতিষ্ঠানগুলো তে এদের প্রভাব ছিল ব্যাপক। ইসলামী জমিয়তে তালাবার প্রধান কাজ ছিল ইসলামের সুমহান আদর্শ সঠিকভাবে তরুণদের সামনে উপস্থাপন করা।

সবচেয়ে মজার বিষয় হলো কিছু বিখ্যাত ইসলামপন্থী সেই কমিউনিজমকে ইসলামীকরণের হাস্যকর চেষ্টা করেছিলো। বস্তুত তারা বিদ্বান হিসেবে সমাজে পরিচিত ছিল। এরা বিভিন্ন পত্রিকায় আর্টিকেল ও বই লিখে ইসলামপন্থীদের বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করে গিয়েছে।

অতঃপর নিজেরাই একটি দল গঠন করেছিলো খেলাফতে রব্বানী নামে। তাদের এই দল উচ্চশিক্ষিত সমাজে বেশ সাড়া ফেলেছিলো। এই দলের প্রধান পৃষ্ঠপোষক ছিলেন ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ। এই প্রসঙ্গে শহীদ মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী বলেন, খেলাফতে রব্বানীর এক নেতা তাঁকে বলেছিলেন, আমরা বুঝি না আমরা এত ছাত্রকর্মী তৈরী করি কিন্তু তারা সবাই একটু বুঝজ্ঞান হলেই কমিউনিস্ট হয়ে যাচ্ছে।

তখন শহীদ নিজামী বলেন, আপনারা ইসলামের ভিতরে কমিউনিজমের কথা বলছেন কিন্তু তারা যখন ইসলামে কমিউনিজম খুঁজে পায় না তখন তারা সত্যিকারের কমিউনিস্ট হয়ে যায়। এই দলেরই কালচারাল উইং ছিল তমুদ্দুনে মজলিশ। যাদের বাড়াবাড়িতে এক ভয়ংকর জাতীয়তাবাদের জন্ম হয়েছে। সেই থেকে বাড়তে বাড়তে এক সেক্যুলার রাষ্ট্রের সৃষ্টি।

জমিয়তে তালাবাকে এসবের বিরুদ্ধেও লড়তে হয়। ইসলাম সেকেলে নয়, বরং সবসময় এটি আধুনিক এটা প্রতিষ্ঠা ছিল জমিয়তের অন্যতম কাজ। আলাহামদুলিল্লাহ! জমিয়ত সে কাজ যথাযথভাবে আঞ্জাম দিতে সক্ষম হয়েছে। মুসলিমদের দেশগুলোর মধ্যে কমিউনিজমকে অন্তসারশূন্য করে দেওয়ার কাজ তারা করতে পেরেছে। কমিউনিজমের ফাঁকা বুলি ও প্রতারণা তারা জাতির সামনে তুলে ধরতে পেরেছে যথাযথভাবে।

জমিয়তে তালাবার আরেকটি বড় অর্জন ছিল মুসলিমদের মধ্যে উম্মাহ চেতনা জাগ্রত করা। ১ম বিশ্বযুদ্ধের আগে থেকেই ইউরোপিয়ানরা মুসলিমদের মধ্যে জাতীয়তার বিষ ঢুকিয়ে দেয়। ফলে মুসলিমরা তাদের উম্মাহ চেতনা ভুলে খন্ড খন্ড হয়ে যায়। জমিয়তে তালাবা সেই চেতনা পুনরুদ্ধারের কাজ করে যাচ্ছে।

এই উপমহাদেশ তথা এশিয়ার জন্য মাওলানা মওদূদী, জামায়াত ও জমিয়তে তালাবা আল্লাহর নিয়ামত। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তানে জমিয়ত প্রতিষ্ঠার পর এখন এশিয়ার সবক'টি দেশে একই মতাদর্শের সংগঠন প্রতিষ্ঠা হয়েছে। ইসলামী পুনর্জাগরণে জমিয়তে তালাবার খিদমাত অতুলনীয়।

পঠিত : ৬২৮ বার

মন্তব্য: ০