স্রোতের বিপরীতে...!
তারিখঃ ২৭ ডিসেম্বর, ২০২১, ১১:৫১
স্রোতের বিপরীতে চলতে গেলে পিছুটান থাকা স্বাভাবিক।তবে সবসময় আপনার পুরোনো অভ্যাস পিছুটানের কারণ হয়না কেননা পুরোনো 'বদভ্যাস' মনের প্রচন্ড শক্তিতে খুব সহজেই ছেড়ে দেওয়া যায়। এমনকি এরকম অবস্থায় আল্লাহর তরফ থেকে আপনার জন্য বিশেষ সাহায্যও থাকবে কেননা আল্লাহর দিকে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে আল্লাহও তাঁর বান্দার দিকে এগিয়ে যান।
কিন্তু সমস্যাটা হচ্ছে আশেপাশের প্রভাব যাকে বলা যায় "আবেশী প্রভাব", অনেকটা এরকম-সবাইই তো করে,আমিও না হয় করলাম অর্থাৎ এটা তো একটা সামাজিক প্রথা,আমি করলেই বা কি ক্ষতি। এবং একই আগুনে কাঠখড় যোগাবে আপনার নিকটাত্মীয়, বন্ধু-বান্ধব,যারা সেসবে আসক্ত। আপনার মানসিক শক্তি সত্ত্বেও আপনাকে তখন প্রতিনিয়ত এই "আবেশী প্রভাব" এর সাথে লড়াই করতে হয় এবং লড়াইটাও বেশ হাড্ডাহাড্ডি কেননা, আপনি একা তো আর চলতে পারবেন না, সমাজের মানুষের সাথে আপনার মিথষ্ক্রিয়া আবশ্যম্ভাবী।
এরকম পরিস্থিতিতে আপনার মানসিক শক্তির লেভেল বাড়ানোর বিকল্প নেই, কেননা আপনি তো বদভ্যাস ছাড়তে চান,অ-ইসলামিক কর্মকাণ্ড পরিহার করতে চান, আপনার তো মূল লক্ষ্য কবরের ওপারে-তাই নয় কি?
যদি তাইই হয়ে থাকে তবে শুনুন নবীজী ﷺ এর কঠিনতম একটি হাদীস, যেখানে নবীজী ﷺ কিয়ামতের দিনের একটি দৃশ্যপট তুলে ধরেছেন এভাবে,
ক্বিয়ামাতের দিন সর্বপ্রথম আদাম আঃ কে ডাকা হবে। তিনি তাঁর সন্তানদের দেখতে পাবেন। তখন তাদেরকে বলা হবে, ইনি তোমাদের পিতা আদাম আঃ।
তখন তারা আরবিতে বলবে-আমরা তোমার খিদমাতে হাযির!
এরপর তাঁকে আল্লাহ্ বলবেন, তোমার জাহান্নামী বংশধরকে বের কর।
তখন আদাম আঃ বলবেন, হে আমার প্রতিপালক! কী পরিমাণ বের করব?
আল্লাহ্ বলবেন, প্রতি একশ’ তে নিরানব্বই জনকে বের কর।
[সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৬৫২৯]
আল্লাহু আকবার!
বনী আদমের ১০০ জনে ৯৯ জন জাহান্নামী আর মাত্র ১ জন জান্নাতী।৯৯ বনাম ০১, ভাবুন তো কতো বড় একটা সংখ্যার পাশে কতো ছোটো একটা সংখ্যা!
এখন চিন্তা করুন, আপনার আমার আশেপাশের অসংখ্য লোক গান শোনে, হাজার হাজার যুবক-যুবতী প্রেম করে,যিনা করে, অসংখ্য অফিসার ঘুস খায়, অসংখ্য সরকারি কর্মকর্তা চুরি করে, অনেক বাবা-মা তাদের সন্তানদের বিয়ে দেয় অনৈসলামিক সংস্কৃতি ও বিপুল অপচয়ের মাধ্যমে। তাদের অনেকেই কিন্তু ইসলামের বিধিনিষেধ জানে কিন্তু তারা তা মানতে রাজি না।তারা স্রোতের বিপরীতে চলা শিখতে পারেনি।
এবার বলুন,স্রোতের সাথে চলা মানুষের সংখ্যা বেশি নাকি যারা আপনার মতো স্রোতের বিপরীতে চলতে চাচ্ছে তাদের সংখ্যা বেশি? এবং একই সাথে ৯৯ বড় নাকি ০১ বড়?
উভয় উত্তরই দেখুন আপনাকে সমর্থন দিচ্ছে, ইসলামের দিকে আপনার পথচলাকে সমর্থন করছে, সমাজের তথাকথিত "সংস্কৃতি" র অনুসারীদের সংখ্যা বেশি হলেও কুরআন ও সুন্নাহর অনুসারী হিসেবে আপনি আল্লাহর নিকট গ্রহণযোগ্যতা পাচ্ছেন।
কিয়ামতের এই কঠিন সময়টির ব্যাপারে আল্লাহ সুবহানাহু তাআলা বলেন,
"যেদিন তোমরা তা দেখবে সেদিন প্রত্যেক স্তন্য দানকারিনী আপন দুগ্ধপোষ্য শিশুকে ভুলে যাবে এবং প্রত্যেক গর্ভধারিণী তার গর্ভপাত করে ফেলবে, তুমি দেখবে মানুষকে মাতাল সদৃশ, অথচ তারা মাতাল নয়। তবে আল্লাহর আযাবই কঠিন।"
[সূরা হাজ্জ:আয়াত ০২]
এরকম কঠিন একটা সময় যখন সমাজ দূরের কথা আপনার প্রিয়জনও আপনার কাছে ঘেঁষতে চাইবে না,সবাই মনে মনে ভাববে- এই বুঝি আমার পালা এলো! তো সেই মুহূর্তে আপনার আমার সম্ভাবনার খাতা ভারী করতে হলে নিজের ভালো বুঝতে হবে, স্রোতের বিপরীতে চলা শিখতে হবে,না বলা শিখতে হবে।
- মাহিনুর রহমান
মন্তব্য: ০