Alapon

শাইখুল ইসলাম ইবনু আশুর ও জ্ঞানব্যবস্থার সংকট-১




.
শাইখুল ইসলাম মুহাম্মাদ ইবনু আশুর রাহিমাহুল্লাহ প্রাজ্ঞ আলিমের পাশাপাশি অত্যন্ত বিজ্ঞ ও দূরদৃষ্টিসম্পন্ন শিক্ষাবিদ ও সংস্কারক ছিলেন। তাঁর তাজদীদি প্রোগ্রামের এক উজ্জ্বল মেনিফেস্টো হলো 'আলাইসা সুবহু বিক্বরিব' বইটি। মাত্র ২৩ বছর বয়সে শুরু করে তিনি ৩১ বছর বয়সে যেয়ে শেষ করেন এই বইটির রচনাকার্য। বইটিতে তিনি তৎকালীন শিক্ষাব্যবস্থা ও জ্ঞানব্যবস্থার যথোপযুক্ত সংস্কারের রুপরেখা তুলে ধরতে যেয়ে ইসলামী জ্ঞানশাস্ত্রের বিভিন্ন বিষয় যে ভঙ্গিতে দেখা ও পড়া হয়ে আসছিলো সে বিষয়ে সংস্কারের আওয়াজ তুলে ধরেন। গত শতাব্দীর প্রথমাংশে লেখা হলেও এখনকার অবস্থার ক্ষেত্রেও তা প্রযোজ্য, যদিও বেশ কিছু উন্নতি হয়েছে, তবে এই মাত্রা আরও জোরদার হওয়া কাম্য। আগামী কয়েকদিন শাইখের সেই জ্ঞানব্যবস্থার সমালোচনা তুলে ধরার চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ, কারণ সমস্যা সমাধানের জন্য প্রয়োজন সমস্যা, এর মাত্রা ও গভীরতাকে বোঝা। তারপর যেয়েই সেই মোতাবেক সমাধানের দিকে অগ্রসর হওয়া সম্ভব।
.
ইসলামী উলূম বা শাস্ত্রসমূহের মধ্যে অন্যতম মর্যাদাবান ইলম হলো তাফসীরের ইলম। তাফসীর শাস্ত্র অত্যন্ত মর্যাদাবান কেননা এতে আল্লাহর কালামের ব্যাখ্যা করা হয়, আল্লাহর ইচ্ছা বা মুরাদকে বোঝা হয়। আর কুরআন মুসলিমদের নিকট কেবলমাত্র সংকীর্ণার্থে ধর্মগ্রন্থই নয়; তাদের সভ্যতা-সংস্কৃতি-আইনের মূল আকর বা উৎস। শাইখ তাফসীর শাস্ত্রের সমালোচনায় চারটি কারণ উল্লেখ করেন। তা হলোঃ
.
১. মাত্রাতিরিক্ত নকলপ্রিয়তা। অনেকের মাঝে তাফসীরের ক্ষেত্রে এক সংকীর্ণতা দেখা দেয়, তা হলোঃ তারা পূর্ববর্তীদের থেকে যা বর্ণিত আছে এর বাহিরে যাওয়াটাকে ভীষণভাবে অপছন্দ করে, এমনকি কেউ কেউ একে গুনাহও মনে করে। এর পেছনে সালাফদের শ্রেষ্ঠত্ব, রায় দিয়ে তাফসীর করার ক্ষেত্রে সতর্কবাণী ভূমিকা রেখেছে। তবে এ দৃষ্টিভঙ্গি ঠিক নয়। সালাফদের থেকে ইসলামের ফাহম, কাঠামোবুঝ ইত্যাদি নিতে হবে- এতে কোনো সন্দেহ নেই; এমনকি সকলক্ষেত্রেই পূর্ববর্তীদের থেকে উপকৃত হতে হবে, কিন্তু সকলক্ষেত্রেই তাদের অক্ষরে অক্ষরে অনুসরণ করতেই হবে, তা না হলে গুনাহ হবে- এমনটা ঠিক নয়। কারণ, কুরআনের সকল আয়াত একই লেভেলের নয়, তাই সকল ক্ষেত্রে সাহাবী বা সালাফদের বুঝ ও কওল চূড়ান্ত ও পরম নয়। আর রায়ের ব্যবহার ইসলামের জায়েজ, সালাফদের থেকে যে ভিন্নমত পাওয়া যায় সেটাও তাদের তাআম্মুল, তামহীছ ও এক্সামিনেশানেরই ফল; আর এগুলো তাদের বুঝ বা রায়ই। কিন্তু কুরআনের ব্যাখ্যা করার জন্য যোগ্য না হয়েই কেবল নিজের বুঝের আলোকে তাফসীর করার রায়কেই হাদীছে নিন্দনীয় বলা হয়েছে। মুজাররাদ রায়ের ক্ষেত্রে কথা নেই। আর এই নকলপ্রিয়তার কারণে কুরআনের এমন অনেক ক্ষেত্র রয়ে গিয়েছে যেখানে কাজ করা এখনও বাকী অথবা প্রারম্ভও হয়নি
.
২. কিছু কিছু মুফাসসিরের বালাগাতে দুর্বলতা।
.
৩. কুরআনের তাফসীরের ক্ষেত্রে যেসকল ইলমকে আপাত গুরুত্বহীন বা সম্পর্কহীন মনে করা হয় তবে কুরআনের অর্থোদ্ধারের জন্য যাদের গুরুত্ব অনেক, যেমনঃ ইতিহাস, সমাজদর্শন, ধর্মতত্ত্ব, রাজনীতি ইত্যাদি। অধিকাংশ ক্ষেত্রে কেবল বা মোটাদাগে ভাষার ওপর ভিত্তি করে তাফসীরের চলের কারণে কুরআনের সকল আয়াত থেকেই একই ভঙ্গিতে অর্থ বের করার প্র‍য়াস করা হয়; কিন্তু কুরআনের সব আয়াতকে কেবল ভাষাতাত্ত্বিক দৃষ্টিকোণ থেকে বুঝলেই চলে না, চলতেও পারে না। কুরআনের অনেক আয়াতই যুগ ও জ্ঞানের তাতাওউর বা বিবর্তনের কারণ ভিন্নভাবে বোঝার দাবী রাখে। কারণ কুরআনে বহু ইলম আছে যেগুলো অন্যান্য জ্ঞানের মাধ্যমে না বুঝে কেবলমাত্র ভাষাতাত্ত্বিকভাবে বুঝলে তা কুরআনের সামগ্রিক উদ্দেশ্যকে ভুলভাবে রিপ্রেজেন্ট করে। এটা কুরআনের ত্রুটি না, ত্রুটি মানুষের বুঝের। দোষ আসলে মানুষের বুঝেরও না, কারণ ওটা তো স্বাভাবিক, কিন্তু এই ত্রুটিকে যখন সঠিক ও চিরস্থায়ীভাবে সঠিক ভাবা হবে তখনই যেয়ে সমস্যার তৈরী হয়।
.
৪. অপ্রয়োজনীয় বিষয়াদির অবতারণা। ফখরুদ্দিন রাযীর মত আলিমগণ তাফসীরের ক্ষেত্রে মাঝে মাঝে বেশকিছু অপ্রাসঙ্গিক আলোচনা যার সাথে আয়াতের ফাহমের কোনো সম্পর্ক নেই সেগুলোকে নিয়ে আসেন। সেগুলো সেই সময়কার জন্যে যথেষ্ট গুরুত্ব রাখলেও আজকের যুগে খুব একটা প্রযোজ্য নয়৷

.
শাইখুল ইসলাম ইবনু আশুর ছিলেন গত শতাব্দীর অন্যতম প্রাজ্ঞ আলিমে দ্বীন। তাঁকে লোকজন তাঁর অনন্য ও সুবৃহৎ কুরআনের ব্যাখ্যা 'আত-তাহরীর ওয়াত তানউইর' এর জন্যই অধিক চেনে। তবে তাঁর এই তাফসীর থেকে শুরু করে অন্যান্য কাজ একটি বৃহৎ ও মহৎ উদ্দেশ্যকে সামনে রেখেই রচিত হয়েছে, তা হলো- মুসলিম উম্মাহর বিদ্যমান শিক্ষা ও জ্ঞানব্যবস্থার সংস্কার। তিনি ২৩ বছর থেকে ৩১ বছর পর্যন্ত একটি বই রচনা করেন 'আলাইসা সুবহু বি ক্বরিব' নামে, যেখানে তিনি তৎকালীন সময়ে মুসলিমদের জ্ঞানব্যবস্থা অনগ্রসরতা ও এর কারণ নিয়ে আলোচনা করেছেন। বিভিন্ন জ্ঞানশাস্ত্র ধরে ধরে তিনি দেখিয়েছেন নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে কি কি সমস্যা অনুপ্রবেশ করেছে। এর আগে একটি পর্বে তাফসীর শাস্ত্রের ক্ষেত্রে উনি কি কি সমস্যা দেখতে পেয়েছেন সেগুলো উল্লেখ করা হয়েছিলো (পোস্টটির লিংক কমেন্টে) আজকে আলোচনা হবে ইলমে ফিকহ নিয়ে।
.
ফিকহ অর্থ বুঝ। পারিভাষিকভাবে দলীল সহকারে শরীয়তের আহকামের বুঝকেই বলা হয় ফিকহ। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, সাহাবী, তাবিঈ ও তাবি-তাবিঈন থেকে আজ পর্যন্ত শরীয়তের আহকাম বিষয়ক সামষ্টিক আলোচনার শাস্ত্রকেই ইলমে ফিকহ বা ফিকহশাস্ত্র বলে আখ্যায়িত করা হয়ে থাকে। শরীয়ত ও ফিকহশাস্ত্র সকল দিক থেকে সমার্থক নয়। শরীয়ত আকীদাহ, আহকাম, আখলাকসহ দ্বীনের সামগ্রিক রুপকে বোঝায়; অন্যদিকে ফিকহের মনোযোগ অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আহকামের প্রতি আবদ্ধ থাকে। তাছাড়া শরীয়তের আছে নির্ভুল কায়িদাহ, উসূল ও মূলনীতি; আর ফিকহ সেই মূলনীতির মানবীয় বুঝভিত্তিক আহকাম নির্গত করার প্রচেষ্টা, তাই এখানে সঠিক, আধা-সঠিক, কিছু ভুল, পুরো ভুল সবই যুক্ত আছে। মানবীয় এই প্রচেষ্টারই কাঠামোবদ্ধ রুপ হলো ফিকহশাস্ত্র বা ইলমে ফিকহ। তাই ফিকহশাস্ত্র নিয়ে যৌক্তিক সমালোচনা করাকে কেউ যেন শরীয়তের সমালোচনা মনে না করে, মাআযাল্লাহ। ইমাম ইবনু আশুরের নিকট ফিকহশাস্ত্রের মর্ম ও স্পিরিটের দিক থেকে অনগ্রসরতার যে সকল কারণ ধরা পড়েছে সেগুলো নিম্নরুপঃ
.
১. ফিকহী মাযহাবগুলো নিয়ে তাআসসুব বা গোঁড়ামি। এটা উম্মাহর এক বড় সমস্যা। তবে ফিকহী মাযহাবগুলোর মাঝে পারস্পরিক গোঁড়ামির ইতিহাস প্রাচীন এবং এর উদাহরণ অনেক। হানাফীদেরকে যথার্থ কারণ ছাড়াই মুহাদ্দিছী ঘরানার আহলুর রায় বলাসহ অনেক উদাহরণ আছে। ইমাম আহমাদ তো এও বলেছেন, "আমরা আহলুর রায়দের আর আহলুর রায়রা আমাদের অভিশাপ দিত....." যেখানে আহলুর রায়দের আগেকার লোকেরা আমরা আহলে হাদীছদের মত ফিকহী মাযহাবের বাতিলকরণের পক্ষাবলম্বী নই, আর না আমরা আমভাবে ইখতিলাফকে মন্দ বলছি। ইখতিলাফ মাত্রই মন্দ নয়, বরং কখনো কখনো প্রশস্ততা ও রহমত, কিন্তু সকল ইখতিলাফ প্রশস্ততা নয়, সকল মতপার্থক্য রহমতও নয়, বিশেষত যখন ইখতিলাফের পেছনে গোঁড়ামি থাকে।
.
২. মাযহাবের মধ্যে নব দৃষ্টিভঙ্গি, তারজীজ, তা'লীলকে সাধারণভাবেই ঘৃণ্য চোখে দেখা। নব দৃষ্টিভঙ্গি সবসময় নিরপেক্ষ নাও হতে পারে, এতে অনেকের প্রভাব থাকতে পারে, কিন্তু সকল নব দৃষ্টিভঙ্গি এক না, উসূল ও দলীলের আলোকে নতুন মতকে তারজীহ দেওয়া, আর তা যদি সত্যিকারের কোনো বিজ্ঞ ব্যক্তিই করেন, তাহলে তাতে সমস্যা থাকার কথা নয়। কিন্তু অনেকে নতুন জিনিস দেখলেই নাক সিটকায়। তাদের কাছে নতুন মানেই বর্জনীয়, পুরাতন মানেই আঁকড়ে ধরার যোগ্য, কোনোপ্রকার বিচার-বিশ্লেষণ ব্যতিরেকেই।
.
৩. কাওয়াঈদ ও উসূলের উল্লেখ ব্যতিরেকে ফুরুঈ বা শাখাগত মাসায়িল নিয়ে ব্যতিব্যস্ত হওয়া। যার ফলে অনেক সময় শাখাগত মাসায়িলকেই মনে হয় উসূল।
.
৪. মাকাসিদে শরীয়াহ বা শরীয়তের উদ্দেশ্যাবলী বিষয়ে অবহেলা। আল্লাহর সৃষ্টি উদ্দেশ্য ছাড়া নয়, তেমনি আল্লাহর দ্বীনও উদ্দেশ্য ছাড়া নয়। আল্লাহর দ্বীনের আহকামও উদ্দেশ্যযুক্ত। আল্লাহর দ্বীনের প্রতিটি আহকামেরই ইল্লত ও হিকমত আছে, আছে মাকসাদ বা উদ্দেশ্য। প্রতিটি আহকামই নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য পূরণ করতে চায়, পূরণ করতে এসেছে। আসলে শুধু আহকামই না, গোটা দ্বীনেরই উদ্দেশ্য আছে। দ্বীন নাযিলের উদ্দেশ্য, রাসূল আসার উদ্দেশ্য, মানুষ সৃষ্টির উদ্দেশ্য। সুতরাং দ্বীনের আহকাম যে মাকসাদের সাথে যুক্ত থাকবে এটা নিশ্চিত। আর দ্বীনের আহকামকে বোঝার ক্ষেত্রে আহকামের সাধারণ, বিষয়ভিত্তিক ও নির্দিষ্ট মাকসাদ বোঝা জরুরী। একে অবহেলা করলে দ্বীনের আহকামের বুঝে বিশৃঙখলা সৃষ্টি হয়।[১]
.
৫. কিছু বিষয়ে দুর্বলতা যা ফিকহের ক্ষেত্রে দুর্বলতাকে টেনে নিয়ে আসে। যেমনঃ
.
ক. ফকীহদের হাদীছের ক্ষেত্রে দুর্বলতা। অনেক ফকীহই হাদীছে দুর্বল। আর হাদীছ শরীয়তের দ্বিতীয় উৎস কিংবা কুরআনের বায়ান বা ব্যাখ্যা। তাহলে এতে দুর্বলতা থাকলে এর প্রভাব যে ফিকহে পড়বে এতে কোনো সন্দেহ নাই।[২]
খ. আরবী ভাষায় দুর্বলতা
গ. উসূলে ফিকহে দুর্বলতা
ঘ. সমাজবিদ্যায় দুর্বলতা ও উম্মাহর চাহিদার দিকে নজর না দেওয়া।
ঙ. উপকারী স্পষ্ট বই নির্বাচন না করে পুনরাবৃত্তিতে ভরপুর ও অস্পষ্ট ইবারতের কিতাব নির্বাচন করা
চ. হুকুম-আহকাম নির্গত করার উসূলে পার্থক্য। একেক মাযহাবের উসূল একেকরকম। সেই উসূলের ভিত্তিতে হুকুমেও পার্থক্য আসে। শায়খের মত হলো যথার্থভাবে ও সামগ্রিকভাবে এসকল উসূলের দিকে খেয়াল রাখা। উসূলের মতপার্থক্যকে মিটিয়ে ফেলা।[৩]
.
.
[১] ইমাম ইবনু আশুর এ কারণে নিজেই মাকাসিদুশ শারঈয়্যাহ নামে বই লিখেছেন। তিনি এর ভূমিকায় স্পষ্ট করে বলেছেন যে পূর্ববর্তীতে এ বিষয়ে খুব বেশি নজর দেওয়া হয়নি। তিনি বলছেন, "তাছাড়া উসূলে ফিকহের মাসআলাসমূহকে খুব অল্পই মাকাসিদে শরীয়ত বা শরীয়তের নিগূঢ় উদ্দেশ্যের দিকে প্রত্যাবর্তন করতে দেখা যায়, বরং এটি শরীয়তপ্রণেতার শব্দের মধ্যেই আবর্তিত হয়ে থাকে। যার মাধ্যমে এ সম্পর্কে জ্ঞানী ব্যক্তির ভাষার নির্দিষ্ট নিয়মের মাধ্যমে শাখাগত মাসআলা কিংবা নির্দিষ্ট কিছু গুণ বের করতে সক্ষম হয়...(ভাষার বিভিন্ন অবস্থা যেমনঃ আম, খাস, মুতলাক, নস, যাহির ইত্যাদির মাধ্যমে আহকাম বের করার নিয়ম উসূলুল ফিকহের ক্ষেত্রে প্রাধান্যপ্রাপ্ত নিয়ম। শায়খ এসকল অবস্থার উল্লেখের পরে) আরও বলছেন, এসকল রুপান্তর বা পরিবর্তনের সবগুলোই শরীয়তের সাধারণ ও নির্দিষ্ট মাকসাদ বা উদ্দেশ্য থেকে বিচ্ছিন্ন"
.
এছাড়া শায়খ আল্লামা ড. মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ দিরাজ রাহিমাহুল্লাহ ইমাম শাতিবীর 'আল-মুওয়াফাকাত' গ্রন্থের তাহকীকের ভূমিকায় আহকাম বের করার জন্য দুটি মূল উপায় বা রুকনের কথা বলেছেন, এক. আরবী ভাষা ও এর নিয়মাদি এবং দুই. মাকাসিদুশ শারঈয়্যাহ বা শরীয়তের উদ্দেশ্যাবলী। তিনি আরবী ভাষার নিয়ম বোঝা, লিপিবদ্ধ করা অর্থাৎ প্রথম রুকনের ক্ষেত্রে আলিমদের বিরাট খিদমতের উল্লেখ করার পরে বলেন, "দ্বিতীয় রুকনের ক্ষেত্রে তাঁরা অবহেলা করেছেন। (উসূলে ফিকহের) কিয়াস অধ্যায়ের ইল্লত পরিচ্ছেদ ব্যতিরেকে তাঁরা মাকাসিদের উল্লেখ করেননি...যেখানে মাকাসিদ বিষয়ে গভীর নজর রাখা, বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করা, ব্যাপক অনুসন্ধান করা ও লিপিবদ্ধ করা উসূলে ফিকহের মাঝে অনুপ্রবেশিত অনেক বিষয়ের চাইতে অধিক গুরুত্বের দাবীদার ছিলো।"
.
এছাড়া শায়খ মুহাম্মাদ আল-আযীয আজ-জাঈত তাঁর 'মাকাসিদুশ শারঈয়্যাহ ওয়া আসরাতুত তাশরীঈ' প্রবন্ধে লিখেছেন, "আমাদের ইলমী ঐতিহ্য বিষয়, ধরণ ও সংখ্যার দিক থেকে ব্যাপক, বিস্তৃত হওয়া সত্ত্বেও আমি এমন কোনো গ্রন্থ পাইনি যাতে যথার্থভাবে এ শিরোনাম দেওয়া যায়, যাতে সামগ্রিকভাবে মাকাসিদুশ শারঈয়্যাহ বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে কিংবা শরীয়ত প্রনয়ণের নিগূঢ় রহস্যের গ্রন্থি উন্মোচন করা হয়েছে। হ্যাঁ, যৎসামান্য আলোচনা মতবিরোধ ও ইল্লত বিষয়ক আলোচনায় পাওয়া যায় বটে, কিন্তু তা রোগের চিকিৎসার জন্য যথেষ্ট নয়.....এছাড়া ফিকহের কিতাবে নানাধরণের শাখাগত মাসআলার আলোচনা পাওয়া যায় কিন্তু তা (মাকাসিদকেন্দ্রিক) কাওয়াঈদ বা মূলনীতির সাথে সংযুক্তাকারে নেই, আর না তাতে এর মাধ্যমে অর্জিতব্য কল্যাণের কথা বর্ণনা করে আর না এর মাধ্যমে দূরীকৃত অকল্যাণের।"
.
মাকাসিদ নিয়ে অনেক কথা আর পাল্টা কথা আছে। ব্যবহার-অপব্যবহার আছে। সঠিক জিনিস অপব্যবহারের কারণে মূল জিনিসটাই ভ্রষ্ট হয়ে যায় না- এই মূলনীতিটা মনে রাখতে পারলে সবসময়ই ভালো।
.
[২] ইমাম ইবনু জাওযী বলেছেন, "আগেকার মুহাদ্দিছরা ফকীহ হতেন। এরপর এমন যুগ আসলো যখন ফকীহরা হাদীছ জানে না, আর মুহাদ্দিছরা জানে না ফিকহ।" (সাবাবু উরুদিল হাদীছ দ্বওয়াবিত ওয়া মাআঈর, ড. আছরী যাইনুল আবিদীন, মুকাদ্দামা, পৃঃ ১০)
.
[৩] এই কাজ অবশ্য ইমামের মত ব্যক্তিত্বের পক্ষে সম্ভব হলে হতে পারে। কারণ সব আলিমের পক্ষে সকল মাযহাবের উসূল বোঝাই সম্ভবপর নয়, সেখানে সমন্বয় ও সংস্কার তো অনেক পরের বিষয়। আল্লাহু আ'লাম।

~হোসাইন শাকিল

পঠিত : ২২৯ বার

মন্তব্য: ০