Alapon

আসমাউল হুসনা: আল আজিজ...



আল্লাহ পবিত্র কুরআনে ৯২ বার নিজেকে আল-আজীজ- সর্বশক্তিমান, শক্তিশালী- বলেছেন। তিনিই সবকিছু জয় করেন, এবং অতিক্রম করেন। আল-আজীজ সমস্ত শক্তি এবং ক্ষমতার অতুলনীয় উৎস। তাঁর শক্তিকে পরাস্ত বা প্রতিরোধ করা যায় না। তিনি যাকে ইচ্ছা সম্মান, মর্যাদা এবং শক্তি দান করেন।

আজীজ শব্দটি এসেছে 'ع-ز-ز' এর মূল থেকে, যা চারটি প্রধান অর্থ নির্দেশ করে। প্রথম অর্থ হল পরাক্রমশালী এবং শক্তিশালী, এবং দ্বিতীয়টি হল মহৎ ও উন্নত, তৃতীয় অর্থটি হল অপরাজেয় এবং চতুর্থটি হল বিরল এবং অনধিগম্য।

এই মূলটি কুরআনে ১১৯ বার ৭ টি উদ্ভূত আকারে এসেছে। এই রূপগুলির উদাহরণ হল أَعَزُّ - আ'আজ্জু ("শক্তিশালী"), এবং عِزًّۭا - ইজ্জান ("একটি সম্মান")।

ভাষাগতভাবে, আল-ইজ্জের অর্থ মূলত শক্তি (ক্বওয়াহ), তীব্রতা (শিদ্দাহ) এবং বিজয় (গালাবাহ)। ‘আজীজ তিনটি ধারণার দিকে ইঙ্গিত করে: ইয়া’ইজ্জু - যার অর্থ আভিজাত্য, ইয়া’উজ্জু - যার অর্থ প্রবল এবং প্রভাবশালী, এবং ইয়া’আজ্জু - যার অর্থ পরাক্রমশালী এবং শক্তিশালী। আল-আজীজ মহান, তাঁর মতো কেউ নয়, তিনি গালিব এবং সবকিছুকে জয় করেছেন অর্থাৎ বশীভূত করেছেন [ইবনে কাথির] এবং তিনি অপরাজেয় যার কাছে পৌঁছানো যায় না এবং যাকে পরাস্ত করা যায় না। [আল-কুরতুবী]

আল-আজীজ নিজেই বলেছেন -
أَنَّ ٱللَّهَ عَزِيزٌ حَكِيمٌ
নিশ্চয়ই আল্লাহ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়। [২:২৬০]
وَٱللَّهُ عَزِيزٌ ذُو ٱنتِقَامٍ
আর আল্লাহ হচ্ছেন পরাক্রমশীল, প্রতিশোধ গ্রহণকারী। [৩:৪]
وَإِنَّ رَبَّكَ لَهُوَ ٱلْعَزِيزُ ٱلرَّحِيمُ
আপনার পালনকর্তা অবশ্যই পরাক্রমশালী, পরম দয়ালু। [২৬:৬৮]

ক্ষমতাশীল ব্যক্তি ক্ষমতার অপব্যবহার করে, এমন অনেক উদাহরন আমাদের সমাজে আছে। আল-আজীজ-উল-হাকিম (সর্বশক্তিমান, সর্বজ্ঞানী) সমাহারটি কুরআনে ৪৭ বার এসেছে; আল্লাহ আল-আজীজ নিখুঁত প্রজ্ঞার সাথে তার ক্ষমতা ব্যবহার করেন। আল্লাহ 'আজ্জা ওয়া জাল আল-আজীজ-উর-রহীম (সর্বশক্তিমান, করুণাময়) সমাহারটি ১২ বার ব্যবহার করেছেন যা প্রতিটি ধ্বংসপ্রাপ্ত জাতির বর্ণনার পরে সূরা আশ-শু'রায় এসেছে। অবিশ্বাসীদের বিরুদ্ধে তিনি পরাক্রমশালী এবং তাঁর পথে সংগ্রামকারী বিশ্বাসীদের প্রতি তিনি বিশেষ ভাবে করুণাময়।

আপনার সম্মান কিন্তু টাকা, ক্ষমতা, বা চেহারায় নিহিত নয়; বরং আপনার সম্মান শুধুমাত্র ইসলামে। কতজন আছেন যারা অন্য জিনিস বা মানুষের কাছ থেকে সম্মান চান? আল-আজীজ বলেছেন -
ٱلَّذِينَ يَتَّخِذُونَ ٱلْكَٰفِرِينَ أَوْلِيَآءَ مِن دُونِ ٱلْمُؤْمِنِينَ أَيَبْتَغُونَ عِندَهُمُ ٱلْعِزَّةَ فَإِنَّ ٱلْعِزَّةَ لِلَّهِ جَمِيعًا
যারা মুমিনদের পরিবর্তে কাফেরদেরকে অভিভাবক (বা সাহায্যকারী বা বন্ধু) হিসাবে গ্রহণ করে, তারা কি তাদের কাছে সম্মান, ক্ষমতা ও গৌরব কামনা করে? নিঃসন্দেহে সকল সম্মান, ক্ষমতা ও গৌরব আল্লাহরই। [৪:১৩৯]

আল-আজীজের আনুগত্য করে এবং তাঁর রসূলের অনুসরণের মাধ্যমে আপনার দুনিয়া এবং আখিরাতের জীবনে সম্মান সন্ধান করুন।

আল-আজীজের প্রতি বিশ্বাস আপনাকে সাহস দেয়, কারণ আপনি জানেন যে আপনার প্রভু অপরাজেয়। তিনি যা চান তা ঘটবে, যদিও মানুষ তার অন্যথায় চায়, এবং তিনি যা করতে চান না তা ঘটবে না, যদিও মানুষ তা চায়। তাই শুধুমাত্র তাঁর সন্তুষ্টির জন্য কাজ করুন এবং এ ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী হন যে তিনি আপনাকে সাহায্য করবেন। তিনি সব কিছুর উপর ক্ষমতাবান, তাই আপনার সাথে যা ঘটে তা গ্রহণ করুন এবং আপনার উপর যা আপতিত হয় তার জন্য সবর (অধ্যবসায়) করুন এবং শোকর (কৃতজ্ঞতা) গুজার করুন। আপনি যখন দুর্বল বা পরাভূত বোধ করেন, তখন শক্তির জন্য আল-আজীজের দিকে প্রত্যাবর্তন করুন।
আপনি যতই ধার্মিক বা উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন হোন না কেন, আপনি কখনই তাঁর শক্তি এবং ক্ষমতা থেকে আড়াল হতে পারবেন না। কুরআনে আল-আজীজের পুনরাবৃত্তি আপনাকে ক্রমাগত স্মরণ করিয়ে দেয় যে আপনি কখনই তাঁর ইচ্ছার বিরুদ্ধে যেতে পারবেন না এবং যারা তাঁর অবাধ্য, তাদের বিরুদ্ধে তিনি শক্তিশালী।

সর্বদা আপনার নিজের "ক্ষমতা" বা কর্তৃত্বকে সম্মানজনক উপায়ে ব্যবহার করুন, উদাহরণস্বরূপ আপনার সন্তান বা স্ত্রীর উপরে। নিজের খামখেয়ালী ইচ্ছাকে যখন তখন চরিতার্থ করবেন না। আল আজীজের কথা স্মরণ করুন যিনি তাঁর শক্তিকে প্রজ্ঞার সাথে ব্যবহার করেন। সর্বদা আপনার পরামর্শ, দক্ষতা বা সঙ্গ দিয়ে অন্যদের সাহস জোগানোর করার চেষ্টা করুন। রাসুল (ﷺ) বলেছেন, 'যে ব্যক্তি তার সামনে কোন মুমিনকে অপমানিত হতে দেখে এবং সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও তাকে সাহায্য করে না, আল্লাহ তাকে বিচারের দিন তাঁর সৃষ্টির সামনে অপমানিত করবেন।' [আহমদ]

রাসুল (ﷺ) বলেছেন, একজন মুসলমান অন্য মুসলমানের জন্য অলঙ্ঘনীয়: তার রক্ত, তার সম্পদ এবং তার সম্মানও [মুসলিম]। আপনার জিহ্বা বা হাত দ্বারা অন্যদের ক্ষতি করবেন না; গীবত করবেন না, কাউকে অপবাদ দেবেন না। কারো জিনিসপত্রের অপব্যবহার করবেন না, এমনকি অন্যের দোষগুলিও প্রকাশ করবেন না। কারো সম্মান রক্ষা করে আপনি আল্লাহর সুরক্ষায় জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা পেতে পারেন। রাসুল (ﷺ) বলেছেন, 'যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের সম্মান রক্ষা করবে, আল্লাহ কিয়ামতের দিন তার মুখমন্ডলকে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করবেন।' [আত-তিরমিযী]

অন্যদের সাথে আপনার সম্পর্ক হল আল-আজীজের একটি বিশ্বাস (আমানাহ); আল্লাহ প্রদত্ত প্রতিটি বিশ্বাসকে সম্মান করুন। অন্যদের সাথে আপনার আচরণের ক্ষেত্রে, সেইসাথে আপনার নিজের শরীর এবং ইমানের ব্যাপারে যত্নশীল হতে আল আজীজের নির্দেশিকা অনুসরণ করুন।

আল্লাহ ‘আজ্জা ওয়া জাল কুরআনকে আজীজ বলেছেন কারণ এটি তাঁর বাণী -
إِنَّ ٱلَّذِينَ كَفَرُوا۟ بِٱلذِّكْرِ لَمَّا جَآءَهُمْ وَإِنَّهُۥ لَكِتَٰبٌ عَزِيزٌ
لَّا يَأْتِيهِ ٱلْبَٰطِلُ مِنۢ بَيْنِ يَدَيْهِ وَلَا مِنْ خَلْفِهِۦ تَنزِيلٌ مِّنْ حَكِيمٍ حَمِيدٍ
নিশ্চয় যারা কুরআন আসার পর তা অস্বীকার করে, তাদের মধ্যে চিন্তা-ভাবনার অভাব রয়েছে। এটা অবশ্যই এক সম্মানিত গ্রন্থ।
এতে মিথ্যার প্রভাব নেই, সামনের দিক থেকেও নেই এবং পেছন দিক থেকেও নেই। এটা প্রজ্ঞাময়, প্রশংসিত আল্লাহর পক্ষ থেকে অবতীর্ণ। [৪১:৪১-৪২]

কুরআনে আপনার জীবনে সফল হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় সব কিছুই রয়েছে, কারণ এটি আপনার সৃষ্টিকর্তার কাছ থেকে এসেছে। এটা আপনার ম্যানুয়াল অর্থাৎ সারগ্রন্থ - এবং কেন একটি ম্যানুয়াল পড়া হয়? আপনি যখন কিছু করতে চান এবং সে ব্যাপারে সঠিক দিকনির্দেশনা চান তখন আপনি ম্যানুয়াল পড়েন। কাজেই কুরআনকে আপনার জীবনের সারগ্রন্থ হিসাবে গ্রহণ করুন।

হে আল্লাহ, আল-আজীজ, আমরা জানি যে সব ক্ষমতা আপনারই। আমাদেরকে ইসলামের সম্মানে সুশোভিত করুন, ক্ষমতার অপব্যবহার থেকে আমাদেরকে রক্ষা করুন, আমাদেরকে তাদের অন্তর্ভুক্ত করুন যারা শুধুমাত্র আপনার ক্ষমতার উপর নির্ভর করে। আমাদেরকে কুরআন দ্বারা উপকৃত করুন, এবং যারা আমাদেরকে পরাভূত করতে চায় তাদের থেকে আমাদের রক্ষা করুন, আল্লাহুম্মা আমীন!

আর আল্লাহই সবচেয়ে ভালো জানেন।

- ফাহমিনা হাসনাত

পঠিত : ৩৭১ বার

মন্তব্য: ০