Alapon

তালাক: কঠিন এক শব্দের নাম...



[১]
দেশের প্রথম সারির সংবাদপত্র দৈনিক প্রথম আলোর ২১ ডিসেম্বর ২০২০ এর একটি প্রতিবেদনে তালাক নিয়ে লোমহর্ষক তথ্য দিয়ে বলা হয়েছে,কেবল ঢাকায় দিনে ৩৯ টি ঘরের সাজানো সংসার ভেঙ্গে খানখান হয়ে যাচ্ছে।এই ভয়াবহ তথ্য আমাদের সমাজকে বার্তা দিচ্ছে,তালাক দিন দিন মহামারীর মতো ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে।তাই এখনি এ বিষয়ে নিজেরা সচেতন হওয়ার পাশাপাশি অন্যদেরকেও সচেতনতার বাউন্ডারিতে না নিয়ে আসলে নিকট ভবিষ্যৎ আরও ভয়াবহ হতে যাচ্ছে তা বলাই বাহুল্য।

'তালাক' বড়ো কঠিন এক বিষয়।এটি কোনো খেল- তামাশার বিষয় নয় যে,মন চাইলেই উচ্চারণ করে ফেলা যায়।কথায় কথায় স্ত্রীকে তালাকের ভয় দেখানো স্ত্রীর প্রতি মারাত্মক ধরনের এক যুলুম।আর যালিমকে আল্লাহ মোটেও পছন্দ করেন না।যারা স্ত্রীকে সবসময় তালাকের হুমকি দেন তারা মূলত তাদের মূর্খতাকে জাহির করতে চান।কারণ একমাত্র মূর্খ লোক দ্বারাই সম্ভব যখন তখন তালাক সংশ্লিষ্ট বিষয় অনায়েসে মুখে উচ্চারণ করে ফেলা।
আমাদের সমাজে দিন দিন যেভাবে তালাক বেড়েই চলছে এর সচেতনা এখনি বৃদ্ধি না করলে হয়তো এর চূড়ান্ত ভয়াবহ রূপ দেখতে আর বেশি বাকি নেই।রাগের মাথায় না বুঝেই তালাক সংশ্লিষ্ট শব্দ উচ্চারণের দরুণ স্ত্রী তালাক হয়ে যাওয়ার পরও একত্রে বসবাস করে তাদের থেকে জন্ম নেওয়া সন্তান জারজ হচ্ছে।ফলে আমাদের অজান্তেই সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে জারজ সন্তানে ভরে যাচ্ছে।এরাই সমাজের নেতৃত্ব ভার কাঁধে নিয়ে পুরো সমাজকে ধ্বংসের মুখে টেলে দিচ্ছে। এই জারজদের কারণেই সমাজের শান্তি বিনষ্ট হচ্ছে।অথচ এগুলোর সূত্রপাতই হচ্ছে তালাক সংশ্লিষ্ট শব্দ উচ্চারণ করে নিজের অজান্তে তালাক হয়ে যাওয়ার পরও স্বামী-স্ত্রীর মতো স্বাভাবিক জীবন চালিয়ে যাওয়ার দরুন।

'তোকে ছেড়ে দেবো','তোকে আর রাখবো না','তুই চিরদিনের জন্য তোর বাপের বাড়ি চলে যা','তোর বাপকে বল তোকে যেনো অন্যত্র বিয়ে দিয়ে দেয়', 'তোকে তো কবেই ছেড়ে দিয়েছি,তুই যাস না কেনো' ইত্যাদি লোমহর্ষক বাক্যগুলো অনায়াসেই অনেক স্বামীরা মুখে উচ্চারণ করে ফেলেন।অথচ এগুলো বলার মাধ্যমে স্ত্রীর সাথে তার বিচ্ছেদ হওয়ার মতো অবস্থা হয়ে যাচ্ছে কিংবা অনেক ক্ষেত্রে বিচ্ছেদই হয়ে যাচ্ছে সেদিকের কোনো খেয়ালই নেই।এভাবে স্ত্রীর সাথে আচরণ করা কোনো রুচিশীল পুরুষের কাজ হতে পারে না। একজন পুরুষ কতোটুকু হীন প্রকৃতির হতে পারে তা বোঝার জন্য তার এমন আচরণই যথেষ্ট। এমন আচরণ মূলত সে তার খারাপ ব্যক্তিত্বকে ফুটিয়ে তুলে।

বিশেষ করে বিবাহিত ভাইদেরকে বলছি,আপনারা ভুলেও উপরোল্লিখিত বাক্য স্ত্রীর উদ্দেশ্য কখনো ব্যবহার করবেন না আবারও বলছি ভুলেও তা ব্যবহার করবেন না।অন্যথায়,স্ত্রীর উপর তালাক পতিত হয়ে গেলে এবং সাংসারিক জীবন একত্রে চালিয়ে গেলে আপনারা যিনাকারীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবেন।এমনকি আপনাদের যে সন্তান জন্ম নিবে সে হবে জারজ সন্তান।চিন্তা করছেন, বিষয়টি কত্তো মারাত্মক!আপনার একটি ভুলের জন্য আপনার পাক্কা হালাল জিনিস নিমিষেই হারাম হয়ে যাবে।তখন আপনার সাজানো স্বপ্নের সবকিছু তছনছ হয়ে যাবে।চাইলেও আর পিছনে ফিরে আসা সম্ভব হবে না।অতএব,তালাকের ব্যাপারে খুবই সাবধান থাকবেন,খুবই সাবধান।

আমরা অনেকেই জানি না যে,তালাক কতো সেনসেটিভ একটি বিষয়।ইসালামে কয়েকটি বিষয় রয়েছে যা তামাশা করেও বলা যায় না। তন্মধ্যে একটি হচ্ছে তালাক।ফলে তালাক এতোটাই সেনসিটিভ একটি বিষয় যে,তামাশা করে বললেও তা স্ত্রীর উপর পতিত হয়ে যায়।
স্ত্রী যদি আপনার সাথে খুবই খারাপ আচরণ করেও ফেলে আপনি প্রয়োজনে শরীয়াত অনুমোদিত অন্য কোনো পন্থা অবলম্বন করে তাকে শাস্তি দেবেন তবুও স্থির মস্তিষ্কে চিন্তা না করে বিজ্ঞদের পরামর্শ না নিয়ে স্ত্রীকে শুধরানোর সময় না দিয়ে সরাসরি তালাক দেওয়া মোটেও সমীচীন নয়।এটি খুবই গর্হিত একটি কাজ এবং মানবতা বিরোধী তো বটেই।
অনেকে আবার তালাক দিয়ে ফেলার পর মুফতিদের কাছে দৌঁড়ে এসে বলে,রাগের মাথায় নাকি তালাক দিয়েছে।আরে ভাই!অধিকাংশ ক্ষেত্রে তালাক তো রাগের মাথায়ই দেওয়া হয়। এটা তো কেউ তার বউয়ের সাথে হাসতে হাসতে দেয় না।তাই না!এগুলো পাগলের প্রলাপ ছাড়া কিছুই নয়।যেখানে তামাশা করেও তালাক দিলে তালাক হয়ে যায় সেখানে রাগ করে দিলেও তো তালাক হবেই।

তালাক যদি দিতেই হয় তবে কোনো বিজ্ঞ মুফতির সাথে আলোচনা করে তালাকের সহী পদ্ধতি অনুসরণ করে তবেই সে পথে আগাতে হবে। রাগের মাথায় তালাক দিয়ে নিজেকে শুধু শুধু মূর্খ প্রমাণ করার কোনো মানে হয় না।

[২]
তালাক দেওয়ার পূর্বে স্ত্রীকে যে বিষয়ের জন্য তালাক দিতে চাচ্ছেন সে বিষয়টি তাকে ভালোবাসা দিয়ে আবেগ নিয়ে সুন্দরভাবে বোঝানো উচিত।স্ত্রীকে বোঝানোর জন্য যতো ধরণের বৈধ পথ অবলম্বন করা যায় তার সবগুলোই যেনো অবলম্বন করা হয়।সেগুলোতে কোনো ত্রুটি না থাকলেই হলো।সহজ কথায়, তাকে তার ভুল শোধরে নেওয়ার জন্য যথেষ্ট সময় ও সুযোগ দেওয়া উচিত।

ধরুন,আপনার স্ত্রী সালাত আদায় করেন না,পর্দা মেনে চলেন না,আল্লাহর অনেক ফরজ বিধানই মেনে চলেন না সেক্ষেত্রে আপনি প্রথমেই তার উপর চড়াও না হয়ে তাকে বিনয়ের সাথে দরদী কন্ঠে বুঝিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করুন।আল্লাহর নিকট তার হেদায়েতের দোয়ার পাশাপাশি তাকে এভাবে বোঝানোর চেষ্টা করা যেতে পারে যে,ও আমার প্রিয়তমা!তুমি যদি আল্লাহর বিধান মেনে না চলো, আল্লাহর অনুগত বান্দীতে পরিণত না হও তবে কীভাবে আমরা দু'জন একসাথে জান্নাতে থাকবো?তুমি কি চাও,তোমাকে রেখে আমি জান্নাতে একা একা হুরপরীদের নিয়ে বসবাস করি?নিশ্চয়ই তুমি তা চাও না!তাহলে কেনো তুমি আল্লাহর আদেশ নিষেধ মেনে চলার মাধ্যমে নিজেকে জান্নাতের উপযোগী করে তুলছো না? তুমি কি জান্নাতে আমার সঙ্গী হতে চাও না?

এভাবে সুন্দর করে আপনার স্ত্রীকে সংশোধনের উদ্দেশ্য বুঝিয়ে বলতে পারেন।একইসাথে,এ-ও বোঝাতে পারেন যে,কেনো তাকে আল্লাহর বিধান মানতে হবে এবং মানলে তার কীই-বা লাভ হবে। তখন দেখবেন সে এগুলো মেনে চলার গুরুত্ব ধীরে ধীরে উপলব্ধি করতে পারবে।ইন শা আল্লাহ! তাতেও যদি কাজ না হয় তাহলে এমন কারো দারস্থ হতে পারেন যাকে দিয়ে বুঝালে আপনার স্ত্রী হয়তো বুঝবেন।

সবচেয়ে বড়ো কথা,আপনার স্ত্রী আপনার যৌক্তিক কোনো আদেশের অবাধ্য হলে আপনার যেসব পন্থা অবলম্বন করা উচিত তা নিয়ে স্বয়ং আল্লাহ তা'য়ালা বলেছেন,আর যখন কোনো নারীর অবাধ্যতার ব্যাপারে তোমরা আশঙ্কা করো, তখন তোমরা তাদের ভালো কথার উপদেশ দাও, তা কার্যকর না হলে তাদের সাথে একই বিছানায় থাকা ছেড়ে দাও,তাতেও যদি সংশোধিত না হয় তাহলে চূড়ান্ত ব্যবস্থা হিসেবে তাদের মৃদু প্রহার করো,তবে যদি তারা এমনিই অনুগত হয়ে যায়,তাহলে তাদের খামাখা কষ্ট দেওয়ার ওপর অজুহাত খুঁজে বেড়িয়ো না;অবশ্যই আল্লাহ তা'য়ালা সর্বশ্রেষ্ঠ,সবার চাইতে মহান। [১]

মোটাদাগে,আল্লাহ তা'য়ালা স্ত্রীর অবাধ্য আচরণ সংশোধন করতে তিনটি পন্থা অবলম্বন করার কথা বলেছেন।তার মধ্যে প্রথমেই বলেছেন,ভালোবাসার স্বরে সুন্দর ভাষায় বোঝানোর চেষ্টা করতে হবে।তারপরও কাজ না হলে বিছানা পৃথক করে দিতে হবে যেনো সে তার ভুল বুঝতে পেরে নিজেকে সংশোধন করে নিতে পারে।তাতেও যদি কাজ না হয় তবে মৃদু প্রহার তথা সামান্য শাসন করা যাবে।তবে কোনোভাবেই মূর্খের মতো অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ কিংবা মৃদু প্রহারের নামে শরীরের কোনো অংশ জখম করা যাবে না।আর হ্যাঁ!স্ত্রী যদি সংশোধন হয়ে যায় তবে তার পূর্বের বিষয় টেনে এনে বা যেকোনো কষ্টদায়ক বিষয় সামনে এনে তাকে কষ্ট দেওয়া যাবে না- এমন ব্যাপারেও রব সতর্ক করে দিয়েছেন।

এভাবে আল্লাহর বাতলে দেওয়া পন্থা সঠিকভাবে অবলম্বন করার পরও যদি সে সংশোধিত না হয় এবং বিষয়টি বিচ্ছেদের দিকে গড়ায় তবে সেক্ষেত্রে যা করতে হবে তা নিয়েও আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা পথ বাতলে দিয়ে বলেছেন,আর যদি তাদের স্বামী-স্ত্রী দুজনের মাঝে বিচ্ছেদের আশঙ্কা দেখা দেয়,তাহলে স্বামীর পক্ষ থেকে একজন সালিশ এবং স্ত্রীর পক্ষ থেকে একজন সালিশ নিযুক্ত করো,এরা উভয়ে যদি মীমাংসা চায় তাহলে আল্লাহ উভয়ের মধ্যে মিল করে দেবেন।নিশ্চয় আল্লাহ সর্বজ্ঞানী,সব বিষয়ে অবগত। [২]

আল্লাহ তা'য়ালা কেবল দুই পক্ষ থেকে সালিশ নিযুক্ত করার কথা বলেই থেমে থাকেন নি।তিনি এ-ও বলে রেখেছেন যে,তারা যদি বিষয়টি মীমাংসার জন্য আন্তরিক থাকে তবে আল্লাহ তা'য়ালা ইতোমধ্যেই আন্তরিক আছেন।অর্থাৎ তিনি তো মিল করে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েই রেখেছেন।কেবল স্বামী-স্ত্রী নিজেরা আন্তরিক হওয়ার পাশাপাশি সালিশিরাই ঠিকঠাক মতো ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করলেই হলো।সেজন্য এসব ব্যাপারে যাদেরকে নিযুক্ত করা হবে তারা যেনো সৎ হয়,তাকওয়াবান হয় সেদিকেও খেয়াল রাখা জরুরি।অন্যথায়,তাদের অসৎ কোনো উদ্দেশ্য কিংবা গুটিবাজির কারণে স্বামী স্ত্রীর সমস্যা সমাধানের বাঁধা হয়ে দাঁড়াতে পারে।

যাইহোক,এভাবে সকল বৈধ পথ অবলম্বন করার পর তথা উত্তম পন্থায় বোঝানোর পরও যদি আপনার স্ত্রী সঠিক পথে ফিরে না আসেন তবে আপনার নিজের মঙ্গলের জন্য,আপনার আগত প্রজন্মকে আল্লাহবিমুখীতা থেকে বাঁচাতে এবং তাদেরকে সঠিক পথে রাখার উদ্দেশ্য অর্থাৎ বৃহৎ স্বার্থে বিজ্ঞ মুফতিদের সাথে পরামর্শ করে হয়তো তালাকের দিকে এগুলো পারেন।কিন্তু কোনোক্রমেই ছোটো খাটো কোনো বিষয়কে কেন্দ্র করে তালাকের দিকে যাওয়া যাবে না।এমনকি তালাক নিয়ে চিন্তাও করা যাবে না।

মনে রাখবেন,তালাক কিন্তু সবকিছুর সমাধান নয়।তালাক দুটি পরিবারকে চিরজীবনের জন্য বিচ্ছিন্ন করে দেয়,একসাথে অনেকগুলো সম্পর্কের ইতি টানে।সবচেয়ে বড়ো কথা,এটি সন্তানদের ভবিষ্যৎ অন্ধকারের দিকে টেলে দেয়। তাদের জীবন দুর্বিষহ করে তুলে।তাদেরকেই বেশি কষ্টের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়।তালাকের প্রভাব অনেক বেশি যা কেবল ভুক্তভোগীই হাড়ে হাড়ে টের পায়।এজন্যই তো আল্লাহর নিকট জায়েজের মধ্যে সবচেয়ে নিম্নস্তরের জায়েজ হচ্ছে তালাক। চূড়ান্ত পর্যায়ের প্রয়োজন না হলে তালাকের দিকে যাওয়াতে ইসলাম চরমভাবে নিরুৎসাহিত করে।

আপনার স্ত্রীকে যদি আপনি অন্যায়ভাবে তালাক দিয়ে দেন তবে আপনি তার বিরাট বড়ো এক ক্ষতি করে ফেললেন যা হয়তো কোনোদিনই পুষানোর নয়।আপনি তার হক নষ্ট করলেন। আপনি তাকে চরম এক বিপদের মুখে টেলে দিলেন।এর জন্য আপনাকে কিয়ামতের দিন আল্লাহর নিকট কঠিন জবাবদিহি করতে হবে।

আপনিই একটু স্থির মনে চিন্তা করুন তো,যে স্ত্রীকে আপনি অন্যায়ভাবে কেবলই রাগের মাথায় তালাক দিয়ে দিলেন সে স্ত্রী যাবে-টা কোথায়?কার কাছে গিয়ে বেচারি উঠবে?তার মাথা গুজার টাঁই কোথায়?তার মা-বাবা,ভাই-বোন কি তাকে সহজে গ্রহণ করবে?আর গ্রহণ করলেও কি তার জীবন স্বাভাবিকভাবে চলবে?স্বামীহীন এই মেয়েটা কি পদে পদে অবহেলা অবজ্ঞার স্বীকার হবে না?যে মেয়েটা এতোদিন আপনার স্ত্রী ছিল, সুখে-দুঃখে আপনার পাশে ছিল,যাকে নিয়ে আপনার অসংখ্য স্মৃতি চোখের পাতায় জমা হয়ে আছে সেই মেয়েটার জন্য কি আপনার একটুও দয়া-মায়া হয় না?কিভাবে সামান্যতেই চট করে তালাক উচ্চারণ করে আপনি তার সাথে এতোটা নির্দয় আচরণ করে ফেলতে পারেন?

ও ভাই আমার,আপনি কি তার তালাকপ্রাপ্ত হওয়ার পরের জীবনের অবর্ণনীয় কষ্ট উপলব্ধি করতে পারছেন না?তার কষ্টের কথা আপনার হৃদয়কে একটুও নাঁড়া দিচ্ছে না?তার কোনো ভালো গুণও কি আপনাকে তার ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে একটিবারও ভাবিয়ে তুলছে না?
একটিবার ভাবুন না,আজ যদি আপনি আপনার স্ত্রীর জায়গায় থাকতেন তবে আপনি কেমন অনুভব করতেন?তখন কি কষ্টে আপনার বুকটা ফেটে যেতো না?তখন কি পারতেন নিজেকে সামলে রাখতে?আপসোস!যখন এসব উপলব্ধি হয় তখন আর কিছুই করার থাকে না।অথচ তালাক দেওয়ার পূর্বে এসব বিষয় উপলব্ধি করলে কতোই-না ভালো হতো।কিন্তু আজকের অধিকাংশ পরিবারে কোনোকিছু না ভেবেই হুটহাট করে একের পর এক তালাক দিয়ে স্ত্রীকে নিজের জন্য হারাম করে নেওয়া হচ্ছে।আর তা কতোই-না পরিতাপের বিষয়!

[৩]
বিশ্বাস করুন,আপনি যদি আপনার স্ত্রীকে সঠিক পদ্ধতিতে বারবার বোঝানোর পরও সে তার ইগোকে প্রশ্রয় দিয়ে ভুল শুধরে না নেয় এবং একসময় বাধ্য হয়ে আপনি তাকে ন্যায়সঙ্গতভাবে তালাক দেন তবে এই স্ত্রীই একদিন আপনার জন্য কাঁদবে।কেনো জানেন?কারণ সে একসময় বুঝতে পারবে,আপনি সঠিক ছিলেন,ন্যায় ছিলেন। আপনি সামগ্রিকভাবে ভালোর জন্যই তাকে তার ভুল থেকে ফিরে আসতে বলেছিলেন।

তখন আপনার প্রতি তার কোনো অভিযোগ অনুযোগ থাকবে না,থাকবে কেবল দোয়া।সে-ই আল্লাহর দরবারে হাত তুলে বলবে,ও আল্লাহ! আমি আমার স্বামীকে বুঝতে পারি নি।উনি তো আমার ভালোর জন্যই আমাকে আমার ভুল শোধরে নিতে কতো করে বলেছিলেন।কিন্তু আমি হতভাগিনী তখন বুঝতে পারি নি।আজ নিজের ভুল বুঝতে পারছি।কিন্তু আমি জানি আজ আমার পেছনে ফিরে যাওয়ার আর কোনো সুযোগ নেই।তাই আপনাকে কেবল এতোটুকুই বলব,এই মানুষটাকে আপনি যেখানে রাখেন ভালো রাখিয়েন।এই মানুষটা আমাকে ভালোবাসা দিয়ে আমার ভুল সংশোধন করার চেষ্টা করেছিলো।কিন্তু আমি....এভাবে বলতে বলতে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে কেবল নিজেকেই দোষবে আর আপনার জন্য মন থেকে দোয়া করবে।

সেজন্য নিজেকে আগে সেই অবস্থানে নিয়ে যেতে হবে যে অবস্থানে নিয়ে গেলে কোনো কারণে আপনার স্ত্রী আপনার কাছ থেকে তালাকপ্রাপ্ত হয়ে গেলেও তার দোয়ায় আপনি থাকবেন।কারণ আপনি যে তাকে সত্যিকার অর্থে ভালোবেসে ছিলেন,সত্যিকার অর্থে তার মঙ্গলের জন্যই তার ভুল শুধরে দিতে চেয়েছিলেন।

পক্ষান্তরে,আপনি যদি অন্যায়ভাবে আপনার স্ত্রীকে তালাক দেন তবে কেবল সে বদদোয়া দিবে না,বদদোয়া দিবে স্বয়ং তার শরীরের সমস্ত অঙ্গপ্রত্যঙ্গ।দুনিয়ার যতো জায়গায় সে স্বামীহীন থাকার কারণে লাঞ্ছণার ও কষ্টের স্বীকার হবে ততো জায়গায় তার কাছ থেকে আপনি স্বয়ংক্রিয়ভাবে বদদোয়া পেতে থাকবেন।কারণ আপনিই যে তার হক নষ্ট করেছেন,আপনিই যে তাকে অন্যায়ভাবে তালাক দিয়ে তার প্রতি অবিচার করে তাকে বিপদের মুখে টেলে দিয়েছেন।তার এই বদদোয়াই হতে পারে আপনার দুনিয়া ও আখিরাতের সকল অশান্তির কারণ।

বর্তমানে তালাকের সহজলভ্যতার কথা বিবেচনা করে এবং সচেতনতার লক্ষ্য প্রতিটি বিয়েতে আকদের মুহুর্তে বরকে তালাক সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা দেওয়া উচিত।এটি বর্তমান সময়ের বিশেষ দাবি।তালাকের মাস'য়ালা ঠিক মতো জানা না থাকার কারণেই স্ত্রীকে যখন তখন তালাক সংশ্লিষ্ট যা তা বলে ফেলা হয়।ফলে স্ত্রীও তালাক হয়ে যায়।অথচ বছরের পর বছর একসাথে সংসার চালিয়ে যাওয়া হয়।বুঝতেই পারে না তাদের হালাল সম্পর্ক ইতোমধ্যে যিনার সম্পর্কে রূপ নিয়েছে।যার সূত্র ধরে তাদের ঘরে জারজ সন্তানের জন্ম হচ্ছে।এভাবেই সমাজ ধ্বংসের কারিগররা নীরবে একের পর এক তৈরী হয়ে যাচ্ছে।অতএব,এমন বিষয়ে নিজে সচেতন হওয়ার পাশাপাশি অন্যদেরকেও সচেতন করার বিষয়টি হালকাভাবে নেওয়ার কোনো অবকাশ নেই।

রেফারেন্সঃ
[১] সূরা আন নেসা,আয়াত নং : ৩৪
[২] সূরা আন নেসা,আয়াত নং : ৩৫

- রাকিব আলী

পঠিত : ৭২২ বার

মন্তব্য: ০