Alapon

হাজী শরীয়তুল্লাহর আধুনিক চেতনা


ফরজ শব্দটির সাথে আমরা সকলেই পরিচিত। মুসলমানদের জীবনের সাথে ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে আছে শব্দটি। ফরজ শব্দটির আদলেই ভারতবর্ষে এক বৃহৎ আন্দোলন গড়ে উঠেছিল। ফরায়েজী আন্দোলন নামে খ্যাত এই সংস্কারবাদী কাজের নেতৃত্ব দেন প্রাণপুরুষ হাজী শরীয়ত উল্লাহ। প্রধানত মুসলমানদের থেকে শিরক ,বিদআত ও কুসংস্কার বিতাড়িত করার লক্ষ্যে আন্দোলন গড়ে ওঠে।

বাংলার তৎকালীন মুসলমানদের বিরাট অংশ ছিল ধর্মান্তরিত। তাই তাদের মাঝে তখনও পূর্ববর্তী ধর্ম ও সংস্কৃতির এক বিরাট প্রভাব ছিল। এ বিষয়টি হাজী শরীয়তুল্লাহ গভীরভাবে উপলব্ধি করেন। বাংলার মুসলমানদের যদি এই গুরুতর ধর্মীয় অনাচার ও কুসংস্কার থেকে বেড়িয়ে না আসে তাহলে অন্যায়ের প্রতিবাদ করার মানসিকতা থেকে তারা দূরে সরে যাবে এমনকি নিজেদের মুসলিম অস্তিত্ব একপর্যায়ে বিলীন হয়ে যাবে। তাই তিনি ধর্মীয় পরিশুদ্ধতার জন্য কোরআন ও সুন্নাহ অনুযায়ী জীবন পরিচালনার জন্য মানুষকে উদ্বুদ্ধ করেন। ইসলামের ফরজ বিধান গুলোকে পরিপূর্ণ মেনে নেওয়ার জন্য মানুষদেরকে উদাত্ত আহ্বান জানান। এরই প্রেক্ষাপটে ওহাবী সংস্কারবাদীদের আদলে ফরায়েজী আন্দোলন গড়ে তোলেন।

ব্রিটিশ আমলে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসন প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর মুসলমানরা অর্থনৈতিক ও সামাজিক ভাবে চরম দূর্দশার শিকার হয়। কোম্পানি মুসলমানদেরকে সেনাবিভাগ রাজস্ব বিভাগ অন্যান্য চাকরি থেকে বরখাস্ত করে। ফলে অজস্র মুসলিম পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অন্যদিকে হিন্দু জমিদার ও নীলকরদের অত্যাচারের মুসলমান কৃষকদের জীবন অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে। তথাকথিত ইংরেজদের বাজেয়াপ্ত নীতির দ্বারা মুসলমানরা একেবারে কোণঠাসা হয়ে পড়ে।

সমাজের এই করুন অবস্থায় হাজী শরীয়ত উল্লাহ যোগ্য অভিভাবক হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিলেন। তিনি শুধু ধর্মীয় সংস্কার ছিলেন না। বরং কৃষক ,তাঁতী ও শ্রমজীবী মানুষের আস্থাভাজন হয়ে উঠেছিলেন। তার আদেশ অনুসারে তার শিষ্যরা অবহিত করে দেওয়া বন্ধ করলে হিন্দু জমিদার ও নীল কুঠিয়ালদের আক্রোশের শিকার হন তিনি। হিন্দু জমিদাররা মুসলমানদের উপর নানা বিধিনিষেধ আরোপ করে। তারা গরু জবাই নিষিদ্ধ করে। মুসলমানদের দাড়ির উপর কর আরোপ করে।
হাজী শরীয়ত উল্লাহ সমাজের অবিচার ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে সমাজের খেটে খাওয়া মানুষ কে সাথে নিয়ে তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলেন। নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ তার এই আন্দোলনে যোগ দেয়। এক পর্যায়ে তা ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনেও রূপ নেয়। তাঁর এই শোষণ ও বঞ্চনার বিরুদ্ধে পরিচালিত আন্দোলন আজও মুসলিম মানসে অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে রয়েছে।

হাজী শরীয়তুল্লাহর আধুনিক চেতনা
আহমাদ মুসা

পঠিত : ২৭৫ বার

মন্তব্য: ০