Alapon

আজ কিংবদন্তি হাজী শরিয়তুল্লাহর মৃত্যুবার্ষিকী



আজ ২৮ জানুয়ারি। বাংলার প্রথম খিলাফত প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের রূপকারের আজ মৃত্যদিবস। আজ থেকে প্রায় ১৮২ বছর আগে ১৮৪০ সালে মাওলানা হাজী শরিয়তুল্লাহ ইন্তেকাল করেন।

ইংরেজরা বাংলা দখলের পর বাংলার মুসলিমরা ব্যাপক অত্যাচার ও নির্যাতনের মুখোমুখি হয়। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয় মুসলিমদের শিক্ষাব্যবস্থা। মুসলিমদের সবক'টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হয়। মুসলিম পণ্ডিত ও বিদ্বান ব্যাক্তিদের হত্যা করা হয়।

সেসময় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যা মাদরাসা নামে পরিচিত ছিলো সেখানে ধর্মীয় জ্ঞানের পাশাপাশি জাগতিক জ্ঞান চর্চাও সমানতালে হতো। কিন্তু ইংরেজরা বুঝতে পেরেছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালু থাকলে মুসলিমদের জাতিসত্তা টিকে থাকবে। তাই তারা মুসলিমদের শিক্ষাগ্রহণ বন্ধ করে দেয়। এভাবে দুই দশকের মধ্যেই বাঙালি শিক্ষার আলো থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে একটি অন্ধকারচ্ছন্ন ও পশ্চাতপদ গোষ্ঠীতে পরিণত হয়।
এছাড়াও তারা মুসলমানদের হাত থেকে খাজনা আদায়ের তারা প্রজাদের উপরে শুরু করলো নির্মম শোষণ-পীড়ন।

ব্রিটিশ নিম্নমানের বস্ত্রের বাজার সৃষ্টির জন্যে বাঙালি তাঁতীদের নির্মূল করার কাজ শুরু হলো। তাদের আঙ্গুল কেটে দেওয়া হয় যাতে তারা তাঁত চালাতে না পারে। ১৭৬৬ সালে প্রতিমণ লবণের উপর দু’টাকা হারে কর ধার্য করে লবণ ব্যবসা ইউরোপীয়দের একচেটিয়া অধিকারে নেয়া হলো। এভাবে মুসলমানরা সকল অর্থনৈতিক ক্ষেত্র থেকে বিতাড়িত হয়ে দারিদ্র্যে নিষ্পেষিত হতে লাগলো। আমাদের শিক্ষা, শিল্প ও অর্থনীতি পুরোপুরি পঙ্গু হয়ে যায়।

শুধু তাই নয়, ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদি পালনেও মুসলমানরা বাধাগ্রস্ত হতে লাগলো। অত্যাচারী হিন্দু জমিদারদের এলাকায় গো-কুরবানী এবং আজান দেয়া নিষিদ্ধ হলো। হিন্দু জমিদারগণ মুসলমান প্রজাদের দাড়ির উপরে ট্যাক্স ধার্য করলো। তাদের পূজা-পার্বণে মুসলমানদেরকে চাঁদা দিতে, পূজার যোগন ও বেগার দিতে বাধ্য করা হলো। মুসলমানদেরকে ধূতি পরতে ও দাড়ি কামিয়ে গোঁফ রাখতে বাধ্য করা হলো।

মুসলমানদের ধর্ম, তাহজিব-তামদ্দুনকে ধ্বংস করে হিন্দুজাতির মধ্যে একাকার করে ফেলার এক সর্বনাশা পরিকল্পনা শুরু হলো। ধর্মপ্রাণ মুসলমান হয়ে উঠলো দিশেহারা। এর মধ্যে পর্যাপ্ত ধর্মীয় জ্ঞান না থাকায় মুসলিমরা হিন্দুদের অনুকরন করতে শুরু করে। মুসলিমদের মধ্যে প্রচুর শিরকি ও বিদআতি কর্মকাণ্ড পরিলক্ষিত হয়।

বাংলার মুসলমানদের এ চরম দুর্দিনের সময় ১৮২০ সালে ফরায়েজি আন্দোলনের সূচনা করে হাজী মুহাম্মদ শরিয়তুল্লাহ। তিনি মুসলিমদের শির্কী ও বিদয়াতী কর্মকাণ্ড পরিহার করতে বলেন।

তিনি রাজনীতি বিষয়ে ঘোষণা করেন, যিনি জমি চাষ করেন তার উৎপাদিত ফসলের ওপর চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের অধীনে সৃষ্ট জমিদারদের কোন অধিকার নেই। হাজী শরীয়তুল্লাহ তার অনুসারীদেরকে নির্দেশ দেন যে, হিন্দু প্রতিবেশীদের পূজা উৎসবে অংশ নেওয়া যাবে না। জমিদার কর্তৃক তাদের ওপর আরোপিত কোন ধরনের ফসলী-করও প্রদান করা যাবে না। সরকার কর্তৃক নির্ধারিত আইনানুগ রাজস্বই কেবল প্রদান করা যাবে।

তাঁর এই ঘোষিত নীতি নবসৃষ্ট হিন্দু জমিদারদের শরীয়তুল্লাহর আন্দোলনের বিরোধিপক্ষ হিসেবে প্রকাশ ঘটায়। হিন্দু জমিদাররা কৌশলে বিদয়াতী মুসলিম এবং ব্রিটিশ নীলকরদের একত্রিত করে ফরায়েজী আন্দোলনের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়। এভাবে ১৮৪০ সালের দিকে উভয় পক্ষ ক্রমশ সংঘর্ষে লিপ্ত হয়।

এরকম একটি উত্তেজনাকর মুহূর্তে হাজী মুহাম্মদ শরীয়তুল্লাহ ২৮ জানুয়ারী ১৮৪০ সালে ইন্তেকাল করেন। তিনি দুনিয়া ছেড়ে গেলেও তার প্রতিষ্ঠিত আন্দোলনের ধারাবাহিকতা চলমান ছিল। এই মহামানুষদের আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় আমরা যেমন স্বাধীনতা পেয়েছি তেমনি আমর আমাদের মুসলিম পরিচয়টিও রক্ষা করতে সক্ষম হয়েছি।

আল্লাহ তায়ালা এই মহান মানুষটিকে সম্মানিত করুন।

পঠিত : ৩০৪ বার

মন্তব্য: ০