Alapon

ফরায়েজী আন্দোলন ও হাজী শরীয়ত উল্লাহ




একজন মানুষ ফতোয়া জারি করেছিলেন যে, এই ভূখণ্ডের মানুষ জুমা ও ঈদের নামাজ পড়বেনা। পড়ার প্রয়োজন নেই। কারণ, এটা দারুল হারব। এই ফতোয়া যিনি দিয়েছেন, তাঁর নামই হাজী শরীয়ত উল্লাহ। তিনি ঐতিহাসিক ফরায়েজি আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা। ফরায়েজি শব্দটি (ফরদ) থেকে নেওয়া । এই আন্দোলনের মাধ্যমে তিনি মানুষকে আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত ও বাধ্যতামূলক যে বিধানসমূহ, সেগুলো ঠিকমতো পালনের জন্যে প্রানপাণ চেষ্টা্র জন্যে উদ্ধুব্ধ কররেছিলেন। তবে এই ফরজ বিধানসমূহকে পালনে হাজী শরিয়তুল্লাহ বৃটিশ শাসনকে প্রতিবন্ধক হিসেবে দেখহতে পান। তাই তো তিনি বলেছিলেন, বাংলায় ব্রিটিশ শাসন মুসলিমদের ধর্মীয় জীবনের জন্য ক্ষতিকর।

আমরা তিতুমীর-হাজী শরীয়ত উল্লাহদের ভুলেই গিয়েছি। পাঠ্যপুস্তকেও তাঁদেরকে চেনাবার সুযোগ ওরকমভাবে রাখা হয়নি। তাই আজকের যুগের ছাত্রছাত্রীরা সন্ত্রাসী প্রীতিলতা-সূর্যসেনদেরকে চিনলেও চেনেনা আমাদের প্রকৃত হিরোদের ! আজকেও আমাদের একজন হিরোর মৃত্যবার্ষিকী। ১৮১ বছর পূর্বে আজকের এই দিনেই তিনি দুনিয়া থেকে চির বিদায় নেন। আজকের শরিয়তপুর জেলা তাঁর নামেই নামকরণ করা হয় ।
এঁদের হাত ধরেই আমরা বৃটিশদের শোষণ থেকে মুক্ত হয়েছি। সামান্য হলেও নিজেদের জাতিসত্তা চিনতে পেয়েছি। একটি ভূখণ্ড পেয়েছি। যদিও সে ভূখণ্ডটি পুনরায় হিন্দুত্ববাদিদের ষড়যন্ত্রে ভেঙে পড়েছে। যার পরিপ্রেক্ষিত আজকের বাংলাদেশ নামক একটি সুন্দর ভূখণ্ডের নাগরিক আমরা !

পূর্বেই বলা হয়েছে যে, হাজী শরিয়তুল্লাহরা-ই কিন্তু বাংলায় ব্রিটিশ শাসনকে তাওহিদবাদী মুসলামনদের ধর্মীয় জীবনের ক্ষতিকর হিসেবে গণ্য করেছিলেন। ফতোয়া দিয়েছিলেন। এই দেশকে তিনিই দারুল হরব ঘোষণা করেছিলেন। দারুল হরব হলো যেখানে সর্বদিক থেকে নিরাপদ থাকে কুফ/ফার শক্তি, আর ভীত থাকে মুসলিমগণ, তাহলে উক্ত রাষ্ট্র দারুল কু/ফর বা দারুল হরব। তাই তো বৃটিশদের বিরুদ্ধে ঈমানদারেরা প্রাণপণে লড়াই করেছেন। সেই লড়াইয়ে অগণিত মু'মিন শাহাদাতের সুধা পান করেছেন। আর উক্ত জি.হাদ-শাহাদাতের ফলাফল-ই হলো আজকের বাংলাদেশ এবং পাকিস্তান। তবে তৎকালীন ভারত বর্ষকে শাহ আব্দুল আযিয রাহঃ-ও দারুল হারব ঘোষণা দিয়েছেন। তবুও তিনি তাঁর ইন্তেকাল পর্যন্ত জুম’আ ও ঈদের সলাত আদায় করেছেন। অথচ এই বীরদেরকে আমদের স্মৃতি থেকে মুছে ফেলা হচ্ছে। দেওয়া হচ্ছে ভুলিয়ে।

এদেশে ইংরেজরা এবং তাদের মদদপুষ্ট হিন্দু জমিদারেরা মুসলমানদের জীবনকে নানাভাবে বিষিয়ে তুলেছিলো। মুসলমানদের দাড়ির জন্যে কর দিতে হতো। গোরু জবাই করা নিষিদ্ধ ছিলো। পক্ষান্তরে সে জমিদারদের শ্রাদ্ধানুষ্ঠান, পৈতানুষ্ঠান, রথযাত্রা ও দুর্গাপূজার জন্য মুসলমানদের কর প্রদান করা লাগতো। তিনি তাঁর অনুসারী ঈমানদারদেরকে এসব কর প্রদান করতে নিষেধ করেন। এরপর থেকে শুরু হয় তাঁর সাথে খ্রিস্টান-হিন্দুদের সম্মিলিত ষড়যন্ত্র। ওনাকে তাই যেতে হয়েছে অনেকবার কারাগারে।
এই কারাগার-শাহাদাতের সিলসিলা আজো চলমান। হয়তো তা ভিন্নরূপে। ভিন্ন নামে, ভিন্ন পদ্ধতিতে। আজো মু.শ.রিক ভা.রতের আধিপত্যের বিরুদ্ধে যারাই কিছু বলে সোচ্চার হয়, তাদেরকেই কারাগারে নিক্ষেপ করা হয়, ফাঁসির রশিতে কিংবা ক্রসফায়ারে হত্যা করা হয়। আজো ভারতকে নিঃশর্তে অনেক কিছুই দিতে হয় এদেশকে।

এদেশে সোশ্যালিজম-সেক্যুলারিজমের পোকা ভর করা কিছু বুদ্ধিজীবী নামক জ্ঞানপাপীরা আলিম-ওলামা, মোল্লা-মৌলভিদের তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে। তাদের কোনোই অবদান নেই বলে গলা ফাটায়। অথচ এ উপমহাদেশকে শত্রুর শোষণ মুক্ত করেছনই ওলামায়ে কেরাম- তাদের ভাষায় মোল্লা-মৌলভিগণই ! এই হাজী শরিয়ত উল্লাহ, তিনি একজন আগাগোড়া মাদরাসা পড়ুয়া মাওলানা। তিনি সৌদি আরবের থেকে এবং মিশরের আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই পড়াশোনা করা আলিম। তাদের ফতোয়ায়, তাদের জি.হা.দি কিংবা দাওয়াতি ও সাংগঠনিক কার্যক্রমের কারণেই মানুষ সংগ্রামে প্রেরণা পেয়েছে। শাহাদাতের জজবা পেয়েছে।

আমরা বিশ্বাস করি একদিন পুনরায় ভারতীয় হিন্দুত্ববাদী আগ্রাসন বন্ধ হবে। এই উপমহাদেশে আল্লাহর দ্বীন কায়েম হবে, সকল প্রকার শিরক-বিদ'আত বিদূরিত হবেই হবে। ইন শা আল্লাহ্‌ !

// ফরায়েজী আন্দোলন ও হাজী শরীয়ত উল্লাহ//
~রেদওয়ান রাওয়াহা

পঠিত : ৫৮৪ বার

মন্তব্য: ০