Alapon

আলেমদের শিক্ষা হবে কবে?

১৭৩০ সালের কথা। শাহ ওয়ালিউল্লাহ সাহেব উচ্চ শিক্ষার উদ্দেশ্যে মক্কায় পাড়ি জমান। উচ্চ শিক্ষা শেষ করে ১৭৩৩ সালে তিনি আবারো ভারতে ফিরে আসেন।


ফিরে এসে প্রত্যক্ষ করলেন, ভারতের তৎকালীণ মুসলিমদের ঈমান আমল এবং আখলাক সবকিছুই দিনদিন তলাণীর দিকে যাচ্ছে। তখন শাহ সাহেব ভাবতে লাগলেন, মুসলিমদের এই অধঃপতনের কারণ কী?


তিনি অনুসন্ধান করে যা পেলেন তা হল, ‘মুসলিমরা কুরআন পড়ছে ঠিকই কিন্তু কুরআনের কিছুই তারা বুঝতে পারে না।’


উল্লেখ্য, উপমহাদেশে তখন পর্যন্ত কুরআনের কোন অনুবাদ হয় নি। শাহ ওয়ালিউল্লাহ দেহলবী রহ. কুরআন অনুবাদে হাত দিলেন। সে সময় ফার্সী ভাষার ব্যাপক প্রচলন ছিল। তিনি ফার্সী ভাষাতেই কুরআন অনুবাদ করলেন। এরপর তাঁর দুই পুত্র, শাহ রফিউদ্দিন ও শাহ আব্দুল কাদির তা ফার্সী থেকে উদূর্তে রূপান্তর করেন। এরপর সেই অনুবাদিত কুরআনের কপি সারা উপমহাদেশে ছড়িয়ে দেন।


সাধারণ ‍মুসলিমরা সেই অনুবাদিত কুরআনের কপি ব্যাপক আগ্রহ নিয়েই গ্রহণ করলেন। কিন্তু বাধ সাজলো সেই সময়কার কিছু আলেম। তাঁরা কুরআনের অনুবাদ করাকে বিদআত বলে ফতোয়া জারি করলেন। সেইসাথে এও বললেন, অনুবাদিত এই কুরআন পড়োয়া হারাম। একই সাথে তাঁরা শাহ ওয়ালিউল্লাহ দেহলবী সাহেবকেও ‘বেদআতী আলেম’ বলে আক্রমন করেন।
[সূত্রঃ উপমহাদেশের প্রখ্যাত আলিমদের রাজনৈতিক জীবন বই থেকে]


বিশ্বকবি আল্লামা ইকবাল। আল্লামা ইকবাল একবার আল্লাহ রাব্বুল আলামীনকে প্রশ্ন করে বেশ কিছু কবিতা লিখলেন। তারপর সেই কবিতা পুস্তক আকারে প্রকাশ হল। পুস্তকটির নাম দেওয়া হল, ‘শিকওয়া’ অর্থাৎ প্রশ্ন।


শিকওয়া বইটি চলে যায় তৎকালীন সময়ের কিছু আলেমের হাতে। আলেমগন ভাবলেন, তাঁরাই কুরআন হাদীস চসে কবি ইকবালের কবিতার জবাব দিবেন। কিন্তু জবাব খুঁজতে গিয়ে সেই সকল আলেম তালগোল পাকিয়ে ফেললেন। জবাব আর মিলে না।


যখন আর জবাব পাওয়া যাচ্ছিল না, তখন সেই সকল আলিম কবি ইকবালকে ‘ফেতনাবাজ’ বলে ঘোষনা দিলেন। কেউ কেউ অতিউৎসাহি হয়ে তাঁকে ‘মুরতাদ’ও বললেন।


কবি আলেমদের এরূপ অবস্থা দেখে আবারো কবিতা লিখতে শুরু করলেন। এইবার লিখলেন ‘জবাবে শিকওয়া’। সেই কবিতার প্রশ্নের উত্তরগুলো নিয়েই এই কবিতার বইটি প্রকাশিত হয়। এই কবিতার বইটি দেখে আলেম সমাজ ভীষণ খুশি হয়ে যান। আর এই খুশির দরুন তৎকালীণ আলেম সমাজ কবিকে ‘আল্লামা’ উপাথি প্রদান করেন। তখন থেকেই তিনি হয়ে যান ‘বিশ্বকবি আল্লামা ইকবাল’।


এবার আসি মূল কথায়! তঃকালীণ আলেমরা ইসলামকে নিজেদের চোখ দিয়ে প্রত্যক্ষ করেছিলেন, ‘ইসলামী জ্ঞানের’ চোখ দিয়ে নয়। যার কারণেই উপরোক্ত ভুলগুলো প্রত্যক্ষ করা গেছে।


জ্ঞানীরা বলেন, ‘বুদ্ধিমানরা নাকি ইতিহাস থেকে শিক্ষা গ্রহণ করেন।’


কিন্তু আমরা উপমহাদেশের মুসলিমরা সম্ভবত আজও বোকাই রয়ে গেছি। আজ প্রায় দু’শ বছর অতিক্রম করার পরও, আমরা সেই একই ভুলের পুনরাবৃত্তি করে যাচ্ছি। নতুন কিছু দেখলে বা আপনার মন মত না হলেই কাউকে বানিয়ে দিচ্ছি ফাসেক, কাউকে ফেতনাবাজ আর কাউকেবা আপনাদের নব্য আবিষ্কৃত ‘মডারেট ‍মুসলিম’। প্রিয় ভাই, ইসলামকে ‘ইসলামের চোখ’ দিয়েই বিবেচনা করতে হবে। আপনার চোখ দিয়ে নয়।


আচ্ছা কেউ কী বলছে পারেন, ‘উপমহাদেশের এই সকল মুসলিমদের আর কবে শিক্ষা হবে?’

পঠিত : ৫৭৯ বার

মন্তব্য: ০