Alapon

||অপ্রাসঙ্গিক বিতর্ক যখন বিভক্ত করে||

অপ্রাসঙ্গিক ও নিরর্থক বিষয় নিয়ে আমরা একটু বেশি মাতামাতি করি। যেটাতে লাভ তো নেই বরং ক্ষতির সম্ভাবনাই বেশি থাকে। মূল বা প্রয়োজনীয় বিষয় গুলি তখন আমাদের নজরের বাইরে চলে যায়। দ্বীনের সামান্য বিষয় নিয়ে বিতর্ক করে আমরা আমাদের গোটা উম্মাহকেই বিভক্ত করে ফেলেছি। আসলে শয়তানের ধোঁকা বড়ই কঠিন। ঈমানদারদের জন্য এক বিরাট চ্যালেঞ্জ।

আল্লাহ তা'আলা বলেন,

سَیَقُوْلُوْنَ ثَلٰثَةٌ رَّابِعُهُمْ كَلْبُهُمْ١ۚ وَ یَقُوْلُوْنَ خَمْسَةٌ سَادِسُهُمْ كَلْبُهُمْ رَجْمًۢا بِالْغَیْبِ١ۚ وَ یَقُوْلُوْنَ سَبْعَةٌ وَّ ثَامِنُهُمْ كَلْبُهُمْ١ؕ قُلْ رَّبِّیْۤ اَعْلَمُ بِعِدَّتِهِمْ مَّا یَعْلَمُهُمْ اِلَّا قَلِیْلٌ١۫۬ فَلَا تُمَارِ فِیْهِمْ اِلَّا مِرَآءً ظَاهِرًا١۪ وَّ لَا تَسْتَفْتِ فِیْهِمْ مِّنْهُمْ اَحَدًا۠

কিছু লোক বলবে, তারা ছিল তিনজন আর চতুর্থজন ছিল তাদের কুকুরটি। আবার অন্য কিছু লোক বলবে, তারা পাঁচজন ছিল এবং তাদের কুকুরটি ছিল ষষ্ঠ, এরা সব আন্দাজে কথা বলে। অন্যকিছু লোক বলে, তারা ছিল সাতজন এবং অষ্টমটি তাদের কুকুর। বলো, আমার রবই ভাল জানেন তারা ক’জন ছিল, অল্প লোকই তাদের সঠিক সংখ্যা জানে। কাজেই তুমি সাধারণ কথা ছাড়া তাদের সংখ্যা নিয়ে লোকদের সাথে বিতর্ক করো না এবং তাদের সম্পর্কে কাউকে কিছু জিজ্ঞাসাবাদও করো না।[১]

"এর অর্থ হচ্ছে তাদের সংখ্যাটি আসল নয় বরং আসল জিনিস হচ্ছে কাহিনী থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা। কিন্তু কিছু মানুষ মূল জিনিস থেকে দৃষ্টি সরিয়ে এই মর্মে অনুসন্ধান ও গবেষণা শুরু করে দেয় যে, আসহাবে কাহাফ কতজন ছিলেন, তাদের নাম কি ছিল, তাদের কুকুরের গায়ের রং কি ছিল। এসব এমন ধরনের লোকদের কাজ যারা ভেতরে শ্বাস ফেলে দিয়ে শুধুমাত্র বাইরের ছাল নিয়ে নড়াচড়া করা পছন্দ করে।
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুমিনদের এ শিক্ষা দিয়েছেন যে যদি অসংলগ্ন বিতর্কের অবতারণা হয় তাহলে তোমরা তাতে যোগ দিবে না এবং এ ধরনের প্রশ্নের জবাব দেওয়ার জন্য অনুসন্ধানে লিপ্ত হয়ে নিজেদের সময় নষ্ট করবে না।" [২]
"তাই কোরআন রাসুল সা: কে বিতর্ক পরিহার করার নির্দেশ দিচ্ছে। নিরর্থক ও অনুপকারী বিষয়ে বুদ্ধি খরচ না করায় ইসলামের বিধান।" [৩]
আজকে আমাদের সমাজে অপ্রয়োজনীয় ও নিরর্থক কাজের আলোচনা বেশি হয়ে থাকে। দ্বীনকে দূরে সরিয়ে দিয়ে নিজেদের ভেতর চলা অযথা বিতর্কে আমাদের মূল্যবান সময় নষ্ট করছি। আমাদের মূলনীতি থেকে দূরে সরে যাচ্ছি। অনেকেতো নিরর্থক বিষয় গুলোর মধ্যেই দ্বীনকে খুঁজে বেড়ায়।শয়তানের নেক সূরতের ধোঁকা ছাড়া তা আর কিছুই নয়।
আমাদের অনর্থক আলোচনার বিষয় গুলো যেন নতুন ফিরকার জন্ম দিয়েছে। যা আমাদেরকে দিনের মূল সৌন্দর্য থেকে দূরে সরিয়ে দিচ্ছে।" এই ফিরকা সমূহকে সাইয়েদ আবুল আ'লা মওদূদী সাহেব চার ভাগে ভাগ করেছেন।
১. দ্বীনের সাথে সম্পর্কহীন কোন কিছুকে দিনের মধ্যে শামিল করা এবং মাপকাঠি হিসেবে গ্রহণ করা।
২. কোন মাসআলাকে কোরআন-সুন্নাহর চাইতে বেশি গুরুত্ব দেওয়া।
৩. ইজতেহাদি এই বিষয়ে বাড়াবাড়ি করা।
৪. কোন ব্যক্তিকে নিয়ে অতিরিক্ত বাড়াবাড়ি করা।"[৪]

ওস্তাদ নোমান আলী খান তার একটি লেকচারে বলেন,
"আসলে মূলনীতির আমরা কোন ধার ধারি না। অত্যাবশ্যকীয় মূলনীতিগুলো প্রাধান্য দেওয়ার কারণে যে ধর্মের হওয়ার কথা ছিল সুন্দর, তা হয়েছে আজ কদাকার। যেসব বিষয় আমাদের সঙ্ঘবদ্ধ করে সেসব বিষয়, যেসব বিষয়ে আমাদের বিভক্তি করে তার চেয়ে বেশি শক্তিশালী।" [৫]

আজকে আমরা যখন নিজেদের মধ্যে বাড়াবাড়ি করে দিন কে কঠিন ও হাসির পাত্রে রূপান্তর করছি। অন্যদিকে আমাদেরকে মূল বিষয় থেকে দূরে সরিয়ে রেখে দিন বিরোধী শক্তি ফায়দা লুটছে। আল্লাহ যেন আমাদের চিন্তা-চেতনায় পরিবর্তন আনার তৌফিক দান করেন। আমাদের সকল কর্মকান্ড দ্বীনের জন্য কবুল করেন।

পারিভাষিক শব্দ,
১.মূল বা প্রয়োজনীয়=ইসলামের অত্যাবশ্যকীয় বিষয়।
২.দ্বীন= দ্বীন ইসলাম
৩. অনর্থক বা অপ্রাসঙ্গিক=কোরআন ও হাদিসে যার গুরুত্ব কম বা নেই।
তথ্যসূত্র:
১. সূরা কাহাফ ১৮/২২
২. তাফহীমুল কুরআন। সূরা কাহাফ, টিকা ২৩।
৩. ফি যিলালিল কোরআন। সূরা কাহাফের ২২ নং আয়াতের ব্যাখ্যা
৪. সত্যের সাক্ষ্য- সাইয়েদ আবুল আ'লা মওদুদী (পৃষ্ঠা ৩১-৩২)
৫.https://fb.watch/aVUB7Pq5on/

পঠিত : ৬২৬ বার

মন্তব্য: ০