Alapon

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নাকি উচ্চতর মাদ্রাসা?

“ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় উচ্চতর মাদ্রাসায় পরিণত হয়েছে এবং এটা কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।”
-ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. মেসবাহ।
.
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরিক্ষায় সর্বমোট ২০০ নাম্বারের পরিক্ষা হয়। এর মধ্যে যাদের এসএসসি আর এইচএসসি দুইটিতেই জিপিএ ফাইভ থাকে তারা মোট ৮০ নাম্বার আগে থেকেই পেয়ে যায়। বাকি ১২০ নাম্বার পরিক্ষা দিয়ে অর্জন করতে হয়। আর এখানেই প্রতিযোগিতাটা হয়। কারণ যারা পরিক্ষা দেয় তাদের অধিকাংশেরই নাম্বার ৮০ এর মধ্যে ৭০-৮০ এর মধ্যে থাকে।
.
উনি বললেন, স্কুল-কলেজে পড়ুয়াদের নাকি অনেক সংগ্রাম করে নাম্বার পেতে হয়। আর মাদ্রাসা লেভেলে নাকি নাম্বার শুরুই হয় ৯০ থেকে। তাই মাদ্রাসার ছাত্ররা এমনি এমনি ৮০ পেয়ে যায়। অথচ একই নাম্বার পেতে নাকি আমাদের সেক্যুলার প্রোডাক্টদের মাথার ঘাম পায়ে ফেলতে হয়! মাদ্রাসায় কী পড়ানো হয় তা আমি খুব বেশি জানি না। কিন্তু জেনারেল শিক্ষা ব্যবস্থায় তো নিজেই পড়েছি। এখন প্রশ্ন ফাঁস করে এ প্লাস পাওয়া তো হাতের মোয়া। যে ছেলে ফিজিক্সের নরমাল একটা ইকুয়েশন লিখতে পারে না, সেও “আই এম জিপিএ ফাইভ” হয়ে যায়। বইয়ের মান, কোয়ালিটি দিনকে দিন শুধু কমছেই। পাঠ্যবইয়েও রাজনীতির অসুস্থ প্রবেশের কারণে, এখন জেনারেল থেকে প্রতি বছর কিছু গবেট বের হচ্ছে।
.
যদি মাদ্রাসায় সত্যিই নাম্বার ৯০ থেকে শুরু হয়, তাহলে ২০১৭ সালের এসএসসি পরিক্ষায় অন্যান্য বোর্ড থেকে মাদ্রাসা বোর্ডের রেজাল্ট তুলনামূলক খারাপ কীভাবে হয়? ২০১৭ সালের এসএসসিতে-
রাজশাহীতে পাসের হার ৯০ দশমিক ৭০ শতাংশ।
ঢাকা বোর্ডে পাসের হার ৮৬ দশমিক ৩৯ শতাংশ।
চট্টগ্রাম বোর্ডে পাসের হার ৮৩ দশমিক ৯৯ শতাংশ।
দিনাজপুর বোর্ডে পাসের হার ৮৩ দশমিক ৯৮ শতাংশ।
যশোর বোর্ডে পাসের হার ৮০ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ।
কারিগরি বোর্ডে (ভকেশনাল) পাসের হার ৭৮ দশমিক ৬৯ শতাংশ।
আর মাদ্রাসা বোর্ডে (দাখিল) পাসের হার ৭৬ দশমিক ২০ শতাংশ।
[দৈনিক প্রথম আলো ৪ মে, ২০১৭]
.
যদি ৯০ থেকেই নাম্বারিং শুরু হয়, তাহলে ২৪ শতাংশ ফেইল করে কীভাবে? ১০০%-ই তো জিপিএ ফাইভ পাবার কথা। দেশের শীর্ষস্থানীয় একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩৪ বছর অধ্যাপনা করা একজন প্রফেসরের মুখে এমন অসত্য কথা শুধু লজ্জার না, ঘৃণারও যোগ্য।
.
উনি আরো বলেছেন, মাদ্রাসার ছেলেদের ইংলিশ নাকি ক্লাস ফোরের বাচ্চাদের মতো। হ্যাঁ! এটা সত্যি, ওরা ইংলিশ এভারেজে আমাদের চেয়ে কম পারে। কিন্তু এদের অনেকেই একই সাথে বাংলা, ইংলিশ, আরবি এবং উর্দু শেখার চেষ্টা করে। ১৮-১৯ বছরেই চারটা ভাষা নিয়ে নাড়াচাড়া করা সহজ কিছু না। জেনারেল লাইনে দুইটা ভাষা শিখতেই অনেকের কালোঘাম ছুটে যায়। “আই এম জিপিএ ফাইভ”-মার্কা অবস্থা হয়ে যায়। তো আমি কি এ জন্য সব জেনারেলদের এক কাতারে ফেলবো নাকি?
.
আসলে এদের গাত্রদাহ হচ্ছে, যখন এরা দেখছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানের ৬০ ভাগ সিট মাদ্রাসার ছেলেরা দখল করে নিচ্ছে। আর সেটা জেনারেল ছেলেদের সাথে প্রতিযোগিতা করেই। আর যদি বলেন তাদের যোগ্যতা ছিল না, তাহলে সেটা আপনাদের পরিক্ষা ব্যবস্থার দোষ। ড. মেসবাহ এর মতো মানুষেরা আসলে সেক্যুলার পরিবেশে ধর্মীয় আধিপত্য দেখে ভয় পেয়ে যাচ্ছেন। এদের ভয় পাওয়া আশা করি আরো বাড়বে বৈ কমবে না। শুধু মাদ্রাসা থেকেই যে হুজুররা উঠে আসবে তা নয়, দেখবেন সেকুলার প্রোডাক্টরাই হুজুর হয়ে যাচ্ছে। ‘আপনাদের সন্তান’-রাই একদিন আপনাদের বিরুদ্ধে দাঁড়াবে। হক্কের পথে কলম ধরবে। আল্লাহ্‌র নূরকে চারদিকে প্রজ্জ্বলিত করবে-
“তারা তাদের মুখের ফুৎকারে আল্লাহর নূরকে নিভিয়ে দিতে চায়, কিন্তু আল্লাহ তাঁর নূরকে পূর্ণতাদানকারী। যদিও কাফিররা তা অপছন্দ করে।” [সূরা সফ ৬১:৮]
.
আল্লাহ্‌র দ্বীনের সাথে বহু লোক শত্রুতা করেছে। তারা হারিয়ে গেছে। ইসলাম এখনো টিকে আছে। টিকে থাকবে। আমি জানি আপনাদের কষ্ট হয়। যখন আপনাদের নষ্টামির পরিবেশে বেড়ে ওঠা ছেলেরা আপনাদের নোংরামি গ্রহণ করে না, তখন আপনাদের প্রচণ্ড ক্রোধ হয়, তাই না?
.
“তোমরা তোমাদের রাগ নিয়ে মরতে থাকো! নিশ্চয় আল্লাহ অন্তরের গোপন বিষয় সম্পর্কে ভালো করেই জানেন।” [সূরা আলে ইমরান ৩:১১৯]

পঠিত : ৮৬৭ বার

মন্তব্য: ০