Alapon

আয়েশা রাঃ এর কেন সন্তান হয়নি?



হযরত খাদিজা রাঃ এবং মারিয়া কিবতিয়া রাঃ ছাড়া রাসুলের আর কোন বিবির ঘরে সন্তান হয়নি। এটা ছিল আল্লাহর ফায়সালা ও বিশেষ হিকমাত। এখানে সন্তানদানে না তাদের অক্ষমতা ছিল আর না অনিচ্ছা ছিল। পুরো ব্যাপারটাই আল্লাহ প্রদত্ত বিষয়। ইসলামি ইতিহাসের সকল স্কলার এটাকে আল্লাহর হিকমত হিসেবেই দেখেছেন। তাদের কেউ এমনটা দাবি করেননি যে, অনিচ্ছার কারণে আল্লাহর রাসুল ও অবশিষ্ট উম্মাহাতুল মুমিনিনরা সন্তান গ্রহণ করেননি।

এখন উম্মাহাতুল মুমিনিনদের ব্যাপারে আল্লাহর এই বিশেষ হিকমতের সাথে যারা বর্তমান পশ্চিমা ফেমিনিজমের কথিত স্বাধীন জীবনের দর্শন থেকে সন্তান না গ্রহণের ব্যাপারটিকে তুলনা করছেন, তারা কোন দৃষ্টিকোণ থেকে এটা করছেন ব্যাপারটা কোনভাবেই বোধগম্য নয়। নাকি তারা নিজেরাও উল্লেখিত নারীবাদী চিন্তায় আক্রান্ত সেটাও চিন্তার বিষয়।

সন্তান না গ্রহণ কখনোই ইসলামে কাঙখিত, উৎসাহিত বিষয় নয়। বরং ইসলামে সন্তানগ্রহণের প্রতি বিশেষ উৎসাহ প্রদান করা হয়েছে। আল্লাহর রাসুল বংশগতভাবে প্রজনন ক্ষমতায় শক্তিশালী মেয়েকে বিয়ে করার জন্য উদ্ধুদ্ধ করেছেন।এমনকি তিনি যখন খাদিজা রাঃ কে স্মরণ করতেন, তখন বিশেষভাবে খাদিজা রাঃ থেকে সন্তান লাভের বিষয়টিকে তিনি মনে আনতেন। আল্লাহ যাদের ভাগ্যে সন্তান রাখেননি তাদের কথা ভিন্ন। যারা (নারী পুরুষ উভয়েই) স্বাধীন জীবনের জন্য বাঁধা মনে করে কিংবা গর্ভধারণ নীতিকে ঘৃণা করে সন্তান গ্রহণ থেকে টোটাললি দূরে থাকেন, তাদের সাথে এদের তুলনা হয়না। এই পার্থক্য একদম সুস্পষ্ট। এখানে ধোয়াশার কিছু নেই।
বরং যাদেরকে আল্লাহ তায়ালা সন্তান দিচ্ছেন না তাদের জন্য ও সমাজের জন্য উম্মাহাতুল মুমিনিনরা স্বান্তনার প্রতীক হতে পারে। মহান আল্লাহ তায়ালা তাদের ভাগ্যেও সন্তান রাখেননি। কিন্তু এই নিয়ে তাদের প্রতি মুসলিম সমাজের যেমন বাঁকা দৃষ্টি ছিল না, তেমনিভাবে তারা নিজেরাও বিশেষ কোন অভিযোগ করতেন না নিজেদের প্রতি। বরং নিজ ভাইবোন, আত্মীয় স্বজনদের সন্তান ও অনেক ইয়াতিম সন্তানদের প্রতিপালনের মাধ্যমে তারা নিজেদের মাতৃত্ব ও পিতৃত্বের স্বাদ ও অনুভূতিকে উৎযাপন করেছেন।

উদাহরণস্বরূপ হযর‍ত আয়েশা রাঃ এর কথাই বলা যাক। আমরা আয়েশা রাঃ কে কেবল এভাবে উপস্থান করি যে, তিনি সংসার বিমুখ ছিলেন। ইলম অর্জন ও শিক্ষাদানেই পুরোটা সময় ব্যয় করেছেন। এটা আম্মাজানের জীবনীর আংশিক উপস্থাপন। আম্মাজান রাঃ অনেক ইয়াতিম সন্তানের প্রতিপালন করেছেন। নিজ বোন আসমার ছেলে আব্দুল্লাহ ইবনে যুবায়র রাঃ কে তিনি মায়ের মতই লালন পালন করেছেন। এজন্য রাসুল সাঃ আয়েশা রাঃ কে উম্মে আব্দুল্লাহ উপাধি দিয়েছিলেন।

আয়েশা রাঃ এর ভাই মুহাম্মাদের ছিল দুই ছেলে। তিনি মিসরে শহিদ হওয়ার পর আয়েশা রাঃই তাদেরকে প্রতিপালন করেন। দুই ছেলের একজন ছিলেন প্রখ্যাত ফকিহ ফকিহ কাসিম বিন মুহাম্মাদ। তিনি তাদের প্রতি আয়েশা রাঃ এর যত্নের বিবরণ দিতে গিয়ে বলেছেন, নিজ পিতা মাতার চেয়েও তিনি আয়েশা রাঃ কে অধিক সোহাগিনী ও স্নেহশীল পেয়েছেন। তাদের নিজ হাতে খায়িয়ে দিতেন। নিজে তাদের সাথে খেতেন না। তাদের খাবার পর যা থাকত তা খেয়ে নিতেন। তাদের গোসল করাতেন, চুল আছড়িয়ে দিতেন। জামা পরিয়ে দিতেন। শুধু এরা নয়, আম্মাজান আয়েশা রাঃ এরকম আরো বেশ কয়েকজনের সন্তানকে প্রতিপালন করেছেন।

শত আফসোস তাদের জন্য, যারা উম্মাহর শেষ্ঠ নারীদের উপর নিজেদের ভ্রান্ত পশ্চিমা চিন্তাচেতনার ভীত দাঁড় করাতে চায়। তাদের জীবনকে খণ্ডিতভাবে উপস্থাপন করে নারীবাদি লাইফস্টাইলের সাথে মিলাতে চায়। এদের এসব খণ্ডিত প্রচারণায় আমাদের অনেক সরলমনা বোনেরা বিভ্রান্ত হচ্ছেন। অনেক বোন নিজের অজান্তেই এসব চিন্তাকে শুদ্ধ ভেবে বসে আছেন। যেটা তাদের বিভিন্ন আচরণে প্রকাশ পেয়ে যায়। অনলাইনে একটু পরিচিত যেসব আলেমা ও দায়ী বোনেরা আছেন, তাদের প্রতি আবদার থাকবে এসব বিষয় নিয়ে কথা বলার। নেট জগতে এসে কুল কিনারা না চেনে সরলমনা অনেক বোনই বিকৃতমনা কিছু মেয়েদের কথিত বিপ্লবী ও সংস্কারক কথাবার্তায় বিভ্রান্ত হচ্ছে। এবং তাদেরকে নিজেদের মুক্তির দিশা মনে করে বসছে। অথচ এরা তাদেরকে অবাধ্যতা ও ভ্রষ্টরার সেই গর্তের দিকে নিয়ে যাচ্ছে, যার পরিণাম হল আল্লাহর দ্বীন থেকে বিচ্যুতি।

~ইফতেখার সিফাত

পঠিত : ৭৭০৬ বার

মন্তব্য: ০