Alapon

ইসলামী আন্দোলন: সাফল্যের শর্তাবলী



ইসলামী আন্দোলন: সাফল্যের শর্তাবলী
সাইয়্যেদ আবুল আলা মওদূদী রহিমাহুল্লাহ


♣ভূমিকাঃ
পার্থিব জীবনে সুখের প্রত্যাশায় আমরা সহজ কাজগুলো করে ফেলি খুব দ্রুতই। কঠিন কাজগুলো যে করি না তা না। পিতা তার সন্তানের ভালোর জন্য নিজে মাথা থেকে পা পর্যন্ত ঘাম ঝড়ায়, তবুও সন্তানকে বুঝতে দেয়না। তার স্বপ্ন, একদিন সন্তান বড় হবে তার নাম উজ্জ্বল করবে। দেশের, জনগণের জন্য কাজ করবে। আবার 'মা' নামক আপন মানুষটাও অনেক কষ্ট ভোগ করে পৃথিবীতে আমাদেরকে এনেছেন। পৃথিবীতে সন্তানের আপন বলতে বাবা-মা ছাড়া আর তেমন কেউ নেই। সকলেই আমরা পার্থিব জীবনের সফলতা খুঁজে বেড়াই।

যখন আমরা ইসলামী আন্দোলনের কথা বলি, ইসলামের পথে আহ্বান করি তখন অনেক বাবা-মা-ই এটাকে নেগেটিভলি নেন। ভয় ধরিয়ে দেন সন্তানকে। ইসলামী আন্দোলন করা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য কর্তব্য। কিন্তু আমরা এটা থেকে অনেক দূরে। আবার যারা ইসলামী আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ত তারা অনেক সময় হতাশ হয়ে পড়ে। এই হতাশা কেটে নতুন এক সোনালী সমাজ নির্মাণের প্রত্যয়ে মওলানা মুওদূদী রহিমাহুল্লাহ'র লেখা শিক্ষামূলক বই 'ইসলামী আন্দোলন: সাফল্যের শর্তাবলী'।

বইয়ের নামঃ
'আন্দোলন' নামক শব্দটা শুনলে আমরা অনেকেই ভাবি মারামারি, কাটাকাটি ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু ইসলামী আন্দোলন বলতে কি এটাই বুঝায়? মূলত আন্দোলন দ্বারা বুঝায় 'কোনো কিছুকে পরিবর্তনের চেষ্টা করা'। কিন্তু সেটা কি কাউকে মেরে ফেলে হবে? কখনোই না। আন্দোলন করতে অনেক কিছুর প্রয়োজন। নৈতিকতা বিশেষ করে থাকতেই হয়। এরকম ব্যক্তিগত, দলীয় অনেক গুলো নীতির সমন্বয়ে গঠিত হয়েছে বইটি। এজন্যই নাম 'ইসলামী আন্দোলন: সাফল্যের শর্তাবলী'।


লেখক পরিচিতিঃ
'আধুনিক ইসলামের সবচেয়ে নিয়মতান্ত্রিক চিন্তাবিদ' উপাধিতে যিনি ভূষিত, উপমহাদেশের প্রখ্যাত ইসলামিক স্কলার, যিনি মুসলিম মিল্লাতের সামনে ইসলামের আসল রূপ তুলে ধরেছেন সাইয়্যেদ আবুল আলা মওদূদী রহিমাহুল্লাহ। ভারতের হাইদ্রাবাদে জন্মগ্রহণ করেন মুসলিম এই বীর। নিজে ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট হোন এবং বর্তমান যুগের উল্লেখযোগ্য স্কলার'সরা ওনার মাধ্যমে ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট হোন। মুসলিম মিল্লাতের জন্য অনেক অবদান ওনার। যা ভুলবার নয়। ওনার লেখা উল্লেখযোগ্য গন্থের মধ্যে রয়েছে 'তাফহিমুল কোরআন, তরজমাতুল কোরআন, হাকিকত সিরিজ' ইত্যাদি। যুক্তরাষ্ট্রে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

সূচিপত্রঃ
বইটিতে আলোচনা করা হয়েছে ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের কি কি গুণ অর্জন করতে হবে এবং কি কি গুণ বর্জন করতে হবে। এরপর আলোচনা করা হয়েছে আমাদের সমাজের বর্তমানে হতাশার দিক ও আশার দিক, সাথে রয়েছে করণীয় দিক। এগুলো নিয়ে সাজানো বইটি।

পাঠ-সংক্ষেপঃ
সর্বপ্রথম বইটির ভূমিকাতে বলা হয়েছে তিনটি দিকের কথা। যদিও আমরা এগুলো সম্পর্কে কিছুটা অবগত রয়েছি। যেমন,
*হতাশার দিক
*আশার দিক
*করণীয় দিক।
টপিক দেখে বুঝা যাচ্ছে এরমধ্যে কি কি থাকতে পারে। আমাদের সমাজের বর্তমানে এই তিনটি দিকের খুবই প্রয়োজন। হতাশার দিকে রয়েছে সমাজব্যবস্থা নিয়ে আমাদের হতাশাগুলো কি কি বা কি হতে পারে। আবার এরকমি আশার দিক ও করণীয় দিকে রয়েছে।

এরপর রয়েছে দুটি গুণাবলীর কথা। যেমন,
*অর্জনীয় গুণাবলী
*বর্জনীয় গুণাবলী।
এই দুটো গুণাবলী সম্পর্কে প্রত্যেক মুসলমানের জানা প্রয়োজন। আমরা মুসলমানে নামে বেড়ে উঠতেছি কিন্তু আমাদের কর্ম সম্পর্কে আমরা অবগত নয়। লেখক অর্জনীয় গুণাবলীকে আবার তিনটি ভাগে ভাগ করেছেন!
১.ব্যক্তিগত গুণাবলী
২.দলীয় গুণাবলী
৩.পূর্ণতাদানকারীর গুণাবলী।
এগুলোর ভেতরে রয়েছে আবার আরো কিছু বৈশিষ্ট্য। এরপর বর্জনীয় গুণাবলীতে লেখক বর্ণনা করেছেন সেইসব বিষয় নিয়ে যা আমাদের মাঝে প্রায় লক্ষ্য করা যায়। ব্যাক্তিগত বা দলীয় খারাপ দিক বা মানবিক দূর্বলতা সম্পর্কে তিনি অবহিত করেছেন।

কিছু লাইনঃ
প্রত্যেক বইয়েই এমন কিছু লাইন থাকে যা পাঠকের মনকে ছুঁয়ে দেয়। যেমন,
→মানুষ সংশোধন ও জীবন পরিগঠনের কাজ অন্তহীন ধৈর্যের মুখাপেক্ষী।
→দুনিয়ার যেগুলো লাভ ক্ষতিকর সেগুলো বর্জন করকে হবে।
→এই গুণাবলী ব্যতীত ইসলামী কাজ করা যায় না।
→মানবিক মনস্তত্ব অনুধাবন করে সে অনুযায়ী কথা বলা প্রজ্ঞার অভিব্যক্তি।
এরকম আরো অনেক রয়েছে।

সাহিত্যের পাতায়ঃ
মওলানা মওদূদী রহিমাহুল্লাহ একজন সাহিত্যিক ছিলেন। ভাবা যায়! একজন আলেম, একজন কলামিস্ট, একজন চিন্তাবিদ তিনি। প্রায় বইয়েই তিনি পাঠককে দিতে চেয়েছেন সাহিত্যের স্বাদ। লেখায় ছিল মাধুর্য। অত্যন্ত সাবলীল, বোধগম্য। ইসলামকে তিনি সাহিত্যের জগতে ছড়িয়ে দিতে চেয়েছেন।

পাঠ পর্যালোচনাঃ
বইয়ের অধিকাংশ কথা হয়েছে নীতি-নৈতিকতা নিয়ে। অনেক গুলো শিক্ষা রয়েছে। আমার ভালো লেগেছে বইগুলো। যারা পড়তে চান, তাদেরকে স্বাগতম।

ব্যক্তিগত রেটিং: ১০/১০

~আব্দুল্লাহ আল কাফি জোহা

পঠিত : ১৪৪১ বার

মন্তব্য: ০