Alapon

লাহোর প্রস্তাব ও জিন্নাহর চালাকি!



আজ ২৩ মার্চ। পাকিস্তান প্রস্তাব তথা লাহোর প্রস্তাবের দিন। লাহোর প্রস্তাব নিয়ে জিন্নাহর একটি দূরদর্শী পরিকল্পনা ছিল। যা তাকে মুসলিমদের একক নেতায় পরিণত করে। দ্বি-জাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে মুসলিমদের জন্য আলাদা রাষ্ট্র তথা পাকিস্তান গঠন করা ছিল মুসলিম লীগের রাজনৈতিক এজেন্ডা।

মুসলিম লীগের বাইরে মুসলিমদের দুইটি আঞ্চলিক দল ছিল ব্যাপক শক্তিশালী। জিন্নাহ চেয়েছেন ঐ দুই দলের নেতা কর্মী ও সমর্থকরা যেন বিনাবাক্যে মুসলিম লীগের এই এজেন্ডা কবুল করে নেয়। এর জন্য যাতে আলাদা করে সমর্থন আদায় করতে না হয়। কারণ ইতোমধ্যে হুসাইন মাদানীর নেতৃত্বে দেওবন্দীদের একটি বড় অংশ পাকিস্তান প্রস্তাবের বিরোধীতা করে আসছে।

জিন্নাহর প্ল্যান ছিল ১৯৪০ সালের মুসলিম লীগের সাধারণ অধিবেশনে পাকিস্তান প্রস্তাব পেশ করবেন। এজন্য তিনি আগেই পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রীকে দিয়ে মুসলিম লীগ নেতাদের একটি কমিটি গঠন করেন। এই কমিটির কাজ ছিল পাকিস্তান প্রস্তাবের খসড়া তৈরি করা। সবকিছু আগেই ঠিক ছিল। শুধু ইউনিয়নিস্ট পার্টির প্রধান ও পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী সিকান্দার সাহেবকে কমিটির প্রধান করে দেন। কমিটির প্রধান হয়ে তিনি খসড়া তৈরিতে অংশ নেন এবং খসড়া তৈরি হয়। ইউনিয়নিস্ট পার্টি ছিল পাঞ্জাবের মুসলিমদের দল।

মুসলিমদের আরেকটি আঞ্চলিক দল ছিল কৃষক প্রজা পার্টি। এর প্রধান ছিলেন একে ফজলুল হক। তিনি হক সাহেব নামে পরিচিত ছিলেন। জিন্নাহ এই দলের আনুকূল্য পাওয়ার জন্য হক সাহেবকে লাহোরে মুসলিম লীগের মিটিং-এ দাওয়াৎ করেন এবং মুসলিম জাতির ইশতেহার ঘোষণা করার প্রস্তাব দেন।

যথারীতি হক সাহেব দাওয়াত কবুল করেন এবং মুসলিম লীগের মিটিং-এ অতিথি হিসেবে যোগ দেন। জিন্নাহ ১৯৪০ সালে লাহোরে অনুষ্ঠিত মুসলিম লীগের সাধারণ সভার সভাপতিত্ব করেন। তিনি বাংলার মুখ্যমন্ত্রী হক সাহেবকে 'শেরে বাংলা' উপাধি দেন এবং সিকান্দার সাহেবের তৈরিকৃত খসড়া প্রস্তাব পাঠ করার অনুরোধ করেন। সেদিন থেকে হক সাহেবের নাম হয় শেরে বাংলা একে ফজলুল হক।

মূলত পাকিস্তান প্রস্তাব ছিল মুসলিম লীগের এজেন্ডা। তা ঘোষিত হয়েছে। এর প্রস্তুতকারক হিসেবে সুনাম ও খ্যাতি হয়েছে পাঞ্জাবের সিকান্দার সাহেবের। এতে ইউনিয়নিস্ট পার্টির সকল নেতাকর্মী পাকিস্তান প্রস্তাবকে নিজেদের প্রস্তাব মনে করে। একইভাবে এটি হক সাহেবের মাধ্যমে ঘোষিত হওয়ায় কৃষক প্রজা পার্টির সকল নেতাকর্মী এটাকে নিজেদের প্রস্তাব বলে গ্রহণ করে।

এভাবে জিন্নাহ সাহেব পাকিস্তানের ব্যাপারে মুসলিমদের তিনটি দলকে একীভূত করে ফেললেন।

১৯৪২ সালে মন্ত্রীসভা নিয়ে হক সাহেব ও মুসলিম লীগের মধ্যে দ্বন্দ্ব তৈরি হয়। হক সাহেব দ্বিজাতিতত্ত্বের বিরোধীতা করতে থাকেন। তিনি কংগ্রেসের সাথে মিলে একইসুরে অখন্ড ভারতের জন্য ক্যাম্পেইন শুরু করেন। এতে তার দলের নেতাকর্মীরাই বিভ্রান্ত হয়। তারা হক সাহেবকে বয়কট করেন। কৃষক প্রজা পার্টির নেতাকর্মীরা অধিকাংশই মুসলিম লীগে যোগ দিতে শুরু করেন।

ফলশ্রুতিতে ১৯৪৬ সালের নির্বাচনে মুসলিমদের জন্য সংরক্ষিত ১১৭ আসনের মধ্যে ১১০ টি আসন পায় মুসলিম লীগ। মাত্র চারটি আসন পায় কৃষক প্রজা পার্টি। বাংলায় মুসলিম লীগের একচ্ছত্র বিজয় কখনোই সম্ভব হতো না যদি জিন্নাহ হক সাহেবকে দিয়ে পাকিস্তান প্রস্তাব না পড়াতেন।

বি.দ্র.- বাঙালির প্রচলিত ইতিহাস এমনভাবে সাজানো হয়েছে যে, তারা মনে করে হক সাহেব এই লাহোর প্রস্তাব নিজে প্রস্তুত করে মুসলিম লীগের অধিবেশনে উত্থাপন করেছেন। আসলে তিনি পাঠক মাত্র। আর ১৯৪২ সাল থেকে তিনি নিজের পঠিত প্রস্তাবের বিরোধীতা করে এসেছেন।

পঠিত : ২৪৯ বার

মন্তব্য: ০