Alapon

ইসলামী রাষ্ট্র কিভাবে প্রতিষ্ঠিত হবে

সূচনা

সাধারণত প্রতিষ্ঠিত একটি রাষ্ট্রকে পরিবর্তন করার অর্থ হচ্ছে সেই দেশের সংবিধান, আদর্শ এবং রীতিনীতি গুলোকে পরিবর্তন করা। আর এই পরিবর্তন করার জন্য দরকার হয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়া। ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য বর্তমানে দুটি উপায় আছে। একটি হচ্ছে, সামরিক শক্তি প্রয়োগ করে ক্ষমতা গ্রহণ। দ্বিতীয় হচ্ছে, গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ক্ষমতা গ্রহণ। প্রথম পদ্ধতিটা ততোটা কার্যকর হয় না। কারণ জনগণের ইচ্ছার বাইরে গিয়ে কিংবা তাদের উপর কোন কিছু চাপিয়ে দিয়ে কোন কিছু প্রতিষ্ঠা করা বা অর্জন করা কখনো সম্ভব হয় না। তা ছাড়া এই পদ্ধতির শাসনে জনগণ যে কোন সময় অন্যায়ের প্রতিবাদে জেগে উঠতে পারে। ফলে শাসকদের যে কোন সময় ক্ষমতা থেকে চলে যাওয়ার সমুহ সম্ভাবনা থাকে।
আর দ্বিতীয় পদ্ধতিটা কার্যকর হয় এজন্য যে, এখানে যারা ক্ষমতায় আসে তারা জনগণের সমর্থন নিয়েই ক্ষমতায় আসে। ফলে জনগণ তাদের বিরুদ্ধে ক্ষেপে উঠে না। তাঁরাও জনগণের ইচ্ছার বাইরে গিয়ে কিংবা জনগণের অকল্যাণ হয় এমন কিছু করা থেকে বিরত থাকে।


স্ববাভাবিক পক্রিয়া

প্রতিষ্ঠিত একটি রাষ্ট্রে অন্য একটি আদর্শ প্রতিষ্ঠা করতে চাইলে সেই আদর্শের ধারক বাহকদের ক্ষমতায় আসা জরুরি। কারণ ক্ষমতায় না আসলে রাষ্ট্রীয়ভাবে তারা কোন কিছু প্রতিষ্ঠা করতে পারবে না। আর ক্ষমতায় আসার মূল চাবিকাঠি হলো জনগণ। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে জনগণ যাদেরকে চায় তাঁরাই ক্ষমতায় আসতে পারে। এজন্য রাষ্ট্রীয়ভাবে কোন আদর্শ প্রতিষ্ঠা করতে চাইলে সেই আদর্শ আগে জনগণের মাঝে প্রতিষ্ঠা করতে হবে। তাদের বিবেকের মধ্যে যদি সেই আদর্শটি নাড়া দিতে সক্ষম হয় তখন রাষ্ট্রীয়ভাবে সেই আদর্শ প্রতিষ্ঠা করার জন্য তারাই প্রচেষ্টা শুরু করে দিবে। আর এই প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে নির্বাচনের সময় তারা সেই আদর্শের কর্ণধারদেরকে ক্ষমতায় আনার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করবে। যখন তারা ক্ষমতায় আসতে পারবে তখন ধীরে ধীরে তাদের প্রত্যাশিত আদর্শটি রাষ্ট্রীয়ভাবে বাস্তবায়নের জন্য সামনে এগুতে পারবে। আর জনগণের মাঝে যদি সেই আদর্শটি প্রভাব বিস্তার করতে না পারে তাহলে কখনোই একটি আদর্শ বর্তমান থাকা অবস্থায় সে জায়গায় আরেকটি আদর্শ বাস্তবায়ন করতে পারবে না।

তাই নতুন একটি আদর্শ প্রতিষ্ঠার জন্য প্রয়োজন-

• নতুন আদর্শের আলোকে মানুষের চিন্তা চেতনায় পরিবর্তন আনা।
• মানুষের মাঝে নতুন আদর্শের বীজ বপন করা যেই বীজ একদিন বড় বৃক্ষে রূপ লাভ করবে।
• সামষ্টিক প্রচেষ্টা চালানো।
• জনগণের মাঝে একটি শক্তিশালী আন্দোলন গড়ে তোলা।
• গ্রহণযোগ্য নেতৃত্ব তৈরি করা।
• নেতৃত্বের মধ্যে অনুসরণীয় চরিত্র সৃষ্টি করা।
• সামষ্টিক চরিত্র সৃষ্টি করা।
• সেই আদর্শের আলোকে কর্মপদ্ধতি ও কর্মকৌশল ঠিক করা।

উপরোক্ত বিষয় গুলো অনুসরণ করে যদি কেউ কোন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে চায় তাহলে আদর্শটি যেমনই হোক না কেন তা প্রতিষ্ঠিত হবেই এতে কোন সন্দেহ থাকবে না। কারণ আপনি যেই বীজটি রোপণ করবেন দীর্ঘ দিনের পরিচর্যার পর যখন তা ফল দেয়া শুরু করবে তখন সেই ফলই দিবে যে ফলের জন্য আপনি বীজ রোপণ করছিলেন। সীম বীজ রোপণ করে যেমন আপনি মরিচের আশা করতে পারেন না কিংবা করেন না, অনুরূপ আপনি যে আদর্শের বীজ রোপণ করছিলেন সেই আদর্শটাই একদিন ফুলে ফলে সুসজ্জিত হয়ে উঠবে, ভিন্ন কোন আদর্শ এখানে প্রতিষ্ঠা হবে না।


আদর্শিক রাষ্ট্রের বৈশিষ্ট্য

ইসলাম যে আদর্শিক রাষ্ট্রের কথা বলে সে আদর্শিক রাষ্ট্রের প্রথম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, এই রাষ্ট্রে জাতীয়তাবাদের কোন স্থান থাকবে না। নির্দিষ্ট ভূখন্ডকে কেন্দ্র করে এর কোন কার্যক্রমও পরিচালিত হবে না। বরং গোটা পৃথিবীবাসীকে এই রাষ্ট্রের সদস্য হিসেবে বিবেচনা করে পৃথিবীর সকল মানবের জন্য এই রাষ্ট্র কাজ করবে। ফলে রাষ্ট্রের দায়িত্বশীল ব্যক্তিগণ গোটা মানবজাতির কল্যাণে নিয়োজিত থাকবে। পৃথিবীর কোন একপ্রান্তেও যদি কেউ আঘাত প্রাপ্ত হয় মুসলিম নেতৃবৃন্দ সেই আঘাতে ব্যথিত হবে। যেমনটা নবি মুহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মুসলিমরা একটি দেহের ন্যায়। যার এক অংশ আঘাত পেলে তাঁর পুরা শরীর ব্যথা অনুভব করে।

এই আদর্শের উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠা খিলাফাতে রাশেদার দ্বিতীয় খলিফা হজরত উমর রাঃ বলেছিলেন, ফুরাত নদীর তীরে যদি খাদ্যাভাবে একটা কুকুরও মারা যায়, তার জন্য আমি উমরকে জবাবদিহি করতে হবে। এই হচ্ছে ইসলামের আদর্শিক রাষ্ট্রের চিত্র।

আরেকটা প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, এই আদর্শিক রাষ্ট্রে সার্বভৌমত্বের মালিক হবেন একমাত্র স্রষ্টা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআলা। মানুষ তাঁর প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করবে। এই প্রতিনিধি দুই ভাবে হতে পারে। এক। সরাসরি আল্লাহ কর্তৃক দায়িত্ব অর্পণ। যেমন- নবী রাসূলগণ।
দুই। নবী রাসূলগনের অনুসরণের মাধ্যমে।
আল্লাহর প্রতি আমাদের প্রতিনিধিত্ব হবে নবি মুহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনুসরণের মাধ্যমে।

আদর্শিক রাষ্ট্র পরিচালনায় নেতৃত্বের যেসব গুণাবলি থাকা প্রয়োজন-

• আল্লাহর ভয়
• জবাবদিহিতার অনুভূতি
• দুনিয়ার জীবনের উপর আখিরাতের জীবনকে অগ্রাধিকার দেয়া
• নৈতিক সাফল্যকে পার্থিব সাফল্যের চেয়ে গুরুত্ব দেয়া
• সকল কাজে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনকে প্রাধান্য দেয়া
• ব্যক্তিগত আর জাতিগত স্বার্থের দাসত্ব থেকে তারা মুক্ত থাকবে
• তারা মুক্ত থাকবে হিংসা-বিদ্বেস আর দৃষ্টির সংকীর্ণতা থেকে
• ধন-সম্পদ আর ক্ষমতার নেশায় তারা উন্মাদ হবে না
• ধন-দৌলতের লালসা ও ক্ষমতার লিপ্সায় হবে না তারা কাতর
• ধন-ভান্ডার হস্তগত হলেও যারা নিখুত আমানতদার প্রমাণিত হবে
• আর ক্ষমতা হস্তগত হলে জনগণের কল্যাণ চিন্তায় তারা বিনিদ্র রজনী কাটাবে।


“ইসলামী রাষ্ট্র কিভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়” বইয়ের আলোকে।

পঠিত : ৯৬১ বার

মন্তব্য: ২

২০২২-০৪-০২ ১২:৩৬

User
তেপান্তর

মা শা আল্লাহ ভাই। ভালো লিখেছেন। তবে একটা পিকচার যুক্ত করে দিলে আরো ভালো হতো।

submit

২০২২-০৪-০২ ১৪:৩৭

User
ইবনে মাসউদ :

জাযাকাল্লাহ ভাই।
ইনশাআল্লাহ। পরামর্শের জন্য ধন্যবাদ।

submit