Alapon

খিলাফত প্রতিষ্ঠার পদ্ধতি ও রূপরেখা...



খিলাফত রাষ্ট্র কায়েম করতে হলে আগে নিজের চরিত্রের মধ্যে খিলাফত কায়েম করুন। আল্লাহ আপনাকে একটি শরীর দিয়েছেন, মুখ দিয়েছেন, চোখ, কান দিয়েছেন। এগুলো সব আপনার কাছে আল্লাহর আমানত। এগুলোর ওপর আল্লাহর হুকুমত কায়েম করুন। আপনার ক্ষমতার মধ্যে, আপনার ঘরে খিলাফত কায়েম করুন। আপনি খলিফা হয়ে যান। আল্লাহর হুকুম প্রতিষ্ঠা করুন আপনার সত্তায়, আপনার সামর্থ্যের মধ্যে, আপনার ঘরে।

দ্বিতীয় বিষয়; আর সাথে সাথে তৈরি হয়ে যান এজন্য যা আল্লাহ সূরা হাদীদে আয়াত ৭ নম্বরে বলেছেন; যে যে বিষয়ে আল্লাহ তোমাকে খিলাফত দিয়েছেন, সম্পদ দিয়েছেন, সন্তান দিয়েছেন, সম্পত্তি দিয়েছেন, ক্ষমতা দিয়েছেন, সব কাজে লাগাও সব খরচ করে দাও আল্লাহর দ্বীনের জন্য। এটা হচ্ছে প্রথম খিলাফত। জেনে রাখুন যতক্ষণ এই খিলাফত কায়েম না করবেন সামষ্টিক খিলাফত কখনো আসবে না। না তোমাদের মনের ইচ্ছায় কিছু হবে, না আহলে কিতাবের মনের ইচ্ছায় কিছু হবে। ওরা যা করেছে অনেক পরিশ্রম করে হাসিল করেছে; তোমাদের কিছু হাসিল করতে হলেও পরিশ্রম করে, ত্যাগ স্বীকার করেই সেটা করতে হবে। এটা দোয়ার মাধ্যমে হাসিল হবে না। সাধ্যের মধ্যে সবকিছু করার পর দোয়া করো, দোয়া কবুল হবে। আর সেটা না করে দোয়া করলে সেই দোয়া মুখের ওপর ছুঁড়ে মারা হবে।

তৃতীয় কথা; আসলেই যদি কিছু অর্জন করতে চান সেই পরিবেশ দাওয়াত, তাবলীগ, নসীহত, ওয়াজের মাধ্যমে হবে না। যদি এগুলোর মাধ্যমে পরিবেশ তৈরি হয়ে যেতো তাহলে হুজুর (সা) মুসলমান তো দূর, কাফিরের এক ফোঁটা রক্তও মাটিতে পড়তে দিতেন না। উনার চেয়ে দয়ালু, রউফ আর রহীম মানুষ কে হতে পারে? কিন্তু তিনিও হাতে তলোয়ার উঠিয়ে নিয়েছেন। আল্লাহ বলেন, "আমি লোহা নাযিল করেছি, এটাতে আছে যুদ্ধের উপকরণ, মানুষের জন্য অন্য উপকারও আছে।" কিন্তু আসলে সেটা এসেছে যুদ্ধে ব্যবহারের জন্য। আর এটা এজন্যই দেয়া হয়েছে এবং বলা হয়েছে "কে এই হাতিয়ার হাতে তুলে দাঁড়িয়ে যাবে এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সাহায্য করবে?"। আল্লাহ ও রাসূলের (সা) সাহায্যের উদ্দেশ্য কী? তাঁর খিলাফত রাষ্ট্র কায়েম করা।

তো এই পরিবেশ দাওয়াত ও তাবলীগে হবে না। আর নির্বাচনী শাসনব্যবস্থায় তো কোনভাবেই হবে না। আমাকে যদি জিগ্যেস করেন আমার সবচেয়ে বড় দুঃখ কী। আমি বলবো সেইসব দ্বীনি জামাতগুলো যারা এই দেশ (পাকিস্তান) প্রতিষ্ঠার পর থেকে তাদের সকল সময়, সকল চেষ্টা নির্বাচনী শাসনব্যবস্থার পেছনে লাগিয়ে দিয়েছে। কিচ্ছু হাসিল হয় নি। এমন ফাঁদে এরা আটকে গেছে, বড় বড় লোকদের সাথে উঠাবসা, ভিআইপি ট্রিটমেন্ট; আমার নিজের কিছু অভিজ্ঞতা আছে কারণ আমি নিজেও দু' মাস এসবের মজা নিয়েছি। প্লেন থেকে নেমেই গাড়ি তৈরি থাকবে। বড় বড় ধনী লোকদের অনুষ্ঠানে যাবেন, আপনার নিজের অনুষ্ঠানেও তাদের দাওয়াত দেবেন। ফলে তাদের মত কোটি টাকা খরচ করে তাদের উপযোগী অনুষ্ঠান করবেন। এই সকল অপকর্ম দ্বীনি জামাতগুলোতে এসেছে শুধুমাত্র নির্বাচনী শাসনব্যবস্থার কারণে।

এই দেশে ইসলাম প্রতিষ্ঠা না হওয়ার প্রথম আসামী মুসলিম লীগ নয়। প্রথম আসামী সেসকল দ্বীনি জামাত যারা তাদের সকল শক্তি নির্বাচনী শাসনব্যবস্থার পেছনে লাগিয়ে দিয়েছে। মুসলিম লীগ এবং জিন্নাহর অনেক বড় অবদান তারা আপনাদের একটা দেশ বানিয়ে দিয়েছে। এর চেয়ে বেশি করা তাদের লক্ষ্য ছিল না, আর তাদের ক্ষমতাও ছিল না। এইজন্য আমি জামাত আলী শাহের (রাহি) প্রজ্ঞার প্রশংসা করি।

উনাকে যখন বলা হয়েছিল, "আপনি এত বড় রুহানি নেতা হয়ে একজন বিনা দাড়িওয়ালার হাতে বাইয়াত করে ফেললেন?"। এই ইঙ্গিত ছিল কায়েদে আযম জিন্নাহর দিকে। উনি উত্তর দেন, "ভাই আমি তাঁর হাতে বাইয়াত করি নি। আমার তো এটা একটা জাতিগত মামলা হিন্দু জাতির বিরুদ্ধে। আর তোমাদের এই মামলায় এমন উকিল দরকার যার মধ্যে দু'টি গুণ আছে; এক, তার আইনী দিক দিয়ে দক্ষতা আছে; দুই, যে বিক্রি হয়ে যাবে না। আমি আমার জাতির মামলার জন্য মুহাম্মদ আলী জিন্নাহকে উকিল বানিয়েছি।" এই বক্তব্যই সম্পূর্ণ সঠিক। জিন্নাহর এই গুণগুলো নেহরু, গান্ধীর মতো উনার বড় বড় শত্রুরাও স্বীকার করেছে। এই ব্যক্তি যা বলে তার অন্তরে তাই আছে। এর বাইরে কোন হেরফের নেই।

তিনি আমাদের দেশ তৈরি করে দিয়েছেন। এরপর কাজ ছিল দ্বীন প্রতিষ্ঠা করা। দ্বীন প্রতিষ্ঠা মানে কেউ মনে করতে পারেন শুধু মাদ্রাসা আর খানকায় লেগে থাকা। এটা বুঝতেই পারলেন না, আমরা এখন আর ইংরেজদের অধীনে নেই, এখন আমরা মুসলিম হুকুমতের অধীনে। এখন তো চেষ্টা করা দরকার এটাকে ইসলামী বানানোর জন্য। আর বাকি যারা চলে গেলেন নির্বাচনে সেটা ছিল সবচেয়ে ঘৃণ্য কাজ। এই দেশে ইসলাম প্রতিষ্ঠার পথে সবচেয়ে বড় বাধা হয়ে রইলো এইসব দলের কর্মকান্ড।

এসব থেকে সরে কী করতে পারেন?আমি আগেও বলেছি, আল্লাহর ওয়াস্তে আজকে চিন্তা করুন। খলিফা হতে হবে নিজের সত্তায়। নিজের ওপর, নিজের ঘরে, নিজের ক্ষমতার বলয়ে খিলাফত প্রতিষ্ঠা করুন। তওবা করুন, খুলুসিয়্যাতের সহিত তওবা করুন। নিজের ইচ্ছাশক্তিকে জাগিয়ে তুলুন। তারপর নিজের শরীর, মন, সম্পদ লাগিয়ে দিন। ইন্না সালাতি অনুসূকি ওয়ামাহইয়ায়া ওয়ামামাতি লিল্লাহি রাব্বিল আলামীন। এই ফায়সালা করুন। এটা প্রথম কাজ এবং অনেক ভারী কঠিন কাজ। কিন্তু এটাও বলে দেই, যে নিয়্যাত করে ফেলবে তার জন্য একদম সহজ। তখন আল্লাহর সাহায্য আসে।

তুমি সাহস করো, তাওফীক আমি (আল্লাহ) দেবো। তুমি সিদ্ধান্ত নাও, সাহায্য আমি (আল্লাহ) করবো। সহজ করার উপায় আমার (আল্লাহ) পক্ষ হতে আসবে। ফাসানু ইয়াসসীরুহু লিল ইয়ুসরা। সহজ থেকে সহজ হয়ে যায়। প্রথমে যাকে পাহাড় মনে হয় পরে সেটাকে মনে হয় টিলা, আমাদের পায়ের নিচেই তলিয়ে যায়। করে দেখেন, সিদ্ধান্ত নেন, তৈরি হয়ে যান। ইন্না সালাতি অনুসূকি ওয়ামাহইয়ায়া ওয়ামামাতি লিল্লাহি রাব্বিল আলামীন। আমার কাছে যা কিছু আছে সবই আল্লাহর জন্য। শুধুমাত্র নিজের জীবন চালু রাখার জন্য একদম না হলেই নয় এমন জরুরত পূরণ করো। বাকি সব লাগিয়ে দাও খরচ করে দাও আল্লাহর জন্য। আমীনু বিল্লাহি ওয়া রাসূলিহি ওয়াআনফিকু মিম্মা জাআলাকুম মুস্তাকলাফীনাতি। যে যে বিষয়ে খিলাফত দিয়েছি সব কার্যকর করো।

- শাইখ ইসরার আহমাদ (রাহিমাহুল্লাহ)

পঠিত : ৮৩৬ বার

মন্তব্য: ০