Alapon

Another critique of Feminism



ফেমিনিজমের প্রবলেমগুলো ব্যাখ্যা করার সময় আগের অংশে যে ইম্পরটেন্ট পয়েন্টগুলো ব্যাখ্যা করা হয় নাই সেগুলো এখানে ব্যাখ্যা করছি:

Feminism's Misogyny Problem:-
ফেমিনিজমের বিরুদ্ধে মূল সমস্যা কিন্তু কখনোই পুরুষবিদ্বেষ না বরং নারীবিদ্বেষ। ফেমিনিজম খুবই নারীবিদ্বেষী একটি ধারনা। যেসকল মেয়েরা ফেমিনিজমকে সমর্থন করে না বা ফেমিনিজম যেরকম ''নারী''-দের আদর্শ মনে করে সেরকম হতে চায় না তাদের বিরুদ্ধে চরম বিদ্বেষ প্রকাশ করে। ইন্টার্নালাইজড প্যাট্রিয়ার্কি বলতে একটা কনসেপ্ট আছে ফেমিনিজমে, ইন্টার্নালাইজড প্যাট্রিয়ার্কি বলতে বোঝায় যেসকল নারীরা নিজে নারী হয়েও পুরুষতন্ত্রের পক্ষে থাকে এবং পুরুষতন্ত্রের ব্রেইনওয়াশিং- এর কারণে নিজের ক্ষতিটা অনুধাবনই করতে পারে না, ফলে সামগ্রিকভাবে নারীর জন্য ক্ষতিকর সিদ্ধান্ত নেয়। ফেমিনিজমে নারী অধিকারের সংজ্ঞা ছিল, কারোর ''ক্ষতি'' না করে নিজের যা ''ইচ্ছা'' করা। এখানে লুপ হোলটা হলো, কোনটা ক্ষতি-কোনটা ক্ষতি না সেটাও নির্ধারণ করা হবে পশ্চিমা ফেমিনিজমের স্ট্যান্ডার্ড দিয়েই। কোনটা নারীর ''ইচ্ছা'' আর কোনটা ব্রেইনওয়াশিং এইটা ঠিক করে দিবে ফেমিনিস্টরাই কারণ শুধু তারাই ব্রেইনওয়াশিং থেকে মুক্ত নারী। তাই কোনো ফেমিনিজম নারীর চয়েসের কথা বললেও কোনো নারী যখন নিজ ইচ্ছায় ফেমিনিজমের বিরুদ্ধে যায় এমন কোনো চয়েস নেয় তখন ফেমিনিজম সেটা বিরোধিতা করে। ফেমিনিজম ততটুকুই নারী স্বাধীনতা দিবে যতটুকু ফেমিনিজমের সুবিধা হয়। এটা কোনো হিপোক্রেসি না বরং ফেমিনিজমেরই কোর কনসেপ্ট।
ফেমিনিজমের নারীবিদ্বেষের বহু উদাহরণ আছে আমাদের আশেপাশেই-
ফেমিনিজম সাধারণ গৃহিণী নারীদের প্রতি বিদ্বেষ পোষন করে, তাদের স্রেফ সমাজের আগাছা এবং পুরুষের দাসী মনে করে।

সেকেন্ড ওয়েভের প্রবর্তক বিখ্যাত ফেমিনিস্ট Simone de Beauvoir গৃহিণীদের নিয়ে লিখেছিল, “A parasite sucking out the living strength of another organism…the [housewife’s] labor does not even tend toward the creation of anything durable…. Woman’s work within the home [is] not directly useful to society, produces nothing.”(The Second Sex,Simone de Beauvoir)

সেকেন্ড ওয়েভের আরেকজন প্রবর্তক Betty Friedan লিখেছিল, “women who ‘adjust’ as housewives, who grow up wanting to be ‘just a housewife,’ are in as much danger as the millions who walked to their own death in the concentration camps… they are suffering a slow death of mind and spirit.”

গৃহিণীদের মস্তিষ্কহীন হিসেবে আখ্যা দিয়ে লিখে, “Housewives are mindless and thing-hungry…Housework is peculiarly suited to the capabilities of feeble-minded girls; it can hardly use the abilities of a woman of average or normal human intelligence.”(The Feminine Mystique, Betty Friedan)

Simone de Beauvoir তার The Second Sex বইতে লিখেছিল, '' কোনো নারীকে গৃহিণী হওয়ার চয়েসটাই দেয়া উচিত না কারণ যদি চয়েসটা দেয়া হয় তাহলে অনেক নারীরা এই ভুল চয়েসটা গ্রহণ করে ফেলবে।''(The Second Sex,Simone de Beauvoir)

ফেমিনিজম অনুসারে নারীর পরিবার গঠন করার বা গৃহিণী হওয়ার ''চয়েস'' আসলে ''চয়েস'' না স্রেফ পুরুষতন্ত্রের বেইনওয়াশিং এর ফলাফল। তাই নারীদের জোর করে শোষণমূলক কর্পোরেট সিস্টেমে কাজ করানো, পরিবার গঠনে বাধা দেয়া এগুলো নারীর স্বাধীনতার লঙ্ঘন না বরং এভাবেই নারীর প্রকৃত স্বাধীনতা আসে যেটা নারী নিজেই বুঝতে পারে না।
ফেমিনিস্টরা অনেক ক্ষেত্রে মুসলিম নারীদের হিজাব ও বোরকা ব্যান করার পক্ষে অ্যাক্টিভিজম করে। স্রেফ বোরকা পরার জন্য নারীকে স্কুল থেকে বের করে দেয়া, নারীকে কর্মক্ষেত্র থেকে বহিষ্কার করা, অ্যারেস্ট করা, জেলে কারাদণ্ড ভোগ করানো এর সবই পশ্চিমা রাস্ট্রগুলোয় অনেক ফেমিনিস্টদের সমর্থনে হয়ে এসেছে।
জার্মানির সবচেয়ে আইকনিক ফেমিনিস্ট Alice Schwarzer হিজাব ব্যান করার পক্ষে প্রচারণা করেছে।(1)

সুইজারল্যান্ডে বোরকা ব্যান করার পক্ষে সমর্থন ছিল সুইজ ফেমিনিস্টদের।(2)
ফ্রান্সে বোরকা এবং হিজাব ব্যানের পক্ষে বহু ফেমিনিস্ট সমর্থন দিয়েছে।(3)
বেলজিয়ামে লিবারাল MP Daniel Bacquelaine বোরকা ব্যানের প্রস্তাব দিয়েছিল, যা পরে গৃহীত হয়।(4)

ইউরোপিয়ান রাষ্ট্রগুলোর কোনো প্রতিষ্ঠান চাইলেই কর্মক্ষেত্রে হিজাব ব্যান করতে পারে, লিবারাল ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের টপ কোর্ট এই রায় দিয়েছে।(5)

লিবারালিজম প্রচার করা ইউরোপে ফেমিনিস্টরা যখন বোরকা- হিজাব ব্যান হয় তখন সেটা হিপোক্রেসি না আসলে। ফেমিনিজম সত্তাগতভাবেই ইসলামবিদ্বেষী। ইসলাম ফেমিনিজমের বিরোধী তাই ইসলামকে ফেমিনিজম সত্য বলে মানে না, সুতরাং ইসলাম ফেমিনিজমের লেন্সে স্রেফ কিছু পুরুষের চাপিয়ে দেয়া নিয়ম ছাড়া আর কিছুই না। যেসব নারীরা হিজাব পরছে তারা ইসলামের ''পুরুষতান্ত্রিক'' নিয়মে ব্রেইনওয়াশড হয়ে পরছে। তাই হিজাব ব্যান করার মাধ্যমে ফেমিনিজম অনুসারে নারীদের প্রকৃত স্বাধীনতা দেয়া হচ্ছে, পুরুষতন্ত্র থেকে মুক্তি দেয়া হচ্ছে। আর যেসব নারীরা মুসলিম, এরপরও হিজাব পরছে, তারা ফেমিনিজম অনুসারে পুরুষতন্ত্রেরই অংশ সুতরাং তাদেরও নির্মূল করে ফেলতে হবে। এইজন্য হিজাব পরার জন্য মুসলিম নারীদের জেলে দেয়া, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে বের করে দেয়ার সমর্থন করে ফেমিনিস্টরা। বাংলাদেশের মেইন্সট্রিম পপুলার ফেমিনিস্টদেরও দেখবেন প্রকাশ্যে হিজাব ব্যান জাস্টিফাই করছে যেমন- Womenschapter এর সুপ্রিতী ধর, Feminist Factor এর মুনমুন শারমিন শামস, নারীবাদী শাওন মাহমুদসহ বহু ফেমিনিস্টরা বোরকা-হিজাব পরার অধিকারের বিরোধী, Womenschapter এর মতো ফেমিনিস্ট ব্লগে গেলেই লেখা পাবেন, হিজাবকে সাংস্কৃতিক আগ্রাসন বলা হচ্ছে। বর্তমানের ''মুসলিম ফেমিনিস্ট'' মুভমেন্ট হিজাব পরে নারীবাদ প্রচার করছে কিন্তু পরবর্তী স্টেজে এরাই হিজাব ব্যানের পক্ষে দাঁড়ায়।

নারীদের কাছে আগে প্রচার করে পরিবর্তন করার চেষ্টা করা হবে কিন্তু এরপরও যারা ফেমিনিজম গ্রহণ করতে চায় না, নিজের ধর্মকে মেনে চলতে চায়, নিজের সংস্কৃতিকে রক্ষা করতে চায়, নিজের পরিবার তৈরি করতে চায়, ফেমিনিজমের বিরুদ্ধে প্রচারণা করে, এরা সবাই ফেমিনিজম অনুসারে ''পুরুষতন্ত্র''-এর সমর্থক, পুরুষতন্ত্রের সাথে সাথে এদেরও নির্মূল করতে হবে, এই নারীরা ফেমিনিজমে না-মানুষ। এইজন্যই মুসলিম নারীদের প্রতি হওয়া বিশ্বজুড়ে আগ্রাসনের ব্যাপারে মূলধারার ফেমিনিস্টরা চুপ থাকে ক্ষেত্রবিশেষে সমর্থনও দেয়। আফিয়া সিদ্দিকী, কাশ্মীরের ধর্ষণের শিকার লক্ষাধিক মুসলিম নারীরা, ইয়েমেনে অনাহারে মৃত্যুবরণ করা মুসলিম নারীরা, ভারতে গরু খাওয়ার জন্য ধর্ষণের শিকার মুসলিম নারী, ফিলিস্তিনের গৃহহীন মুসলিম নারী, সালেহ অঞ্চলের অনাহারে মারা যাওয়া অসংখ্যা আফ্রিকান নারী, ধর্ষণের জন্য আত্মহত্যা করতে চাওয়া উইঘুর নারীরা কারোর জন্যই ফেমিনিজম তেমন কথা বলে নাই।

এমনকি চাইনিজ সরকার উইঘুর গণহত্যাকে ফেমিনিজমের বিজয় হিসেবে বৈধতা দেয়ার চেস্টা করেছে। বলা হয়েছে, ''Study shows that in the process of eradicating extremism, the minds of Uygur women in Xinjiang were emancipated and gender equality and reproductive health were promoted, making them no longer baby-making machines. They are more confident and independent.''(Chinese Embassy in US)
তাদের দাবি অনুসারে, নারীদের বাচ্চা উৎপাদনের মেশিন হওয়া থেকে রোধ করতে চাইনিজ সরকার জোর করে মুসলিম নারীদের স্টেরালাইজ করছে, জোরপূর্বক গর্ভপাত করিয়ে দিচ্ছে। এভাবে ''পুরুষতান্ত্রিক ব্রেইনওয়াশিং'' ভেঙে নারীরা আরও স্বাধীন -স্বনির্ভর হচ্ছে। একেবারে ফেমিনিস্ট সিমন দে বোভোয়ার কথার মতোই কাজ করা হয়েছে, গৃহিণী হয়ে বাচ্চা লালন-পালন করার বা বাচ্চা জন্ম দেয়ার অপশনটাই নারীদের দেয়া হচ্ছে নারীদের জোর করে বন্ধ্যা বানিয়ে দেয়া হচ্ছে। ইসলামে মুসলিম নারীদের নাস্তিক পুরুষের সাথে যৌন সম্পর্ক নিষিদ্ধ, যেসব উইঘুর মুসলিম নারীরা নাস্তিক চাইনিজ পুরুষদের সাথে সম্পর্ক করছে না তাদের জোর করে যৌনসম্পর্ক করানো হচ্ছে। যেভাবে ''পুরুষতান্ত্রিক ধর্মের নিয়ম''-এর জন্য হিজাব না খুললে জোর করে হিজাব খোলা হয়, সেভাবেই ''পুরুষতান্ত্রিক ধর্মের নিয়ম''-এর জন্য যৌন সম্পর্ক না রাখতে চাইলে ধর্ষণ করা হচ্ছে। আমি এটা বলছিনা সব ফেমিনিস্টরা উইঘুর গণহত্যা সমর্থন করে শুধু এটা বোঝাচ্ছি যে উইঘুর নারীদের সাথে যা হচ্ছে সেটা ফেমিনিজমের ফ্রেমওয়ার্কের ভেতরেই হচ্ছে, ফেমিনিজমের মাধ্যমে এটা কন্ডেম করার উপায় নেই।

ফেমিনিজম সবচেয়ে বেশি যাদের ক্ষতি করে তারা হচ্ছে নারীরা, ফেমিনিজম বিরোধী নারীদের না-মানুষের পর্যায়ে নিয়ে আসে, ক্যাপিটালিস্ট সিস্টেমে নারীর শোষন করায়, পরিবার থেকে আসা নারীর জীবনের মৌলিক সুখ কেড়ে নেয়, নারীদের ডিপ্রেশনের হার বাড়ায়, সুইসাইডের হার বাড়ায়, অনেক সময় কলোনাইজেশন প্রজেক্টে নারীদের উপর ম্যাসাকার চালায়।

Feminism's Justification for Colonialism:-
ফেমিনিজম কিভাবে আগ্রাসী ওয়েস্টার্ন কলোনিয়ালিজমের বৈধতা দেয় সেটা নিয়ে আলাদাভাবে এখানে লিখেছি:- https://www.kebabcast.com/afghan-war-feminism-colonialism/

Practical Harms of Feminism:-
ফেমিনিস্ট মুভমেন্টের ক্ষতিকর প্রভাবগুলো সহজেই বোঝা যায় দক্ষিণ কোরিয়ার কনটেক্স খেয়াল করলে। ২০২২-এর ইলেকশনে দক্ষিণ কোরিয়ার নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হয় এন্টি ফেমিনিস্ট ইউন-সক-ইয়ল। তার নির্বাচনী ক্যাম্পেইনের মূল বিষয়ই ছিল ফেমিনিজমের বিরোধিতা। কোরিয়ার রিসেন্ট ইলেকশনের একটা সেন্ট্রাল পয়েন্ট ছিল ফেমিনিজম। বিপুল জনসমর্থনে ইউন-সক-ইয়ল প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হয়। এখন বোঝা দরকার ফেমিনিজমের প্রতি একটা গোটা দেশের জনসাধারণ এত ঘৃণা কেন তৈরি হলো। দক্ষিণ কোরিয়ার ফার্টিলিটি রেট বিপদজনক হারে কম, পৃথিবীর সবচেয়ে কম সন্তান প্রসবের হার দক্ষিণ কোরিয়ায়। [1]

প্রচুর কোরিয়ান নারীরা এখন আর বিয়ে করতে বা সন্তান নিতে চায় না। বিবিসির ইন্টারভিউয়ে কোরিয়ান নারীরা বলে, ''আমি সন্তান নিতে চাই না কারণ সন্তান নেয়ার কস্ট আমি ভোগ করতে চাই না। সন্তান আমার ক্যারিয়ারের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর হয়ে দাঁড়াবে।'' তারা আরও বলে, '' পরিবার গঠনের বদলে আমি স্বাধীন, স্বনির্ভর থাকতে চাই।''[2]
বিয়ে দাসত্ব,সন্তান বোঝা এইধরনের মেন্টালিটি তৈরিই করেছে দক্ষিণ কোরিয়ার ফেমিনিস্টরা। একটু আগেই যা বললাম তার প্রাক্টিকাল এফেক্ট। ফেমিনিস্টরা সেখানে সরাসরি ''NoMarriage Movement'' করেছে যেখানে নারীদের বিয়ে এবং সন্তান গ্রহণের বিরোধী মেন্টালিটি তৈরি করা হয়।[3]
শুধু তা-ই না, সন্তান হয়ে গেলে সেটাকে যাতে হত্যা করা যায় সেজন্য গর্ভপাত বৈধকরণের পক্ষে কাজ করেছে।[4]
মাত্রাতিরিক্ত কম ফার্টিলিটি রেট একটা জাতির জন্য ভয়াবহ মাত্রায় ক্ষতিকর এটা সব সমাজই বুঝতে পারে। প্রথমত, এটি সেই জাতির অস্তিত্বের জন্য হুমকি। এরপর, এরফলে মিলিটারিতে সার্ভিস দেয়ার মতো মানুষও কমে যায়। বৃদ্ধের সংখ্যা বাড়ে কিন্তু বৃদ্ধদের দেখার মতো যথেষ্ট যুবকরা আসে না। এছাড়াও জনসংখ্যার মাত্রাতিরিক্ত ঘাটতি দেশের পুরো ইকোনমির জন্য ক্ষতিকর।দক্ষিণ কোরিয়ার মানুষের পরিবার থাকছে না ফলে, মানুষের একাকীত্বের পরিমাণ বাড়ছে এবং প্রতিবছর দেখের ডিপ্রেশন রেট বাড়ছে।এখানে সুইসাইড রেটও মারাত্মক বেশি।এই পুরো এক্সিস্টেনশিয়াল থ্রেট তৈরি করে ফেমিনিজম।[5]

দক্ষিণ কোরিয়ার মূলধারার ফেমিনিস্ট মুভমেন্ট সময়ের সাথে সম্পূর্ণ পুরুষবিদ্বেষের রূপ ধারণ করে। এইটা সঠিক যে, ফেমিনিজম মানেই পুরুষ বিদ্বেষ না, প্রত্যেক ফেমিনিস্টই পুরুষবিদ্বেষী না, এমা ওয়াটসনের মতো লিবারাল ফেমিনিস্টরা পুরুষবিদ্বেষের বিরুদ্ধে কাজ করেছে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, ফেমিনিজম দিনশেষে পুরুষবিদ্বেষ তৈরির মূল প্রভাবক হয়ে দাঁড়ায়। ফেমিনিজম পুরুষতন্ত্রের ধারনার ব্যাপক প্রচারণার মাধ্যমে পুরুষকে ইন্ডাইরেক্টলি শত্রুপক্ষ ভাবতে শেখায়, এই মেসেজটা দেয় এরাই সেই জাত যারা হাজার বছর ধরে সবক্ষেত্রে নির্যাতন করে আসছে। পুরুষদের নেচারই নারীর প্রতি অত্যাচারী হিসেবে দেখানো হয়, এভাবে প্রত্যেক পুরুষকে পটেনশিয়াল থ্রেট ভাবতে শুরু করে নারীরা।
মেইন্সট্রিম ফেমিনিস্ট মুভমেন্টের লিডিং এক্টিভিস্ট থেকেই পুরুষবিদ্বেষী বহু স্টেইটমেন্ট পাওয়া যায়-
Andrea Dworkin সেকেন্ড ওয়েভের লিডিং ফেমিনিস্ট লিখেছিল,
Under patriarchy, every woman's son is her potential betrayer and also the inevitable rapist or exploiter of another woman,"
(Liberty, p.58)
"All men benefit from rape, because all men benefit from the fact that women are not free in this society; that women cower; that women are afraid; that women cannot assert the rights that we have, limited as those rights are, because of the ubiquitous presence of rape."(Letters from a War Zone, p. 142)
Gloria Steinem লিখেছিল,
''The most dangerous situation for a woman is not an unknown man in the street, or even the enemy in wartime, but a husband or lover in the isolation of their home."(Gloria Steinem in Revolution from Within: A Book of Self-Esteem, pp. 259-61)
বর্তমান ফেমিনিস্টদের ''Men are trash'', ''All men are potential rapists'', ''Killallmen'' ইত্যাদি বলা বেশ কমন ট্রেন্ড যেটা অহরহ দেখা যায়। Killallmen হ্যাসট্যাগ টুইটারে ট্রেন্ডিং হয়। এবং অনেক ফেমিনিস্টদের এইধরনের পুরুষবিদ্বেষী স্টেটমেন্ট জাস্টিফাই করতেও দেখা যায়।[6]

এভাবে পুরুষবিদ্বেষ সরাসরি ফেমিনিজম না হলেও, ইন্ডাইরেক্টলি ফেমিনিজমেরই বাই প্রোডাক্ট। দক্ষিণ কোরিয়াও এভাবে পুরুষবিদ্বেষী হয়ে ওঠে ফেমিনিজম। WOMAD, Megalia ইত্যাদি পপুলার ফেমিনিস্ট প্ল্যাটফর্ম থেকে রেগুলারলি পুরুষদের প্রতি বিদ্বেষমূলক স্টেইটমেন্ট প্রচার করে। তাদের ওয়েবসাইটে কিছু নারী গর্বের সাথে পোস্ট করে যে তারা পুরুষতন্ত্রের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হিসেবে ছাদ থেকে ফেলে দিয়ে এবং কফির সাথে বিষ মিশিয়ে পুরুষকে হত্যা করেছে। পুরুষ হত্যার মাধ্যমে পুরুষতন্ত্রের পটেনশিয়াল একজন রক্ষক মারা যাচ্ছে।কেউ কেউ পুরুষ সন্তানের গর্ভপাত করার মাধ্যমে ''পুরুষতন্ত্রের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ'' করছে[7]
WOMAD এর আরেকজন মেম্বার অস্ট্রেলিয়ান এক ছেলেকে ধর্ষণ করে গর্বের সাথে ওয়েবসাইটে পোস্ট করে।[8] এছাড়াও একজন গোপন ক্যামেরা ব্যাবহার করে পুরুষ মডেলের নগ্ন ছবি তুলে ওয়েবসাইটে দেয়ার কাজও করে।[9] Megalian এর ওয়েবসাইটে সরাসরি ছেলেশিশু ধর্ষণের ইচ্ছা প্রকাশ করে এক নারী শিক্ষক পোস্ট দেয়। ধরা পরার পর সে বলে, সে শুধু পুরুষরা যে মেয়ে শিশু ধর্ষণের ইচ্ছা প্রকাশ করে সেটায় ফোকাস আনার জন্য, সেটার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হিসেবে এটা বলেছে।[10]
এইগুলো স্রেফ কিছু উদাহরণ, এইরকম বহু ভয়াবহ নিকৃষ্ট ক্রাইম করে এরা ''পুরুষতন্ত্রের প্রতিবাদ'' করতে।
দক্ষিণ কোরিয়ার লিগাল সিস্টেমে নারীকে বাই ডিফল্ট ইনোসেন্ট ধরা হয় যা পুরুষের ক্ষেত্রে হয় না, সেখানে ফেমিনিস্টরা সব ক্ষেত্রে নারীপক্ষের হয়ে কাজ করে এবং নারীর অভিযোগ কোনো প্রমাণ ছাড়াই বিশ্বাস করার পক্ষে কাজ করে। নারীদের উপর ইতিহাসে অনেক নির্যাতন হয়েছে তাই নারীকে প্রমাণের ভারও দেয়া যাবে না। যেমন- কোরিয়ার একজন ব্যাবসায়ীকে কোনো প্রমাণ ছাড়াই স্রেফ একজন নারীর আনা যৌন হয়রানীর অভিযোগের ভিত্তিতে জেলে দেয়া হয়, ফেমিনিস্টরা এই রায়কে সানন্দে সমর্থন করে।[11]
আরও খারাপ পরিস্থিতির উদাহরণ আছে, একজন সাধারণ ট্যাক্সি ড্রাইভারের গাড়ির উপরে উঠে এক মহিলা তার গাড়ি ভাঙে। দরিদ্র ট্যাক্সি ড্রাইভার কিছু করতেও পারে না, স্রেফ দেখে, কারণ তাকে থ্রেট দেয়া হয়, সে যদি মহিলাকে ট্যাক্সির উপর থেকে জোর করে নামাতে যায় তাহলে তার বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির মামলা হবে কারণ সে নারীর কনসেন্টের বিরুদ্ধে নারীকে স্পর্শ করেছে।
এইরকম বহু মিথ্যা যৌন হয়রানির অভিযোগে অনেকের জীবন নষ্ট হয়ে গিয়েছে। এইজন্য অন্তত ২.২ লক্ষ কোরিয়ান পিটিশিন সাইন করেছিল এবং বর্তমান প্রেসিডেন্ট ইউন-সক-ইয়লের ইলেকশন ক্যাম্পেইনের অংশ ছিল মিথ্যা ধর্ষণের অভিযোগ আনলে শাস্তি বৃদ্ধি করার।[12]

মিথ্যা ধর্ষণের অভিযোগ এনে শাস্তি দেওয়ার প্রথার দায়ও বর্তমান ফেমিনিস্ট মুভমেন্টের উপরেই পরে, ওয়েস্টের বহু ফেমিনিস্ট ''Innocent untill proven guilty'' এর ধারনাকে সরাসরি প্রত্যাখ্যান করে, Beliveallwomen মুভমেন্টই করা হয় যাতে কোনো প্রমাণ ছাড়াই নারীর অভিযোগে বিশ্বাস করা হয় এই দাবিতে।[13]

দক্ষিণ কোরিয়ার পুরুষদের জন্য জব মার্কেট খুবি কম্পিটিটিভ,সেখানে পুরুষরা চাকরি না পাওয়ার জন্য অনেক আগে থেকেই ফেমিনিজমকে দোষ দিচ্ছে। ফেমিনিস্টরা অনেক সময় নারীদের জন্য আলাদা কোটা রাখার দাবি তোলে এবং নানা বৈধতা হাজির করে যেমন- এর ফলে আসলে অসমান সামাজিক অবস্থায় সমান সুযোগ পাবে নারীরা, নারীদের রিপ্রেজেনটেশন বাড়বে ইত্যাদি। দক্ষিণ কোরিয়ার জব মার্কেট অলরেডি অনেকবেশি কম্পিটিটিভ ছিল, অবস্থা আরও খারাপ হয় যখন সরকারি ও প্রাইভেট সেক্টরে নারীদের অংশগ্রহণ বাড়ানোর জন্য এবং কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহন আরও বৃদ্ধি করার জন্য Ministry of Gender Equality থেকে প্রজেক্ট নেয়া হয়। নারী জন্য বিভিন্নক্ষেত্রে আলাদা কোটা থাকে ফলে যোগ্যতা থাকার পরও পুরুষের চাকরির সম্ভাবনা কমে যায়। নারী শিক্ষা প্রোমোট করতে নারীদের জন্য আলাদা ১২ টি বিশ্ববিদ্যালয় আছে, যেখান থেকে আইন বিভাগের কোর্স করে আইনের সেক্টরে চাকরি পাওয়া পুরুষের চেয়ে সহজ। আরও বড় সমস্যা হচ্ছে, দক্ষিণ কোরিয়ায় পুরুষদের জন্য বাধ্যতামূলক প্রায় দুই বছর মিলিটারিতে সার্ভিস দিতে হয়। এর জন্য প্রথমত, জীবনের দুই বছর চলে যায় এবং বের হয়েই নারীদের সাথে চাকরির কম্পিটিশিন করতে হয় যারা দুই বছর এক্সট্রা সময় পেয়েছে চাকরি ক্ষেত্রে ঢোকার জন্য। নারীদের আরও বেশি পরিমানে কর্পোরেট জব সেক্টরে আনা, নারীদের জন্য আলাদা কোটার পরিমাণ বাড়ানো, নারীদের বাধ্যতামূলক মিলিটারি সার্ভিস দেয়া থেকে অব্যাহতি দেয়া সবকিছুই কোরিয়ার ফেমিনিস্টদের সমর্থনে হয়েছিল। এর জন্য সাধারণ কোরিয়ান পুরুষদের একটা ভালো চাকরি খুজতে অনেকসময় হিমশিম খেতে হয় , যার কারণে ফেমিনিজমের প্রতি আরও ঘৃণা বাড়ে।[14]

দক্ষিণ কোরিয়ায় মোটাদাগে ফেমিনিজম যা যা দিয়েছে তা হলো- কোরিয়ান পুরুষদের বেকারত্ব, মিথ্যা যৌন হয়রানির অভিযোগে জেলে দেয়া, পরিবার ব্যাবস্থা ধ্বংস করা, গর্ভপাত করে শিশুহত্যার সুযোগ দেয়া,সন্তান প্রসবের হার অতিরিক্ত কমিয়ে জাতির এক্সিস্টেনশিয়াল ক্রাইসিস তৈরি করা, মানুষের একাকীত্বের হার, ডিপ্রেশনের হার, আত্মহত্যার হার বাড়ানো এবং ক্ষেত্রবিশেষে পুরুষদের হত্যা ও ধর্ষণ করা। কোনো সন্দেহ নেই এইরকম অবস্থায় একটা দেশের জনগণ ফেমিনিজমের প্রতি প্রবল বিদ্বেষই রাখবে, এইটাই স্বাভাবিক। উগ্র নারীবাদের ফলে একটা সমাজে কিভাবে চরম ক্ষতিগুলো আসতে পারে সেটা দক্ষিণ কোরিয়ার অবস্থা থেকেই সহজে বোঝা যায়।

Women's rights without Feminism:
ফেমিনিজমের প্রচারণায় সবচেয়ে বড় মিথ্যা হলো ফেমিনিজম এবং নারী অধিকার একই জিনিস। কোনো নারী ফেমিনিজমের বিরোধিতা করলেই তাদের বলা হয় ''ফেমিনিজম না থাকলে তুমি পড়ালেখা করতে পারতা না, ফেমিনিজম না থাকলে তুমি ঘর থেকেই বের হতে পারতা না।'' সমস্যা হলো, এরা সবসময় পশ্চিমের ইতিহাসকে নিজের ইতিহাস মনে করে ভুল করে। ফেমিনিজম ছাড়াই নারী অধিকার অর্জন সম্ভব এবং সেটা হয়েছেও।
৮৫০-১১৫০ হিজরি
তখন পৃথিবীতে ফেমিনিজমের কোনো অস্তিত্ব নেই । বরং ইউরোপ ডাইনী-নিধনের (Witch Hunt) নামে তিনশত বছর ধরে ৪ থেকে সাড়ে ৬ লাখ নারীকে হত্যা করেছে। কিন্তু সেই সময় ইসলামী খিলাফতের শাসনব্যাবস্থায়-
আয়িশা বিনতে জারুল্লাহ শাইবানি (মৃত্যু ৮৭৩ হি.) বিভিন্ন শহরে ঘুরে ঘুরে ১০৫ জন শিক্ষকের কাছে সনদ নিচ্ছেন।
আসিয়া বিনতে মুহাম্মাদ ইরবিলি ২০০ এর অধিক উস্তাদের থেকে সনদ নিয়েছেন।
উম্মুল হায়া উমামাহ (মৃত্যু ৯৩৯ হি.) আরবি ব্যাকরণের বইগুলো মুখস্ত করছেন।
বাদশাহ আওরঙ্গজেবের কন্যা যাইবুনিইসা (মৃত্যু ১১১৩ হি.) কুরআন-হাদীস-ফিকহ-ক্যালিগ্রাফি শিখছেন।
উম্মে হানি বিনতে নুরুদ্দীন (মৃত্যু ৮৭১ হি.) তখন ৭ জন উস্তাদের কাছে শিখছেন ৫০ এর অধিক বই।
চার্চ যখন পান থেকে চুন খসলে নারীদের পুড়িয়ে মারছে, নিত্যনতুন ডিভাইস বানিয়ে টর্চার করছে, তখন-
আয়িশা বিনতে আল-যাইন (মৃত্যু ৮৮০ হি.) এবং সারা বিনতে উমার হামাবী (মৃত্যু ৮৫৫ হি.) বিনা পারিশ্রমিকে ছাত্র-ছাত্রীদের সেশান নিয়ে চলেছেন।
শাইখা আসমা বিনতে কামাল (মৃত্যু ৯০৪ হি.) বিশেষভাবে মেয়েদের ক্লাস নিচ্ছেন।
হাদীসবিদ যাইনুশ শরীফ (মৃত্যু ১০৮৩ হি.) ও তাঁর বোন মুবারাকাহ মিলে মক্কার মতো জায়গায়, যেখানে হাদীসের সর্বোচ্চ পুরুষ প্রফেসর গিজ গিজ করতো সবসময়। সেখানে হাদীসের সর্বোচ্চ কিতাব বুখারী শরীফ –সহ অন্যান্য বড়ো বড়ো কিতাব পড়াচ্ছেন।
মক্কার ফকীহা কুরাইশ আল তাবারী শ্রেষ্ঠ ৭ জন হাদীসবিদদের একজন হিসেবে স্বীকৃতি বাগিয়ে নিচ্ছেন পুরুষদের ডিঙিয়ে।
মদীনার দীর্ঘজীবী শাইখা মুফতী ফাতিমা বিনতে শুকরুল্লাহ নিজ বাসায় পুরুষ-মহিলাদের লেকচার দিচ্ছেন ৯০ বছর ধরে।
সবচেয়ে চূড়ার সময়টা ছিলো ৬ষ্ঠ থেকে ৮ম হিজরি শতক, এই তিনশ বছর।সে সময় ইউরোপে চলছে ক্যাথলিক সমর্থিত পবিত্র রোমান সাম্রাজ্য এবং সেখানে চলছে নারীদের ব্যাপারে সেন্ট পলের ফতোয়া-
“I don’t permit a woman to teach or have authority over man… And Adam was not the one deceived it, it was the woman who deceived and became a sinner.”(1 Timothy 2:11-14)
আর এদিকে মুসলিম বিশ্বে-
তখন মদীনার মসজিদে উম্মুল খাইর ফাতিমা আর দামেশকের বনু উমাইয়া মসজিদে আয়িশা বিনতে আব্দুল হাদী সর্বোচ্চ ক্লাসে মুহাদ্দিসা হিসেবে বুখারী শরীফ পড়াচ্ছেন। আয়িশা বিনতে হাদীকে তো তাঁর সময়ের সর্বোচ্চ লেভেলের হাদীস স্পেশালিস্ট মনে করা হতো। দূর দূর থেকে ছাত্ররা আসতো তাঁর কাছে।
তখন একই ক্লাসে ১৪১ জন ছাত্র-ছাত্রীকে ‘তাবরানি শরীফ’ পড়াচ্ছেন শাইখা যাইনাব বিনতে কামাল (মৃত্যু ৭৮০ হি.)।
দামেশক ও কায়রোর মসজিদে মসজিদে ভিজিটিং প্রফেসর হিসেবে সারাটা দিন ধরে বুখারী শরীফের লেকচার দিচ্ছেন সিত্তুল উযারা বিনতে উমার তানূখী (মৃত্যু ৭১৬ হি.) এরকম আরও আছেন ফাতিমা বিনতে সাদ খাইর।
ইস্পাহানে শাইখা ফাতিমা জুযদানী দামেশকে আমিনা বিনতে মুহাম্মাদ পড়াচ্ছেন নারী-পুরুষ বিদ্যার্থীদের।
মার্ভ শহরে কারীমা ৫ দিনে পুরো বুখারী পড়িয়েছেন খতীব বাগদাদীকে।
সিত্তুল উজারা বিনতে মুনাজ্জা যাহাবীকে পড়াচ্ছেন বুখারী আর মুসনাদে শাফিঈ।
শাইখ মুওয়াফফাক দীনের বাসায় বড়ো বড়ো ক্লাস হত। সেখানে অধিকাংশই ছিলেন শিক্ষিকা। ২৪ জনের তালিকা পাওয়া গেছে, যারা নিয়মিত এখানে ক্লাস নিতেন।
ইমাম হাফিয ইবনু নাজ্জার ৪০০ নারী শিক্ষিকার কাছে, ইবনু আসাকির ৮০-এর অধিক, আবু সাদ সামানী ৬৯ জন, আবু তাহির সিলাফী ২০ –এর অধিক এবং ইবনুল জাওযী ৩ জন শিক্ষিকার নাম উল্লেখ করেছেন। ইবনুল আছির, ইবনুল সালাহ, জিয়াউদ্দিন মাকসিদী, আল-মুনযিরী সকলেই বহু সংখ্যক শিক্ষিকার অধীনে শিক্ষা গ্রহণ করেছেন।
ফাতিমা বিনতে মুহাম্মাদ আল-মুনাজ্জা (মৃত্যু ৮০৩ হি.) ১৬৪টি কিতাবের লেকচার দিচ্ছেন নিয়মিত।
ইবনু হাজার আসকালানী ‘আদ-দুরার আল-কামিনাহ’ গ্রন্থে হিজরি ৮ম শতাব্দীর ১৭০ জন প্রখ্যাত নারীর জীবনী উল্লেখ করেন, যাঁদের অধিকাংশই হাদীসবিদ ছিলেন। এর মধ্যে কয়েকজন ছিলেন প্রফেসর লেভেলের। যেমন: জুয়াইরিয়া বিনতে আহমদ। তিনি বড়ো বড়ো মাদ্রাসায় ভিজিটিং প্রফেসর ছিলেন।
বাগদাদে শুহদা বিনতে নাসর –এর ছাত্রদের ৫৯ জনের ছাত্রদের তালিকা এসেছে যাঁদের সবাই উঁচু উঁচু পদে আসীন হয়েছেন পরে; কেউ বিচারপতি, কেউ অধ্যক্ষ, কেউ গবেষক।
যাইনাব বিনতে মাক্কীর ছাত্র ছিলেন আল-মিযযী, ইবনু তাইমিয়্যা, যাহাবী, বিরযালী সহ বিখ্যাত আরও অনেকে।

হিজরি ৯ম শতাব্দীর ১৩০ জন নারী বিশেষজ্ঞদের নাম এসেছে আব্দুল আযীয ইবনু উমার এর ‘মুজাম আল-শুয়ুখ’ গ্রন্থে।১০২ জনের একটি তালিকা এসেছে যাঁদের সবাইকে সনদ দিয়েছেন শাইখা উম্মে মুহাম্মাদ যাইনাব মাকদিসী, এঁদের প্রায় সবাই পুরুষ।নিজ বাসায় ক্লাস নিতেন ফাতিমা বিনতে আলি, উম্মুল ফাখর জুমুয়া, উম্মুল ফিতইয়ান হান্তামাহ, ইবনু রুশাইদের উস্তাদা যাইনাব বিনতে আলাম, উম্মুল ফজল কারীমাহ –সহ অনেক শিক্ষিকা।
শুধু স্বাধীন নারীরা না, দাসীরাও উচ্চশিক্ষার সুযোগ পেত যেমন- স্পেনের খলিফা ৩য় আবদূর রহমানের দাসী রাদিয়াহ, আবুল মুতাররিফের দাসী ইশরাক আল- সুওয়াইদা। আবুল মুতাররিফ তাকে আরবি, ব্যাকরণ, সাহিত্য শিখাতেন, এর জন্য পরে সেই দাসীই সাহিত্যে বড়ো উস্তাযা হয়ে যান।

মধ্যযুগীয় বর্বরতা শব্দটা ইউরোপের জন্য, মুসলিম বিশ্ব তখন আলোয় ঝলমল করছে।
ইসলামের প্রথম শতাব্দীতেই দেড়শ নারী স্কলার ছিল যাদের কাছে মানুষ শিখতে আসত।আয়িশা(রা.) যাকে ইসলামবিদ্বেষীরা নির্যাতিত বলে দাবি করে, তিনি ছিলেন একইসাথে আইন, হাদীস, চিকিৎসাশাস্ত্র, গণিতে বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী।তিনি শুধু চিকিৎসাবিজ্ঞান নিয়ে জানতেন এমন না, মেডিসিন ও সার্জারিতেও দক্ষ ছিলেন।আরেকজন নারী সাহাবি ছিলেন, আল শিফা বিনতে আবদুল্লাহ (রা.)।তিনি পিঁপড়ার কামড়ের ভিন্ন ধরনের শিফা বা নিরাময় বের করেছিলেন।এতে খুশি হয়ে মহানবি(সা.) তাকে অন্যদের এটি শেখাতে বলেন। তার নাম কিন্তু আল শিফা ছিল না। তার চরম দক্ষতার জন্য মানুষ তাকে টাইটেল দিয়েছিল।

কর্ডোভার লাবনা ছিলেন জটিল বীজগণিতে পারদর্শী।ঐ সময়ের সবচেয়ে কঠিন ধরণের অঙ্কগুলো সহজেই করতে পারতেন।(Al-Muhaddithat, Mohammad Akram Nadwi, vo1 ,p 112) সুতাইতা বিন্তে হুসেইন আল মাহামালি বিভিন্ন ইসলামি বিজ্ঞান, ভাষাতত্ত্ব ও গণিতে বিশেষ পারদর্শী ছিলেন। তিনি অন্যান্য গণিতবিদদের উত্থাপিত বিভিন্ন গাণিতিক সমস্যাগুলোর সমাধান দেন। তিনি পাটিগণিতে খুব পারদর্শী ছিলেন। ইসলামের আলিমদের মধ্যে আল্লামা ইবনে কাসির, ইবনুল খাতিব বাগদাদি, ইবনুল কাইয়্যিম আল জাওযিয়্যাহ তার প্রশংসা করেছেন।(Women of Science in Muslim Heritage, Salim al-Hassani) তিনি তখন শারিয়াহ কোর্টে এক্সপার্ট ইউটনেস ছিলেন।যারা এক্সপার্ট ইউটনেস থাকত, তারা বৈজ্ঞানিকভাবে বিভিন্ন হিসাব-নিকাশ করে সাক্ষীর সত্যতা যাচাই করত।(Early Women of Science, Technology, Medicine and Management,Salim al-Hassani)

মারয়াম জিনয়ানি নামক একজন নারীর উল্লেখ পাওয়া যায়, যিনি কেমিস্ট্রি নিয়ে কাজ করতেন।মারইয়াম আল আস্তরলাবি অ্যাস্ট্রোলেব বানাতেন।একে বলা হয় আগেকার কম্পিউটার।রুফাইদা আল আসলামিয়্যাহ ঐ সময় মেডিকেল কোর্স করাতেন।মেডিসিনের ক্ষেত্রে মুসলিম নারীরা অনেক এগিয়ে ছিল।মধ্যযুগে আরব, সিরিয়া,ইরাক, মিশরে অসংখ্যা বিখ্যাত নারী চিকিৎসক ছিলেন।বিখ্যাত চিকিৎসাবিজ্ঞানী আল জাহরাবি নারীদের বিজ্ঞান শিক্ষার ব্যাপারে কথা বলেছিলেন, নারীদের বিজ্ঞান সাধনায় অনুপ্রাণিত করেছিলেন।(Encyclopedia of Women in Islamic culture,Saud Joseph,vol.1,p 8,360,400)

মোহাম্মাদ আকরাম নদভি ৪৩ খন্ডের আল-ওয়াফা বি আসমা আল-নিসা লিখেছিলেন ১০০০০ আলিমার বর্ণনা করে!এর থেকে সহজেই বোঝা যায় সেই সময়ে নারীদের জ্ঞানার্জনের সুযোগ কতটা বেশি ছিল,সেটা না হলে স্রেফ ইসলামিক সভ্যতার জ্ঞানী মুসলিম নারীদের নিয়ে এত বড় বই লিখা সম্ভব না।কিছু উদাহরণ দেই- বিনতে আলি আল মিনশার চার হাজারের বেশি বই সমৃদ্ধ লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।এমন রিপোর্টও আছে, একজন নারী ফিকহ নিয়ে ৬০ খণ্ডের বই লিখেছিলেন, যা দুঃখজনকভাবে হারিয়ে গিয়েছে।
ইসলামের ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ উলামারা একাধিক নারী শিক্ষকের নিকট পড়েছেন ( সে পড়াটা অবশ্য বালেগ হবার আগে, যখন তাঁদের ওপর পর্দা ফরজ হয়নি। এছাড়া পড়া বলতে এটাও বুঝানো হয় যে, ওনারা কোনো বিষয়ে তাঁদের কাছে পর্দার অন্তরাল থেকে জেনে নিতেন) । যেমন-
আবু আবদুল্লাহ মুহাম্মাদ আল নাজ্জার- ৪০ জন
ইবনু হাজম- ৭০ জন
ইবনে আসাকির- ৮০ জন
ইবনুল জাওজি- ৩ জন
আবু তাহির সিলাফি- ২০ জনেরও বেশি
শামসুদ্দিন সাখাবি- ৬৮ জন
ইবনে হাজার আসকালানি- ৫৩ জন
তাজুদ্দিন সুবকি- ১৯ জন
জালালুদ্দিন সুয়ুতি- ৩৩ জন
আবু সাদ আল সামআনি- ৬৯ জন
এছাড়াও ইবনে তাইমিয়া, জারকাশি, ইবনে রজব ও অসংখ্যা বিখ্যাত উলামার নারী শিক্ষক ছিলেন। ইবনে হাজার একজনের কথা বলেন- জাইনাব বিনতু কুতুবুদ্দিন।তার ইজাজাসমূহ বহন করতে একটি আস্ত উট লাগত! ইবনে হাজার তার শাইখা মারইয়াম আল আজরিয়্যার লেকচার সংকলন করে বই প্রকাশ করেছিলেন মুজাম আল শাইখা আজরিয়্যা নামে।ইসলামের ইতিহাসের সবচেয়ে সেরা স্কলারদের একজনের কাছে
একজন নারীর দেয়া লেকচার এতটাই গুরুত্বপূর্ণ ছিল।(Women Scholars of Hadith, Mohsen Haredy,p 911)

তখনকার হারেম বলতে মানুষ সাধারণত বোঝে- যেখানে খলিফার স্ত্রী আর দাসীরা থাকেন।কিন্তু হারেম এর পাশাপাশি ছিল মুসলিম রাস্ট্রের স্ট্যাটিস্টিক্স সেন্টার।সেখানে খলিফার স্ত্রী আর দাসীরা গাণিতিক দক্ষতা দিয়ে রাজ্যের হিসাব সংরক্ষণ করতেন।এমনকি মরক্কোর হারেমের স্ত্রীদের যদি জিজ্ঞেস করা হতো যে রাস্ট্রের উত্তর দিকের গ্রামে আজ কয়টি মুরগির ডিম ফোটানো হয়েছে তারা গাণিতিক দক্ষতা দিয়ে সেটিও বলে দিতেন।মুসলিম স্পেনে বেশ কজন মহিলা কবি- সাহিত্যিক ছিলেন যাদের খ্যাতি পুরো সাম্রাজ্যব্যাপী ছিল।৩য় হিজরি শতকে সেভিলের মারইয়াম বিনতে ইয়াকুব মহিলাদের সাহিত্যের প্রফেসর ছিলেন।এছাড়া বুজায়া শহরের গাসগানিয়া, সেভিলের দাদী আসিয়া, গ্রানাডার নাজহুন, সভাবকবি ওয়াল্লাদা প্রমুখ খুবই মশহুর ছিলেন।মক্কার খাদিজা নুওয়াহরী, যাইনাব বিনতে কামালুদ্দিন হাশেমী, মরক্কোর সারা বিনতে আহমাদ, উম্মে হুসাইন বিনতে কাযীরে মক্কা, উম্মে আলী বিনতে আবুল ফরজ সুরী প্রমুখের কাব্যচর্চা ইতিহাসে বিখ্যাত।ছাপাখানা আবিষ্কারের পূর্বে হস্তলিপিবিদ্যা বহুল চর্চিত ও প্রয়োজনীয় বিষয় ছিল।বহু নারী লিপিকার রাষ্ট্রীয় অনুলিপিকারের দায়িত্বে ছিলেন।তাঁদের মাঝে কাতেবা বিনতে আকরা বাগদাদী ছিলেন উস্তায পর্যায়ের।আরও ছিলেন লুবনা উন্দুলুসী, মুযনাহ উন্দুলুসী।কেবল কর্ডোভা শহরের পশ্চিমাঞ্চলে ১৭০ জন আলিমা ছিলেন যারা কুরআন অনুলিপি করতেন।এছাড়া সাফিয়া বিনতে আবদুল্লাহ উন্দুলুসী, ফখরুন্নিসা শুহদা বিনতে আহমাদ, আয়িশাহ বিনতে উমারা ইফ্রিকিয়াহ প্রমুখ ক্যালিগ্রাফি জগতে বিখ্যাত ছিলেন।জাফর আল মনসুরের কন্যা জুবাইদাহ অসংখ্যা স্থাপনা করেছিলেন, বাগদাদ-মক্কা হাইওয়ে তাঁর বানানো, হাইওয়ের নির্দিষ্ট স্থানগুলোতে সার্ভিস সেন্টার স্থাপন করেছিলেন।

ইসলামিক ইতিহাসে নারীর শিক্ষাগত, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায়ন হয়েছিল।ইসলামি শাসনব্যাবস্থা বর্তমান গণতন্ত্রের মতো না, যোগ্য-চিন্তক বিশেষ লোকদের পরামর্শেই রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্ত নেয়া হতো। নারীদের ভেতরেও যোগ্য চিন্তকদের মতামত নেয়া হতো।
উমর(রা.) খলীফা থাকা অবস্থায় বিদুষী নারীদের মতামত নিতেন।(সুনানে কুবরা ১/১১৩) তৃতীয় খলিফা নির্বাচনে যোগ্য নারীদের রায় নিয়েছিলেন সমন্বয়ক আবদূর রহমান ইবনে আওফা(রা)।(আল ইস্তিয়াব ৮/১৮৬৮)

খলীফা উমারকে গনজামায়াতে চ্যালেঞ্জ করে মত পরিবর্তনে বাধ্য করেছিলেন খাওলা বিনতে সালবা(রা.)। নবম শতকের ফাতিমা বিনতে ইয়াহিয়া নিজ বিচারপতি পিতার সাথে নানা বিষয়ে বিতর্ক করতো।বিচারপতি স্বামীও কঠিন মামলায় তাঁর সাহায্য চাইতো। শাইখা আসমা বিনতে কামালের কাছে পুরুষরা সুপারিশ নিয়ে আসতো।তিনি তাঁদের জন্য সুলতান, কাযীদের কাছে সুপারিশ লিখে দিতেন এবং তা গৃহীতও হতো।হানাফী মাজহাবের বিখ্যাত গ্রন্থ 'তুহফাতুল ফুকাহা' লিখেছিল বাবা, এর ব্যাখ্যাগ্রন্থ লিখেছিল স্বামী এবং এই বইয়ের ভুল সংশোধন করেছিল ফাতিমা। যেকোনো লিগাল ডকুমেন্টে তাঁদের তিনজনেরই স্বাক্ষর থাকতো।

মধ্যযুগে ইসলামবিদ্বেষীরা এই বলে মুহাম্মাদ(সা.) সমালোচনা করতো- তিনি নারীদের বেশি অধিকার দিয়ে দিয়েছেন! ১৭-শতকে শিক্ষিত ইউরোপিয়ানরা পর্যন্ত মুসলিম মহিলাদের মতো নারীর খোঁজ করতো। ইংল্যান্ডের রানি প্রথম এলিজাবেথ টার্কিশ ফ্যাশন অনুযায়ী মুসলিম নারীদের মতো পোশাক পরতেন। হেনরি ইউলিয়ামস বলেন, ''মুসলিমরা না থাকলে মহিলা বিজ্ঞানী তো দূরে থাক,কোনো সময় মহিলা বিজ্ঞানী নিয়ে এমন কল্পকাহিনীও রচিত হতো না।'' (Renaissance England and the Turban,Nabil I. Matar)
উপরের তথ্যগুলো Amiruzzaman Muhammad Shamsul Arefin ভাইয়ের ''ডাবল স্ট্যান্ডার্ড ২.০'' এবং আরমান ফিরমান ভাইয়ের ''মুসলিম মস্তিষ্ক'' বই থেকে নেয়া।
মুসলিম নারীদের ব্যাপারে এখানে যা যা বললাম সেটা স্রেফ বাস্তব অবস্থার ক্ষুদ্র অংশ, আরও বহু জ্ঞানী মুসলিম নারীরা ছিল যাদের কথা কালের গর্ভে হারিয়ে গিয়েছে। নারীদের ক্ষমতায়ন ইসলামিক বিশ্বে কোনো ফেমিনিজম ছাড়াই হয়েছিল। শত-সহস্র আলিমা ও ক্ষমতাবান মুসলিম নারীরা কখনও 'মুসলিম ফেমিনিজম' নামের অক্সিমোরোন তৈরি করেন নাই, সাহাবাদের ইসলামের বুঝকে ''পুরুষতান্ত্রিক অপব্যাখ্যা'' বলেন নাই, নারী মুক্তির কথা বলে ইসলামের ফরজ কখনো লঙ্ঘন করেন নাই। তারা সবকিছু অর্জন করেছে ইসলামের পর্দা, শালীনতা, সামাজিক ও পারিবারিক দায়িত্ব ইত্যাদি ঠিক রেখে।

নারীদের রাজনৈতিক,সামাজিক,পারিবারিক সবক্ষেত্রে যতটুকু অধিকার প্রয়োজন সবটাই মুসলিম বিশ্বে পশ্চিমের বহু আগেই দেয়া হয়েছিল। ফেমিনিজমের অফার করা নারীদের যৌন স্বাধীনতার অধিকার, গর্ভপাতের অধিকার, ইচ্ছামতো কাপড় খোলার অধিকার,পুরুষের সাথে ফ্রি মিক্সিং-এর অধিকার, লিঙ্গ পরিবর্তনের অধিকার, লেসবিয়ান হওয়ার অধিকার ইত্যাদির কোনো প্রয়োজন নেই। পশ্চিমের চাপিয়ে দেয়া নারী অধিকারের সংজ্ঞার কোনো প্রয়োজন নেই আমাদের।

শেষ করবো এটুকু বলেই যে, নারীবাদকে প্রতিরোধ করতে হলে নারী অধিকার দিয়ে প্রতিরোধ করতে হবে। নারী অধিকার না দিয়ে বা নারীবিদ্বেষ প্রকাশ করে কখনও নারীবাদের প্রতিরোধ সম্ভব না। বাস্তবক্ষেত্রে নারীদের অধিকার না দিলে আমার এই লেখা অর্থহীন, তাই আমার অনুরোধ থাকবে নারীদের ন্যায্য অধিকার দিন।

পঠিত : ১২০২ বার

মন্তব্য: ০