Alapon

আমাদের ক্যারিয়ার-আমাদের আন্দোলন...




আমরা ভুলে যাই, আমাদের ক্যারিয়ার গড়া উচিৎ ছিলো দ্বীনের জন্যে। আমাদের জ্ঞান-গবেষণার প্রয়োজন ছিলো আন্দোলনের জন্যে। কিন্তু অধিকাংশই আমরা ক্যারিয়ার গড়তে গিয়ে দ্বীনকেই হারিয়ে ফেলি। জ্ঞান-গবেষণা করতে গিয়ে দ্বীনকেই বিকৃতি করা শুরু করি। শুরু করি প্রকাশ্যেই বদ-দ্বীন চর্চা ।

এভাবে নিজের গ্রহণকৃত সেই বদ-দ্বীনি কালচারকে এক পর্যায়ে চেষ্টা করি একটা দ্বীনি আন্দোলনে ইম্পোর্ট করার। আর যখন এটা সার্বিকভাবে গ্রহণ করা হয় না, তখন আমরা শুরু করি এই দ্বীনি আন্দোলনের নেতা-কর্মীদের তীব্র সমালোচনা। আমরা ভুলেই যাই, কার জন্যে এবং কেন আমরা ক্যারিয়ারিস্টিক হবার স্বপ্ন দেখেছি, কার অবদানে আমাদের জ্ঞানের উঠোনে হাঁঠবার মতো পা তৈরি হয়েছে। কীভাবে এবং কাদের জন্যে আজকের অবস্থান সৃষ্টি হয়েছে। কাকে পুঁজি করে আমাদের এইস্থানে বা এই পর্যায়ে আসা.........

এইভাবে সমালোচকরা সমালোচক, বিকৃতিকারীরা বিকৃতিকারীই থেকে যাবে কিন্তু ইসলাম এবং ইসলামী আন্দোলন তার নিজস্ব গতীতেই চলবো। সংখ্যায় তা যা-ইহোক না কেন, আল্লাহ কোনো না কোনোভাবে তাঁর দ্বীনকে, দ্বীনি আন্দোলনকে হেফাজত করবেনই। ইন শা আল্লাহ!

ইসলামী আন্দোলনের মেজাজ আর গতি কেমন এবং কীরূপ হবে, তা এবারের সদস্য সম্মেলনে জীবন্ত শহীদ আশফাকুর রহমান বিপু ভাইকে দেখে এবং ভাইয়ের বক্তৃতা শুনে বুঝলাম। তিনি কিন্তু জুমার দিনের হরতাল-অবরোধের মিছিলে হাত হারাননি । হারিয়েছেন ইউনিভার্সিটিতে। শিক্ষার পরিবেশে। আমাদের অগণিত ভাই শাহাদাত বরণ করেছেন ঘুমন্ত অবস্থায়। কিংবা প্রতিষ্ঠানে দায়িত্ব পালনরত অবস্থায়। দাওয়াতি কাজে, তালিম-তরবিয়াতের প্রোগ্রামগুলোতে......

যাই হোক, বিপু ভাই হাত হারিয়েও সদস্য হিসেবে কাজ করেছেন। ছাত্র জীবন শেষে আন্দলনের রুকন হয়েছেন। পরিবারের সবাই সংগঠন করেছেন। ভাইও করে যাচ্ছেন।

ভাই নিজ এলাকা সাতক্ষিরার কলোরোয়া একটি কলেজ প্রতিষ্ঠা করেছেন। কলেজটাকে ভালো পর্যায়ে নিয়েও গেছেন। পনের সালে "মুক্তিযুদ্ধ" ধর্মের ধার্মিক আওয়ামী লীগের গুণ্ডারা ভাইকে বহিস্কার করেন প্রতিষ্ঠানের চাকরি থেকে।

অসংখ্য-অগণিত মামলায় ভাইকে পর্যুদুস্ত করা হয়। নিজ জেলা সাতক্ষিরা ছেড়ে ভাই নানান জায়গায় পালিয়ে আত্মগোপনে থাকতে শুরু করেন। পরিবার নিয়ে একবার এখানে তো একবার সেখানে। একবার ঢাকায় একবার সিলেটে গিয়ে দিন যাপন করেন।

কিন্তু ভাইয়ের তবুও কোনো অভিযোগ কিংবা অনুযোগ নেই। ভাইয়ের গালে তৃপ্তির হাসি। দ্বীনের জন্যে ত্যাগ-কুরবানি করে যারা তৃপ্তি পায়, তাদের কি কোনো অভিযোগ অনুযোগ থাকতে পারে? ভাইয়েরও নেই। কিন্তু যত আফসোস আর অভিযোগ হচ্ছে ইয়োরোপীয়াত-ইসলামিয়াত জগাখিচুড়ি করা ভাইদের। যত হতাশা তাদের।

এরা ধনী দেশে গিয়ে নিজের গরিব দেশের অতীত নিয়ে অধিকাংশই হীনমন্যতায় ভোগে। একাডেমিক ইসলাম দিয়ে প্রায়োগিক ইসলামকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। যে মাঠে রক্ত দিয়েছে, যে মায়ের বুক খালি হয়েছে, যে হারিয়েছে তথাকথিত ক্যারিয়ার কেবল সেই বুঝে ত্যাগের মহিমা। আর যারা পার্ট টাইম হিসেবে আন্দোলন করেছে, ক্যারিয়ার নিয়ে ক্ষমতা নিয়ে বেশি ফোকাসড তাদের কাছে আন্দোলন তো একটা অপরিণামদর্শী রাজনীতি। বদরে যারা লড়েছিল তাদের না ছিল ভুমি, না ছিল রণসজ্জজা। যারা স্বপ্ন দেখে ঘোড়ায় চড়ে খরস্রোতা টাইগ্রিস পার হয়ে ইতিহাস থেকে মুছে দিয়েছিল তৎকালীন পৃথিবীর সর্বশক্তিময় সাম্রাজ্য পার্সিয়ান - তারা কখনো সেনাপতি সাদ(রাঃ) কে বলেনি স্বপ্ন দেখে ঘোড়া নিয়ে খরস্রোতা টাইগ্রিস পার হওয়া এ কেমন অপরিণামদর্শিতা। যারা লড়ে তারাই মরে। তারা মরে শহিদ হয়। বাকিরা হায়াত শেষ তাই মরে। দুই মরণ তো এক নয়। তেমনি সবার আন্দোলন ভাবনাও এক নয়।

যাইহোক, যারা আমাদের বিপু ভাইদের নিয়ে হতাশা প্রকাশ করে, যারা শহীদ কিংবা জীবন্ত শহীদ ভাইদেরকে টেনে এনে নেতৃবৃন্দের অযথা সমালোচনা করে, আমার বিশ্বাস ভাইয়েরা ওরম কথিত ইন্টালেকচুয়াল পোলাপানের গালে থু থু নিক্ষেপ করবেন। আমাদের শহীদেরা আমাদের সম্পদ। আমাদের আহত-পঙ্গুত্ববরণকারী ভাইয়েরা আমাদের অনুপ্রেরণা।

পঠিত : ৪৬৮ বার

মন্তব্য: ০