Alapon

ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা সময়ের শ্রেষ্ঠ দাবি


রাজনীতিকে ’নীতির রাজা’ বা ’রাজার নীতি’ বলা হলেও বাংলাদেশে ’ছাত্র রাজনীতি’কেই সকল রাজনীতির রাজা বলা হয়। এদেশে সকল রাজনৈতিক দল গুলো তাদের অঙ্গ ছাত্র সংগঠনকে কাজে লাগিয়ে ক্ষমতার মসনদে বসে। যে দলের ছাত্র সংগঠন যত বেশি মজবুত সে দল ততবেশি শক্তিশালী। প্রত্যেকটা দলই ছাত্রদেরকে নিজেদের দলে ভিড়াতে সদা প্রস্তুত থাকছে, করছে প্রতিযোগিতা। প্রতিযোগিতা এতো বেশি যে কখনো সুবিধা দিয়ে, কখনো অসুবিধা থেকে উত্তোরণের আশ্বাস দিয়ে, কখনো চাকুরির লোভে, কখনো অর্থলোভে, কখনো প্রলোভনে, আবার কখনো কখনো জোর পূর্বকই ছাত্রদেরকে দলে যোগ দিতে বাধ্য করছে। ছাত্র রাজনীতি বাংলাদেশে নতুন নয়, বাংলাদেশের জন্মের সাথেই ছাত্র রাজনীতি ওতপ্রোতভাবে জড়িত। ’৫২-র ভাষা আন্দোলনে এ দেশের ছাত্রসমাজ এক গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা রেখেছিল। এরপর ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান, ’৭১-এর মহান স্বাধীনতাযুদ্ধ এবং ’৯০-এর গণআন্দোলনে দেশের ছাত্রসমাজকে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে দেখা যায়।
ছাত্র রাজনীতির এরপরের ইতিহাস অনাকাঙিক্ষত ও দুঃখজনক। রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়ায় থেকে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা নীতি আদর্শ থেকে দূরে সরে হত্যা,সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, দখলদারিত্ব, টেন্ডারবাজিসহ বিভিন্ন সহিংস কার্যকলাপে জড়িয়ে পড়তে থাকে। ষাট এবং সত্তরের দশকে এদেশের ছাত্র রাজনীতি ছিল মানুষের কল্যাণের জন্য, জনস্বার্থ রক্ষার জন্য, সাধারণ শিক্ষার্থীদের ন্যায্য অধিকার আদায়ের জন্য, অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর জন্য। কিন্তু দুঃখের বিষয় বর্তমানে ছাত্র রাজনীতি বাংলাদেশে ক্যান্সারে রূপ নিয়েছে। সাধারণ শিক্ষার্থীদের ন্যায্য দাবি আদায়ের বিপরীতে নিজেদের এবং দলীয় হীনস্বার্থে শিক্ষাঙ্গনগুলোয় অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হচ্ছে। যার ফলেই বর্তমান প্রেক্ষাপটে ছাত্র রাজনীতিকে অসাড় বলে মনে হয়েছে।
ছাত্র রাজনীতি ছাত্রদের জীবন থেকে অমূল্য সময়টুকু ছিনিয়ে নিচ্ছে। মিছিল,মিটিং,টেন্টসহ বিভিন্ন কার্যক্রমে বহু সময় ব্যয় করা হয়। কেউ কেউতো ক্লাস বিসর্জন দিয়ে দলীয় ও সাংগঠনিক কাজে ব্যস্ত থাকছেন। ফলে ছাত্রনেতারা অধিকাংশই জ্ঞানহীন সার্টিফিকেট নামক কথিত কাগজের মালিকানা লাভ করছেন। ছাত্র রাজনীতির ফলে গবেষণায় ভাঁটা পড়ছে। শিক্ষার্থীরা অনেকাংশে দলীয় ব্যাপার নিয়ে যত চিন্তা ভাবনা করে তার ছিটেফোটাও গবেষণা নিয়ে করে না। অনেক ছাত্র নেতারাতো দলীয় কাজ করতে করতে এতোই ব্যস্ত যে,পাঠ্য বইয়ের সাথে মোলাকাত করার সুযোগ পান না। ফলে কখনো এক বর্ষ পার করতে তাদের তিন বর্ষ লেগে যায়। যা শিক্ষা ব্যবস্থার জন্য চরম হুমকি। বড় ভাইদের মাধ্যমে রাজনীতি করতে আগ্রহী ছাত্র-ছাত্রীরা লেখাপড়ার চেয়েও বেশি মনযোগী হয়ে পড়ে ক্ষমতার দাপটের দিকে। বিশ্ববিদ্যালয় বা কলেজেই শুধু নয়, স্কুলভিত্তিক সংগঠনও রয়েছে এখন দেশে, যেখানে সরাসরি রাজনীতি না হলেও রাজনীতির কলা কৌশল, ক্ষমতার দাপট ঠিকই দেখা যায় ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে। একটি ছাত্রকে নিয়ে পরিবারের অনেক স্বপ্ন থাকে। আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী পরিবারগুলোর সন্তানেরা রাজকীয় ভাবেই পড়ালেখা করে। কিন্তু দরিদ্র পরিবারের মেধাবী ছাত্রদের কলেজ-ইউনিভার্সিটিতে ভর্তির মাধ্যমে একটি স্বপ্নের ডালপালা মেলতে থাকে। লেখাপড়া শেষ করে পিতা-মাতার মুখ উজ্জ্বল করাসহ দরিদ্র পরিবারটির হাল ধরার স্বপ্ন থাকে ছাত্রটির মনে। কিন্তু ছাত্র রাজনীতির বিষাক্ত ছোবলে অকারণে বহু মেধাবীর প্রাণ ঝড়ে যাওয়াসহ বহু মেধাবী ছাত্র রাজনীতিতে জড়িয়ে নানা অপকর্মে লিপ্ত হয়। রাজনীতি কোনো পেশা নয়, একজন শিক্ষার্থী ভবিষ্যতে রাজনীতিবিদ হওয়ার জন্য ছাত্রজীবনেই রাজনীতিতে পা রাখে। তাকে নিজ যোগ্যতায় ব্যবসা কিংবা চাকরির মাধ্যমেই জীবিকা নির্বাহ করতে হয়। আর রাজনীতিতে প্রবেশ করলেও রাজনীতি থেকে অর্থ আসবে এমন কোনো নিয়ম নেই। যারা রাজনীতি করে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান, তারাই শুধু বেতনসহ আর্থিক সুবিধা পেয়ে থাকেন। কাজেই আদর্শিক রাজনীতি যেখানে অর্থের যোগান দেয় না, সেখানে দীর্ঘ সাত থেকে আট বছর ছাত্র রাজনীতিতে জড়িত থাকা কোনো অর্থবহ বিষয় নয়।বরং এই সময়টুকু আপন জ্ঞান ও যোগ্যতা অর্জন করা জরুরী। রাজনীতির ব্যাপক নৈতিক অবক্ষয় ছাত্রসমাজের চরিত্রগঠনের বদলে তাদের ক্রমশই দুর্নীতির দিকে ঠেলে দিচ্ছে। ফলে সমাজের বহু সম্ভাবনাময় ভবিষ্যত অসৎ চরিত্রের অধিকারী হয়ে গড়ে উঠছে।আজ যতনা অপকর্ম করছে মুর্খরা,তার চেয়ে হাজার গুণ বেশি করছে শিক্ষিতরা।তারা দলীয় আশ্রয়ে কলমের খোঁচায় হাজার হাজার কোটি টাকা ছিনিয়ে নিচ্ছে। এরইমধ্যে ছাত্র-ছাত্রীদের একটি বড় অংশ চিরাচরিত রাজনৈতিক ব্যবস্থার ওপর আস্থা হারিয়ে উগ্রপন্থাকে বেছে নিচ্ছে। যার সুযোগ নিচ্ছে পৃথিবীব্যাপী বিভিন্ন অসাধু মানুষ ও সংস্থা। তারা নিজেদের সংকীর্ণ স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য ছাত্র সমাজকে আরো বেশি করে উগ্রপন্থার দিকে ঠেলে দিচ্ছে।

৯০এর পরবর্তী সময়ের ছাত্র রাজনীতির দিকে তাকালে আমাদের সম্মুখে ভেসে আসে ছাত্র রাজনীতির হত্যাযজ্ঞ ও ধ্বংসলীলা। দেশের বড় সংগঠন গুলোর প্রায় সবার হাতেই হৃদয়বিদারক হত্যাকান্ড সংগঠিত হয়েছে। ২০১০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি স্যার এ এফ রহমান হলে সিট দখল নিয়ে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষের সময় আহত হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র আবু বকর নিহত হন। ২০১২ সালের ৮ই জানুয়ারি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের মধ্যে অন্তর্কলহে বিরোধীপক্ষের হামলায় আহত হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ছাত্র জুবায়ের আহমেদ মারা যান। ২০১২ সালের ডিসেম্বর মাসের ৯ তারিখ রবিবার সকাল ৯টা থেকে সাড়ে ৯টার মধ্যে। ছাত্রলীগ সংগঠনের কর্মীরা বিশ্বজিৎ দাসকে বিনা কারণে প্রকাশ্য-দিবালোকে শত শত মানুষ ও আইনরক্ষা বাহিনীর সদস্য এবং সাংবাদিকদের ক্যামেরার সামনে নৃশংসভাবে হত্যা করে। ২০১৮ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি রাতে সলিমুল্লাহ মুসলিম হলে ছাত্রলীগের নেতাকর্মী দ্বারা নির্যাতিত হয়ে চক্ষু হারান শিক্ষার্থী এহসান রফিক। ২০১৮ সালে কোটা সংস্কারের আন্দোলন শুরু হওয়ার পর ৯ই এপ্রিল বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে মিছিল করে এবং বিভিন্ন সময় আন্দোলকারীদের উপর হামলা চালায়। ২০১৮-র নিরাপদ সড়ক আন্দোলন বাংলাদেশে কার্যকর সড়ক নিরাপত্তার দাবিতে ২৯ জুলাই থেকে ৮ আগস্ট ২০১৮ পর্যন্ত সংঘটিত একটি আন্দোলন বা গণবিক্ষোভ। শিক্ষার্থীরা শান্তিপূর্ণভাবে মানববন্ধন ও অবরোধ করতে চাইলেও দুর্ঘটনার পরদিন থেকেই পুলিশ তাদের ওপর লাঠিচার্জ ও কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে ছত্রভঙ্গ করে দেয়ার চেষ্টা করে; পুলিশের পাশাপাশি ছাত্রলীগ ও সরকার-সমর্থক বলে অভিযুক্ত যুবকেরা দেশীয় অস্ত্র নিয়ে ছাত্রছাত্রী ও সাংবাদিকদের ওপর হামলা করে। ২০০৯ সালের ১১ই মার্চ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আঙ্গিনায় ছাত্রলীগের হাতে নির্মমভাবে খুন হন শিবির সেক্রেটারি শরীফুজ্জামান নোমানী। ২০২০ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর সিলেটের শাহ পরাণের মাজার ভ্রমণ করে ফেরার পথে মুরারিচাঁদ কলেজের ছাত্রাবাসে এক গৃহবধূ ধর্ষণের শিকার হয়। স্বামীর কাছ থেকে তুলে নিয়ে ধর্ষণের এই ঘটনায় ৬ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়, যাদের সবাই ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত। ছাত্রলীগ সংগঠনটি প্রায়সময় ধর্ষণ, চাঁদাবাজি, খুন, লুটপাট, যৌন সন্ত্রাসসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের দায়ে অভিযুক্ত হয়ে আসছে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ নেতা দুর্ধর্ষ ক্যাডার জসিমউদ্দিন মানিক ১০০ ছাত্রীকে ধর্ষণের ‘সেঞ্চুরি উৎসব’ পালন করেছিল।

১৯৯২ সালের ১৩ই মার্চ গণতান্ত্রিক ছাত্র ঐক্যের সন্ত্রাস বিরোধী মিছিল চলাকালে ছাত্রদল ও ছাত্রলীগের গোলাগুলি চলাকালে মিছিলের নেতৃত্বদানকারী বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় নেতা মঈন হোসেন রাজু নিহত হন। রাজুসহ সন্ত্রাস বিরোধী আন্দোলনের সকল নিহতদের স্মরণে সন্ত্রাস বিরোধী রাজু স্মারক ভাস্কর্য নির্মিত হয়। ২০০২ সালের ৮ জুন টেন্ডার নিয়ে বিরোধে ছাত্রদলের দুই গ্রুপের গোলাগুলিতে কেমিকৌশল বিভাগের (৯৯ ব্যাচ) লেভেল ২, টার্ম ২–এর ছাত্রী সাবেকুন নাহার সনি নিহত হন। এছাড়াও বিএনপি জোট সরকারের আমলে ছাত্রদলের বিরোদ্ধে অসংখ্য চাঁদাবাঁজি, টেন্ডারবাজি, ধর্ষণের মত হীন ঘটনার অভিযোগ রয়েছে।

দেশের সর্ববৃহৎ ইসলামী ছাত্র সংগঠন ছাত্রশিবিরের বিরুদ্ধেও রগ কাটা, হত্যা ও নির্যাতনের অভিযোগ রয়েছে। পত্র-পত্রিকার সূত্র মতে, ১৯৮১ সালে চট্টগ্রাম সিটি কলেজের নির্বাচিত এজিএস ছাত্রলীগ নেতা তবারক হোসেনকে হত্যা করে শিবির। এটি ছিল শিবিরের প্রথম হত্যা। বিভিন্ন সূত্রমতে ১৯৮১ সাল থেকে আজ পর্যন্ত ছাত্রলীগসহ বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের ৩২ জন নেতাকর্মী ছাত্র শিবিরের হাতে নিহত হন। আহত হয়েছেন অসংখ্য মেধাবী শিক্ষার্থী। নিহতদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ১৯৮২ সালের ১১ মার্চ শিবিরের হামলায় মারা যান রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ নেতা মীর মোশতাক এলাহী। ২০১০ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল দখলকে কেন্দ্র করে শিবির-ছাত্রলীগের সংঘর্ষে নিহত হন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ কর্মী ও গণিত বিভাগের মেধাবী শিক্ষার্থী ফারুক হোসেন। এছাড়াও চট্রগ্রামের উল্লেখযোগ্য আট খুনের দায়ে অভিযুক্ত ইসলামি ছাত্রশিবির।

এছাড়াও শুধুমাত্র বর্তমান সরকারের শাসনামলে ছাত্রসংগঠন গুলোর আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দেশের ১২ বিশ্ববিদ্যালয়সহ ১৬ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ৩৭জন শিক্ষার্থী খুন হয়েছে। তন্মধ্যে চবিতে আট হত্যাকাণ্ড ও ৩০০ সংঘর্ষ, রাবিতে ছয় হত্যাকাণ্ড, সিলেটে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ও এমসি কলেজে এক যুগে সাতটি হত্যাকাণ্ড, ময়মনসিংহে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনজন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে দুজন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন, দিনাজপুরের হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনজন, জাহাঙ্গীরনগরে একজন, মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন এবং অন্যান্য কলেজে আরো চারজন খুন হন।

সর্বশেষ বুয়েট ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের হাতে আবরার ফাহাদ হত্যার পর সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) সাংগঠনিক রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হয়েছে। অনেক মনীষী ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি তুলেছেন।জাতীয় অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী বুয়েটে শিক্ষক ও ছাত্ররাজনীতি বন্ধের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন। ইমেরিটাস অধ্যাপক আইনুন নিশাত বলেন, ছাত্রসংগঠনগুলোকে মূল দলের রাজনৈতিক নেতারা নিয়ন্ত্রণ করেন। ছাত্ররাজনীতির নামে টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি চলে। এই জাতীয় রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে হবে। অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্র রাজনীতির পাশাপাশি শিক্ষকরাজনীতিও নিষিদ্ধ করতে হবে। এছাড়া বহু শিক্ষাবিদ ছাত্র রাজনীতি বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন। বিগত কিছুদিনের ছাত্র সংঘর্ষে সবার সামনে ছাত্র রাজনীতির প্রয়োজনীয়তা/অপ্রয়োজনীয়তার প্রশ্নটি চলে এসেছে। মানুষ পক্ষ এবং বিপক্ষ এই দু’দলে বিভক্ত, কিন্তু আপাত সহজ কোন সমাধান কারোর কাছেই নেই। দু’পক্ষরই উদ্দেশ্য বর্তমান ছাত্র রাজনীতিকে কলুষ মুক্ত করা। যারা ছাত্র রাজনীতির বিপক্ষে তাঁদের যুক্তি হল বর্তমান ছাত্র রাজনীতির দৈন্যদশাঃ দলীয় কোন্দল, হল দখল, সংঘর্ষ, মৃত্যু। এছাড়াও বর্তমান ছাত্র রাজনীতি দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার সংগ্রাম বাদ দিয়ে নিজেদের আধিপত্য ও রাজনৈতিক দলের খুঁটি মজবুত করণে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। তাই বর্তমান সময়ে এই ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করা সময়ের অপরিহার্য দাবি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

যারা মনে করে ছাত্র রাজনীতি বন্ধ হয়ে গেলে স্বাধীনতার সূর্য অস্তমতি হবে তাদের জন্য ’কোটা সংস্কার আন্দোলন’ ও ’নিরাপদ সড়ক আন্দোলন’কে উদাহরণ হিসেবে পেশ করবো। স্বৈরশাসক এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের পর এই আন্দোলন দুটোকে সবচেয়ে বড় ও সফল আন্দোলন বলে মনে করা হয়। এই আন্দোলনদ্বয়ে ছাত্র রাজনীতি সহায়কতো ছিলোই না বরং আমরা দেখেছি সরকার দলীয় ছাত্র সংগঠন থেকে কোথাও কোথাও বিরোধিতা পর্যন্ত করা হয়েছে। তথাপিও ছাত্রদের ঐক্যবদ্ধ অরাজনৈতিক আন্দোলন সফলতা লাভ করেছে। এতেই প্রমাণ করে বর্তমানে রাষ্ট্রীয় স্বার্থ সংরক্ষণে ছাত্র রাজনীতি ব্যতিতই অরাজনৈতিক ছাত্র আন্দোলন যথেষ্ট হবে। বর্তমান রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠন গুলো রাজনৈতিক নেতা ও দলের পকেট সংগঠনে পরিণত হয়েছে। ফলে রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠন গুলো দেশ ও জাতির স্বার্থের আগে দলীয় স্বার্থকে বড় করে দেখছে।
আবার যারা মনে করে ছাত্র রাজনীতি বন্ধ হয়ে গেলে নেতৃত্বের ধারাবাহিকতা নষ্ট হবে, তাদের জন্য ছাত্র সংসদের উপকারিতাকে উদাহরণ হিসেবে পেশ করবো। ছাত্র রাজনীতি দলীয় নেতৃত্বের মধ্যদিয়ে জাতীয় নেতৃত্ব তৈরি করে কিন্তু ছাত্র সংসদ আপামর ছাত্র জনতার নেতৃত্বের মধ্যদিয়ে জাতীয় নেতৃত্ব তৈরি করে।নেতৃত্বের ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে ছাত্র রাজনীতি নয় বরং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্র সংসদ চালু করতে হবে। ছাত্র রাজনীতির প্রয়োজনীয়তা বা অনেক ইতিবাচক দিক রয়েছে। তবে রাজনীতির শিকার হয়ে যেভাবে মেধাবী ছাত্ররা হত‌্যাকাণ্ডের শিকার হচ্ছেন, শিক্ষা ব্যবস্থাকে লাটে উঠাচ্ছেন, সেখানে নেতিবাচক দিকই বেশি। একটি প্রাণের মূল্যের কাছে, শিক্ষা ব্যবস্থার ভিত্তির কাছে ছাত্র রাজনীতির হাজারটা সুফল ও প্রয়োজনীয়তা মূল্যহীন হয়ে পড়ে।

লেখক,
মুহাম্মদ ইয়াসিন আরাফাত ত্বোহা
কলামিস্ট ও সোশ্যাল এক্টিভিস্ট


https://www.dailyjanata.net/18625?fbclid=IwAR1IuYL78FSr-ceyq3rfg6nzbdIQ-NZLbXQS_KVjp1JqOY9TAe1PAV6zots

পঠিত : ৯৩১ বার

মন্তব্য: ০