Alapon

" ড. আল্লামা ইকবাল ও মাওলানা মওদূদীর সাথে মাওলানা হোসাইন আহমদ মাদানির বিরোধের সূত্রপাত যেভাবে ও যখন থেকে"



পাকিস্তান সৃষ্টির ব্যাপারে বিখ্যাত মুসলিম চিন্তাবিদ ও দার্শনিক ড. আল্লামা ইকবালের ( বর্তমান পাকিস্তানের জাতীয় কবি) যতোটা আগ্রহ ছিলো, যতোটা স্বপ্ন আর আকাঙ্ক্ষা ছিলো, ঠিক ততোটাই অনাগ্রহ আর বিরোধিতা ছিলো দেওবন্দের মাওলানা হোসাইন আহমদ মাদানির ( রহিমাহুল্লাহ)। তাদের উভয়ের মধ্যে এই নিয়ে ব্যাপক একটা বিতর্কও হয়। এর পরেই মাওলানা মাদানি রহিমাহুল্লাহ অখণ্ড ভারতকে ডিফেন্ড করে একটা বই লেখেন ‘মুত্তাহিদা কওমিয়া আউর ইসলাম’ তথা এক জাতিতত্ত্ব ও ইসলাম নামে।


এখানে তিনি প্রমাণ করেন যে, ভারতের হিন্দু-মুসলিম সবাই মিলেই এক জাতি। তিনি ‘মদিনা সনদের মাধ্যমে এই একজাতি তত্ত্ব প্রমাণের চেষ্টা করেছেন। তিনি উপস্থাপনের চেষ্টা করেছেন যে, মুসলিম-অমুসলিম মিলে যে একজাতি হয়, এটা রাসুলের (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওসাল্লাম) যুগে মদিনায়ও ছিলো। আর তাঁর এসব কর্মকাণ্ডে ব্যাপক ক্ষুব্ধ হয়েছেন আল্লামা ইকবাল। মাওলানা মওদূদী রহিমাহুল্লাহ তখন দেওবন্দের মুখপত্র আল জমিয়তের সম্পাদক। তিনি সুদীর্ঘ সাত বছর থেকে জমিয়তে ওলামায়ে হিন্দের পত্রিকা আল জমিয়তের সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছিলেন। কিন্তু মাওলানা মাদানির অখণ্ড ভারত সমর্থন করা কিংবা মুসলিমদের জন্যে আলাদা রাষ্ট্র তথা পাকিস্তান আন্দোলনের বিরুদ্ধে অবস্থান করায় তিনি স্বেচ্ছায় সে পত্রিকার সম্পাদকের দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করেন। এই ছিলো মূল বিরোধ এবং প্রথম বিরোধের সূত্রপাত।


তখন কিন্তু মওদূদী তাঁদের কাছে একটা বাচ্চা ছেলে। বাচ্চা ছেলের এহেন আচরণ স্বাভাবিকভাবেই তাঁরা মেনে নিতে পারেননি। মানে মাত্র ২৫ বছরের একটা ছেলে উস্তাদদের সাথে রাজনৈতিক দ্বিমতের জায়গা থেকে, একজাতি তত্ত্বের পক্ষে পত্রিকা সম্পাদনা না করে চাকরি ছেড়ে দিলো। করে ফেললো পদত্যাগ ! এর ওপর আবার আগুনে ঘি ঢালার মতো অবস্থান সৃষ্টি হয়েছে মওদূদী মাওলানা মাদানির একজাতি তত্ত্বকে ভুল প্রমাণ করে বই লেখাটা। তিনি একজাতি তত্ত্বটাকে ভুল প্রমাণ করে যে বইটা লেখেন, সেটা বাংলায় অনুবাদ হয়েছে " ইসলাম ও জাতীয়তাবাদ" নামে।


এরপর মাওলানা সেকুলার-কমিউনিস্ট বা ইসলাম বিরোধী মতাদর্শগুলোর বিরুদ্ধে অবিরাম কলম যুদ্ধ চালিয়ে গেলেও মাওলানা মাদানি (আল্লাহ ওনার প্রতি রহম করুন, জান্নাতের সর্বোচ্চ আসন প্রদান করুন) এবং তাঁর ছাত্রদের বড়োসড়ো একটা অংশ মওদূদীর বিরুদ্ধে অব্যাহতভাবে কলম চালাতে থাকে। গোমরাহ-পথভ্রষ্ট হিসেবে ঘোষণা দিতে থাকে........


এখানে উল্লেখ্য একটা বিষয়, মাওলানা মাদানিকে আল্লামা ইকবাল যেভাবে সমালোচনা করতেন বা করেছেন, মাওলানা মওদূদী কিন্তু সেভাবে কিছুই করেননি। তিনি জাস্ট চিন্তা ও দর্শনের জায়গা থেকেই ইলমি সমালোচনা করতেন বা নিজের লেখা লেখে যেতেন।


~রেদওয়ান রাওয়াহা
১৫.০৬.২২

পঠিত : ৪৭৩ বার

মন্তব্য: ০