Alapon

সংস্কৃতির ধারণা



সংস্কৃতি নিয়ে আমাদের মুসলিম সমাজে অদ্ভুত ধারণা বিরাজমান। পাশ্চাত্য সাংস্কৃতিক নানা তৎপরতা নিয়ে প্রশ্ন তুললে একশ্রেণীর মুসলিম ভাইবোন উলটো প্রশ্ন করে বসে। ইসলামে কী সংস্কৃতি বলতে কিছু নাই?

ইসলামে অবশ্যই সংস্কৃতি আছে। কিন্তু আমরা ইসলামের সংস্কৃতিসমূহকে সংস্কৃতি মনে করতে পারছি না। আমরা উয়েস্টার্ন ফ্রেমওয়ার্কের বাইরে সাংস্কৃতির কোন অস্তিত্ব কল্পনা করতে পারছি না। মনস্তাত্ত্বিকভাবে আমাদের আত্মসমর্পণ উয়েস্টার্ন কালচারের কাছে। এই আত্মসমর্পণটা শরীয়তের কাছে প্রদান করার নামই ইসলাম। আর যে করে সে মুসলিম। কিন্তু..

প্রতিদিন পাঁচবার আযান, পাঁচওয়াক্ত জামাত, জুমু'আর সম্মেলন, আমাদের দ্বীনি মজলিসসমূহ, ইলমের হালাকাগুলো, খালি গলায় নাশিদসন্ধা, আমাদের শাহাদাত, (জি)হাদ, বিজয় উৎযাপন, ইফতার, সেহরী, ঈদের সালাত, ঘরোয়া তা'লীম এসব কিছুই তো মুসলিম সমাজের সংস্কৃতি। দ্বীনের প্রতিটি শি'আরই ইসলামী সাংস্কৃতির অংশ। আমাদের তিলাওয়াত, আমাদের হাদীস পাঠ, আমাদের ঘোড়সওয়ারি, আমাদের তীরিন্দাজি (আধুনিক সময়ে ভিন্ন কিছু ভেবে নিন), আমাদের দৌঁড় প্রতিযোগীতা সর্বোপরি আল্লাহর রাহে শত্রুর বিরুদ্ধে (জি)হাদের প্রস্তুতিমূলক সমস্ত তৎপরতাই ইসলামের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড।

কিন্তু আমরা নিজেদের ভিতর যেই পাশ্চাত্য মাইন্ড সেট করে রেখেছি, সেই জায়গা থেকে এগুলোকে সংস্কৃতি মনে হয় না। আমরা ইসলামের ভিতর সেই সাংস্কৃতি খুঁজে ফিরি যেটা আসলে ইসলামে এলাউ না। ব্যর্থ হয়ে অবশেষে সেই পাশ্চাত্য ফ্রেমওয়ার্কের সংস্কৃতির ভিতরে ইসলামে ফ্লেভার দেয়ার অপচেষ্টায় লিপ্ত হই। যেমন জন্মদিনের উৎসবের কথাই ধরুন। এটা ইসলামী সংস্কৃতির অংশ না এবং ইসলামী শরীয়ত এর বৈধতাও দেয় না। কোন কোন ভাই ইসলামী সংস্কৃতির দোহাই দিয়ে বলবে, "পশ্চিমা সমাজ যেভাবে জন্মদিন পালন করে সেভাবে পালন করলাম না।আমরা বরং সেদিন ভাল খাবারের আয়োজনের পাশাপাশি বাচ্চাদের নিয়ে কুরআন তিলাওয়াত বা অন্য কোন দ্বীনি আয়োজনের মধ্যে জন্মদিনের উৎসব পালন করলাম। ব্যস, ইসলামী সংস্কৃতি হয়ে গেল।"

এরকম আরো দৃষ্টান্ত আমরা দেখতে পাব। যেখানে আমরা ওয়েস্টার্ন ফ্রেমওয়ার্কের সাংস্কৃতিক তৎপরতাকে ইসলামী ফ্লেভার দেয়ার চেষ্টা করি। কেউ আপত্তি করলে আমরা সেকুলারদের মতই বলে দেয়, "ভাই তুমি সংস্কৃতিমনা না", "ইসলামে সংস্কৃতি বলতেও কিছু আছে ভাই"। নাচগান, নাটক সিনেমা নিয়ে কথা বললে একদল সেকুলার সেইম কথাটাই বলে। নববর্ষ নিয়ে শরীয়তের বিধান বর্ণনা করলেও আসে এই সংস্কৃতির দোহাই। কিন্তু মুসলিমদের বুঝতে হবে তাদের সংস্কৃতির উৎস কী হবে? ইসলামী শরীয়াহ ছাড়া মুসলিমদের সাংস্কৃতির অন্য কোন উৎস হতে পারে কি না এবং শরীয়াহ বহির্ভূত উৎসগুলো থেকে নির্গত অপতৎপরতাগুলো সংস্কৃতি হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করতে পারে কি না? একজন মুসলিম হিসেবে এই প্রশ্নগুলোর উত্তরে "না" বলা ছাড়া উপায় নাই।


সবশেষে কথা হল, আমরা যদি পাশ্চাত্য ফ্রেমওয়ার্কের বাইরে সংস্কৃতির কোন অস্তিত্ব না মেনে নিতে পারি, তাহলে ইসলামে কখনোই সংস্কৃতি খুঁজে পাব না। এজন্যই শুরুতে বলেছি, আমরা ইসলামের সংস্কৃতিগুলোকে সংস্কৃতি হিসেবে বরণ করে নিতে পারছি না। সমস্যা এখানেই। মনস্তাত্ত্বিক উপনিবেশের ফলে আমাদের চিন্তার জগতে সংস্কৃতির এক নোংড়া চিত্র বদ্ধমূল হয়ে আছে। এর বাইরে আর কোন তৎপরতাকেই আমাদের কাছে সংস্কৃতি মনে হয় না। আমাদেরকে প্রথমে এই নির্দিষ্ট ছক থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। উয়েস্টার্ন ফ্রেমওয়ার্ক থেকে বেরিয়ে শরীয়তের ভিতর থেকে সংস্কৃতির চিত্র রচনা করতে হবে। তখন সামাজিক জীবনে আমাদের রবের দেয়া প্রতিটি বিধান ও নির্দেশকেই সংস্কৃতি মনে হবে। দ্বীনের জন্য আমাদের সকল তৎপরতাই আমাদের জন্য সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড। মহান রবের দেয়া শরীয়তই আমাদের একমাত্র সংস্কৃতি।

পঠিত : ৭০০ বার

মন্তব্য: ০