শেষ অটোমান খলিফার সাথে তুরস্ক সরকারের নির্মম আচরণ
তারিখঃ ২৬ জুন, ২০২২, ২০:৪০
১৯২৪ সালের ৩ মার্চ তুরস্কের জাতীয় পরিষদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী খলিফা পদ বিলুপ্ত করা হয়। এরই সাথে ৬২৪ বছরের উসমানীয় সালতানাতের অবসান ঘটে। পরিবারসহ খলিফা ২য় আব্দুল মাজিদকে পাঠিয়ে দেওয়া হয় ফ্রান্সের নিস শহরে। কামাল আতাতুর্ক ৫ মার্চ দেশ ছাড়ার জন্য সুলতানকে কয়েক ঘন্টা সময় বেঁধে দেন।
সুলতান মিসরের শাসকের নিকট আকুতি করেছিলেন তাকে আশ্রয় দেওয়ার জন্য। কিন্তু মিসরের শাসক ফুয়াদ সাফ জানিয়ে দেন যে, উসমানী পরিবারের কোন সদস্য এমনকি কোন নারী বা শিশুকেও মিসরে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না।নিরুপায় হতে সুলতান পরিবার নিয়ে ফ্রান্সে চলে আসেন। এই সময় তার হাতে একটি কড়িও ছিল না। উসমানী খলিফার সব সম্পদ কামাল সরকার বাজেয়াপ্ত করে। খালি হাতেই ফ্রান্স চলে আসতে হয় সুলতান কে। দারিদ্রতা আর অসহায়ত্বের মাঝে দিন কাটাতে থাকেন সুলতান আর তার পরিবার। এই সময় সুলতানের সাহায্যে এগিয়ে আসে ভারতীয় মুসলমানরা। প্রতি মাসে ভারত থেকে চাঁদা ও সাহায্য সংগ্রহ করে সুলতানের পরিবারের জন্য পাঠানো হত।
কিছুদিন পর ভারতের হায়দ্রাবাদের শাসক নিজাম সুলতান ও তার পরিবারকে নিজ রাজ্যে আমন্ত্রণ জানান। ঐতিহাসিকগণের মতে এই নিজাম তৎকালীন সবচেয়ে ধনী শাসক ছিলেন। ন্যায়পরায়ণ ও দয়ালু হিসেবে তার সুনাম ছিল। ১৯৩০ সালে তার সম্পদের পরিমাণ ছিল ১০০ মিলিয়ন পাউন্ডের সমপরিমাণ সোনা ও রুপার মুদ্রা। আরো ছিল ৪০০ মিলিয়ন পাউন্ডের সমপরিমাণ গয়না ও অলংকার।
১৯৩১ সালে নিজাম পরিবারের শাহজাদা আমির আজম জাহ হেমায়েত আলি খানের সাথে উসমানী রাজকন্যা খাদিজা ওরফে দুররে শাহওয়ার এর বিবাহ হয়। ১৯৪৪ সালের ২৩ আগস্ট ফ্রান্সের প্যারিস এ খলিফা ২য় আব্দুল মাজিদ ইন্তেকাল করেন। মৃত্যুর আগে তার শেষ ইচ্ছা ছিল তাকে যেন তুরস্কের তারিবা কবরস্থানে দাফন করা হয়। শাহজাদি শাহওয়ার তুরস্কে যান, তিনি প্রধানমন্ত্রী ইনুনু কে আবেদন জানান খলিফাকে কবর দেওয়ার অনুমতি দেওয়ার জন্য। কিন্তু তার এই আবেদন প্রধানমন্ত্রী নির্মমভাবে প্রত্যাখ্যান করেন। ব্যথিত মন নিয়ে ফ্রান্সে ফিরে যান শাহজাদি।
কিন্তু তিনি হাল ছেড়ে দেননি। তিনি আশায় ছিলেন যেভাবেই হোক প্রিয় বাবাকে তুরস্কের মাটিতে দাফন করবেনই।ফ্রান্সের একটি মসজিদে সুলতানের লাশ সংরক্ষিত রাখা হয়।
১০ বছর পর ১৯৫৪ সালে তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী হন ডানপন্থী আদনান মান্দারিস। শাহজাদি আবার ছুটে যান তুরস্কে। প্রধানমন্ত্রীকে আবার আকুতি করেন বাবার লাশ দাফনের অনুমতির জন্য। প্রধানমন্ত্রী জানান তিনি সংসদে আইন পাসের জন্য উপস্থাপন করবেন। কিন্তু সংসদের অনক সদস্য বিরোধিতা করায় এই আইন আর পাস হয়নি। ফলে শাহজাদির আবেদন আবার ও খারিজ হয়ে যায়। ভগ্নহৃদয় নিয়ে তুরস্ক ছাড়েন তিনি।
এই সময় এগিয়ে আসেন সৌদি বাদশাহ সৌদ বিন আব্দুল আজিজ। খলিফার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বাদশাহ সৌদ জান্নাতুল বাকিতে তার লাশ দাফনের অনুমতি দেন। ১৯৫৪ সালের ৩০ মার্চ খলিফা ২য় আব্দুল মাজিদকে জান্নাতুল বাকিতে দাফন করা হয়।নিজ দেশে ঠাই না পেলেও রাসুলুল্লাহ সাঃ এর প্রতিবেশী হয়ে মদীনার জান্নাতুল বাকিতে শেষ আশ্রয় পেলেন মুসলিম জাহানের এই শেষ খলিফা।
পিতার প্রতি তুরস্কের এমন নিষ্ঠুরতম আচরণের কারণে পরে সুযোগ পেয়েও শাহজাদি আর কোন দিন তুরস্কের নাগরিকত্ব ফেরত নেননি। মরন পর্যন্ত তিনি ইংল্যান্ডের জাতীয়তা নিয়েই বেঁচে ছিলেন।২০০৬ সালে তিনি মারা যান। অছিয়ত অনুসারে লন্ডনে এক মুসলিম কবরস্থান এ তাকে দাফন করা হয়।
(সুলতান কাহিনি গ্রন্থ থেকে সংকলিত)
লিখেছেন: শামীম আনোয়ার
মন্তব্য: ০