Alapon

ইসলামে মুয়াজ্জিনের মর্যাদা এবং সমসাময়িক অবস্থা...



মহান আল্লাহ সুরা হা-মিম সেজদার ৩৩ নম্বর আয়াতে ইরশাদ করেন, তার কথা অপেক্ষা উত্তম কথা কার? যে আল্লাহর দিকে আহ্বান করে, সৎকর্ম করে এবং বলে, আমি একজন মুসলমান।

এই আয়াতের ব্যাখ্যায় বিখ্যাত তাফসির গ্রন্থ তাফসির ইবনে কাসিরে আল্লামা হাফেজ ইবনে কাসির (রহ.) লিখেছেন, উপরোক্ত আয়াতে মুয়াজ্জিনগণও অন্তর্ভুক্ত। কেননা তাঁরা আজানের মাধ্যমে দৈনিক পাঁচবার মানুষকে মহান আল্লাহর দিকে আহ্বান করেন।
হজরত মুআবিয়া (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, কেয়ামতের দিবসে মুয়াজ্জিনরাই হবে মানুষের মধ্যে সর্বোচ্চ গর্দান বিশিষ্ট। অর্থাৎ সর্বাধিক সম্মানিত। (মুসলিম)

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, যদি মানুষ জানত যে, আজান দেওয়া ও নামাজে প্রথম কাতারে দাঁড়ানো কত সওয়াব এবং সঙ্গে এটাও জানত, লটারি ব্যতীত তা লাভ করা সম্ভব নয়, তবে অবশ্যই মানুষ (এ দুটি আমল লাভ করার জন্য) লটারির সাহায্য নিত। (বুখারি)

হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি সওয়াবের আশায় সাত বছর আজান দেবে, তার জন্য জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তির সনদ লিখে দেওয়া হবে। (আবু দাউদ, তিরমিযি)

এখন একটু ভেবে দেখি আমরা মুয়াজ্জিন সাহেবদের সঙ্গে কেমন আচরণ করছি,-- আমাদের দেশের মুয়াজ্জিনগন শুধু মুয়াজ্জিন নন উনারা একেক জন ইমাম। অধিকাংশ মসজিদে শুধু মাত্র জুম`য়ার নামাজ ব্যাতিত প্রত্যেক ওয়াক্তেই উনাদেরকে ইমামতি করতে হয়। তবে জুম'য়ার নামাজে ইমামতি করা কিংবা খুতবা দেয়ার মতো যোগ্যতাও উনাদের থাকে এবং এক্ষেত্রে সেভাবেই একজন মুয়াজ্জিন নিয়োগপ্রাপ্ত হয়ে থাকেন।

ইমাম সাহেব নামাজে ত্রুটি করলে মুসল্লিদের লোকমা দেয়ার বিধান ধর্মসিদ্ধ। এক্ষেত্রে কোন ইমাম সাহেব যদি অবিরত ভাবে ত্রুটি বিচ্যুতি করতেই থাকে,সে ক্ষেত্রে তাকে গঠন মুলক পরামর্শ দেয়া টাও দোষের নয়। কিন্তু কিভাবে এতো বড় একজন মর্যাদাশিল ব্যাক্তিকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্যের স্বরে ডাকতে পারি! কে দিলো আমাদের সে অধিকার!?

মসজিদে এসে পায়ে একটু বালি লাগলে__ এ মুয়াজ্জিন কোথায় রে, এবেটা কি যে করে সারাদিন, মেঝেটা দেখো কেমন বালিতে কিচ কিচ করছে, এই ছেলে এগুলো ভালো ভাবে মুছতে পার না ? কোন অধিকার বলে আপনি আমি একজন সম্মানিত মুয়াজ্জিন সাহেব কে এভাবে তাচ্ছিল্যের স্বরে হেয় করতে পরি!?

যদিও মুয়াজ্জিন নিয়োগের প্রক্কালে এই ধরনের (আমাদের চোখে ছোট কাজ গুলো) কৌশলে উনার উপর বর্তে দিয়ে থাকি, যা মোটেই ধর্মসিদ্ধ নয়। তবে এক্ষেত্রে উনার স্বইচ্ছায় কৃত কর্ম ব্যাতিক্রম। প্রকৃতপক্ষে এই ধরনের ক্রিয়া-কান্ড এলাকার সমস্ত মুসল্লিদের সম্মিলিত কর্ম। তবে যদি তারা এগুলো না করে তাহলে মসজিদে খাদেম নিয়োগ দেয়া আবশ্যক। কিন্তু দুঃখের বিষয় আজকাল অধিকাংশ মসজিদেই মুয়াজ্জিন সাহেব কর্তৃক এ সমস্ত কর্ম সম্পাদন হয়ে থাকে, অধিঃকন্তু প্রসাবখানা পায়খানা পর্য্যন্ত পরিস্কার করে নেয়া হয়।

আজকাল উনাদেরকে যা হাদিয়া দেয়া হয় তাকে দয়ার দান বললেও ভুল হবে না। তাতে ত উনাদের চলে না তাই বাধ্য হয়ে উনাদের কে পাশাপাশি বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত থাকতে হয়। আর এক্ষেত্রে আজান দিতে যদি দু-এক মিনিট দেরি হয়ে যায়, হতে হয় কৈফিয়তের সম্মুখীন। আবার অনেক এলাকায় মুয়াজ্জিন দেরকে দরজায় দরজায় কড়া নেড়ে খাবার এনে খেতে হয়। তাহলেই ভাবুন এই একই কাজটা যদি আপনাকে করতে হতো সেটা কতবড় লজ্জাস্কর হতো! অথচ উনার মর্যাদা আপনার আমার থেকে অনেক উপরে।

আবার আরো যেটি হয়, হয়তো সব এলাকাতে নয়, তবে আমার দেখা, মসজিদ কমিটির লোকজন মুয়াজ্জিন সাহেবের সঙ্গে ঠিক যেন কেনা গোলামের মতো আচরণ করছে। যাতে অনেক নরম দিলের মুয়াজ্জিনগন বাধ্য হন কর্মে ইস্তফা দিতে।

যাইহোক, পরিশেষে শুধু এতটুকু বলতে চাই যে, যদি কেহ আপনার আদরের ছেলে মেয়েকে আপনার সম্মুখে ভর্ৎসনা করে গালমন্দ করে আপনি কি ভাবে তার উপর সন্তুষ্ট থাকতে পারেন!! এমনকি আপনার পোষা কুকুর, বিড়াল কিংবা পাখিটির সঙ্গেও যদি কেউ দুর্ব্যাবহার করে তাতেও আপনার মেজাজ বিগড়ে যায় আর ক্রোধে ফেটে পড়েন তার উপর।

তাহলেই ভাবুন যিনি আপনাকে আমাকে সৃষ্টি করেছেন তার নিকট যিনি প্রিয়, তার সঙ্গে যদি আপনি আমি দূর্ব্যাবহার করি এবং অন্নে বস্ত্রে কষ্টে রাখি তাহলে বিষয়টা কি দাঁড়ায় !!
সঠিক বুঝ অবলম্বনে সুষ্ঠু সুন্দর মনন লালনের প্রত্যাশায়।

পঠিত : ৮৭৮ বার

মন্তব্য: ০