Alapon

শয়তানই আমাদের মুশরিকদের প্রতি অনুরাগ শেখায়



সম্প্রতি জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের আসাম শাখার পক্ষ থেকে হিন্দু আবেগে আঘাত দিয়ে ঈদুল আযহায় গরু কুরবানি না করার আহ্বান জানানো হয়েছে বলে আসামের একটি নিউজ ভাইরাল হয়েছে।

এই বিষয়ে মন্তব্য করার আগে আমরা একটু মুহাম্মদ সা.-এর শাসনামল থেকে ঘুরে আসি।

মুহাম্মদ সা.-এর যুগে মদিনাতে তিনটি ইহুদী গোত্রের বসবাস ছিল। তারা তাদের ধর্মীয় গ্রন্থ থেকে আল্লাহর রাসূল সা.-এর আগমনের ভবিষ্যতবাণী জানতেন। এজন্য তাদের সাথে কারো ঝামেলা হলেই তারা বলতেন সময় হয়েছে আখেরি নবী আসার। তিনি আসলে তোদের শায়েস্তা করবো। এখন যেমন কেউ কেউ ইমাম মাহদীর জন্য অপেক্ষা করে বসে আছে, অথচ নিজের দায়িত্ব পালনে সচেষ্ট নয়, সেরকম। ইহুদীরা ভেবেছে যেহেতু নবীরা বেশি এসেছেন বনী ইসরাঈলে। তাই তাদের মধ্য থেকেই কেউ হবে শেষ নবী। কিন্তু যখন শেষ নবী আসলেন মক্কার কুরাইশ থেকে তখন তারা নবীকে মেনে নেয়নি। অথচ নবী সা. এর সাথে তাদের জানা সকল বৈশিষ্ট্য মিলে গিয়েছে।

এই তিন ইহুদী গোত্র থেকে খুব কম অংশই ইসলাম গ্রহণ করেছে। অথচ তারা এই নবীর জন্যই বহু বছর ধরে অপেক্ষা করেছে। তারা শুধু মুহাম্মদ সা.-কে গ্রহণ না করেই ক্ষান্ত হয়নি। বরং বন্ধুত্বের মোড়কে থেকে পিঠে ছুরি মারার অপেক্ষায় ছিল। মদিনার তিন ইহুদী গোত্রই আল্লাহর রাসূল সা.-এর মদিনা সনদে চুক্তিবদ্ধ হয় এবং পরে বিশ্বাসঘাতকতা করে। এর মধ্যে বনু নাজিরের প্রধান কা'ব বিন আশরাফকে মদিনা রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কুরাইশদের তথ্য সরবরাহ, চিঠি পাঠানো, আবু সুফিয়ানের সাথে মুহাম্মদ সা.-কে হত্যার চুক্তি স্বাক্ষর ও মুসলিমদের ওপর গণহত্যা চালানোর পরিকল্পনার অপরাধে হত্যা করা হয়।

খন্দকের যুদ্ধের সময় কুরাইশরা আক্রমণ করলে মদিনায় থাকা বনু কুরাইজা পেছন দিক থেকে মুহাম্মদ সা.কে আক্রমণ করার পরিকল্পনা ও কুরাইশদের সাথে এই মর্মে চুক্তি করে। আল্লাহর রাসূল তাদের সাথে যুদ্ধ করেন ও তাদের সুপারিশকৃত বিচারকের রায়ে তাদের হত্যা করেন। বনু কায়নুকাও এমন এক মুসলিম মহিলাকে নির্যাতন বিবস্ত্র করার সূত্র ধরে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে এবং পরে তারা মদিনা থেকে বহিষ্কৃত হয়।

যাই হোক ইহুদীদের মধ্যে অল্প সংখ্যক ইসলাম গ্রহণ করে। তাদের ইহুদী ধর্মে তারা উট খেত না এবং শনিবারকে পবিত্র জ্ঞান করতো। যারা ইসলাম গ্রহণ করেছে তাদের মধ্যে কেউ কেউ উট খাওয়া থেকে বিরত থাকতো এবং শনিবারে রোজা রাখতো ও নফল ইবাদত বেশি করতো। এটা তাদের পূর্বের ধর্মের অনুরাগ থেকেই করতো। তাদের এই আচরণ আল্লাহ পছন্দ করেন নি। তাদের উদ্দেশ্যে সূরা বাকার ২০৮ ও ২০৯ নং আয়াতে আল্লাহ বলেন,

//হে মুমিনগণ, তোমরা ইসলামে পরিপূর্ণভাবে ইসলামে প্রবেশ করো এবং শয়তানের অনুসরণ করো না। নিশ্চয়ই সে তোমাদের স্পষ্ট শত্রু। অতএব তোমরা যদি সুস্পষ্ট নিদর্শন আসার পরও পদস্থলিত হও তবে জেনে রাখো, আল্লাহ পরাক্রমশালী ও প্রজ্ঞাবান।//

এখানে আল্লাহ তায়ালা নিশ্চিত করেছেন, অমুসলিমদের রীতিনীতির প্রতি অনুরাগ থাকা পদস্থলন। এভাবে শয়তানের অনুসরণ করা হয়।

আসাম রাজ্য জমিয়তে উলামার পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, পশু কুরবানি দিলে মুসলিমদের পবিত্র ধর্মীয় কর্তব্য পালন করা হয়। কিন্তু কারও ধর্মীয় অনুভূতিতে যাতে আঘাত না লাগে সেটাই করা উচিত। অর্থাৎ, মুসলিমদের ধর্মীয় কর্তব্যের পাশাপাশি হিন্দুদের ভাবাবেগ, এই দুই কুল রেখেই কুরবানির ঈদ, ঈদুল আযহা পালন করার আহ্বান জানিয়েছেন, রাজ্য জমিয়তের সভাপতি মাওলানা বদরউদ্দিন আজমল।

রাজ্য জমিয়তে উলামা প্রধান মাওলানা বদরউদ্দিন আজমলের সই করা এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ভারত বিভিন্ন জাতি, জনগোষ্ঠী-ধর্মাবলম্বীদের দেশ। এ দেশের অধিকাংশ মানুষই সনাতন ধর্মের। এই ধর্মে গরু পূজনীয়। দেশের সংখ্যাগুরুরা গরুকে মায়ের মতো মনে করেন। তাই তাদের ধর্মীয় ভাবাবেগের প্রতি সম্মান জানিয়েই গরুর পরিবর্তে অন্য পশু কুরবানির জন্য আহ্বান করেছে জমিয়ত।

যদি বিষয়টা এমন হতো জমিয়ত নেতা বলতেন, জীবন বাঁচানোর জন্য ও অত্যাচার থেকে বাঁচার জন্য আপনারা গরুর বদলে অন্য পশু কুরবানী করুন তাহলে আমাদের উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু ছিল না।

কিন্তু তারা তা না বলে বলেছেন, মুশরিকদের পূজনীয় বস্তুর প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে গরুকে কুরবানী না করতে। এটা পদস্থলন। কুরআনের ভাষ্যমতে শয়তানের অনুসরণ। এটা করা যাবে না। গরু কুরবানী করতে না পেরে যেন গরুর প্রতি মায়ের সম্মান তৈরি না হয়ে যায় এই ব্যপারে সজাগ থাকতে হবে।

পঠিত : ৯৯১ বার

মন্তব্য: ০