Alapon

জন্ম থেকে বন্দি আমি শোষিতের কারাগারে...



শুরু করার পূর্বে একটা গল্প বলি, শোন। গ্রামের কুয়োতে একটা কুকুর পড়ে মারা গেলো। গ্রামের লোকেরা সে ব্যাপারে অজ্ঞাত ছিলো। কিছুদিন পর দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়লো চারিপাশ। গ্রামের লোকেরা আন্দাজ করে নিলো কুকুর পড়লো। কয়েকজন মিলে হুযুরের কাছে গেলো।
হুযুরকে সবিস্তারে বলা হলো। হুযুর সব শুনে বললেন ‘কুয়োর সব পানি সেচন করে ফেলে নতুন পানি সংগ্রহ করো।’ কিন্তু হুযুর কুকুরটা ফেলতে বললেন না। হুযুর ধারণা করেছিল না বললেও স্বাভাবিক কুকুরটা তারা ফেলে দিবেএবার গ্রামের লোকেরা এসে সব পানি সেচে ফেলে দিলো। তবুও দুর্গন্ধ যাচ্ছে না; বরং বেড়েই যাচ্ছে। দু’দিন পর গ্রামের লোকেরা হুযুরের কাছে আবার গেলো।

— ‘হুযুর! আপনার কথামতো সব পানি ফেলে দিলাম। কিন্তু দুর্গন্ধ গেলো না; বরং আগের তুলনায় বেড়েছে।
— পানি ফেললেন ঠিক আছে, কুকুরটা কী কুয়ো থেকে তোলেছেন?
— না, সেটা তো করি নি।
হুযুর এবার হাসবে নাকি কাঁদবে। বললেন, ‘পানি ফেলে লাভ কী কুকুরটাকে যদি না-ই ফেললেন?’

বর্তমান আমাদের দেশের অবস্থাটাও তা-ই। ঘাটে ঘাটে দুর্নীতিবাজরা ওঁৎ পেতে আছে। আপনি যতই প্রতিবাদ করুন না কেন, দুর্নীতি বন্ধ হবে না। ঠিক যেমনি কুকুরটা না ফেলে সব পানি সেচন করলেও দুর্গন্ধ যাবে না।

রনির মতো হাজারো রনি প্রতিবাদ করলে কিচ্ছু হবে না। হয় তো কিছুদিন দুর্নীতিবাজরা সিস্টেমের মধ্যে থাকবে, পরিস্থিতি শীতল হতেই তারা আগের রূপে ফিরে আসবে। সর্বপ্রথম দুর্নীতিবাজকে সরাতে হবে। অতঃপর মৃত কুকুরের দুর্গন্ধের মতো দুর্নীতিও বন্ধ হবে।

আপনি কুয়ো থেকে মৃত কুকুরটাই ফেললেন না, অথচ সব পানি সেচে ফেলে দিলেন আর বলছেন কুকুরের দুর্গন্ধ যাচ্ছে না কেন? দুর্নীতিবাজকে সরালেন না, অথচ দিনের পর দিন প্রতিবাদ করছেন আর বলছেন দুর্নীতি বন্ধ হচ্ছে না কেন? আরে ভাই, কুকুরের দুর্গন্ধ যাবে কীভাবে আপনি যদি কুকুরট-ই না ফেলেন? দুর্নীতি বন্ধ হবে কীভাবে যদি দুর্নীতিবাজদের না সরান?

এমন একটা সেক্টর দেখাতে পারবেন যেখানে দুর্নীতি হচ্ছে না, নিয়মের ভেতরে হচ্ছে সব? অফিস-আদালতে যান, বিদ্যাপীঠে যান, রেল স্টেশনে যান, পুলিশ-বিজিবির চাকুরি করেন— সব যায়গায় দুর্নীতি! সামান্য একটা পাতি নেতার পেছনে ঘুরেও হয়ে যায় অঢেল সম্পত্তির মালিক। চিন্তা করেন, দুর্নীতি কোন পর্যায়ে পৌঁছেছে?

শৈশব থেকে দেখে আসছি প্রতিবাদ। কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। ক’দিন সিস্টেমের ভেতর থাকলেও চোরেরা আগের রূপে ফিরে আসে। প্রতিবাদ করলে চোররা কিছুদিন নীরব থাকে, পরিস্থিতি শীতল হলে আবার চুরি শুরু করে। আপনি কাকে বিচার দিবেন? যাকে বিচার দিচ্ছেন সেও তো চোর। চোরকে দিচ্ছেন চোরের বিচার।

মুহাম্মাদ নুরুল ইসলাম

পঠিত : ৮৫২ বার

মন্তব্য: ০