Alapon

ফেসবুক-ইন্টারনেটে দ্বীন প্রচার : কিছু প্রশ্ন কিছু জবাব !

দ্বীনের বুঝ আসার পর দ্বীন মানার চেষ্টার পাশাপাশি একজন মুসলিম হিসেবে ফেসবুকে অনেক ধরনের ইসলামিক পোস্ট দেওয়া হয়। এই পোস্ট গুলো অনেক ধরনের মানুষ পড়ে, তাদের মধ্যে কেউ দ্বীন মানার চেষ্টা করে, কেউ করে না কিন্তু শ্রদ্ধাশীল। আবার কেউ কেউ আছে এরা দ্বীন মানার চেষ্টা তো করেই না পাশাপাশি কোনো ইসলামিক পোস্ট যদি তাদের করা কাজের বিপরীতে যায় তখন তারা তাদের কাজের জন্যে অনুতপ্ত তো হয়ই না বরং কাউন্টার পোস্ট দিয়ে কিছু অযৌক্তিক প্রশ্ন ছুড়ে মারে।

তাদের অযৌক্তিক পোস্টগুলো চোখে পড়ে, ফ্রেন্ডরাও সস নিয়ে পাঠায় যে দেখ কী অবস্থা ! কিছু একটা বল এটা নিয়ে, কিন্তু কিছু বলি না। কারণ নিজের মধ্যেই অনেক ঘাটতি আছে এখনো। তবে আস্তে আস্তে শুধরাচ্ছি।

তবে তাদের প্রশ্নগুলো আর কথাগুলো ইসলামের সাথে এতটাই সাংঘর্ষিক যে, আমার রীতিমত এদের প্রতি মায়া হয়; যুগের সাথে তাল মিলিয়ে ওয়েস্টার্ন হওয়া, লজ্জাশরম অন্যদিকে ছুড়ে মারাকে এরা স্মার্টনেস-কুলনেস ভাবে। তাদের হেদায়তের জন্যে দু'আ করি আল্লাহ যেনো তাদের চোখের রঙ্গিন চশমা সরিয়ে দেন। আমিন।

রহমানের বান্দার গুণগুলো আয়ত্তের চেষ্টায় ছিলাম বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম এদের নিয়ে পাল্টা কোনো পোস্ট দিবো না । কিন্তু ভালো কিছুর প্রচার করবো ভেবেই সবার হয়ে তাদের অল্প কয়েকটা প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছি-

#এক_নং_প্রশ্ন : হ্যাঁ আমি জানি ইসলামে এইগুলা বলা আছে, কিন্তু তুমি এতই যদি দ্বীন মানো তাহলে তুমি ফেসবুক কেনো চালাও?

উত্তর : দ্বীন মানতে গেলে ফেসবুক চালানো যাবে না এমন কোনো হাদিস আমার জানা নেই। ফেসবুক চালানো হারাম না, জায়েজ । তবে হ্যাঁ সেটা তার ব্যবহারের উপর ভিত্তি করে! ছুরি দিয়ে যেমন ফল কাটা যায় আবার মানুষ ও মারা যায়। কে কোন কাজে ব্যবহার করবে তার উপর নির্ভর করে সেটা হালাল না হারাম! তবে এটা ঠিক যে, ফেসবুক-ইউটিউব এসব চালানো সুন্নাহ না, ফরজ-ওয়াজীব তো নয়-ই!

কেউ যদি নিজের বেপর্দা ছবি, অশ্লীল মিউজিক, গান-বাজনা-মুভি, গীবত এগুলোর জন্যে ফেসবুককে বেছে নেয়, তাহলে সে যদি মুসলিম হয় ইসলামের দৃষ্টিতে তার উচিত হচ্ছে হয়তো ফসবুকের ব্যবহার ভাল কাজে করা নয়তো ফেসবুক চালানো বন্ধ করে দেওয়া। অথচ তাদের দাবী পুরোই উল্টো। তারা নিজেরাই ভুলের মধ্যে। সেই ভুল-পাপের জন্যেই তাদের ছেড়ে দেওয়া উচিৎ ছিলো।

এরপর যদি তারা দাবী করে My Life My Rules তাহলে Those People dont have right to ask us why we are on Facebook! আমাদের ইসলাম, ইসলামের রুলস, ইসলাম সবখানে থাকবে! ????

#দুই_নং_প্রশ্ন : এই আমলগুলো নিজের মধ্যে রাখো না, ফেসবুকে এত্ত দেখানোর কী আছে? ঘরে বইসা আল্লাহ আল্লাহ করলেই তো হয় জায়নামাজে তাসবিহ নিয়ে। আসলে যারা ফেসবুকে ইসলাম দেখায় দেখো নিজেরা ঠিকই আড়ালে অশ্লীল মুভি দেখে!

উত্তর : যেহেতু এদের ইসলামের ব্যাপারে নলেজ মিসকিন পর্যায়ের, তাই তারা দাওয়াহ ও আমলের মধ্যে তফাৎ বুঝবে না এটাই স্বাভাবিক। অথচ এরাই ফাস্ট সেহরী ডান, টাইমলাইনে রেখে দিন টাইপ পোস্ট করে।

আমল ভিন্ন জিনিস সেটা একান্ত নিজের। কিছু আমল প্রকাশ্যে করা যায় কিছু আমল গোপনে। গোপন আমল করাই অধিক শ্রেয়। কিন্তু দাওয়াহ! আমরা প্রতিটা মুসলিম ইসলামের ব্রান্ড এম্বেসেডর। আমাদের প্রত্যেকের উচিত নিজ নিজ জায়গা থেকে দাওয়াহ দেওয়া যে যতটুক পারে। হাদিসে আছে, প্রচার করো যদি একটি আয়াত হলেও জানো। এইদিক থেকে তাহলে যারা ফেসবুকের মধ্যে ইসলামিক পোস্ট, দাওয়াহ দিচ্ছে তারা রাসূল ﷺ এর আদেশ পালন করছে আলহামদুলিল্লাহ।

অন্যদিকে, যারা বলছে ফেসবুকে এত্ত ইসলাম ইসলাম করার কী আছে, অফলাইন হয়ে তসবিহ নিলেই তো হয় । তাদের টাইমলাইন জুড়ে গান-বাজনা, অশ্লীল ভিডিও, শরিয়তবিরোধী যত কাজ আছে সবকিছু দিয়ে ভরা, তারা চায় সবাই ফেসবুক ব্যবহার করুক এইসব কাজের জন্যে- যেগুলো আল্লাহ স্পষ্ট ভাবে হারাম করে দিয়েছেন। তাদের ধারণা দ্বীনের জন্যে ফেসবুক না, ফেসবুক হলো তাদের মত মানুষদের জন্যে যারা নিজের দ্বীনকে ভুলে পাশ্চাত্যের বেহায়াপনায় নিজেকে বিলিয়ে দিচ্ছে অথচ
কুর'আনে আছে,
“যারা চায় মু’মিনদের সমাজে অশ্লীলতার প্রসার ঘটুক তারা দুনিয়ায় ও আখেরাতে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি ভোগ করবে।”- (আন নূর : আয়াত ১৯)

তাদের মতে, যারা দ্বীন প্রচার করে তারা নিজেরাই আড়ালে পাপ কাজ করে। ওয়েল! যুক্তির খাতিরে ধরে নিলাম উনারা আড়ালের খবর জানে! আমাদের মনে রাখতে হবে কোনো মানুষ পাপের উর্ধ্বে না কেউ যদি আড়ালে পাপ করে আল্লাহর কাছে তওবা করে সেটা আল্লাহ এবং তার ব্যাপার। আল্লাহ গোপনে পাপের জন্যে গোপনে ক্ষমা চাইলে ক্ষমা করে দিবেন
কিন্তু হাদিসে আছে তারা হচ্ছে সবচেয়ে জঘণ্য, যারা পাপ করে এবং সদম্ভে সেটা বলে বেড়ায়। এরা কখনো ক্ষমা পাবে না খাটি তওবা ব্যতীত।

কেউ ভুলে শয়তানের ধোকায় একটা মুভি দেখে ফেললো তারপর সাথে সাথে তওবা করলো আল্লাহর কাছে অনুতপ্ত হয়ে অন্যদিকে কেউ মুভি দেখে ফেসবুকে পোস্ট করলো Watching X/Y/Z! দুইজন কখনোই এক না। একজন নিজেই পাপ করেছে, সে পাপ ছড়িয়ে দেয়নি। আর অন্যজন নিজে তো করেছেই, এবং অন্যদের মধ্যেও সেই পাপ ছড়িয়ে দিয়েছে। দুজনই কি কখনো এক হবে?

দ্বিতীয়ত এরা কারোর আড়ালের খবর না দেখেও যদি ধারণা করে তাহলে যার উপর ধারণা করেছে সে যদি এমন কাজ না করে তাহলে তার উপর সেটা অপবাদ দেওয়ার শামিল।
কুর'আনে আছে, তোমরা একজন অন্যজনের গোপনীয় বিষয় অনুসন্ধান করো না। [সুরা আল-হুজুরাত : ১২] সুতরাং তাদের এই প্রশ্নটাও পুরোপুরি ভুল।


#তিন_নং_প্রশ্ন : যেমনভাবে দ্বীনের কথা বলে নিজেরা মনে হয় কখনো পাপকাজ করে নাই! জানি তো আগে কি ছিলা!

উত্তর : আলহামদুলিল্লাহ এই প্রশ্নটা আমার অনেক প্রিয়। এই প্রশ্ন শুনলে অটো মুচকি হাসি এসে পড়ে এই ভেবে যে, আল্লাহর রহমত ছাড়া এই প্রশ্ন শুনা সম্ভব ছিলো না। দুনিয়ায় সবাই দরবেশ হয়ে বেড়ে উঠে না! কথায় আছে, প্রত্যেক পাপীর একটা উজ্জ্বল ভবিষ্যত ও প্রত্যেক দরবেশের এক নিকৃষ্ট অতীত আছে।

কেউ অতীতে দ্বীন থেকে দূরে ছিলো এটা তার সাময়িক ব্যর্থতা! আসল সফলতা সে তার অতীতের ভুল বুঝতে পেরে এখন দ্বীনে আছে। তাদের এই প্রশ্নের জবাব আমি না দিয়ে বরঞ্চ আল্লাহ তা'আলা কুর'আনে কয়েক জায়গায় এই ব্যাপারে কী বলেন পড়ে নেওয়া যাক,
হে আমার বান্দারা, যারা নিজেদের ওপর জুলুম করেছ, তোমরা আল্লাহ তায়ালার রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা সব গোনাহ ক্ষমা করে দেন। তিনি তো ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু! (সূরা জুমার, আয়াত : ৫৩)

অন্যত্র বলেন, তিনিই তো স্বীয় বান্দাদের তওবা কবুল করেন এবং পাপগুলো ক্ষমা করে দেন। (সূরা শূরা, আয়াত : ২৫)
.
আল্লাহ তায়ালা আরও বলেন, হে ঈমানদাররা, তোমরা সবাই আল্লাহর কাছে তওবা কর; তবেই তোমরা নিঃসন্দেহে সফলতা লাভ করবে। (সূরা নূর, আয়াত : ৩১)
.
আর যে তওবা করে, ঈমান আনে এবং সৎকর্ম করে, অতঃপর সৎ পথে অটল থাকে, আমি তার প্রতি অবশ্যই ক্ষমাশীল। (সূরা : ত্বহা, আয়াত : ৮২)
.
নিশ্চয় তিনি আল্লাহ, ক্ষমাশীল, পরম ক্ষমাপরায়ণ। নিশ্চয়ই আল্লাহ মার্জনাকারী, ক্ষমাশীল। (সূরা : হজ্ব, আয়াত : ৬০)

হাদিসে আছে,
রাসূলুল্লাহ ﷺ৷ বলেন, তোমাদের কেউ মরুভূমিতে হারিয়ে যাওয়া উট খুঁজে পেয়ে যতটা খুশি হয়, আল্লাহ তায়ালা বান্দার তওবায় তার চেয়েও অনেক বেশি খুশি হন। (বুখারি : ৬৩০৯)৷ সুবহানাল্লাহ!

সুতরাং যারা এমন অযোক্তিক প্রশ্ন ছুড়ে পোস্ট করছেন তারা নিজেদের দিকে তাকান আর ভাবেন! এখনো সময় আছে তওবা করে আল্লাহর দিকে ফিরে আসেন, আস্তে আস্তে এক কদম করে আগান, নাহলে বেলা ফুরিয়ে গেলে হাজার আফসোস করলেও লাভ হবে না।

#শেষকথা :
প্রত্যেকটা মুসলিমের এটা চাওয়া উচিত যে সবখানে ইসলামের কথা চলবে সেটা অফলাইন হক কিংবা অনলাইন। দ্বীনের দাওয়াত দেওয়া রাসূল ﷺ পক্ষ থেকে আমাদের প্রতিটা মুসলিমের জন্যে একটা আদেশ। যে যেখানে পারে সে সুযোগ কাজে লাগাতে হবে।
ইসলামিক পোস্ট দিয়ে, নাশীদ, বই, ভিডিও, ছবি, কবিতা যে যেটায় পারদর্শী সেটা দাওয়ার জন্যে কাজে লাগানো উচিত। আর কিছুই না পারলে অন্তত যারা করছে তাদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ও সাপোর্টিভ হওয়া উচিত আমাদের।

খুব ভাল লাগে, নিউজফিডে ঘুরলে যখন দ্বীনের আলোর ছড়াছড়ি দেখি। সবাই যার যার মত দাওয়াহ দিয়ে যাচ্ছে।
ইসলামিক মান সম্মত গ্রুপের সংখ্যাও বেড়ে যাচ্ছে (উদাহরণ : Naseehah, পর্দা - The sign Of Modesty, ইসলামী বইকথন, ইসলামী বই, তাদাব্বুরে কুরআন, মিম্বার, জাগরণ ইত্যাদি) আলহামদুলিল্লাহ। একেকটা গ্রুপ জ্ঞানের খনি।

আল্লাহ এই দ্বীনি অগ্রযাত্রার কাফেলায় যারা আছে সকলকে কবুল করে নিক আমিন। অন্যদিকে হিংসুকদের হয় হেদায়েত দিক নয় এরা এদের নিজেদের হিংসায় জ্বলে পুড়ে যাক! আমিন

লেখিকা- মীম বিনতে নাজির

পঠিত : ৮৯৩ বার

মন্তব্য: ০