Alapon

গুরু থেকে মোল্লা: আমাদের সামষ্টিক বিবেকের দায়

৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ তে কাশ্মিরি আফজাল গুরুর ফাঁসি কার্যকর করা হয়। তারও মাত্র এক সপ্তাহ আগে শাহবাগে কাদের মোল্লার ফাঁসির দাবীতে 'গণজোয়ার' শুরু হয়। গুরু এবং মোল্লা কোনভাবেই কানেক্টেড ছিলেন না। মোল্লা হয়তো গুরুর নাম জেনে থাকতে পারেন, তবে তাঁরা কেউ কাউকে চিনতেনও না। কিন্ত নানা কারণে একটা অদ্ভুত রাজনৈতিক সমীকরণের সুঁতায় তারা দুইজনে বাঁধা পড়েছেন। পাশাপাশি দুটি দেশে ঘটে যাওয়া এতো বড় দুটি ঘটনার ক্ষেত্রে কাছাকাছি টাইমফ্রেমের ব্যাপার তো ছিলই, তার সাথে যোগ হয়েছে বিচার দুটির রাজনৈতিক রিলেভেন্সি এবং এর কনসিকুয়েন্স। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে আলাপ এই দুটি বিচার প্রক্রিয়ার সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে পড়েছে, তা হলো 'সামষ্টিক বিবেকের' দায় মেটানোর বিচার। ভারতের সুপ্রিমকোর্ট খোলামেলাই বলেছেন, 'কালেক্টিভ কনসায়েন্স'কে স্যাটিসফাই করতেই আফজাল গুরুকে ফাঁসি দেওয়া হচ্ছে। বাংলাদেশেও সেই কালেক্টিভ কনসায়েন্সকে পরিতৃপ্ত করতেই ৫ ফেব্রুয়ারি'২০১৩ আব্দুল কাদের মোল্লাকে যাবজ্জীবন দেওয়ার পরে আবার নতুন করে আইন সংশোধন করে রেট্রোস্পেকটিভ ল' তে মোল্লাকে ফাঁসি দেওয়া হয়।


আমরা একটু গভীরভাবে তাকালে খুব সহজেই আফজাল গুরু এবং আব্দুল কাদের মোল্লার ব্যক্তিগত জীবন, রাজনৈতিক ফিলোসফি এবং তাঁদের বিচার প্রক্রিয়া এবং পাবলিক রিএকশনকে রিলেট করতে পারি।
গুরু কিংবা মোল্লা নাম শোনার সাথেসাথেই আমাদের মনোজগতে একজন ক্লাসিক্যাল ধর্মীয় ব্যক্তিত্বের ছবি ভেসে আসে। অথচ আফজাল গুরু ছিলেন মেডিকেলের ছাত্র আর আব্দুল কাদের মোল্লা ফিজিক্সের। আফজাল গুরুকে যারা চিনেন না তারা নামের শেষে গুরু দেখে হয়তো ধরেই নিয়েছেন তিনি কোন মিলিট্যান্ট স্পিরিচুয়াল লীডার বা এই ধরনের কাছাকাছি কিছু একটা হবেন। তাই নাম শোনার সাথেসাথেই ইন্ডিয়ার পার্লামেন্ট হামলায় অভিযুক্ত আফজালের একটা মাস্টারমাইন্ড স্পিরিচুয়াল লীডারের ইমেজ আমাদের চোখে দাঁড়িয়ে যায়। পাশাপাশি আব্দুল কাদের মোল্লা শুনলেই আমাদের গল্প,সাহিত্য, সিনেমা, নাটকে চিত্রিত দাঁড়িটুপি পড়া রাজাকার মোল্লা বা হুজুরের ছবি দাঁড়ায়- কোনভাবেই সেই সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিজিক্সে পড়া একটা ছেলের ছবি ভাসে না। 


আফজাল গুরু এবং আব্দুল কাদের মোল্লার ব্যক্তিগত জীবনের দিকে তাকালেও আমরা দেখি তাঁদের জীবনের গল্পটা সমাজের একটা পিওর মধ্যবিত্ত স্ট্রাগলের গল্প। আফজালের স্ত্রী তাবাসসুমের চিঠি থেকে আমরা জানি আফজাল স্বাধীন কাশ্মীরের স্বপ্নে JKLF এর মুভমেন্টে যোগ দিয়ে মাস তিনেক পাকিস্তানে ছিলেন, কিন্তু ট্রেইনিং না নিয়েই ফিরে আসেন। তিনি স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে চেয়ে আত্মসমর্পণও করেন। কিন্তু সেই সুযোগ ইন্ডিয়ান আর্মি তাকে দেয় নি।
মোল্লাও '৭১ এ স্বাধীনতা যুদ্ধের জন্য ট্রেইনিং নিয়েছিলেন, কিন্তু তিনি যুদ্ধে যান নি। আদালতে দেওয়া বক্তব্য অনুযায়ী যুদ্ধের পুরোটা সময়ই তিনি ফরিদপুরের পীরের বাড়িতে ছিলেন।
গুরু এবং মোল্লা যে পয়েন্টে সবচেয়ে বেশি মিঙ্গেল করে যান, সেটি হলো তাদের রাজনৈতিক গুরুত্ব এবং বিচারিক প্রক্রিয়া।


গুরু কাশ্মিরে কোন আলাদা গুরুত্ব বহন করতেন না। একজন সাধারণ কাশ্মিরি নাগরিক, যিনি নিজে স্ত্রী, সন্তান নিয়ে ছোট্ট একটা ফার্মেসি খুলে নির্বিঘ্নে সুখে শান্তিতে ঘর করার স্বপ্ন দেখছিলেন। ইন্ডিয়ার পার্লামেন্টে হামলার ঘটনার আগে গুরুকে কেউই চিনতেন না। একইভাবে মোল্লা জামায়াতের বড় নেতা হলেও সাধারণ মানুষের নিকট তেমন পরিচিত মুখ ছিলেন না। এমনকি যুদ্ধাপরাধী হিসেবে জামায়াতের শীর্ষনেতারা যে দীর্ঘসময় ধরে মিডিয়া ট্রায়াল ফেইস করে আসছিলেন, এরেস্ট হওয়ার আগ পর্যন্ত মোল্লা এই আলাপের বাইরে ছিলেন।
গুরু এবং মোল্লা একাকার হয়ে যান মূলত তাঁদের বিচারিক প্রক্রিয়া এবং তৎপরবর্তী পাবলিক রিএকশনের জায়গায়।
গুরুর স্ত্রী তাবাসসুমের খোলাচিঠি থেকে আমরা জানতে পারি, নিম্ন আদালতে বিচারকের কমিউনাল আচরণ, কোর্টে গুরুর বক্তব্য উঠে না আসা, গুরুর পক্ষে কোন আইনজীবী না দাঁড়ানো এবং সর্বশেষ সুপ্রীম কোর্ট গুরুর মামলায় কনভিন্সিং এভিডেন্স না পেয়েও 'কালেক্টিভ কনসায়েন্স'কে স্যাটিসফাই করার আলাপ তুলে ফাঁসির রায় দেওয়া। এবং এই 'কালেক্টিভ কনসায়েন্স' তৈরি করার জন্য একটা লম্বা সময় ধরে পরিকল্পিতভাবে মিডিয়া ট্রায়াল চালানো। একই মিডিয়া ট্রায়াল আমরা মোল্লার কেইসেও দেখি। পাশাপাশি একটা জড়ো হওয়া মব জাস্টিসকে স্যাটিসফাই করার জন্য আইনের সংশোধন করে নজিরবিহীনভাবে রেট্রোস্পেকটিভ ল' তে তাঁকে ফাঁসি দেওয়া হয়।


গুরু এবং মোল্লা দুইজনেরই রায় বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে আমরা রাষ্ট্রের ভীষণ তাড়াহুড়া দেখি। গুরুর ফাঁসির খবর তার স্ত্রী তাবাসসুমকে স্পীড মেইলে পাঠানো হয়। তিনি জানতে পারেন পরেরদিন। মোল্লার ফ্যামিলিকেও তাড়াহুড়া করে সন্ধ্যায় ডাকা হয় শেষ সাক্ষাতের জন্য।
গুরুর লাশ তিহার জেলেই সমাধিস্থ করা হয়েছে। তার পরিবারকে দেওয়া হয় নি। আর মোল্লার লাশ গভীর রাতে পুলিশই ফরিদপুরের গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যায়। রাতের অন্ধকারেই পুলিশি প্রহরায় শ' দুয়েক মানুষ নিয়ে জানাজা হয়।


গুরু এবং মোল্লার সবচেয়ে শক্তিশালী দিক হচ্ছে পাবলিক রিএকশন। তাঁদের প্রতি মানুষেরর বাঁধভাঙা ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ। যেহেতু আফজাল গুরু সাধারণ একজন মানুষ ছিলেন, যিনি মিলিট্যান্ট জীবন থেকে ফিরে এসে একজন সাধারণ কাশ্মিরি হিসেবে স্ত্রী, সন্তান নিয়ে ঘর বাঁধার স্বপ্ন দেখা চিরায়ত মানুষ, তাই রাষ্ট্র তাঁকে সহজ টার্গেট হিসেবে বেঁছে নিয়েছিল 'কালেক্টিভ কনসায়েন্স'কে স্যাটিসফায়েড করার জন্য। রাষ্ট্র ভেবেছিল যেহেতু আফজাল গুরু মকবুল ভাট না, সুতরাং আফজাল গুরুকে ফাঁসি দেওয়ার ঘটনা সেই অর্থে পলিটিক্যাল আবেদন তৈরিতে ব্যর্থ হবে। কিন্তু রাষ্ট্র অবাক হয়ে দেখেছে আফজাল গুরু পলিটিক্যাল ফিগার না হয়েও কাশ্মিরের আজাদির স্বপ্ন হয়ে উঠেছেন। রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব না হওয়াটাই আফজালকে সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক মর্যাদা দান করেছে। কাশ্মিরিরা তাই মকবুল ভাটের শাহাদাৎ বার্ষিকী পালনের দুইদিন আগে থেকেই আফজাল আর মকবুলকে স্মরণ শুরু করেন। মকবুল ভাটের একটা কবর তো আগে থেকেই ছিল, যার লাশকে তিহার জেল থেকে মুক্ত করে এইখানে কবরস্থ করার স্বপ্ন দেখে প্রতিটি কাশ্মিরি। তারসাথে যুক্ত হলেন আফজাল গুরু। তিহার জেল থেকে আফজাল গুরুর লাশকেও মুক্ত করার স্বপ্ন হয়ে উঠেছে কাশ্মিরি স্বপ্ন। রাষ্ট্র দেখেছে একজন সাধারণ মানুষ কিভাবে স্বাধীনতা, আজাদি আর ঐক্যের সিম্বল হয়ে উঠেন। কিভাবে একজন আফজাল গুরু আর তাবাসসুমের গল্প হয়ে উঠে প্রতিটি কাশ্মিরি দম্পতির গল্প। আফজাল গুরুর ফাঁসির কাষ্ঠে যাওয়ার পূর্বমুহূর্তে লেখা চিঠি হয়ে উঠে নিজের কর্ম আর ধর্মের প্রতি বিশ্বাস আর আস্থার প্রতীক।


মোল্লার ফাঁসি পরবর্তী সময়ে ঠিক যেন তারই প্রতিধ্বনি। সরকার মোল্লাকে ঝুলাতে চেয়েছিল একটা টেস্ট কেইস হিসেবে। একজন আপাত কম গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক নেতাকে ফাঁসি দিয়ে প্রতিপক্ষের রাজনৈতিক নার্ভ এবং শক্তির পরীক্ষা নিতে চেয়েছিল। অথচ উস্তাভাজি খাওয়া নিয়ে আওয়ামী এমপির সাথে মন খারাপ করা জামায়াত নেতাকে সকল বিবেকবান মানুষের মন জয় করেছেন। জেলখানার ছোট্ট চিরকুটটা যেন এক লহমায় চার/পাঁচ বছর ধরে অব্যাহতভাবে চালানো ক্যারেক্টার এসাসিনেশন আর মিডিয়া ট্রায়ালকে ভেঙে মিসমার করে দেয়। তাই বছরের পর বছর ধরে বিবাদমান ইসলামপন্থীরা মোল্লার ফাঁসির পরে মানসিক ঐক্য দেখায়। এইটা শত বিরোধ থাকা সত্ত্বেও জালিমের বিরুদ্ধে মজলুমের চিরায়ত মুক্তিস্বপ্নের ঐক্য। তাই মোল্লার ফাঁসির পরে কাশ্মিরি যুবকদের ' মোল্লা ত্যারা খুন ছে, ইনকেলাব আয়ে গা ' শ্লোগানে আমরা বিক্ষোভ দেখাতে দেখি।
আফজাল গুরু আর আব্দুল কাদের মোল্লা এখানে একাকার হয়ে যান। মজলুমের স্বাধীনতা,আজাদি আর ঐক্যের প্রশ্নে।


১০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ তে গুরুর ফাঁসির প্রতিক্রিয়ায় দ্য হিন্দুতে অরুন্ধতি রায় লিখেছিলেন, শুধুমাত্র কালেক্টিভ কনসায়েন্সের স্যাটিসফেকশনের জন্য গুরুর ফাঁসি মানে হলো, অ্যা পারফেক্ট ডে ফর ডেমোক্রেসি। অরুন্ধতী জানতে চেয়েছিলেন, কালেক্টিভ কনসায়েন্সকে স্যাটিসফাই করে যে বিচার তাতে কি আমাদের জিঘাংসার পেয়ালা রক্ত দিয়ে পূর্ণ হলো, নাকি অর্ধপূর্ণ, আরো রক্ত দরকার?
না, ভারত কিংবা বাংলাদেশ কোথাও এই জিঘাংসার পেয়ালা এখনো পরিতৃপ্ত হয় নি। ভারতে পলিটিক্যাল এসাসিনেশন থেমে নেই। বাংলাদেশেও মোল্লাকে দিয়ে সামষ্টিক বিবেকের দায় মিটানোর নামে যে খেলাটা শুরু হয়েছিল, সর্বশেষ খালেদা জিয়ার পাঁচ বছরের সশ্রম কারাদন্ডের মধ্যে দিয়ে সেই জিঘাংসার খেলাটা এগিয়ে যাচ্ছে। কাশ্মীর থেকে বাংলাদেশ আজও মিটিয়ে চলছে সামষ্টিক বিবেকের দায়।
অ্যা পারফেক্ট ডে ফর ডেমোক্রেসি, তাই না? হয়।


গুরু এবং মোল্লার সবচেয়ে শক্তিশালী দিক হচ্ছে পাবলিক রিএকশন। তাঁদের প্রতি মানুষেরর বাঁধভাঙা ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ। যেহেতু আফজাল গুরু সাধারণ একজন মানুষ ছিলেন, যিনি মিলিট্যান্ট জীবন থেকে ফিরে এসে একজন সাধারণ কাশ্মিরি হিসেবে স্ত্রী, সন্তান নিয়ে ঘর বাঁধার স্বপ্ন দেখা চিরায়ত মানুষ, তাই রাষ্ট্র তাঁকে সহজ টার্গেট হিসেবে বেঁছে নিয়েছিল 'কালেক্টিভ কনসায়েন্স'কে স্যাটিসফায়েড করার জন্য। রাষ্ট্র ভেবেছিল যেহেতু আফজাল গুরু মকবুল ভাট না, সুতরাং আফজাল গুরুকে ফাঁসি দেওয়ার ঘটনা সেই অর্থে পলিটিক্যাল আবেদন তৈরিতে ব্যর্থ হবে। কিন্তু রাষ্ট্র অবাক হয়ে দেখেছে আফজাল গুরু পলিটিক্যাল ফিগার না হয়েও কাশ্মিরের আজাদির স্বপ্ন হয়ে উঠেছেন। রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব না হওয়াটাই আফজালকে সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক মর্যাদা দান করেছে। কাশ্মিরিরা তাই মকবুল ভাটের শাহাদাৎ বার্ষিকী পালনের দুইদিন আগে থেকেই আফজাল আর মকবুলকে স্মরণ শুরু করেন। মকবুল ভাটের একটা কবর তো আগে থেকেই ছিল, যার লাশকে তিহার জেল থেকে মুক্ত করে এইখানে কবরস্থ করার স্বপ্ন দেখে প্রতিটি কাশ্মিরি। তারসাথে যুক্ত হলেন আফজাল গুরু। তিহার জেল থেকে আফজাল গুরুর লাশকেও মুক্ত করার স্বপ্ন হয়ে উঠেছে কাশ্মিরি স্বপ্ন। রাষ্ট্র দেখেছে একজন সাধারণ মানুষ কিভাবে স্বাধীনতা, আজাদি আর ঐক্যের সিম্বল হয়ে উঠেন। কিভাবে একজন আফজাল গুরু আর তাবাসসুমের গল্প হয়ে উঠে প্রতিটি কাশ্মিরি দম্পতির গল্প। আফজাল গুরুর ফাঁসির কাষ্ঠে যাওয়ার পূর্বমুহূর্তে লেখা চিঠি হয়ে উঠে নিজের কর্ম আর ধর্মের প্রতি বিশ্বাস আর আস্থার প্রতীক।
মোল্লার ফাঁসি পরবর্তী সময়ে ঠিক যেন তারই প্রতিধ্বনি। সরকার মোল্লাকে ঝুলাতে চেয়েছিল একটা টেস্ট কেইস হিসেবে। একজন আপাত কম গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক নেতাকে ফাঁসি দিয়ে প্রতিপক্ষের রাজনৈতিক নার্ভ এবং শক্তির পরীক্ষা নিতে চেয়েছিল। অথচ উস্তাভাজি খাওয়া নিয়ে আওয়ামী এমপির সাথে মন খারাপ করা জামায়াত নেতাকে সকল বিবেকবান মানুষের মন জয় করেছেন। জেলখানার ছোট্ট চিরকুটটা যেন এক লহমায় চার/পাঁচ বছর ধরে অব্যাহতভাবে চালানো ক্যারেক্টার এসাসিনেশন আর মিডিয়া ট্রায়ালকে ভেঙে মিসমার করে দেয়। তাই বছরের পর বছর ধরে বিবাদমান ইসলামপন্থীরা মোল্লার ফাঁসির পরে মানসিক ঐক্য দেখায়। এইটা শত বিরোধ থাকা সত্ত্বেও জালিমের বিরুদ্ধে মজলুমের চিরায়ত মুক্তিস্বপ্নের ঐক্য। তাই মোল্লার ফাঁসির পরে কাশ্মিরি যুবকদের ' মোল্লা ত্যারা খুন ছে, ইনকেলাব আয়ে গা ' শ্লোগানে আমরা বিক্ষোভ দেখাতে দেখি।
আফজাল গুরু আর আব্দুল কাদের মোল্লা এখানে একাকার হয়ে যান। মজলুমের স্বাধীনতা,আজাদি আর ঐক্যের প্রশ্নে।


১০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ তে গুরুর ফাঁসির প্রতিক্রিয়ায় দ্য হিন্দুতে অরুন্ধতি রায় লিখেছিলেন, শুধুমাত্র কালেক্টিভ কনসায়েন্সের স্যাটিসফেকশনের জন্য গুরুর ফাঁসি মানে হলো, অ্যা পারফেক্ট ডে ফর ডেমোক্রেসি। অরুন্ধতী জানতে চেয়েছিলেন, কালেক্টিভ কনসায়েন্সকে স্যাটিসফাই করে যে বিচার তাতে কি আমাদের জিঘাংসার পেয়ালা রক্ত দিয়ে পূর্ণ হলো, নাকি অর্ধপূর্ণ, আরো রক্ত দরকার?
না, ভারত কিংবা বাংলাদেশ কোথাও এই জিঘাংসার পেয়ালা এখনো পরিতৃপ্ত হয় নি। ভারতে পলিটিক্যাল এসাসিনেশন থেমে নেই। বাংলাদেশেও মোল্লাকে দিয়ে সামষ্টিক বিবেকের দায় মিটানোর নামে যে খেলাটা শুরু হয়েছিল, সর্বশেষ খালেদা জিয়ার পাঁচ বছরের সশ্রম কারাদন্ডের মধ্যে দিয়ে সেই জিঘাংসার খেলাটা এগিয়ে যাচ্ছে। কাশ্মীর থেকে বাংলাদেশ আজও মিটিয়ে চলছে সামষ্টিক বিবেকের দায়।
অ্যা পারফেক্ট ডে ফর ডেমোক্রেসি, তাই না?



কৃতজ্ঞতায়: আরেফিন

পঠিত : ৬৭৯ বার

মন্তব্য: ০