Alapon

শিক্ষা কারিকুলাম ও পাবলিক পরীক্ষায় ধর্মশিক্ষা

মুহাম্মদ হাফিজুর রহমান

শিক্ষার প্রাথমিক স্তর থেকে মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত নতুন শিক্ষাক্রমের অনুমোদন দিয়েছে সরকার। গত ৩০ মে-২০২২ তারিখে এক সম্মেলনে এই ঘোষণা দেয়া হয়েছে। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে অর্ধদিনব্যাপী এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এ বৈঠকে নতুন শিক্ষাক্রমের নীতিমালা অনুমোদন দেয়া হয়। এ নীতিমালার আলোকে আগামী বছর হতে পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন, মুদ্রণ ও সে আলোকে শিশুদের শিক্ষা দেয়া হবে। নতুন শিক্ষাক্রমে মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত নৈতিক শিক্ষার কথা বলা হলেও ধর্মীয় শিক্ষাকে এক ধরনের অপাঙতেয় করে রাখা হয়েছে। তার মানে হচ্ছে শিক্ষার্থীরা আগের মতো ১০০০ বা ১২০০ নম্বরে পাবলিক এবং বার্ষিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করলেও তাদেরকে শিক্ষার কোনো স্তরেই ধর্মীয় শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে না এবং এজন্য তাদেরকে কোনো প্রকার পরীক্ষাও দিতে হবে না। বর্তমান সমাজ বাস্তবতার আলোকে যেখানে ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষার গুরুত্ব অনেকগুণ বেড়ে গেছে, সে অবস্থায় ধর্মীয় শিক্ষাকে অবহেলিত, অপ্রয়োজনীয় এবং অনাবশ্যক করার মানে একটি ধর্মহীন, আদর্শহীন নৈতিকতাহীন জাতি গড়ার পথকে প্রসস্ত করা। শিক্ষা ব্যবস্থায় যে নীতির প্রতিফলন হবে একটি জাতি সেভাবে গঠিত হবে। আমাদের বর্তমান শিক্ষানীতি কতটুকু আমাদের চিরায়ত আদর্শ, নৈতিকতা এবং আজন্ম লালিত বিশ্বাসের প্রতিনিধিত্ব করে তা প্রশ্ন সাপেক্ষ।

গত ৬ জুলাই এক সাংবাদিক সম্মেলনে মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন, ‘পাঠ্যক্রমে ধর্মশিক্ষা একটি আবশ্যকীয় বিষয়। কাজেই ধর্ম শিক্ষা বাদ দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই, এবং তা বাদ দেওয়া হয়নি।’ যারা এ বিষয়ে আপত্তি তুলেছেন, তারাও একই দাবি করছেন, যে ধর্মশিক্ষা বাদ দেয়ার কোনো সূযোগ নেই। কিন্তু নতুন কারিকুলামে ধর্মশিক্ষা ব্যবস্থা যে রাখা হয়নি এবং এ কারণে ইতোমধ্যে সারাদেশের অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এ বিষয়টিকে বাদ দিয়েই অন্যান্য বিষয়ে শিক্ষার্থীদের মনোযোগী করছে। গত ৩১ জুলাই প্রকাশিত ২০২২ সালের এস এস সি পরীক্ষার যে রুটিন দেয়া হয়েছে তাতে ধর্মশিক্ষা নেই। বর্তমান শিক্ষানীতি ও শিক্ষা কারিকুলাম নিয়ে তাই সচেতন মহল থেকে দাবি উঠেছে ধর্মীয় বিষয়কে অবজ্ঞা করার নীতি পরিহার করার। কেউ বলছে না, যে ধর্মীয় বিষয়ে বই তো আছে, কিন্তু সে বিষয়ে যখন পরীক্ষা থাকবে না, তখন স্বাভাবিকভাবেই এ বিষয়ে পাঠদান শিক্ষক ও ছাত্রদের কাছে অনাহুত কাজ বলে মনে হবে।

বর্তমান শিক্ষানীতিটি ১৯৭২ সালে প্রণীত কুদরত-ই-খুদা শিক্ষা কমিশনের আলোকে প্রণয়ন করা হয়েছে। স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যূদয়ের পর কুদরত-ই-খুদা শিক্ষা কমিশন পাশ হয়। কুদরত-ই-খুদা শিক্ষা কমিশন প্রাথমিক, মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনের সুপারিশ করে। কমিশনের রিপোর্টে প্রাথমিক শিক্ষা আট বছর অর্থাৎ প্রথম শ্রেণি হতে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত মাধ্যমিক শিক্ষা চার বছর- নবম শ্রেণি হতে দ্বাদশ শ্রেণি পর্র্যন্ত, চার বছরের অনার্স কোর্স এবং এক বছরের মাস্টার্স কোর্সের সুপারিশ করা হয়। কুদরত-ই-খুদা শিক্ষা কমিশনের সবচেয়ে ভয়ানক দিকটি ছিল এ শিক্ষানীতিতে ধর্মীয় শিক্ষা প্রদানকে সম্পূর্ণরূপে অস্বীকার করা হয়। যার কারণে সেই সময়ে দেশের অনেক চিন্তাশীল লোক এ শিক্ষানীতির বিরোধিতা করে। বিভিন্ন মহলের ব্যাপক আপত্তির কারণে তৎকালীন সরকার সেই শিক্ষানীতি বাস্তবায়ন করেনি। এরপর ১৯৭৯ সালে মফিজ উদ্দীন শিক্ষা কমিশন গঠিত হয়। মফিজ উদ্দীন শিক্ষা কমিশন কিছু পরিবর্তন সাপেক্ষে কুদরত-ই-খুদা শিক্ষা কমিশন রিপোর্ট বাস্তবায়নের সুপারিশ করে। কিন্তু তখনো দেশের অধিকাংশ চিন্তাশীল মানুষ কুদরত ই খুদা শিক্ষা কমিশন রিপোর্ট বাস্তবায়নের ব্যাপক বিরোধিতা করে। ১৯৯৭ সালে শামসুল হক শিক্ষা কমিশন গঠন করা হয়। শামসুল হক শিক্ষা কমিশন কুদরত-ই-খুদা শিক্ষা কমিশনকেই নতুনভাবে উপস্থাপন করে। এটি মন্ত্রী পরিষদে পাশ হয় এবং জাতীয় সংসদেও উপস্থাপন করা হয়। তখনো সেই শিক্ষা কমিশনের বিরুদ্ধে ব্যাপক প্রতিবাদ এবং আপত্তি উত্থাপন করা হয়। তখনকার সরকার অবশ্য সকল মহলের দাবি এবং আপত্তি গ্রহণ না করলেও তারা সকল মহলের বক্তব্য শ্রবণ করে। ১৯৯৭ সালের শিক্ষা কমিশন রিপোর্টের পরিশিষ্টে আপত্তি উত্থাপন করা ব্যাক্তি এবং সংস্থার নাম সন্নিবেশ করে। তখনকার সরকারও শামসুল হক শিক্ষা কমিশন রিপোর্ট বাস্তবায়ন করেনি। এরপর ২০০২ সালে ড. এম এ বারী শিক্ষা কমিশন এবং ২০০৩ সালে মনিরুজ্জামান মিয়া শিক্ষা কমিশন গঠন করা হয়। সে সকল শিক্ষা কমিশন দেশের মানুষের চিন্তা আদর্শ এবং বিশ্বাসের আলোকে কার্যকর কোনো শিক্ষানীতি দিয়ে যেতে পারেনি।

বর্তমান সরকার দাবি করতে পারে যে, অতীতের কোনো সরকার যা পারেনি তা তারা করেছে কিন্তু এর সাথে সাথে যে প্রশ্নটি মোটা দাগে সামনে আসে তা হচ্ছে, দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের দাবিকে বিচেনায় নিয়ে তারা শিক্ষানীতি বাস্তবায়ন করতে তারা চরমভাবে উন্নাসিকতার পরিচয় দিয়েছে। এই শিক্ষা কমিশন বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া যখন শুরু হয় তখন এর বিরুদ্ধে ব্যাপক প্রতিবাদ, বিক্ষোভ, আলোচনা, সেমিনার সিম্পোজিয়াম অনুষ্ঠিত হয়েছে। তারা এর ত্রুটিপূর্ণ দিকগুলো উপস্থাপন করেছে। যদিও সরকারের দাবি হচ্ছে তারা সকল মহলের আপত্তি এবং দাবিকে বিবেচনায় নিয়ে বর্তমান শিক্ষানীতি বাস্তবায়ন করেছে। বর্তমান শিক্ষা কমিশনের ঢালাওভাবে বিরোধিতা করছি না। এই শিক্ষানীতিতে বেশ কিছু ভালো দিক অবশ্যই আছে। কিন্তু একটি আদর্শ জাতি গঠনের জন্য আদর্শ এবং নৈতিকতাকে উপজীব্য হিসেবে গ্রহণ করে ধর্মীয় শিক্ষাকে যেভাবে গুরুত্ব দেয়া দরকার ছিলো, তা না করে ধর্মীয় শিক্ষাকে অবজ্ঞা এবং উপেক্ষা করা হয়েছে। এরপরও শিক্ষনীতিতে যে নীতিবাক্যগুলো পেশ করা হয়েছে শিক্ষা কারিকুলামে তার বিপরীত ব্যবস্থাই কার্যকর করা হচ্ছে।

জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০ এর উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যে মোট ত্রিশটি পয়েন্টে অনেক আকর্ষণীয় এবং চিত্তাকর্ষক বক্তব্য তুলে ধরা হয়েছে। এর দুই নম্বর পয়েন্টে বলা হয়েছে ‘ব্যক্তি ও জাতীয় জীবনে নৈতিক, মানবিক, সাংস্কৃতিক, বিজ্ঞানভিত্তিক ও সামাজিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠাকল্পে শিক্ষার্থীদের মননে, কর্মে ও ব্যবহারিক জীবনে উদ্দীপনা সৃষ্টি করা’। সাত নম্বর পয়েন্টে বলা হয়েছে ‘ জাতি, ধর্ম, গোত্র নির্বিশেষে আর্থসামাজিক শ্রেণী-বৈষম্য ও নারীপুরুষ বৈষম্য দূর করা, অসাম্প্রদায়িকতা, বিশ্ব-ভ্রাতৃত্ব, সৌহার্দ্য ও মানুষে মানুষে সহমর্মিতাবোধ গড়ে তোলা এবং মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল করে তোলা’ ত্রিশ নম্বর পয়েন্টে বলা হয়েছে ‘মাদক জাতীয় নেশা দ্রব্যের বিপদ সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের সতর্ক ও সচেতন করা’। প্রাথমিক শিক্ষার উদ্দেশ্য লক্ষ্যের তৃতীয় প্যারায় বলা হয়েছে ‘ শিশুর মনে ন্যায়বোধ, কর্তব্যবোধ, শৃঙ্খলা, শিষ্টাচারবোধ, অসাম্প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গি, মানবাধিকার, সহ-জীবনযাপনের মানসিকতা, কৌতূহল, প্রীতি, সৌহার্দ্য, অধ্যবসায় ইত্যাদি নৈতিক ও আত্মিক গুণাবলী অর্জনে সহায়তা করা এবং তাকে বিজ্ঞান ও সংস্কৃতিমনস্ক করা এবং কুসংস্কারমুক্ত মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতে উৎসাহিত করা’। শিক্ষানীতির এ নীতিবাক্যগুলো বাস্তবায়ন এবং এ উদ্দেশ্য লক্ষ্য হাসিল করতে হলে অবশ্যই শিক্ষার সকল স্তরে ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা অতি আবশ্যক।

গোটা জাতি আজ যে বিষয় সবচেয়ে বেশি চিন্তিত এবং আশংকিত তা হচ্ছে, শিশু কিশোর এবং যুবকদের নৈতিক অবক্ষয়, মাদকের ভয়াবহ বিস্তার এবং তাদের মধ্যে উচ্ছৃক্সক্ষলতার বিস্তার। কিশোর গ্যাং কালচার, ডি জে গ্রুপ, বড় ভাই গ্রুপ ইত্যাকার নানানভাবে অপরাধ প্রবণতা বেড়েই চলছে। এর বড়ো কারণ নৈতিক ও আদর্শিকভাবে শিশু বয়স হতে একটি শিশুকে যেভাবে গড়ে তোলা দরকার তার অভাব। শিক্ষানীতিতে যে বাক্যগুলো ব্যবহার করা হয়েছে, শিশুর মনে ন্যায়বোধ, কর্তব্যবোধ, শৃঙ্খলা, শিষ্টাচারবোধ- এগুলো যদি সৃষ্টি করতে হয় তবে অবশ্যই ধর্মীয় এবং নৈতিক শিক্ষা বাধ্যতামূলক করতে হবে। আমরা যদি একটি সুন্দর সমাজ চাই তাহলে একদল সুন্দর মানুষ দরকার। ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষা ব্যতীত এ ধরনের মানুষ তৈরি হতে পারে না। অথচ সরকার শিক্ষা কারিকুলাম থেকে ধর্মীয় বিষয়গুলো বাদ দিচ্ছে। প্রাক-প্রাথমিক, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে এখন পর্যন্ত ধর্ম বিষয়ে একটি বই বাধ্যতামূলক আছে। আগামী বছর হতে যে শিক্ষা কারিকুলাম চালু হবে তাতে বিদ্যালয়ের বার্ষিক পরীক্ষা এবং পাবলিক পরীক্ষায় এখন ধর্মশিক্ষা বিষয়ে পরীক্ষা গ্রহণের বিষয়টি বাদ দেয়া হয়েছে। এমনকি বাংলা, ইংরেজি ও দ্রুত পঠন বইসমূহে যে সকল নৈতিক শিক্ষামূলক গল্প ও কবিতা ছিল তাও অনেকাংশে বাদ দেয়া হয়েছে। এর পেছনের মূলীভূত কারণ কী? সরকার তা ব্যাখ্যা করেনি। একদিকে বলা হয়েছে এ শিক্ষানীতির উদ্দেশ্য একদল আদর্শ নীতিবান মানুষ তৈরি করা অপরদিকে আদর্শ মানুষ তৈরির জন্য অতি আবশ্যকীয় ধর্মশিক্ষাকে বাদ দেয়া হচ্ছে।

জাতীয় শিক্ষানীতির ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা অধ্যায়ে এর উদ্দেশ্য লক্ষ্য সম্পর্কে বলা হয়েছে ‘ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষার উদ্দেশ্য হল শিক্ষার্থীদের নিজ নিজ ধর্ম সম্পর্কে পরিচিতি, আচরণগত উৎকর্ষসাধন এবং জীবন ও সমাজে নৈতিক মানসিকতা সৃষ্টি ও চরিত্র গঠন। এই শিক্ষার উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য প্রচলিত ব্যবস্থাকে গতিশীল করে যথাযথ মানসম্পন্ন ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষাদান। প্রত্যেক ধর্মে ধর্মীয় মৌল বিষয়সমূহের সঙ্গে নৈতিকতার উপর জোর দেওয়া এবং ধর্মশিক্ষা যাতে শুধু আনুষ্ঠানিক আচার পালনের মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে চরিত্র গঠনে সহায়ক হয় সেদিকে নজর দেয়া’। শিক্ষা কারিকুলাম হতে ধর্মশিক্ষা বিষয়ে পরীক্ষা বাদ দিয়ে এ বিষয়ে কোনো গুরুত্ব না দিয়ে এ সকল উদ্দেশ্য কিভাবে বাস্তবায়িত হবে?

জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০ এর শিক্ষাক্রম পাঠ্যপুস্তক ও পাঠ্যসূচী অধ্যায়ে এর উদ্দেশ্য লক্ষ্য সম্পর্কে বলা হয়েছে যেহেতু একটি দেশের শিক্ষাব্যবস্থা দেশের বিরাজমান আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক অবস্থা, দীর্ঘদিনের লালিত সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য, ধর্মীয় বিশ্বাস, নৈতিক ও মানবিক মূল্যবোধের ওপর গড়ে ওঠা বাঞ্ছনীয় তাই পরিকল্পিত শিক্ষা ব্যবস্থার শিক্ষাক্রমে এগুলোর প্রতিফলন সুনিশ্চিত করা হবে। মূলত শিক্ষার্থীর জ্ঞান, দৃষ্টিভঙ্গি, দক্ষতা ও কাক্সিক্ষত আচরণিক পরিবর্তনের মাধ্যমে একটি দক্ষ, দেশপ্রেমিক, আত্মনির্ভরশীল, নৈতিক মূল্যবোধসম্পন্ন, শ্রমনিষ্ঠ সুনাগরিক জনগোষ্ঠী গড়ে তোলাই শিক্ষার লক্ষ্য। তাই শিক্ষাক্রম, পাঠ্যসূচি ও পাঠ্যপুস্তকের গুরুত্ব অপরিসীম। শিক্ষার লক্ষ্য অর্জনের উপযোগী শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যসূচি প্রণয়ন করা হবে। আর সেই শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যসূচির আলোকেই রচিত হবে’ একদিকে ধর্মীয় ও মানবিক মূল্যবোধের বিষয়টিকে উদ্দেশ্য লক্ষ্য হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে অপরদিকে শিক্ষা কারিকুলাম ও পাঠ্যপুস্তক রচনা করা হচ্ছে তার বিপরীত চিন্তা ও আদর্শের আলোকে। তবে কি সরকার শুধুমাত্র জনগণকে শান্ত রাখার জন্য অথবা একধরণের ছলচাতুরীর আশ্রয় নিয়ে গোটা জাতিকে অন্ধকারে রেখে ধর্মহীন শিক্ষাব্যবস্থা জাতির ওপর চাপিয়ে দিচ্ছে ?

নতুন শিক্ষানীতির আলোকে যে শিক্ষা কারিকুলাম তৈরি হচ্ছে তাতে দেখা যাচ্ছে প্রাক-প্রাথমিক, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তর পেরুবার পর একজন শিক্ষার্থী বিশেষ বিশেষ বিষয়ে লেখাপড়া করবে। তখন তারা মেডিকলে, বিজ্ঞান, প্রকৌশল, হিসাব বিজ্ঞান, সমাজ বিজ্ঞানসহ কলা ও বিজ্ঞানের নানান বিভাগে অধ্যয়ন করবে। বিদ্যমান শিক্ষা কারিকুলামে মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত ধর্ম শিক্ষা বাধ্যতামূলক আছে, এ বিষয়ে তাদেরকে বিদ্যালয়ের বার্ষিক পরীক্ষা ও পাবলিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হচ্ছে। আগামী বছর থেকে যখন এই বাধ্যবাধকতা থাকবে না, তখন একজন শিক্ষার্থী কি ধর্মশিক্ষা বিষয়ে পড়তে আগ্রহী হবে? তর্কের জন্য অনেকেই প্রশ্ন করবেন ধর্মশিক্ষা তো নিজ উদ্যোগে নিজ প্রয়োজনে করবে, এর জন্য পরীক্ষার কি প্রয়োজন? নিজ প্রয়োজনে নিজ উদ্যোগে কোনো বিষয়ে পড়ার উদ্যোগী মানুষ তখনই হয় যখন জীবনে একটি পর্যায়ে মানুষ পৌঁছে। শিক্ষার কোনো স্তরেই যদি কোনো বিষয়ে শেখার কোনো বাধ্যবাধকতা না থাকে শিক্ষা জীবন শেষ করে সেই ব্যাক্তি কিভাবে সেই বিষয়ে আগ্রহী হবে? আমাদের সমাজ বাস্তবতা হচ্ছে, শিশু ও কিশোর বয়সে যারা ধর্মীয় পরিবেশে লালিত পালিত হয়, তাদেরই কেউ কেউ পরবর্তীতে ভিন্ন পরিবেশে গিয়ে শিশু বয়সের আদর্শিক ও নৈতিক শিক্ষাকে হারিয়ে ফেলে। কেউ যদি শিশু কিশোর বয়সে ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষাই না পায়, সে কিভাবে আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে উঠবে? শিশু মন, কোমল, নরম, কাদামাটির মতো। এই বয়সে তাকে যেভাবে গড়ে তোলা হবে সে সেইভাবে নিজেকে গড়ে তুলতে আগ্রহী ও উদ্যমী হবে। কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া নির্দ্বিধায় বলা যায়, শৈশব এবং কৈশোরে যারা ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষা না পায় তারা নিজেদেরকে দৃঢ় নৈতিক চরিত্রের ওপর স্থির রাখতে পারে না।

আমরা শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্যে আশ্বস্ত হতে চাই। ‘পাঠ্যক্রমে ধর্ম শিক্ষা একটি আবশ্যকীয় বিষয়। কাজেই ধর্মশিক্ষা বাদ দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই, এবং তা বাদ দেওয়া হয়নি।’ এ বক্তব্যকে ধারণ করে অন্তত এইচ এস সি পর্যন্ত পাবলিক পরীক্ষায় ধর্মশিক্ষাকে বাধ্যতামূলক রাখা হোক। শিক্ষা কারিকুলামে যে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে তাকে সংশোধন করা হবে এটাই প্রত্যাশা করছি। নচেৎ শিক্ষা মন্ত্রণালয় বা সরকারের এ ধরণের সিদ্ধান্ত নিঃসন্দেহে জাতির আগামী প্রজন্মকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাবে।
প্রকাশিত: সোমবার ০৮ আগস্ট ২০২২, daily sangram

পঠিত : ৮৯৪ বার

মন্তব্য: ০