Alapon

এজিদের শাসন নিয়ে আবদুল্লাহ বিন উমর (রা.) এর অবস্থান ও তার ক্ষমতায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে ইবনে খালদুনের মন্তব্য নিয়ে সৃষ্ট বিভ্রান্তির অপনোদন :



এজিদের শাসন নিয়ে আবদুল্লাহ বিন উমর (রা.)
এর অবস্থান ও তার ক্ষমতায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে ইবনে খালদুনের মন্তব্য নিয়ে সৃষ্ট বিভ্রান্তির অপনোদন :
------------------------------------------------------------------
মানুষের কূটনৈতিক বুদ্ধি এমন একটি চমকপ্রদ জিনিস, যাতে সমাজের উপর তলার অনেক সহজ-সরল মানুষও ধোকা খেয়ে যান। এটি বুঝার জন্য এই সময়ের রাজনীতিকদের স্ববিরোধী ও ডাহা মিথ্যা কথাগুলোর পাশাপাশি ঋণখেলাপি লুটেরা কর্পোরেট শোষকদের বাণীগুলোও দেখা যেতে পারে। ওদের এমন চমকপ্রদ স্ববিরোধী ও ডাহা মিথ্যা কথাগুলো খুব কমই মানুষই বুঝতে পারে। ফলে অনেক মানুষ তাদের কথায় মুগ্ধ হয়ে তাদের ভক্ত হয়ে যায়। কিন্তু এক পর্যায়ে যখন তারা নিজেরাই তাদের হাতে সরাসরি প্রতারিত হয়, তখন তাদের বিরুদ্ধে এত ক্ষেপে যায় যে, তখন তাদের সত্য কথাগুলোও তারা আর বিশ্বাস করে না। মূলত এরকম সরল, আবেগী ও বোকা মানুষই যেকোনো সমাজে বেশি। এ লোকগুলো সবাই খারাপ নয়, তাদের মাঝে প্রচুর ভালো মানুষও নিশ্চয়ই আছে। তবে সুবুদ্ধি ও কূটবুদ্ধি ওয়ালা লোকদের টানাটানিতে তাদের অনেকে সঠিক পথ পেলেও অনেকে বিভ্রান্ত হয়ে ভুল পথে চলে যায়। আবার অনেকে পরে সে পথ থেকে ফিরেও আসে।
-
কথা বলতে চাচ্ছিলাম এজিদের শাসন নিয়ে হযরত আবদুল্লাহ বিন উমর (রা.) এর অবস্থান ও তার ক্ষমতায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে বিন খলদুনের মন্তব্য প্রসঙ্গে।
-
এটি একেবারে সত্য কথা যে, প্রথম খলীফা হযরত আবু বকর (রা.) এর ছেলে হযরত আবদুর রহমান, দ্বিতীয় খলীফা হযরত উমর (রা.) এর ছেলে হযরত আবদুল্লাহ ও চতুর্থ খলীফা হযরত আলী (রা.) ছেলে ও প্রিয় নবীজি (স.) দৌহিত্র হযরত হুসাইন ও হযরত উমর (রা.) নির্দেশিত খলীফা প্যানেলের সদস্য হযরত জুবাইর ইবনুল আউওয়াম (রা.) এর ছেলে হযরত আবদুল্লাহ যখন শুনতে পেলেন যে, হযরত মুয়াবিয়া তার ছেলে এজিদকে তাঁর স্থলাভিষিক্ত (ক্রাউন প্রিন্স, আরবীতে ولي العهد) ঘোষণা করে যেতে চান, তখন তারা একাধিক কারণে ক্ষুব্ধ হলেন। যেমন চার খলীফার নীতি ছেড়ে হযরত মুয়াবিয়ার রাজতান্ত্রিক পদ্ধতিতে রাজ্য পরিচালনা, হযরত হাসান (রা.) এর সাথে কৃত চুক্তি বিস্মৃত হয়ে নিজের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ হযরত আলী (রা.) এর প্রতি কটাক্ষ করে কথা বলা ও হযরত আলী সমর্থকদের কারো কারো বাকস্বাধীনতা হরণ করে মৃত্যুদন্ড দেওয়া এবং মানুষের সাথে তাঁর গভর্নরদের কঠোর ব্যবহার ইত্যাদি।

উল্লেখ্য, হযরত মুয়াবিয়া ছেলে এজিদকে ক্রাউন প্রিন্স ঘোষণা করেছিলেন ৫০ হিজরীতে ইমাম হাসানকে কৌশলে বিষ প্রয়োগে হত্যার বছর তিনেক পর। কারণ, তিনি থাকা অবস্থায় এই ঘোষণা অসম্ভব ছিল। কেননা হযরত আলী (রা.) এর শাহাদতের পর তাঁর সাথে হযরত মুয়াবিয়ার যেই শান্তিচুক্তি হয়েছিল তাতে উল্লেখ ছিল যে, হযরত মুয়াবিয়ার পর খলীফা নিয়োগ হবে শূরা ভিত্তিক (নেতৃস্থানীয় মুসলমানদের সাথে পরামর্শ করে); মৃত্যুর আগে তিনি কাউকে অগ্রিম ওয়ালী আহাদ তথা ক্রাউন প্রিন্স করে যেতে পারবেন না।
-
এখন যেহেতু নগদ ছহীহ দলীলের যুগ তাই আমি এ নিয়ে কোরআন মজীদের পর সবচেয়ে বিশুদ্ধ কিতাব ছহীহ বোখারী থেকেই এজিদকে ক্রাউন প্রিন্স করা নিয়ে হযরত আবদুল্লাহ বিন উমরসহ তাদের এই ক্ষুব্ধতার প্রমাণ তুলে ধরছি।

প্রথমে আসুন প্রথম খলীফা হযরত আবু বকর (রা.) এর ছেলে হযরত আবদুর রহমান (রা.) এর ক্ষোভ প্রসঙ্গে:
عَنْ يُوسُفَ بْنِ مَاهَكَ، قَالَ كَانَ مَرْوَانُ عَلَى الْحِجَازِ اسْتَعْمَلَهُ مُعَاوِيَةُ، فَخَطَبَ فَجَعَلَ يَذْكُرُ يَزِيدَ بْنَ مُعَاوِيَةَ، لِكَىْ يُبَايِعَ لَهُ بَعْدَ أَبِيهِ، فَقَالَ لَهُ عَبْدُ الرَّحْمَنِ بْنُ أَبِي بَكْرٍ شَيْئًا، فَقَالَ خُذُوهُ‏.‏ فَدَخَلَ بَيْتَ عَائِشَةَ فَلَمْ يَقْدِرُوا ‏(‏عَلَيْهِ‏)‏ فَقَالَ مَرْوَانُ إِنَّ هَذَا الَّذِي أَنْزَلَ اللَّهُ فِيهِ ‏(‏وَالَّذِي قَالَ لِوَالِدَيْهِ أُفٍّ لَكُمَا أَتَعِدَانِنِي‏)‏‏.‏ فَقَالَتْ عَائِشَةُ مِنْ وَرَاءِ الْحِجَابِ مَا أَنْزَلَ اللَّهُ فِينَا شَيْئًا مِنَ الْقُرْآنِ إِلاَّ أَنَّ اللَّهَ أَنْزَلَ عُذْرِي‏.‏ أخرجه البخارى (4827).
অর্থ: ইউসুফ বিন মাহাক (রহ.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, মারওয়ান ছিলেন হিজাযের গভর্নর। তাকে নিয়োগ করেছিলেন মুয়াবিয়া। তিনি একসময় বক্তব্য দিলেন এবং তাতে এজিদ বিন মুয়াবিয়ার কথা বারবার উল্লেখ করতে লাগলেন, যাতে তার পিতার ইন্তেকালের পর তাকে বায়আত দেওয়া (ক্ষমতায় বসানো) হয়। এ সময় তাকে আবদুর রহমান বিন আবু বকর (রা.) কিছু কথা বললেন (প্রতিবাদ করে)। তখন মারওয়ান বললেন, তাঁকে পাকড়াও করো। কিন্তু তৎক্ষণাৎ তিনি আয়েশা (রা.) এর ঘরে চলে গেলেন। ফলে তারা তাঁকে ধরতে পারল না। তারপর মারওয়ান বললেন, এ তো সেই ব‍্যক্তি যার ব‍্যাপারে আল্লাহ এই আয়াত নাযিল করেছেন, “আর যে তার মাতাপিতাকে বলে উফ! ... ।” (সূরা আহকাফ: ১৭)
একথা শুনে পর্দার আড়াল থেকে হযরত আয়েশা (রা.) বললেন, "আমার পবিত্রতা বর্ণনার আয়াত ছাড়া আর কোনো আয়াত আমাদের (ভাই-বোনের) ব‍্যাপারে নাজিল হয়নি।" [ছহীহ বোখারী (৪৮২৭)]।
(বাংলা ওয়েব লিঙ্ক - https://www.hadithbd.com/hadith/link/?id=29341 )
Meaning : Narrated Yusuf bin Mahak: Marwan had been appointed as the governor of Hijaz by Muawiya. He delivered a sermon and mentioned Yazid bin Muawiya so that the people might take the oath of allegiance to him as the successor of his father (Muawiya). Then `Abdur Rahman bin Abu Bakr told him something whereupon Marwan ordered that he be arrested. But `Abdur-Rahman entered `Aisha's house and they could not arrest him. Marwan said, "It is he (`AbdurRahman) about whom Allah revealed this Verse:-- 'And the one who says to his parents: 'Fie on you! Do you hold out the promise to me..?'" On that, `Aisha said from behind a screen, "Allah did not reveal anything from the Qur'an about us except what was connected with the declaration of my innocence (of the slander). [Sahih of Bukhari (4827)].
দেখুন, মরওয়ানের মত একজন মলউনের ছেলে মহানবী (স.) এর সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ ছাহাবী ও তাঁর প্রথম খলীফা (স্থলাভিষিক্ত) হযরত আবু বকর (রা.) এর ছেলের বিরুদ্ধেও হুলিয়া জারি করল এবং মিথ্যা অপবাদ দিল। কারণ, তিনি অল্পবয়সী ও অযোগ্য এজিদকে ক্রাউন প্রিন্স করার প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছিলেন। তারপরও কি বলা যাবে যে, এজিদের ক্ষমতায়নকে ছাহাবীগণ স্বেচ্ছায় মেনে নিয়েছিলেন?
উল্লেখ্য, ৫৩ হিজরীতে মরওয়ানের হুলিয়ার কারণে হযরত আবদুর রহমান বিন আবু বকর (রা.) মদীনা ছেড়ে মক্কা চলে যান এবং মক্কায় প্রবেশের একটু আগে অসুস্থ হয়ে ইন্তেকাল করেন। এতে তাঁর ছোট বোন উম্মুল মুমিনীন আয়েশা (রা.) মর্মাহত হন এবং ধীরে ধীরে হযরত মুয়াবিয়া বিরোধী হয়ে উঠেন, যা তার এই মন্তব্য থেকে স্পষ্ট:
عن الأسود ; قلت لعائشة : ألا تعجبين لرجل من الطلقاء ( يقصد به معاوية بن أبي سفيان ) ينازع أصحاب محمد في الخلافة ؟ قالت : وما يعجب ؟ هو سلطان الله يؤتيه البر والفاجر . وقد ملك فرعون اهل مصر أربعمائة سنة وكذلك غيره من الكفار. البداية والنهاية لابن كثير (8/131).
অর্থঃ আসওয়াদ বিন ইয়াজীদ বলেন, আমি আয়েশাকে (রা.) বললাম, তুলাকাদের (সাধারণ ক্ষমা প্রাপ্তদের) এক লোক (অর্থাৎ, হযরত মুয়াবিয়া) রসূলুল্লাহ (ছঃ) এর ছাহাবীদের (খলীফা হযরত আলীর) সাথে খিলাফত নিয়ে যে ঝগড়া শুরু করেছে, তাতে আপনি বিস্মিত হচ্ছেন না। তিনি (হযরত আয়েশা) বললেন, ‘এতে তোমার বিস্মিত হবার কি আছে? এতো আল্লাহর রাজত্ব/ক্ষমতা। তা তিনি ভালো ও খারাপ সবাইকে দান করেন। ফেরআউনতো মিসরবাসীর উপর চারশত বছর রাজত্ব করেছে। অনুরূপ অন্যান্য কাফিররাও।’ [আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া (৮/১৩১)]।
(ওয়েব লিঙ্ক- http://islamport.com/w/tkh/Web/927/2991.htm ).
-
দেখুন, উম্মুল মুমিনীন আয়েশা (রা.) হযরত মুয়াবিয়াকে তখনই ভালো করে চিনতে পারলেন যখন নিজের আপন ভাইয়ের উপর জুলুম ও এর ফলে তার মৃত্যু দেখলেন। চেনার এক পর্যায়ে তিনি ফেরাউনের উদাহরণও টানলেন। আর ইবনে কাসীর এমন কথা তুলে ধরতে কার্পণ্য করলেন না।
-
এবার দেখুন দ্বিতীয় খলীফা হযরত উমর (রা.) এর ছেলে আবদুল্লাহ বিন উমর (রা.) এর ক্ষোভ ও হতাশা:
عَنْ عِكْرِمَةَ بْنِ خَالِدٍ عَنْ ابْنِ عُمَرَ قَالَ: دَخَلْتُ عَلَى حَفْصَةَ وَنَسْوَاتُهَا تَنْطُفُ قُلْتُ قَدْ كَانَ مِنْ أَمْرِ النَّاسِ مَا تَرَيْنَ فَلَمْ يُجْعَلْ لِي مِنْ الْأَمْرِ شَيْءٌ. فَقَالَتْ: الْحَقْ فَإِنَّهُمْ يَنْتَظِرُونَكَ وَأَخْشَى أَنْ يَكُونَ فِي احْتِبَاسِكَ عَنْهُمْ فُرْقَةٌ فَلَمْ تَدَعْهُ حَتَّى ذَهَبَ ، فَلَمَّا تَفَرَّقَ النَّاسُ خَطَبَ مُعَاوِيَةُ قَالَ: مَنْ كَانَ يُرِيدُ أَنْ يَتَكَلَّمَ فِي هَذَا الْأَمْرِ فَلْيُطْلِعْ لَنَا قَرْنَهُ فَلَنَحْنُ أَحَقُّ بِهِ مِنْهُ وَمِنْ أَبِيهِ. قَالَ حَبِيبُ بْنُ مَسْلَمَةَ: فَهَلَّا أَجَبْتَهُ؟ قَالَ عَبْدُ اللَّهِ: فَحَلَلْتُ حُبْوَتِي وَهَمَمْتُ أَنْ أَقُولَ: أَحَقُّ بِهَذَا الْأَمْرِ مِنْكَ مَنْ قَاتَلَكَ وَأَبَاكَ عَلَى الْإِسْلَامِ. فَخَشِيتُ أَنْ أَقُولَ كَلِمَةً تُفَرِّقُ بَيْنَ الْجَمْعِ وَتَسْفِكُ الدَّمَ وَيُحْمَلُ عَنِّي غَيْرُ ذَلِكَ فَذَكَرْتُ مَا أَعَدَّ اللَّهُ فِي الْجِنَانِ قَالَ حَبِيبٌ حُفِظْتَ وَعُصِمْتَ. أخرجه البخاري (رقم 3882).

অর্থঃ ইকরমা বিন খালিদ হযরত আবদুল্লাহ বিন উমর থেকে বর্ণনা করেন যে, আমি হাফসার (তাঁর বড় বোন ও নবীজি ছঃ এর স্ত্রী) ঘরে প্রবেশ করলাম। তখন তার চুলের বেণী থেকে পানি পড়ছিল (অর্থাৎ, তখন তিনি গোসলখানা থেকে বের হন)। আমি বললাম, তুমিতো দেখছো মুসলমানদের জন্য খলীফা নির্ধারণের কার্যক্রম চলছে (হযরত মুয়াবিয়া কর্তৃক ছেলে এজিদকে ক্রাউন প্রিন্স করার জন্য মানুষের সমর্থন চাওয়া হচ্ছিল)। হাফসা বললো, তুমি যাও। কারণ, (আমি মনে করি) তারা তোমার জন্য অপেক্ষা করছে। আমার আশঙ্কা হচ্ছে, তোমার অনুপস্থিতি মুসলমানদের মাঝে আরো বেশী বিরোধ/ফাটল সৃষ্টি করবে। তার এমন কথায় তিনি গেলেন। অতঃপর সাধারণ লোকজন চলে গেলে মুয়াবিয়া (ইবনে উমরকে ইঙ্গিত করে) বক্তব্য দিয়ে বললেন, ‘এ বিষয়ে (মুসলমানদের নেতৃত্ব নিয়ে) কেউ কথা বলতে চাইলে সে যেন আমার সামনে আসে। বস্তুত এ কাজে (মুসলমানদের নেতৃত্বের জন্য) আমরা তার এবং তার পিতার (হযরত উমর) চেয়ে অধিক যোগ্য।’ ঘটনা শোনার পর হাবীব বিন মাসলামা বললেন, আপনি কি তার এমন কথার জবাবে কিছু বলেননি? ইবনে উমর বললেন, আমি তখন আমার আলখেল্লা জড়িয়ে নিলাম এবং বলতে চাইলাম, ‘এ কাজের জন্য অবশ্য তিনিই অধিক হকদার, যিনি তোমার ও তোমার পিতার বিরুদ্ধে ইসলামের পক্ষে (বদর, উহুদ ও খন্দকে) লড়াই করেছেন।’ তবে আমি মুসলমানদের মধ্যে ফাটল সৃষ্টি ও রক্তপাত এড়াতে এবং আমার বক্তব্য তাদের অন্যায় ভাবে গ্রহণের আশঙ্কা থেকে কথাটা বলা থেকে বিরত থাকলাম। অতঃপর আমি জান্নাতে (মুমিনদের জন্য) আল্লাহ যা রেখেছেন, তার কথা স্মরণ করলাম। হাবীব বললেন, আপনি (বড় ধরণের বিপদ থেকে) বেঁচে গেলেন। [ছহীহ বোখারী (৩৮৮২)]।

(বাংলা ওয়েব লিঙ্ক - https://www.hadithbd.com/hadith/link/?id=4078 )
Meaning : Narrated `Ikrima bin Khalid: Ibn Umar said, "I went to Hafsa while water was dribbling from her twined braids. I said, 'The condition of the people is as you see, and no authority has been given to me.' Hafsa said, (to me), 'Go to them, and as they (i.e. the people) are waiting for you, and I am afraid your absence from them will produce division amongst them.' " So Hafsa did not leave Ibn `Umar till we went to them. When the people differed. Muawiya addressed the people saying, "'If anybody wants to say anything in this matter of the Caliphate, he should show up and not conceal himself, for we are more rightful to be a Caliph than he and his father." On that, Habib bin Masalama said (to Ibn `Umar), "Why don't you reply to him (i.e. Muawiya)?" `Abdullah bin `Umar said, "I untied my garment that was going round my back and legs while I was sitting and was about to say, 'He who fought against you and against your father for the sake of Islam, is more rightful to be a Caliph,' but I was afraid that my statement might produce differences amongst the people and cause bloodshed, and my statement might be interpreted not as I intended. (So I kept quiet) remembering what Allah has prepared in the Gardens of Paradise (for those who are patient and prefer the Hereafter to this worldly life)." Habib said, "You did what kept you safe and secure (i.e. you were wise in doing so). [Sahih of Bukhari (3882)].
-
ছহীহ ও হকের স্বগোষিত সোল এজেন্ট ভাইজানেরা! এটি কিন্তু ছহীহ বোখারীর হাদীস। নাকি এটাও শিয়াদের কিতাব? মুয়াবিয়া হযরত কতটুকু অস্বৈরাচারী ও পরহেজগার মনের লোক ছিলেন তাতো দেখলেন। তিনি তলীক (মক্কা বিজয়ের দিন সাধারণ ক্ষমা প্রাপ্ত) হয়েও মুহাজির ছাহাবী হযরত আবদুল্লাহ বিন উমরকে (রা.) শুধু থ্রেট দিয়ে ক্ষান্ত হননি। বরং দাবি করলেন যে, তিনি ও তাঁর ছেলে এজিদ নবীজি (স.) এর দ্বিতীয় খলীফা হযরত উমর (রা.) এর চেয়েও শাসন ক্ষমতার অধিক হকদার। আহ!
-
তো হযরত মুয়াবিয়ার এমন হুঙ্কারে হযরত আবদুল্লাহ বিন উমর (রা.) হতাশ হয়ে তাঁর সাথে দ্বন্দ্বে লিপ্ত হওয়া থেকে নিজেকে গুটিয়ে রাখলেন। এই ঘটনার বেশ কয়েক বছর পর ৬০ হিজরীতে হযরত মুয়াবিয়ার ইন্তেকাল হলে গভর্নরদের পক্ষ থেকে মানুষের কাছে এজিদের জন্য খলীফা হিসেবে বাইয়াত (সরকারের আনুগত্যের ওয়াদা) চাওয়া হয়। এতে রক্তপাত এড়ানোর জন্য বাধ্য হয়েই হযরত আবদুল্লাহ বিন উমর (রা.) ও হযরত আবদুল্লাহ বিন আব্বাস (রা.) এজিদকে বাইয়াত দেন। তাছাড়া ৬১ হিজরি হযরত হুসাইন (রা.) এর শাহাদতের পর মদীনাবাসী যখন এজিদের গভর্নরকে বের করে দিল, তখন আবদুল্লাহ বিন উমর (রা.) তাদেরকে নবীজি (স.) এর হাদীস শুনিয়ে বাইয়াত ভঙ্গ থেকে বারণ করেন। এরপর মদীনার হাররায় সঙ্ঘটিত হয় এজিদ বাহিনীর খুন-ধর্ষণের নিষ্ঠুরতা।
-
যাই হোক, ৬০ হিজরীতে এজিদের ক্ষমতায় অভিষেকের সময় মদীনার গভর্নর ছিল হযরত মুয়াবিয়ার ঘনিষ্ঠ সহযোগী মরওয়ান ইবনুল হাকাম। তারা নিজেরা বাইয়াত দিলেও এটা সত্য যে, হযরত আবদুল্লাহ বিন উমর (রা.) ও আবদুল্লাহ বিন আব্বাস (রা.) এজিদের বাইয়াত এড়িয়ে যাওয়া লোকদেরকে বাগী তথা অন্যায় বিদ্রোহী মনে করতেন না। তাদের কথা ছিল পরিস্থিতি যেহেতু অনুকূলে নেই, তাই আপোষ করে চলাই ভালো। কিন্তু হযরত হুসাইন বিন আলী (রা.) ও হযরত আবদুল্লাহ বিন যুবাইর (রা.) এর দৃষ্টিভঙ্গি ছিল ভিন্ন। তারা মনে করতেন অযোগ্যকে বাইয়াত না দিয়ে অনুকূল পরিস্থিতির জন্য অপেক্ষা করাই উত্তম। তাই তারা এজিদকে বাইয়াত না দিয়ে ওই সময় মদীনা ছেড়ে মক্কা চলে যান। কারণ, সেখানকার গভর্ণর ছিল উদারপন্থী হিসেবে খ্যাত আল-ওয়ালীদ বিন উতবা বিন আবু সুফিয়ান (এজিদের চাচাতো ভাই)। গিয়ে তারা সেখানে স্বাধীন ভাবে বসবাস করার সুযোগ পান।

পরে হযরত আলী (রা.) কর্তৃক পছন্দকৃত খেলাফতের রাজধানী কূফার লোকজনের পক্ষ থেকে হযরত হুসাইনকে (রা.) তাদের কাছে চলে যাবার দাওয়াত দেওয়া হয়। তিনি সেখানে রওনা হলে সেখানকার এজিদ সমর্থিত গভর্ণরের রোষানল ও ঘেরাওয়ের মধ্যে পড়েন। পরে তার প্রস্তাব অনুযায়ী তিনি (হযরত হুসাইন) আসামী হিসেবে তার কাছে আত্মসমর্পণ করতে অস্বীকৃতি জানালে ওই গভর্নর ও তার বাহিনী সত্তরের অধিক সঙ্গী-সাথীসহ কারবালা প্রান্তরে তাঁকে নির্মমভাবে হত্যা করে এবং হযরত হুসাইনকে (রা.) এর মাথা কেটে দামেস্কে এজিদের কাছে পাঠিয়ে দেয়। এজিদ এতে স্বস্তিবোধ করলেও কারো মতে সে লোকদেখানো দুঃখ প্রকাশ করেছিল। কিন্তু খুনীদের শাস্তি না দিয়ে প্রমোশন দিয়েছিল সে (২০১৮ সালে শীর্ষস্থানীয় সৌদি সাংবাদিক জামাল খাশোগজীকে হত্যার পর সৌদি ক্রাউন প্রিন্স মুহাম্মদ বিন সালমান নিহতের ছেলেকে ডেকে শান্তনা দিয়ে রক্তপন নেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিল। তবে এজিদ এমন প্রস্তাব না দিলেও হযরত হুসাইনের ওয়ারিসদেরকে বাইতুল মাল থেকে অর্থ দিতে চেয়েছিল বলে জানা যায়)।
-
এবার আসুন এজিদকে বাইয়াত দেওয়া হযরত আবদুল্লাহ বিন উমর (রা.) বাইয়াত না দেওয়া ছাহাবী আবদুল্লাহ বিন যুবাইর (রা.) এর প্রতি কেমন দৃষ্টিভঙ্গি রাখতেন তার একটি ছহীহ বর্ণনায়:
عَنْ أبِي نَوْفَلٍ قال : رَأيْتُ عبد الله بْنَ الزُّبَيْرِ عَلَى عَقَبَةِ الْمَدِينَةِ . قال : قال : فَجَعَلَتْ قُرَيْشٌ تَمُرُّ عَلَيْهِ وَالنَّاسُ ، حَتَّى مَرَّ عَلَيْهِ عَبْدُ الله بْنُ عُمَرَ ، فَوَقَفَ عَلَيْهِ . فَقال : السَّلاَمُ عَلَيْكَ أَبَا خُبَيْبٍ ، السَّلاَمُ عَلَيْكَ أَبَا خُبَيْبٍ ، السَّلاَمُ عَلَيْكَ أَبَا خُبَيْبٍ ، أَمَا وَالله لَقَدْ كُنْتُ أَنْهَاكَ عَنْ هَذَا ، أَمَا وَالله لَقَدْ كُنْتُ أَنْهَاكَ عَنْ هَذَا ، أَمَا وَالله لَقَدْ كُنْتُ أَنْهَاكَ عَنْ هَذَا ، أَمَا وَالله إِنْ كُنْتَ ، مَا عَلِمْتُ ، صَوَّاماً ، قَوَّامًا وَصُولاً لِلرَّحِمِ ، أَمَا وَالله لأُمَّةٌ أَنْتَ أَشَرُّهَا لأُمَّةٌ خَيْرٌ. ثُمَّ نَفَذَ عَبْدُ الله بْنُ عُمَرَ ، فَبَلَغَ الْحَجَّاجَ مَوْقِفُ عَبْدِ الله وَقَوْلُهُ ، فَأَرْسَلَ إِلَيْهِ ، فَأُنْزِلَ عَنْ جِذْعِهِ ، فَأُلْقِيَ في قُبُورِ الْيَهُودِ ، ثُمَّ أَرْسَلَ إِلَى أُمِّهِ أَسْمَاءَ بِنْتِ أبيِ بَكْرٍ ، فَأَبَتْ أَنْ تَأْتِيَهُ ، فَأَعَادَ عَلَيْهَا الرَّسُولَ: لَتَأْتِيَنِّى أَوْ لأَبْعَثَنَّ إِلَيْكِ مِنْ يَسْحَبُكِ بِقُرُونِكِ . قال : فَأَبَتْ وَقَالَتْ: وَالله لاَ آتِيكَ حَتَّى تَبْعَثَ إِلَىَّ مَنْ يَسْحَبُنِي بِقُرُونِي . قال : فَقال : أَرُونِي سِبْتَيَّ . فَأَخَذَ نَعْلَيْهِ ، ثُمَّ انْطَلَقَ يَتَوَذَّفُ حَتَّى دَخَلَ عَلَيْهَا . فَقال : كَيْفَ رَأَيْتِنِي صَنَعْتُ بِعَدُوِّ اللهِ ؟ قَالَتْ: رَأَيْتُكَ أَفْسَدْتَ عَلَيْهِ دُنْيَاهُ ، وَأَفْسَدَ عَلَيْكَ آخِرَتَكَ ، بَلَغَنِى أَنَّكَ تَقُولُ لَهُ: يَا ابْنَ ذَاتِ النِّطَاقَيْنِ ، أَنَا وَالله ذَاتُ النِّطَاقَيْنِ ، أَمَّا أَحَدُهُمَا فَكُنْتُ أَرْفَعُ بِهِ طَعَامَ رَسُولِ الله صَلَّىْ اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ، وَطَعَامَ أبيِ بَكْرٍ مِنَ الدَّوَابِّ ، وَأَمَّا الآخَرُ فَنِطَاقُ الْمَرْأَةِ الَّتِى لاَ تَسْتَغْنِي عَنْهُ ، أَمَا إِنَّ رَسُولَ الله صَلَّىْ اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حدثنا ؛ "أَنَّ في ثَقِيفٍ كَذَّاباً وَمُبِيراً". فَأَمَّا الْكَذَّابُ فَرَأَيْنَاهُ ، وَأَمَّا الْمُبِيرُ فَلاَ إِخَالُكَ إِلاَّ إِيَّاهُ ، قال : فَقَامَ عَنْهَا وَلَمْ يُرَاجِعْهَا. أخرجه مسلم (رقم 2545).
অর্থঃ তাবেয়ী আবু নওফল বলেন, আমি মদীনাগামী মক্কা সড়কে আবদুল্লাহ বিন যুবাইরের লাশ দেখতে পাই (৭৩ হিজরীতে)। কুরাইশ ও অন্যান্য লোকজন সেটি দিয়ে চলাচল করছিল। একসময় সেটি দিয়ে আবদুল্লাহ বিন উমর গেলেন এবং বললেন, “হে আবু খুবাইব! আপনার উপর শান্তি বর্ষিত হোক, হে আবু খুবাইব! আপনার উপর শান্তি বর্ষিত হোক, হে আবু খুবাইব! আপনার উপর শান্তি বর্ষিত হোক। আল্লাহর কসম! আমি আপনাকে তা থেকে (বনু উমাইয়ার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো থেকে) নিষেধ করেছিলাম, আল্লাহর কসম! আমি আপনাকে তা থেকে নিষেধ করেছিলাম, আল্লাহর কসম! আমি আপনাকে তা থেকে নিষেধ করেছিলাম। আল্লাহর কসম! আমার জানা মতে আপনি নফল রোজাদার, তাহাজ্জুদ গুজার ও স্বজনদের প্রতি উপকারী ছিলেন। আল্লাহর কসম! যে উম্মতের নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য আপনি (জালিমদের কাছে) অধিক মন্দ লোক বিবেচিত হয়েছেন, সে উম্মত নিশ্চয় উত্তম উম্মত। অতঃপর আবদুল্লাহ বিন উমর চলে গেলেন। পরে আবদুল্লাহ বিন উমরের এই কথাগুলো হাজ্জাজের কানে পৌঁছুলে সে লোক পাঠিয়ে লাশটি নামিয়ে ফেলে এবং ইহুদীদের কবরের মাঝে নিক্ষেপ করে। অতঃপর সে (হাজ্জাজ) লোক পাঠিয়ে আবদুল্লাহ বিন যুবাইরের মা আসমা বিনতে আবু বকরকে (রা.) তার কাছে যেতে বলে। কিন্তু তিনি যেতে অস্বীকার করলেন। সে তখন মানুষ পাঠিয়ে তাকে চুলে ধরে টেনে নেওয়ার হুমকি দেয়। এতেও তিনি যেতে অস্বীকার করেন এবং বলেন, চুলে ধরে টেনে না নেওয়া পর্যন্ত আমি তোমার কাছে যাবো না। তখন হাজ্জাজ নিজেই উনার কাছে গেল এবং গিয়ে বললো, আল্লাহর দুশমনের সাথে আমি যা করেছি, তাকে আপনি কিভাবে দেখছেন? তিনি বললেন, আমি দেখছি, তুমি তার দুনিয়া (জীবন ও ক্ষমতা) নষ্ট করে দিয়েছো এবং সে তোমার আখেরাত নষ্ট করে দিয়েছে। আর আমি শুনেছি যে, তুমি নাকি তাকে দুই ফিতা ওয়ালীর ছেলে বলেছো! শোনো, আমি দুই ফিতাওয়ালী তা সত্য। কেননা একটি ফিতা দিয়ে আমি আল্লাহর রসূল (সঃ) ও আবু বকরের জন্য বাহনে তুলে খাবার নিয়ে যেতাম (উভয়ের গোপনে মদীনায় হিজরত কালে)। আরেকটি ফিতা নারীদের সকলের সাথে সবসময় থাকেই। শোনো! রসূলুল্লাহ (সঃ) আমাদেরকে বলেছেন, “সাকীফ গোত্রের মাঝে একজন মহা মিথ্যাবাদী ও আরেকজন মহাখুনী দেখা দিবে।” তো মহা মিথ্যবাদীকেতো (অর্থাৎ, মুখতার আস-সাকাফী) দেখেছি। আর মহাখুনী তুমি ছাড়া আর কাউকে মনে করি না। বর্ণনকারী বলেন, হাজ্জাজ এই কথা শোনে আর কথা না বাড়িয়ে চলে গেলো। [ছহীহ মুসলিম (২৫৪৫)]।
(বাংলা ওয়েব লিঙ্ক - https://www.hadithbd.com/hadith/link/?id=18588 )

প্রসঙ্গত, এই সময় হযরত আবদুল্লাহ বিন উমর (রা.) অশীতিপর (৮৫ বছরের) বৃদ্ধ ছিলেন। আর হযরত আবদুল্লাহ বিন যুবাইর (রা.) এর বয়স ছিল ৭৩ বছর।
-
আশা করি, হযরত আবদুল্লাহ বিন উমর (রা.) ও হযরত আবদুল্লাহ বিন যুবাইরের মা আসমা বিনতে আবু বকরক (রা.) - এর কথা থেকে সবাই বুঝতে পেরেছেন যে, সত্যবাদী ছাহাবীগণ শুধুমাত্র তাকিয়া স্বরূপ (পিঠ বাঁচানোর জন্য) জালিম শাসক এজিদ, মরওয়ান ও তাদের পরবর্তী শাসকদেরকে বাইয়াত দিয়েছিলেন; কখনোই তাদেরকে খেলাফতের যোগ্য মনে করে নয়।
-
এবার আসুন তিউনিসিয়ান সমাজ চিন্তক ইবনে খলদুনের ধারণার অসারতায়। তিনি তার আল-মুকাদ্দিমা নামক বইতে লিখেছেন :
والذي دعا معاوية لإيثار ابنه يزيد بالعهد دون من سواه إنما هو مراعاة المصلحة في اجتماع الناس ، واتفاق أهوائهم باتفاق أهل الحل والعقد عليه حينئذ من بني أمية ، إذ بنو أمية يومئذ لا يرضون سواهم ، وهم عصابة قريش وأهل الملة أجمع ، وأهل الغلب منهم ، فآثره بذلك دون غيره ممن يظن أنه أولى بها، وعدل عن الفاضل إلى المفضول حرصاً على الاتفاق واجتماع الأهواء الذي شأنه أهم عند الشارع ، وإن كان لا يظن بمعاوية غير هذا ، فعدالته وصحبته مانعة من سوى ذلك . وحضور أكابر الصحابة لذلك ، وسكوتهم عنه دليل على انتفاء الريب فيه ، فليسوا ممن يأخذهم في الحق هوادة ، وليس معاوية ممن تأخذه العزة في قبول الحق ، فإنهم كلهم أجل من ذلك ، وعدالتهم مانعة منه " انتهى من "مقدمة ابن خلدون" (ص 109) .
অর্থ : "যে বিষয়টি মুয়াবিয়াকে অন্যদের বাদ দিয়ে নিজের ছেলে এজিদকে পরবর্তী খলীফা বানানোর প্রতি উদ্বুদ্ধ করেছে তাহলো মানুষের একতা রক্ষা এবং বনু উমাইয়ার নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গের মতের সাথে তাদেরকে সহমত করা। কারণ, সেসময় বনু উমাইয়ারা তাদের ছাড়া অন্য কারো নেতৃত্ব মানতে নারাজ ছিল। তারা কুরাইশের একটি সুসংগঠিত, একতাবদ্ধ ও শক্তিশালী গোত্র ছিল। এ কারণেই মুয়াবিয়া এজিদকে সেসব সেসব লোকজনের উপর প্রাধান্য দিয়েছেন, যারা শাসনকার্যের জন্য তার চেয়ে অধিক যোগ্য বলে বিবেচিত ছিলেন। তিনি উত্তম ছেড়ে অধমের প্রতি ঝুঁকে পড়ার কারণ ছিল মানুষের একতা রক্ষা, যার গুরুত্ব শরীয়তদাতার (আল্লাহর) কাছে অত্যধিক। অবশ্যই মুয়াবিয়ার ব্যাপারে এ ছাড়া বিরূপ কোনো ধারণা রাখা যায় না। কারণ, তার বিশ্বস্ততা ও ছাহাবীয়ত বিরূপ ধারণার প্রতিবন্ধক। এতে বড় বড় ছাহাবীদের উপস্থিতি ও নীরবতা তার (এজিদের উপযুক্ততার) ব্যাপারে সংশয় না থাকা প্রমাণ করে। কারণ, সত্য গ্রহণের ব্যাপারে তাদের মাঝে যেমন কোনো দুর্বলতা ছিল না, তেমনি সত্য গ্রহণে মুয়াবিয়ার মাঝেও কোনো অহমিকা কাজ করতো না। তারা সকলে এসবের উর্ধ্বে ছিলেন এবং তাদের বিশ্বস্ততা এসবের প্রতিবন্ধক ছিল।" [ইবনে খলদূন, মুকাদ্দিমা-১/১০৯]।
(মূল লিঙ্ক- http://islamport.com/w/tkh/Web/345/109.htm )

বাহ! অনেকের মতে এই ভদ্রলোক নাকি খুব বড় সমাজ বিজ্ঞানী ছিলেন! তা হতে পারে।
তবে এটি নিশ্চিত যে, তিনি নিশ্চয়ই হাদীস বিজ্ঞানী ছিলেন না। তাই ধারণা প্রসূত কথা বলতেন এবং ধারণা ও কল্পনা থেকে 'ছাহাবী' হিসেবে পরিচিত সবাইকে বিশ্বাস করতেন এবং দায়মুক্তি দিতেন।

তবে হাদীস বিজ্ঞানীরা তাকে এই প্রশ্ন অবশ্যই করতে পারেন যে, তলীক তথা সাধারণ ক্ষমাপ্রাপ্ত যে লোক (এজিদের বাবা হযরত মুয়াবিয়া) একজন মুহাজির ছাহাবীকে কঠোর ভাষায় হুমকি দিয়ে নিজেকে হযরত উমর (রা.) এর চেয়ে খেলাফতের অধিক যোগ্য দাবি করেন, তিনি কিভাবে সৎ হতে পারেন?

ইবনে খলদুন সাহেব কি ছহীহ বোখারীর এ হাদীসটি দেখেননি:
عَنْ سَعِيدِ بْنِ عَمْرِو بْنِ سَعِيدٍ قَالَ أَخْبَرَنِى جَدِّى قَالَ كُنْتُ جَالِساً مَعَ أَبِى هُرَيْرَةَ فِى مَسْجِدِ النَّبِيِّ صلَّى اللهُ علَيهِ وسلَّم بِالْمَدِينَةِ وَمَعَنَا مَرْوَانُ ، قَالَ أَبُو هُرَيْرَةَ سَمِعْتُ الصَّادِقَ الْمَصْدُوقَ يَقُولُ : « هَلَكَةُ أُمَّتِى عَلَى يَدَىْ غِلْمَةٍ مِنْ قُرَيْشٍ » فَقَالَ مَرْوَانُ لَعْنَةُ اللهِ عَلَيْهِمْ غِلْمَةً . فَقَالَ أَبُو هُرَيْرَةَ لَوْ شِئْتُ أَنْ أَقُولَ بَنِى فُلاَنٍ وَبَنِى فُلاَنٍ لَفَعَلْتُ . أخرجه البخارى (3/1319 ، رقم 3410).
অর্থঃ হযরত সাঈদ বিন আমর বিন সাঈদ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমাকে আমার দাদা জানিয়েছেন, 'আমি এক সময় আবু হুরাইরার সাথে মসজিদে নববীতে বসা ছিলাম। তখন আমাদের সাথে মরওয়ানও ছিলেন (মরওয়ান তখন মদীনায় নিযুক্ত বাদশা/আমীর মোয়াবিয়ার গভর্ণর ছিলেন)। আবু হুরাইরা বললেন, "আমি সত্যবাদী ও সত্যায়িত নবীকে বলতে শুনেছি, " আমার উম্মতের ধ্বংস/পতন সূচিত হবে কোরায়শের কিছু ছেলে-পেলের হাতে।" মরওয়ান বললো, সেসব ছেলে-পেলের প্রতি আল্লাহর লানত হোক (এ যেন চোরের মায়ের বড় গলা)। আবু হুরাইরা বললেন, আমি চাইলে বলে দিতে পারি, তারা অমুকের ছেলে ও তারা অমুকের ছেলে। [ছহীহ বোখারী, হাদীছ নম্বরঃ ৩৪১০]।
(ওয়েব লিঙ্ক- https://www.hadithbd.com/hadith/link/?id=31881 )।
-
আরো কথা আছে।
عن سعيد المقبري، عن أبي هريرة قال: حفظت من رسول الله صلى الله عليه وسلم وعاءين: فأما أحدهما فبثثته، وأما الآخر فلو بثثته قطع هذا البلعوم. أخرجه البخاري (رقم 120)
অর্থঃ হযরত সাঈদ মাকবুরী থেকে বর্ণিত, হযরত আবু হুরাইরা -رضي الله عنه- বলেছেন, “আমি রসূলুল্লাহ صلي الله عليه وسلم এর কাছ থেকে জ্ঞানের দুইটি পাত্র সংরক্ষণ করেছি। তন্মধ্যে একটি প্রসার করলাম। আরেকটি যদি প্রসার করি, তাহলে এই গলনালী কাটা যাবে (আমাকে জবাই করে দেওয়া হবে)।” [ছহীহ বোখারী (১২০)]।
Saeed Al-maqbari Narrated that Abu Huraira said : I have memorized two kinds of knowledge from Allah's Messenger (sallallahu ‘alaihi wa sallam) . I have propagated one of them to you and if I propagated the second, then my pharynx (throat) would be cut (i.e. killed). [Sahih of Bukhari (১২০)].
(ওয়েব লিঙ্ক- https://www.hadithbd.com/hadith/link/?id=22909 )
-
মনে হচ্ছে, এজিদের ক্ষমতাসীন হবার এক বছর পূর্বে ৫৯ হিজরীতে ইন্তেকালকারী হযরত আবু হুরাইরা (রা.) এই হাদীসটাও হয়তো দেখেননি সমাজ চিন্তক ইবনে খলদুন। তাই তিনি বুঝতে পারেননি যে, তার বিশ্বস্ত মানুষ হযরত মুয়াবিয়ার আমলে ছাহাবীগণের বাকস্বাধীনতা কতটুকু হরণ করা হয়েছিল!

যার শাসনে গলাকাটা যাওয়ার ভয়ে হযরত আবু হুরাইরা (রা.) এর মত ছাহাবীও সত্য প্রকাশ করতে পারতেন না, তিনিই হয়ে গেলেন সত্য গ্রহণে অহমিকার উর্ধ্বের মানুষ!
হায়রে খলদুনী সমাজ বিজ্ঞান! কোরআন ও ছহীহ হাদীস ছেড়ে কোন্ অনুমানের পিছনে পড়েছিলে তুমি?
-
ইবনে খলদুনকে আরো জিজ্ঞেস করতে চাই, এজিদকে ক্রাউন প্রিন্স বানানোর সমর্থনে কোন্ বড় বড় ছাহাবী ছিলেন? ওই সময় কি পূর্বোক্ত তিন খলীফার সন্তান ও শীর্ষস্থানীয় মুহাজির ছাহাবী জুবাইর ইবনুল আউওয়ামের ছেলে আবদুল্লাহ ও রসূলুল্লাহ (স.) এর চাচাতো ভাই আবদুল্লাহ বিন আব্বাসের চেয়ে বড় কোন্ ছাহাবী ছিলেন যারা এজিদকে ক্রাউন প্রিন্স বানানোর প্রতি নীরব সমর্থন দিয়েছিলেন? খলদুনী চিন্তায় বড় ছাহাবীর সংজ্ঞা কি? হযরত মুয়াবিয়ার সাথে কোনো সিনিয়র মুহাজির ছাহাবীতো দূর কি বাত, কোনো জুনিয়র মুহাজির ছাহাবীওতো ছিলেন না। তার সাথে যারা ছিলেন তারাতো সকলেই ইসলাম বিরোধী সম্মিলিত ব্যর্থ আহযাব যুদ্ধের পরবর্তীকালের মুসলমান। যেমন হযরত আমর ইবনুল আছ ও হযরত মুগীরা বিন শুবা। তারা উভয়েতো হযরত মুয়াবিয়া কর্তৃক এজিদকে ক্রাউন প্রিন্স ঘোষণা করার আগে ইন্তেকাল করেছেন। শক্তিধর জালিমের বিরুদ্ধে কথা না বলে নীরব থাকার মানে কি তাকে সমর্থন করা?

যে ভদ্রলোক লোক ক্ষমতার লোভ থেকে শূরায়ী খলীফার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ, মিথ্যাচার ও গালমন্দ করেন তিনি কিভাবে সত্য গ্রহণে অহমিকার উর্ধ্বে থাকেন তা হয়তো খলদুনী মগজেই ঢুকেছে, কিন্তু আমাদের সাধারণ মাথায় এমন ভাবনা মোটই প্রবেশ করতে পারছে না। আলহামদুলিল্লাহ্, আমার মগজে হাদীসের যথেষ্ট জ্ঞান আপলোড করা আছে।
-
কথা বাড়াবো না। ইবনে খলদুনের ঘাড়ে চড়ে নাসেবী চিন্তা প্রচার করতে চাওয়া লোকজন যদি প্রচলিত উসূলে হাদীসের আলোকে হাদীসের সত্যতায় বিশ্বাস করেন, তাহলে নীচের দুইটি হাদীস একত্রিত করলে কি নতীজা বের হয়, সাহস থাকলে তা দেখতে পারেন।
عَنْ عَامِرِ بْنِ سَعْدِ بْنِ أَبِي وَقَّاصٍ عَنْ أَبِيهِ ، قَالَ: أَمَرَ مُعَاوِيَةُ بْنُ أَبِي سُفْيَانَ سَعْدًا ، فَقَالَ مَا مَنَعَكَ أَنْ تَسُبَّ أَبَا التُّرَابِ؟ فَقَالَ: أَمَّا مَا ذَكَرْتُ ثَلَاثًا قَالَهُنَّ لَهُ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَلَنْ أَسُبَّهُ ، لَأَنْ تَكُونَ لِي وَاحِدَةٌ مِنْهُنَّ أَحَبُّ إِلَيَّ مِنْ حُمْرِ النَّعَمِ ، سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ لَهُ ، خَلَّفَهُ فِي بَعْضِ مَغَازِيهِ فَقَالَ لَهُ عَلِيٌّ يَا رَسُولَ اللَّهِ خَلَّفْتَنِي مَعَ النِّسَاءِ وَالصِّبْيَانِ؟ فَقَالَ لَهُ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَمَا تَرْضَى أَنْ تَكُونَ مِنِّي بِمَنْزِلَةِ هَارُونَ مِنْ مُوسَى إِلَّا أَنَّهُ لَا نُبُوَّةَ بَعْدِي» ، وَسَمِعْتُهُ يَقُولُ يَوْمَ خَيْبَرَ: «لَأُعْطِيَنَّ الرَّايَةَ رَجُلًا يُحِبُّ اللَّهَ وَرَسُولَهُ وَيُحِبُّهُ اللَّهُ وَرَسُولُهُ» ، قَالَ فَتَطَاوَلْنَا لَهَا ، فَقَالَ: «ادْعُوا لِي عَلِيًّا» ، فَأُتِيَ بِهِ أَرْمَدَ فَبَصَقَ فِي عَيْنِهِ وَدَفَعَ الرَّايَةَ إِلَيْهِ فَفَتَحَ اللَّهُ عَلَيْهِ ، وَلَمَّا نَزَلَتْ هَذِهِ الْآيَةُ: "فَقُلْ تَعَالَوْا نَدْعُ أَبْنَاءَنَا وَأَبْنَاءَكُمْ" دَعَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلِيًّا وَفَاطِمَةَ وَحَسَنًا وَحُسَيْنًا فَقَالَ: «اللَّهُمَّ هَؤُلَاءِ أَهْلِي». أخرجه مسلم (4/1870 ، رقم 2404).
অর্থঃ তাবেয়ী আমের বিন সাদ তাঁর পিতা (শীর্ষ মুহাজির ছাহাবী হযরত সাদ বিন আবু ওয়াক্কাছ) থেকে বর্ণনা করে বলেছেন, মুয়াবিয়া বিন আবু সুফিয়ান সাদকে নির্দেশ দিয়ে বললেন, আবু তুরাবকে (হযরত আলীর উপনাম) গালি سب দিতে আপনাকে কিসে বাধা দিচ্ছে? তখন তিনি বললেন, রসূলুল্লাহ (স.) তাঁর উদ্দেশ্যে যে তিনটি কথা বলেছেন, তা স্মরণ করে আমি তাঁকে কখনো গালি দিতে পারবো না। আমার জন্য এগুলোর কোনোটি হওয়া লাল উট পাওয়ার চেয়েও উত্তম মনে করি। রসূলুল্লাহ (স.) কোনো যুদ্ধে গমনকালে (ওটি ছিল তাবুক যুদ্ধ) যখন তাঁকে (মদীনায় তাঁর) স্থলাভিষিক্ত বানিয়েছিলেন, তখন তিনি বলেছিলেন, আপনি কি আমাকে নারী ও শিশুদের সাথে রেখে যাচ্ছেন? তখন রসূলুল্লাহ صلَّى الله عليه وسلَّم বললেন, “তুমি কি আমার জন্য সে অবস্থানে হওয়াতে সন্তুষ্ট নও, যে অবস্থানে মূসার (আঃ) জন্য হারূন (আঃ) হয়েছিলেন?। তবে পার্থক্য এই যে, আমার পরে নুবুওয়াত নেই।” আর আমি খাইবারের যুদ্ধের সময় তাঁকে (রসূলুল্লাহ) বলতে শুনেছি, “আমি আজ ঝান্ডা এমন এক লোকের হাতে দেবো যে আল্লাহ ও আল্লাহর রসূলকে ভালোবাসে এবং আল্লাহ ও আল্লাহর রসূলও তাকে ভালোবাসেন।” তখন আমরা লোকটি কে তা নিয়ে অনেক গুঞ্জন করলাম। অতঃপর তিনি বললেন, “আলীকে আমার কাছে ডেকে নিয়ে এসো।” তখন চক্ষুশূল অবস্থায় তাকে ডেকে নিয়ে আসা হলো। তিনি (রসূলুল্লাহ صلَّى الله عليه وسلَّم) তাঁর চোখে থুথু দিলেন (এতে তিনি তাঁর চক্ষুশূল ভালো হয়ে যায়) এবং তাঁর হাতে ঝান্ডা দিলেন। অতঃপর আল্লাহ তাঁর (হযরত আলীর) হাতে (ওই যুদ্ধে) বিজয় দান করলেন। আর যখন (মুবাহালার) এ আয়াত “অতএব বলো, আসো ডেকে নিই আমরা আমাদের সন্তানবর্গকে ও তোমরা তোমাদের সন্তানবর্গকে।” অবতীর্ণ হলো, তখন রসূলুল্লাহ صلَّى الله عليه وسلَّم আলী, ফাতেমা, হাসান ও হুসাইনকে ডেকে নিলেন এবং (দোয়া করতে গিয়ে) বললেন, “ইয়া আল্লাহ! এরাই আমার আহলে বাইত।” [ছহীহ মুসলিম (২৪০৪)]।
Meaning : Amir b. Sa'd b. Abi Waqqas reported on the authority of his father that Muawiya b. Abi Sufyan appointed Sa'd as the Governor and said: What prevents you from abusing Abu Turab (Hadrat 'Ali), whereupon be said: It is because of three things which I remember Allah's Messenger (ﷺ) having said about him that I would not abuse him and even if I find one of those three things for me, it would be more dear to me than the red camels. I heard Allah's Messenger (ﷺ) say about 'Ali as he left him behind in one of his campaigns (that was Tabuk). 'Ali said to him: Allah's Messenger, you leave me behind along with women and children. Thereupon Allah's Messenger (ﷺ) said to him: Aren't you satisfied with being unto me what Aaron was unto Moses but with this exception that there is no prophethood after me. And I (also) heard him say on the Day of Khaibar: I would certainly give this standard to a person who loves Allah and his Messenger, and Allah and his Messenger love him too. He (the narrator) said: We had been anxiously waiting for it, when he (the Holy Prophet) said: Call 'Ali. He was called and his eyes were inflamed. He applied saliva to his eyes and handed over the standard to him, and Allah gave him victory. (The third occasion is this) when the (following) verse was revealed: "Let us summon our children and your children." Allah's Messenger (ﷺ) called 'Ali, Fatima, Hasan and Husain and said: O Allah, they are my family. [Sahih of Muslim (2404)].
(বাংলা ওয়েব লিঙ্ক https://www.hadithbd.com/hadith/link/?id=53212 )
প্রিয় পাঠক! পাগলের এই দুনিয়ায় মানুষের পাগলামির কোনো সীমা নেই। এখন কোনো পাগল/মুগাফফল এসে বলবে, আরে ভাই! এখানে সব্বুন/গালি থেকে উদ্দেশ্য আমাদের মত গালি নয়। এটি তৎকালীন একটি ব্যতিক্রমধর্মী গালি, যেটি মূলত প্রশংসা অর্থে ব্যবহৃত হয়।

এসব পাগলে যাতে সুস্থ মানুষের মাথা নষ্ট করতে না পারে, তার জন্য আমি তাদের সাথে কথা না বাড়িয়ে প্রশ্ন করবো, হযরত মুয়াবিয়ার গালি থেকে যদি প্রশংসাই উদ্দেশ্য হয়, তাহলে হযরত সাদ কেন তিনটি কারণে হযরত আলীকে কখনো গালি দিবেন না (তাদের দাবি মতে প্রশংসা করবেন না) বলে প্রতিজ্ঞা করলেন?
-
প্রিয় পাঠক, পাগল বৃত্তান্ত এখানেই শেষ নয়। তৃতীয় আরেক পাগল এসে বলবে, আরে ভাই! এখানে মুয়াবিয়া (রাঃ) নিজে হযরত আলীকে (রাঃ) গালমন্দ করতেন, এমন কথাতো উল্লেখ নেই। বরং তিনি হযরত সাদকে গালি দিতে কিসে বারণ করছে, তা জিজ্ঞেস করেছেন।
এই পাগলেও যাতে সুস্থ মানুষের মাথা নষ্ট করতে না পারে, তার জন্য আমি সুনানে ইবনে মাজা ও সুনানে নাসায়ী কোবরার বর্ণনাটি তুলে ধরছি, যেখানে হযরত মুয়াবিয়া নিজেই হযরত আলীর মানহানি করেছেন বলে স্পষ্ট উল্লেখ আছে। দেখুন সেই বর্ণনাঃ
عن ابْن سَابِطٍ ، وَهُوَ عَبْدُ الرَّحْمَنِ ، عَنْ سَعْد بْنُ أَبِي وَقَّاص ، قَالَ: قَدِمَ مُعَاوِيَةَ فِي بَعْضِ حَجَّاتِهِ ، فَدَخَلَ عَلَيْهِ سَعْدٌ ، فَذَكَرُوا عَلِيُّاً. فَنَالَ مِنْهُ ، فَغَضِبَ سَعْدٌ ، وَقَالَ: تَقُولُ هَذَا لِرَجُلٍ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسلَّمْ يَقُولُ: «مَنْ كُنْت مَوْلاَهُ فَعَلِيُّ مَوْلاَهُ». وَسَمِعْتُهُ يَقُولُ: «أَنْتَ مِنِّي بِمَنْزِلَةِ هَارُونَ مِنْ مُوْسَى إِلاَّ أَنَّهُ لاَ نَبِيَّ بَعْدي». وَسَمِعْتُهُ يَقُولُ: «لأُعْطِيَنَّ الرَّأَيةَ الْيَوْمَ رَجُلاً يُحِبُّ اللَّه وَرَسُولَه». أخرجه ابن ماجه (1/45 ، رقم 121) بسند صحيح واللفظ له ، والنسائى فى الكبرى (5/108 ، رقم 8399). وصححه الألبانى فيما سماه صحيح ابن ماجه.
অর্থঃ তাবেয়ী আবদুর রহমান বিন সাবিত হযরত সাদ বিন আবু ওয়াক্কাছের (রা.) উদ্ধৃতি দিয়ে বর্ণনা করেছেন যে, মুয়াবিয়া তার কোনো এক হজ থেকে প্রত্যাবর্তন করলেন। তখন সাদ তার কাছে গেলেন। তখন দরবারের লোকজন আলীর কথা আলোচনা করলো। তখন তিনি তাঁর মানহানি করলেন। তখন সাদ ক্ষুব্ধ হলেন এবং বললেন, তুমি কি এমন একজন লোকের ব্যাপারে এই কথা বলেছো, যার ব্যাপারে আমির রসূলুল্লাহকে সঃ বলতে শুনেছি, “আমি যার বন্ধু/অভিভাবক, আলীও তার বন্ধু/অভিভাবক।” তাঁকে আমি আরো বলতে শুনেছি, “তুমি আমার জন্য সেই রকম, যেরকম মূসার জন্য হারূন ছিলেন। তবে আমার পরে আর কোনো নবী নেই।” তাঁকে আমি আরো বলতে শুনেছি, “আজকে আমি এমন একজন লোককে জিহাদের ঝান্ডা দেবো, যে আল্লাহ ও তাঁর রসূলকে ভালোবাসে।” [সুনানে ইবনে মাজা (১২১) ও সুনানে নাসায়ী কোবরা (৮৩৯৯)। মানঃ সম্পূর্ণ ছহীহ]।
Meaning : It was narrated that Sa`d bin Waqqas said: Mu`awiyah came on one of his pilgrimages and Sa`d entered upon him. They mentioned `Ali, and Mu`awiyah criticized him. Sa`d became angry and said: 'Are you saying this of a man of whom I heard the Messenger of Allah (ﷺ) say: "If I am a person's close friend, `Ali is also his close friend." And I heard him say: "You are to me like Harun was to Musa, except that there will be no Prophet after me." And I heard him say: "I will give the banner today to a man who loves Allah and His Messenger." [Sunan of ibn maja (121)].
(মানসহ বাংলা ওয়েব লিঙ্ক https://www.hadithbd.com/hadith/link/?id=9831 )
বলুন, হযরত মুয়াবিয়া যদি গালি না দিয়ে থাকেন অথবা গালি মানে যদি প্রশংসা হয়, তাহলে শীর্ষস্থানীয় মুহাজির ছাহাবী হযরত সাদ বিন আবু ওয়াক্কাস (রা.) কেন রাগ করেছিলেন? বিকৃতি ও বাটপারির একটি লিমিট না থাকলে কিন্তু মানুষের কাছে ধরা পড়তে হয়।
-
এবার দেখুন হযরত আলীকে (রা.) গালি দেওয়ার সঠিক অর্থ:
- عن أبي عبد الله الجدلي قال: دخلت على أم سلمة فقالت لي: أَيُسَبُّ رسول الله صلى الله عليه وآله وسلم فيكم؟! قلت: معاذ الله أو سبحان الله أو كلمة نحوها ! قالت: سمعت رسول الله صلى الله عليه وآله وسلم يقول: «مَنْ سَبًّ عَلِيًّا فَقَدْ سَبَّنِي». أخرجه أحمد (6/323 ، رقم 26791) قال الهيثمى (9/130): رجاله رجال الصحيح غير أبى عبد الله الجدلى ، وهو ثقة. وصححه شعيب الأرنأووط في تعليقه على المسند (44/329) والألباني في صحيحته (3332).
অর্থঃ তাবেয়ী আবু আবদুল্লাহ আল-জাদালী বলেন, আমি (হযরত মুয়াবিয়ার শাসনামলে) হযরত উম্মে সালামার (উম্মুল মুমিনীনের অন্যতম) কাছে গেলাম। তখন তিনি আমাকে বললেন, তোমাদের মাঝে কি আল্লাহর রসূলকে গালি দেওয়া হয়? আমি তখন মাআযাল্লাহ (আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাই) বা সুবহানাল্লাহ (আল্লাহর পবিত্রতা বর্ণনা করছি) অথবা এ রকম অন্য কোনো শব্দ বললাম। তিনি বললেন, রসূলুল্লাহ (স.) বলেছেন, “যে আলীকে গালি দিল সে আমাকেই গালি দিল।” [ছহীহ সনদে মুসনদে আহমদ (২৬৭৯১)। হাফেজ হাইছামী মজমায়ে (৯/১৩০), শুয়াইব আরনাঊত তাঁর মুসনদে আহমদের তাহকীকে (২৬৭৯১), এমনকি সালাফী শায়খ আলবানীও হাদীছটিকে তার সিলসিলা ছহীহাতে (৩৩৩২) ছহীহ বলে মন্তব্য করেছেন]।
(মানসহ ওয়েব লিঙ্ক - https://dorar.net/hadith/sharh/135148 )
-
তার মানে হযরত আলীকে (রা.) নিশ্চয়ই গালি দেওয়া হতো, যাতে ক্ষুব্ধ ছিলেন উম্মুল মুমিনীন হযরত উম্মে সালামা (রা.)।
তো মহানবী (স.) এর এই ঘোষণা “যে আলীকে গালি দিল সে আমাকেই গালি দিল।” যদি আল্লামা হাইছামী, আলবানী ও আরনাঊত সকলের মতে ছহীহ হয়ে থাকে, নবীজিকে (স.) গালিদাতা হযরত মুয়াবিয়ার ব্যাপারে শরীয়তের বিধান কি হবে?
-
চিন্তার দরকার নেই। খোদ মহানবী (স.) এর সমাধান দিয়ে গেছেন। দেখুন:
قال البلاذري في أنساب الأشراف (5/128) : حدثنا يوسف بن موسى وأبو موسى إسحاق الفروي، قالا : حدثنا جرير بن عبد الحميد، حدثنا إسماعيل والأعمش، عن الحسن، قال : قال رسول الله صلى الله عليه وسلم : "إذا رأيتم معاوية على منبري فاقتلوه". فتركوا أمره فلم يفلحوا ولم ينجحوا.
অর্থ: হযরত হাসান বসরী (র.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ صلَّى الله عليه وسلَّم বলেছেন, “যখন তোমরা মুয়াবিয়াকে আমার মিম্বরে উঠতে দেখবে, তখন তাকে কতল করে দিবে।" (হাসান বসরী বলেন) তবে তারা (চল্লিশ হিজরীর পরের মদীনাবাসী) বিষয়টিকে গুরুত্ব দিল না। ফলে তারা সফলকাম হলো না (বরং ৬২ হিজরীতে এজিদ বাহিনীর গণহত্যা ও গণধর্ষণের কবলে পড়লো)। [আনসাবুল আশরাফ (৫/১২৮), সনদ: ছহীহ। কারণ, হাসান বসরীর মুরসাল সকলের মতে গ্রহণযোগ্য]।
(মূল গ্রন্থের ওয়েব লিঙ্ক - https://books.google.com.bd/books?id=wAJGCwAAQBAJ&pg=PT133&lpg=PT133&dq;=إذا+رأيتم+معاوية+على+منبري+فاقتلوه+فتركوا+أمره+فلم+يفلحوا+ولم+ينجحوا.&source=bl&ots=-UnBibB3M_&sig=ACfU3U3au3B1J5CmYf-A4ajfV_3vC-c2SQ&hl=en&sa=X&ved=2ahUKEwiCv77xjsD5AhWbDbcAHa0XD1YQ6AF6BAgAEAE )
-
এবার দেখুন হাদীসটির রাবীদের সকলের পরিচয় (সালাফীদের সাইটের লিঙ্কসহ)। সকলেই কিন্তু ছহীহ বোখারী ও ছহীহ মুসলিমের রাবী।
يوسف بن موسى هو : يوسف بن موسى بن راشد بن بلال القطان، أبو يعقوب الكوفى المعروف بالرازى، من رجال البخاري. وثقه غير واحد، ولم يطعن فيه أحدٌ، وقال ابن حجر: صدوق. http://hadith.islam-db.com/narrators/8592/يوسف-بن-موسى-بن-راشد-بن-بلال
أبو موسى إسحاق: إسحاق بن موسى بن عبد الله بن موسى بن عبد الله بن يزيد الأنصارى الخطمى، أبو موسى المدنى ثم الكوفى. من رجال مسلم. ثقة متقن. http://hadith.islam-db.com/narrators/971/إِسْحَاقُ بْنُ مُوسَى
جرير بن عبد الحميد هو: جرير بن عبد الحميد بن قرط الضبى، أبو عبد الله الرازى الكوفى القاضى. من رجال البخاري ومسلم. قال غير واحد من علمائهم أنه مجمع على وثاقته. وذكر ابن حجر في التهذيب: "وقال قتيبة: حدثنا جرير الحافظ المقدم، لكنى سمعته يشتم معاوية علانية". https://hadith.islam-db.com/narrators/2122/جَرِيرٌ
إسماعيل هو: إسماعيل بن أبى خالد: هرمز، ويقال : سعد ويقال: كثير، الأحمسى مولاهم البجلى، أبو عبد الله الكوفى. من رجال البخاري ومسلم. حافظ ثقة ثبت. (الطبقة4، الوفاة 146) http://hadith.islam-db.com/narrators/989/إسماعيل-بن-هرمز
الأعمش هو: سليمان بن مهران الأسدى الكاهلى مولاهم، أبو محمد الكوفى الأعمش. ثقة، حافظ، من الأعلام. من رجال البخاري ومسلم. (الطبقة5، الوفاة 147) http://hadith.islam-db.com/narrators/3629/سليمان-بن-مهران
الحسن هو: الحسن بن أبى الحسن : يسار البصرى، الأنصارى مولاهم أبو سعيد، مولى زيد بن ثابت، و يقال مولى جابر بن عبد الله. من رجال البخاري ومسلم. قال الذهبي: الإمام، كان كبير الشأن، رفيع الذكر، رأسا فى العلم و العمل. وقال ابن حجر: ثقة فقيه فاضل مشهور، و كان يرسل كثيرا و يدلس. الطبقة3 الوفاة 110). https://hadith.islam-db.com/narrators/1239/الْحَسَنِ
فالسند صحيح، رجاله رجال الصحيح.
-
এরপর দেখুন হাদীসটির আরেকটি সনদ:
قال البلاذري في أنساب الأشراف (5/130) برقم (378) :
حدثني إبراهيم بن العلاف البصري قال، سمعت سلاماً أبا المنذر يقول: قال عاصم بن بهدلة حدثني زر بن حبيش عن عبد الله بن مسعود قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم : "إذا رأيتم معاوية بن أبي سفيان يخطب على المنبر فاضربوا عنقه".
অর্থ: হযরত আবদুল্লাহ বিন মাসউদ (র.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ صلَّى الله عليه وسلَّم বলেছেন, “যখন তোমরা মুয়াবিয়াকে আমার মিম্বরে ভাষণ দিতে দেখবে, তখন তার গর্দান মেরে দিবে।" [আনসাবুল আশরাফ (৫/১৩০)। সনদ: হাসান]।
সনদ বিশ্লেষণ:
إبراهيم بن العلاف البصري : ثقة. http://hadith.islam-db.com/narrators/801/إبراهيم-بن-الحسن-بن-نجيح
سلام أبو المنذر : صدوق حسن الحديث. http://hadith.islam-db.com/narrators/3458/سلام-بن-سليمان
عاصم بن بهدلة : صدوق حسن الحديث. http://hadith.islam-db.com/narrators/4059/عاصم-بن-بهدلة
زر بن حبيش : ثقة. https://hadith.islam-db.com/narrators/2996/زِرِّ بْنِ حُبَيْشٍ
-
এবার দেখুন হাদীসটির আরো একটি সনদ:
قال ابن عدي في الكامل (7/83) : أخبرنا علي بن المثنى ثنا الوليد بن القاسم عن مجالد عن أبي الوداك عن أبى سعيد أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال : "إذا رأيتم معاوية على منبري فاقتلوه". وأخرجه ابن عساكر في تاريخ دمشق (59/55).
অর্থ: হযরত আবু সাঈদ আল-খুদরী (র.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ صلَّى الله عليه وسلَّم বলেছেন, “যখন তোমরা মুয়াবিয়াকে আমার মিম্বরে ভাষণ দিতে দেখবে, তখন তার গর্দান মেরে দিবে।" [ইবনে আদীর আল-কামিল (৭/৮৩), ইবনে আসাকিরের তারীখে দিমাশক (৫৯/৫৫)। সনদ: কিছুটা দূর্বল। তবে সাক্ষী বর্ণনা হিসেবে গ্রহণযোগ্য]।
(ওয়েব লিঙ্ক - http://islamport.com/w/trj/Web/1157/2663.htm )
-
এখন যেসব বাবুরা আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া থেকে হযরত মুয়াবিয়ার দুয়েকটি পলিটিক্যাল স্টেটমেন্ট বা পলিসি বাক্য এনে তাকে জলীলুল কদর ছাহাবী ও আহলের বাইতের হিতাকাঙ্ক্ষী বানিয়ে দায়মুক্তি impunity দিচ্ছেন, তারা কি জানেন আল্লামা ইবনে কাসীর 'আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া'র তথ্যগুলো এমন সূত্রগ্রন্থ থেকেও নিয়েছেন, যাতে "যখন তোমরা মুয়াবিয়াকে আমার মিম্বরে ভাষণ দিতে দেখবে, তখন তার গর্দান মেরে দিবে।" এমন বর্ণনাও আছে? (ভালো কর দেখে নিন- (ওয়েব লিঙ্ক - http://islamport.com/w/trj/Web/1157/2663.htm )
-
কথা এখানেই শেষ নয়। এরকম বা এর কাছাকাছি আরো অনেক বর্ণনা হাদীস ও ইতিহাসগ্রন্থ সমূহে রয়েছে। তবে আমি বা কোনো সত্যবাদী আলিম হযরত মুয়াবিয়াকে নিয়ে বর্ণিত নেতিবাচক ছহীহ হাদীসগুলো জনসম্মুখে আনতে চাই না। কিন্তু যখন দেখবো যে নাসেবী বান্ধব লোকজন হযরত মুয়াবিয়ার জাল ফজীলত প্রচার করে মাওলাল মুমিনীন হযরত আলীসহ মজলুম আহলে বাইতের মানহানি করবে, তখন আমরা হাটে #হাড়ি ভাঙ্গতে বাধ্য হই।
-
আহলে সুন্নতভুক্ত মুসলমানরা ক্লিয়ার করে শুনুন এ ব্যাপারে আপনাদের অনুসরীয় আলেমদের ঘোষণাগুলো। তাদের সর্বসম্মতিক্রমে হযরত মুয়াবিয়ার ফযীলত নিয়ে কোনো ছহীহ হাদীছ নেই। বিষয়টি ইমাম আহমদ, ইমাম ইবনুল জওযী, ইমাম ইসহাক বিন রাহওয়াই, ইমাম নাসায়ী, ইবনে হাজর আসকালানী শাফেয়ী ও বদরুদ্দীন আইনী হানাফীসহ সকল আলিমগণ নিশ্চিত করেছেন।
ইবনুল জওযী 'কিতাবুল মওজূয়াত'-এ হযরত মুয়াবিয়ার পক্ষের-বিপক্ষের জাল হাদীছগুলো উল্লেখ করে বলেছেনঃ
عن عبدالله بن أحمد بن حنبل قال: سألت أبى فقلت ما تقول في على ومعاوية؟ فأطرق ثم قال: "إيش أقول فيهما إن عليا كان كثير الاعداء ففتش أعداؤه له عيبا فلم يجدوا ، فجاءوا إلى رجل قد حاربه وقاتله فأطروه كيادا منهم له." (كتاب الموضوعات: الجزء 2 ، الصفحة 24-25).
অর্থঃ আবদুল্লাহ বিন আহমদ বলেন, আমি আমার পিতাকে বললাম, আলী ও মুয়াবিয়ার ব্যাপারে আপনার মতামত কি? তখন তিনি একটু চিন্তা করলেন। অতঃপর বললেন, তাদের ব্যাপারে কি বলবো। বস্তুত আলী (রা.) প্রচুর শত্রু ওয়ালা ছিলেন। তো তার শত্রুরা তার দোষ খুঁজে বের করার চেষ্টা করলো। কিন্তু তারা কোনো দোষ বের করতে পারলো না। ফলে তারা এমন একটি লোকের (হযরত মুয়াবিয়ার) পথ ধরলো, যে তাঁর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ও মারামারি করেছে। তো তারা তার (হযরত আলীর) বিরুদ্ধে চক্রান্তবশত তার (হযরত মুয়াবিয়ার) প্রশংসায় বাড়াবাড়ি করলো (অর্থাৎ, জাল ও বিকৃত হাদীস রচনা করলো)।” [কিতাবুল মওজূয়াতঃ ২/২৪-২৫]।
একই কথা আল্লামা ইবন হাজর আসকালানী ফতহুল বারীতেও এনেছেন [৭/১৩১]।
(সেটির ওয়েব লিঙ্ক - https://www.islamweb.net/amp/ar/library/index.php... )
-
আরেক মুহাদ্দিছ ও ফকীহ ইমাম ইসহাক বিন ইব্রাহীম আল-হানজলী বলেছেনঃ
"لا يصح عن النبي صلى الله عليه وسلم في فضل معاوية بن أبى سفيان شئ". كتاب الموضوعات: الجزء 2 ، الصفحة 24-25. فتح الباري في شرح صحيح البخاري (7/131 ).
অর্থঃ “মুয়াবিয়ার ফযীলতের ব্যাপারে নবীজি (ছঃ) থেকে ছহীহ কিছু বর্ণিত হয়নি।” [কিতাবুল মওজূয়াতঃ ২/২৪-২৫]
-
ছহীহ বোখারীর ব্যাখ্যাগ্রন্থ ‘ফতহুল বারী’তে হযরত মুয়াবিয়ার যিকর তথা আলোচনার অধ্যায়ের ব্যাখ্যায় আল্লামা ইবনে হাজর আসকালানী (রহ.) লিখেছেনঃ
"وقد ورد في فضائل معاوية أحاديث كثيرة لكنْ ليس فيها ما يصحّ من طريق الإسناد ، وبذلك جزم إسحاق بن راهويه والنسائي وغيرهما". فتح الباري في شرح صحيح البخاري (7/131 ).
অর্থঃ “মুয়াবিয়ার ফযীলত নিয়ে অনেক হাদীছ এসেছে। তবে এতে ছহীহ সনদের কোনো হাদীছ নেই। বিষয়টি ইসহাক বিন রাহওয়াই ও নাসাঈসহ অন্যান্যরা জোর جزم দিয়ে বলেছেন।” [ফতহুল বারীঃ ৭/১৩১]।
(ওয়েব লিঙ্ক- https://www.islamweb.net/ar/library/index.php... )
-
ছহীহ বোখারীর আরেক ব্যাখ্যাগ্রন্থ ‘উমদাতুল কারী’তে হযরত মুয়াবিয়ার যিকর তথা আলোচনা অধ্যায়ের ব্যাখ্যায় আল্লামা বদরুদ্দীন আইনী হানাফী লিখেছেনঃ
"إن فيه ذكر معاوية، ولا يدل هذا على فضيلته فإن قُلتَ: ورد في فضيلته أحاديث كثيرة. قلتُ: نعم ، ولكن ليس فيها حديث يصح من طريق الإسناد ، نصّ عليه إسحاق بن راهويه والنسائي وغيرهما ، فلذلك قال: باب ذكر معاوية. ولم يقل: فضيلة ولا منقبة. (عمدة القاري 16/249 ح 254).
অর্থঃ “এতে মুয়াবিয়ার আলোচনা রয়েছে। তবে তা তার ফযীলত নির্দেশ করে না। এখন আপনি যদি বলেন, তার ফযীলতের অনেক হাদীছ এসেছে, তাহলে আমি বলবো, হ্যা! তবে এতে ছহীহ সনদের কোনে হাদীছ নেই। বিষয়টি ইসহাক বিন রাহওয়াই ও নাসাঈসহ অন্যান্যরা জোর দিয়ে বলেছেন। আর এ কারণে তিনি (ইমাম বোখারী) ‘মুয়াবিয়ার ফযীলত ও কীর্তি অধ্যায়’ না বলে লিখেছেন, ‘মুয়াবিয়ার আলোচনা অধ্যায়।’” [উমদাতুল কারীঃ ১৬/২৪৯]।
(ওয়েব লিঙ্ক - https://books.google.com.bd/books?id=8hJKCwAAQBAJ&pg=PT342&lpg=PT342&dq;=إن+فيه+ذكر+معاوية+ولا+يدل+هذا+على+فضيلته+ف&source=bl&ots=MNanhAp9UO&sig=ACfU3U1ZCB8yGeLRTkRqUuYmNdDxzZNB2A&hl=en&sa=X&ved=2ahUKEwjG3KjEqMP5AhWJBbcAHaHrBosQ6AF6BAgJEAE ).
-
প্রসঙ্গত, মুহাদ্দিছীনে কেরামের মতে তিরমিযী (৩৮৪২) ও মুসনদে আহমদে নাছেবী রাজা ব্যাপারে হেদায়তের দোয়া সম্বলিত যে হাদীছ রয়েছে, ওটাকে ইমাম ইবনে আবদুল বর ও ইবনুল জওযী একাধিক দুর্বল রাবীর কারণে পরিত্যক্ত বলেছেন। ইবনে আবদুল বর হাদীছটির রাবী আবদুর রহমান বিন আবু উমাইরাকে ছাহাবী নয় বলেও মন্তব্য করেছেন। আল্লামা ইবনে হাজর আসকালানী এটি ছহীহ নয় বলে মন্তব্য করেছেন।
নিশ্চিত হতে দেখুন ইবনে আবদুল বরের আল-ইসতীআব الاستيعاب (২/৮৪৩), ইবনুল জওযীর আল-ইলালুল মুতানাহিয়াহ العلل المتناهية (১/২৭৬), ইবনে হাজরের আল-ইছাবাহ الإصابة (৪/৩৪২) ও ফতহুল বারী فتح الباري (৭/১০৪)। তা কাছে না থাকলে সালাফী আলেম আবদুর রহমান মোবরকপুরী কৃত সুনানে তিরমিযীর ব্যাখ্যাগ্রন্ত 'তুহফাতুল আহওয়াযী' تحفة الأحوذي (১০/২৩০) দেখতে পারেন। তিনি লিখেছেন : قال الحافظ : إسناده ليس بصحيح كما عرفت آنفا في ترجمة عبد الرحمن بن أبي عميرة .
ওয়েব লিঙ্ক দিলাম- https://islamweb.net/ar/library/index.php... )
-
একইভাবে মুসনদে আহমদে বর্ণিত اللهم علم معاوية الكتاب والحساب وقه العذاب "ইয়া আল্লাহ্ মুয়াবিয়াকে হিসাব-কিতাব শেখান ও আযাব থেকে বাঁচান।" এই হাদীস ও মুসন্নফে ইবনে আবী শায়বায় বর্ণিত يا معاوية إذا ملكت فأحسن "মুয়াবিয়া তুমি বাদশা হলে উত্তম কাজ করিও।" হাদীস দুটোও জাল তথা নাসেবীদের বানানো। আল্লামা ইবনে হাজর আসকালানীর মতে মুনকার।
তাছাড়া হযরত মুয়াবিয়া ইসলাম গ্রহণের আগ থেকেই হিসাব-কিতাব ভালো জানতেন, যে কারণে নবীজি (স.) লেখালেখির কাজে তাকেও ডাকতেন।
হাদীসটি সম্পর্কে সহজে জানতে এই লিঙ্কে ক্লিক করতে পারেন। https://al-maktaba.org/book/32021/2034
-
উল্লেখ্য, মুহাক্কিক আলিমদের মতে اللَّهُمَّ َاجْعَلْهُ هَادِيًا مَهْدِيًّا হাদীসটি হযরত জরীর বিন আবদুল্লাহর ব্যাপারে বর্ণিত হয়েছে। দেখুন ছহীহ বোখারীর ২৮৫৭ নম্বর হাদীছ (লিঙ্ক https://www.dorar.net/hadith/sharh/24812 )। পরে নাসেবীরা এটাকে হযরত মুয়াবিয়ার সাথে যুক্ত করে দিয়েছে। হযরত আলী ও মুয়াবিয়ার পক্ষে-বিপক্ষে রাফেজী ও নাছেবীরা প্রচুর হাদীছ জাল ও বিকৃত করেছে।
-
এখন কেউ ছহীহ বোখারীতে বর্ণিত ইবনে আব্বাসের ‘ফকীহ’ উক্তি দেখাতে পারেন? কিন্তু আপনি কি জানেন এক রাকাত বিতর বিরোধী হানাফী মাযহাব ওয়ালাদের ব্যারিষ্টার ইমাম তহাবী এর ব্যাখ্যায় কি বলেছেন? তিনি শরহে মাআনিউল আছারে شرح معاني الآثار তার নিজস্ব সনদে ‘ফকীহ’র স্থলে حمار গাধা শব্দ উল্লেখ করেছেন এবং বলেছেন ‘ফকীহ’ শব্দটি যদি ইবনে আব্বাস ব্যবহারও করে থাকেন, তাহলে সেটি তাকিয়া (ক্ষমতাসীনের অনিষ্টতা থেকে আত্মরক্ষার কৌশল) স্বরুপ বলেছেন। কারণ, ওই সময় আহলে বাইতের বিরোধী লোকটি ক্ষমতায় ছিল। বিশ্বাস না হলে তহাবীর মাআনিল আছার এখনই খুলে দেখুন (এরাবিয়ান ছাপায় খন্ড ১ ও পৃষ্টা ২৮৯)।
আর হযরত আলীর প্রতি বিদ্বেষবশত তালবিয়ার সুন্নত বাদ দেওয়ায় এই আবদুল্লাহ বিন আব্বাসই (রা.) হযরত মুয়াবিয়াকে লানত করেছেন। দেখুন :
عَنْ سَعِيدِ بْنِ جُبَيْرٍ قَالَ كُنْتُ مَعَ ابْنِ عَبَّاسٍ بِعَرَفَاتٍ فَقَالَ: "مَا لِى لاَ أَسْمَعُ النَّاسَ يُلَبُّونَ". قُلْتُ: يَخَافُونَ مِنْ مُعَاوِيَةَ. فَخَرَجَ ابْنُ عَبَّاسٍ مِنْ فُسْطَاطِهِ فَقَالَ: "لَبَّيْكَ اللَّهُمَّ لَبَّيْكَ لَبَّيْكَ فَإِنَّهُمْ قَدْ تَرَكُوا السُّنَّةَ مِنْ بُغْضِ عَلِىٍّ. أخرجه النسائي (5/253 ، رقم 3006) ، وابن خزيمة في صحيحه (رقم 2830).
অর্থঃ হযরত সাঈদ বিন জুবাইর বলেন, আমি আরাফাতের মাঠে ইবনে আব্বাসের সাথে ছিলাম। তখন তিনি বললেন, কি হলো! আমি লোকজনের তালবিয়া পড়ার আওয়াজ যে শুনছি না! আমি বললাম, তারা মুয়াবিয়াকে ভয় করছে (হযরত মুয়াবিয়া তালবিয়া বা উচ্চকণ্ঠে তালবিয়া পড়ার বিরোধী ছিলেন)। তখন ইবনে আব্বাস তাঁর তাঁবু থেকে বের হলেন এবং বললেন, “লাব্বাইকা আল্লাহুম্মা লাব্বাইকা লাব্বাইক। ওরা (হযরত মুয়াবিয়াপন্থীরা) আলীর (রা.) প্রতি বুগজ/ঘৃণাবশত সুন্নত ত্যাগ করেছে।” [সুনানে নাসায়ী (৩০০৬) ও ছহীহ ইবনে খুজাইমা (২৮৩০)]।
(বাংলা ওয়েব লিঙ্ক https://www.hadithbd.com/hadith/detail/chapter/?book=6... )
-
আর মুসনদে আহমদে বোখারী-মুসলিমের সনদে একই তাবেয়ী হযরত সাঈদ বিন জুবাইর (র.) থেকে বর্ণিত আরেকটি বর্ণনায় এই কারণে (তালবিয়া বা উচ্চকণ্ঠে তালবিয়া পাঠ ছাড়ার কারণে) হযরত আবদুল্লাহ বিন আব্বাস (রা.) কর্তৃক হযরত মুয়াবিয়াকে লানত করার কথা এসেছে। দেখুন:
عن سعيد بن جبير قال: أتيتُ علَى ابن عبَّاس بعرفةَ وهو يأكلُ رُمَّانًا فقال: "أَفْطَرَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم بِعَرَفَةَ". وَبَعَثَتْ إِلَيْهِ أُمُّ الْفَضْلِ بِلَبَنٍ فَشَرِبَهُ وَقَالَ: "لَعَنَ اللَّهُ فُلاَناً عَمَدُوا إِلَى أَعْظَمِ أَيَّامِ الْحَجِّ فَمَحَوْا زِينَتَهُ وَإِنَّمَا زِينَةُ الْحَجِّ التَّلْبِيَةُ". أخرجه أحمد (رقم 1870). قال شعيب الأرنؤوط: صحيح رجاله ثقات رجال الشيخين.
অর্থঃ হযরত সাঈদ বিন জুবাইর বলেন, আমি আরাফাতের মাঠে ইবনে আব্বাসের কাছে এলাম। তখন তিনি আনার খাচ্ছিলেন। বললনে, রসূলুল্লাহ (স.) আরাফাতের মাঠেই ইফতার করেছিলেন। এ সময় উম্মুল ফজল (তার মা) তাকে দুধ দিলেন। তিনি তা পান করলেন এবং বললেন, অমুককে (অর্থাৎ, তালবিয়া বা উচ্চকণ্ঠে তালবিয়া পাঠ ত্যাগকারী হযরত মুয়াবিয়াকে) আল্লাহ্ লানত করুন। তারা হজের সবচেয়ে বড়দিনে (আরাফাত দিবসে) এসে এর সৌন্দর্য নষ্ট করে দিল। নিশ্চয়ই হজের সৌন্দর্য হলো তালবিয়া পাঠ)। [মুসনদে আহমদ (১৮৭০), মান: ছহীহ। মান বিচারক: মুহাদ্দিস শুয়াইব আরনাউত (রহ)]।
(লিঙ্ক - https://islamarchive.cc/H_132344 )
-
এবার ছহীহ মুসলিমের হাদীস থেকে দেখুন হযরত আলীর প্রতি বুগজ/বিদ্বেষ লালনকারীর সঠিক পরিচয় :
عَنْ زِرٍّ ، قَالَ: قَالَ عَلِيٌّ: "وَالَّذِي فَلَقَ الْحَبَّةَ وَبَرَأَ النَّسَمَةَ إِنَّهُ لَعَهْدُ النَّبِيِّ الْأُمِّيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِلَيَّ أَنْ لَا يُحِبَّنِي إِلَّا مُؤْمِنٌ وَلَا يُبْغِضَنِي إِلَّا مُنَافِقٌ". أخرجه مسلم (1/86 ، رقم 78).
অর্থঃ তাবেয়ী জির বিন হুবাইশ বলেন, হযরত আলী -رضي الله عنه- বলেছেন, ‘সে মহান সত্ত্বার কসম, যিনি দানা উৎপন্ন করেছেন এবং সৃষ্টকূলকে সৃষ্টি করেছেন! আমার কাছে এটা অবশ্য রসূলুল্লাহ صلَّى الله عليه وسلَّم এর অঙ্গীকার যে, আমাকে মুমিন ছাড়া কেউ ভালোবাসবে না (অর্থাৎ, প্রকৃত অর্থে ভালোবাসা) এবং মুনাফিক ছাড়া কেউ আমাকে বুগজ (ঘৃণা/বিদ্বেষ) করবে না।’ [ছহীহ মুসলিম (৭৮)]।
Meaning : Zirr reported: 'Ali (May Allah be pleased with him) observed: By Him Who split up the seed and created something living, the Apostle (may peace and blessings be upon him) gave me a promise that no one but a believer would love me, and none but a hypocrite would nurse grudge against me. [Sahih of Muslim (78)].
(বাংলা ওয়েব লিঙ্ক https://www.hadithbd.com/hadith/link/?id=46900 )
-
তার মানে, হযরত মুয়াবিয়াকে হযরত আলীর প্রতি বুগজ/বিদ্বেষ লালন করার কারণে মুনাফিক বলা ও লানত করার সংস্কৃতি ছাহাবীগণই চালু করেছিলেন।
দেখুন তাকে মুনাফিক মনে করা সম্পর্কিত ছহীহ মুসলিমের আরো একটি হাদীস:
عَنْ قَيْسٍ قَالَ: قُلْتُ لِعَمَّارٍ أَرَأَيْتُمْ صَنِيعَكُمْ هَذَا الَّذِي صَنَعْتُمْ فِي أَمْرِ عَلِيٍّ أَرَأْيًا رَأَيْتُمُوهُ أَوْ شَيْئًا عَهِدَهُ إِلَيْكُمْ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ؟ فَقَالَ: مَا عَهِدَ إِلَيْنَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ شَيْئًا لَمْ يَعْهَدْهُ إِلَى النَّاسِ كَافَّةً ، وَلَكِنْ حُذَيْفَةُ أَخْبَرَنِي عَنْ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «فِي أَصْحَابِي اثْنَا عَشَرَ مُنَافِقًا لَا يَدْخُلُونَ الْجَنَّةَ حَتَّى يَلِجَ الْجَمَلُ فِي سَمِّ الْخِيَاطِ ، ثَمَانِيَةٌ مِنْهُمْ تَكْفِيكَهُمُ الدُّبَيْلَةُ». وَأَرْبَعَةٌ لَمْ أَحْفَظْ مَا قَالَ شُعْبَةُ فِيهِمْ. أخرجه مسلم (4/2143 ، رقم 2779).
অর্থঃ হযরত কয়েস বিন সাদ বিন উবাদা (রা) বলেন, আমি হযরত আম্মারকে (রা.) বললাম, আপনারা হযরত আলীর (রা.) পক্ষ নিয়ে যে কাজ (যুদ্ধ) করছেন, তা কি আপনাদের নিজস্ব চিন্তা থেকে করছেন নাকি তা রসূলুল্লাহ (ছঃ) এর পথনির্দেশকৃত কোনো বিষয়? তিনি বলেন, সাধারণ মানুষ বাদ দিয়ে রসূলুল্লাহ ছঃ আমাদেরকে বিশেষ কোনো পথনির্দেশ দেননি। তবে আমাকে হুযাইফা (নিফাক বিশেষজ্ঞ বিখ্যাত ছাহাবী) জানিয়েছেন যে, রসূলুল্লাহ (ছঃ) বলেছেন, “আমার ছাহাবীদের মাঝে ১২জন বিশিষ্ট মুনাফিক আছে। সূচের ছিদ্র দিয়ে উট প্রবেশ না করা পর্যন্ত (অর্থাৎ, কস্মিণকালেও) তারা জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। তাদের আটজন মরবে দুবাইলায় (বুক ও গর্দান দুর্বলকারী এক ধরণের ফোঁড়া) আক্রান্ত হয়ে।” নীচের একজন বর্ণনাকারী বলেন, ‘বাকী চারজনের ব্যাপারে শু‘বা কি বলেছেন, তা আমার স্মরণ নেই।’ [ছহীহ মুসলিম (২৭৭৯)]।
Meaning : Qais reported:
I said to 'Ammar: What is your opinion about that which you have done in case (of your siding with Hadrat 'Ali)? Is it your personal opinion or something you got from Allah's Messenger (ﷺ)? 'Ammar said: We have got nothing from Allah's Messenger (ﷺ) which people at large did not get, but Hudhaifa told me that Allah's Apostle (ﷺ) had especially told him amongst his Companion, that there would be twelve hypocrites out of whom eight would not get into Paradise, until a camel would be able to pass through the needle hole. The ulcer would be itself sufficient (to kill) eight. So far as four are concerned, I do not remember what Shu'ba said about them. [Sahih of Muslim (2779)].
(বাংলা ওয়েব লিঙ্ক https://www.hadithbd.com/hadith/link/?id=54026 )
-
তার মানে হযরত আম্মার (রা.) হযরত মুয়াবিয়াকে মুনাফিক মনে করেই হযরত আলী (রা.) এর পক্ষে লড়ে প্রাণ দিয়েছিলেন।
-
অতএব, আমরা চুনোপুটিদেরকের হযরত মুয়াবিয়া বিন আবু সুফিয়ান নামীয় ছাহাবীর বিদ্বেষী বলে কোনো লাভ নেই। এসব বলতে হবে আমাদেরকে গোমরাহ!কারী হযরত মুয়াবিয়া বিরোধী ছাহাবা, হাদীসগ্রন্থ প্রণেতা ও পরবর্তীকালের মুহাদ্দিসগণকেই।
-
আজ আর নয়। হাড়িতে আরো অনেক অনেক তথ্য আছে।
-
মহান আল্লাহ্ আমাদেরকে সিরাতুল মুসতাকীমের উপর পরিচালিত করুন।

পঠিত : ৭১৭ বার

মন্তব্য: ০