Alapon

সন্তানদের সাথে রাসুল সা. এর আচরন কেমন ছিলো?



আমাদের জীবনের সর্বক্ষত্রে যে মানুষকে আমরা আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করতে পারি তিনি হলেন হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। উনার জীবনের প্রতিটি ধাপ যদি আমরা অনুসরণ করতে পারি তাহলে নিশ্চয় আমরা সফলকাম।

আলহামদুলিল্লাহ্‌। আজকে আমরা রাসুলের জীবনের একটা অংশ, রাসূলের সন্তানদের সাথে ব্যাবহার কেমন ছিলো সে বিষয়ে একটু জানার চেষ্টা করবো।

রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর ছেলে সন্তান ছিলেন ৩ জন (কাসিম, আব্দুল্লাহ, ইব্রাহিম) তিনজনই প্রাপ্ত বয়স্ক হবার আগেই মৃত্য বরণ করেন।

রাসুলের মেয়ে ছিলেন ৪ জন (জাইনাব, রুকাইয়া, উম্মে কুলসুম, ও ফাতিমা)। একমাত্র ফাতিমা (রা) ব্যতীত সবাই রাসূলের জীবদ্দশায় মৃত্যু বরণ করেন।
এবার আমরা দেখবো রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সন্তানদের প্রতি আচরণনীতি-
* রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সন্তানদের সুন্দর নাম রাখতেন। এটা রাসুলের সন্তানদের নামের দিকে লক্ষ করলেই আমরা দেখতে পাবো।

* রাসুলের সন্তানদের মধ্যে কন্যা সন্তানেরাই কেবল জীবিত ছিলেন। রাসূলের জীবন থেকে কন্যার সন্তানের বাবাদের অনেক কিছু শেখার আছে। কেননা রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন- 'কাউকে যদি কন্যা সন্তান দিয়ে পরিক্ষা করা হয়, আর সে যদি তাদের সঙ্গে সদাচরণ করে তবে তারা জাহান্নাম ও তার মাঝে প্রতিবন্ধক হয়ে দাড়াবে'।[১]

* কন্যা পিতার কাছে আমানত। বিয়ে দেওয়ার আগে অবশ্যই তার মত নিতে হবে। আমরা রাসূলের জীবনে দেখতে পাই, যখন আলি (রা) ফাতিমাকে (রা) বিয়ে করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন তখন রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাথে সাথেই বিয়ের কথাবার্তা ঠিক করে ফেলেন নি। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফাতিমা (রা) এর কাছ থেকে সম্মতি নিয়ে তবেই তাকে বিয়ে দিয়েছিলেন। যে জায়গায় আমাদের রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কন্যার সম্মতি নিয়ে তবেই বিয়ে দিয়েছিলেন সে জায়গায় আমাদের সমাজে আজকে এটা অনুপস্থিত! টাকা ওয়ালা/বড় ব্যবসায়ী দেখলেই আমাদের বড়রা মেয়ের সম্মতি আছে কি না সেটার আর তোয়াক্কা করেন না।

* রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মেয়েদের বিয়ে দিয়েছেন উত্তম চরিত্রবান পুরুষদের সাথে। জাইনাবকে (রা) বিয়ে দিয়েছিলেন আবুল আস ইবনে রাবি কুরাইশি (রা) এর সাথে। তিনি মক্কার সেরা পুরুষদের একজন ছিলেন। রুকাইয়া ও উম্মে কুলসুমকে (রা) বিয়ে দিয়েছিলেন উসমান (রা) এর সাথে। যিনি জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত সাহাবাদের একজন। ফাতিমাকে (রা) বিয়ে দিয়েছিলেন আলি (রা) এর সাথে। শিশুদের মধ্যে তিনিই প্রথম ইমান এনেছিলেন রাসুল(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর প্রতি।

* মেয়েদের বিয়ে দেওয়ার সময় রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খুব কম মোহর নির্ধারণ করে দিয়েছিলেন। আমরা আলি (রা) ও ফাতিমা (রা) এর বিয়ের মোহরের দিকে লক্ষ করলেই সেটা স্পষ্ট দেখতে পাবো। তাদের বিয়ের মোহর ছিলো একটি মাত্র বর্ম! [২]

* বিয়ে দেওয়ার পরও রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মেয়েদের দেখাশোনা করতেন। ভীষণ ব্যস্ততার মাঝেও কন্যাদের কথা ভুলে যেতেন না। আমরা রসূলের জীবনিতে দেখতে পাই, যখন বদর যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে রাসূল খুবই ব্যস্ত তখনো তিনি তাঁর মেয়ে রুকাইয়ার (রা) অসুস্থতার কথা ভুলে যাননি। একদিকে কুরাইশ ও কুরাইশদের নেতাদের সাথে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মুখোমুখি হতে যাচ্ছেন অন্যদিকে মুসলিম শিবীরেও সৈন্য সং্খ্যা খুবই কম। তারপরও রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অসুস্থ মেয়ের দেখাশোনা করার জন্য উসমানকে (রা) মদিনায় থাকার নির্দেশ দিয়ে যুদ্ধে রওয়ানা হন। উসমান (রা) ছিলেন রুকাইয়া (রা) এর স্বামী। যেখানে একজন সৈন্যের ও খুব প্রয়োজন ছিলো সেখানে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অসুস্থ মেয়ের দেখাশোনার জন্য উসমান (রা) কে রেখে যান!

* রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সন্তানদের দায়িত্বশীলতার শিক্ষা দিতেন। রাসূলের মেয়ে হওয়ায় ফাতিমা (রা) যেন আখিরাত নিয়ে নিশ্চিন্ত না থাকেন সে জন্য রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফাতিমাকে (রা) বলেছিলেন তিনি যেন নিজেকে জাহান্নাম থেকে বাঁচান। তিনি যদি বদ আমল করেন তবে রাসূলের মেয়ে হওয়ায় তিনি আল্লাহর শাস্তি থেকে বেঁচে যাবেন, এমনটা যেন তিনি ভরসা না করেন।[৩]

* সন্তানের প্রতি রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর ভালোবাসার আরেকটি ক্ষেত্র আমরা দেখতে পাই আলি (রা) এর বর্ণনায়। তিনি বলেন, 'একবার রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে রেশমের তৈরি এক সেট পোশাক দিলেন। আমি সেটি পরে বাইরে বের হলাম। তিনি দেখে বললেন, "আলি, তুমি পরার জন্য তো এটা পাঠাইনি। এটি থেকে ফাতিমাদের জন্য ওড়না বানাও[৪]। মেয়ে বিয়ে দেবার পরও রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিয়মিত হাদিয়া পাঠাতেন। সব সময় মেয়ের খেয়াল রাখতেন।

* রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সন্তানদের যিকির ও দোয়ার প্রতি উপদেশ দিতেন। কন্যাদের তাহাজ্জুদের প্রতি উদ্বুদ্ধ করতেন। সবসময় দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণ কাজের নির্দেশ দিতেন। দুনিয়ায় কষ্ট সহ্য করে আখেরাতের পাথেয় সংগ্রহ করতে বলতেন।

* ফাতিমা (রা) যখন পিত্রালয়ে ফিরতেন তখন রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উষ্ণ অভ্যর্থনা জানাতেন এবং আগ বেড়ে এগিয়ে নিতেন। আয়িশা (রা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, ফাতিমা হেটে ঘরে এলেন। মনে হলো তার হাটা রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর হাটার মতো। রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁকে "এসো আমার প্রিয় কন্যা" বলে নিজের পাশে বসালেন..।[৫]

এই হলো নববী আদর্শ। এই ছিলো রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সন্তানদের সাথে আচরণর সংক্ষিপ্ত একটি বিবরণী। "প্রিয় নবীর কদমে কুরবান হোক আমার জীবন! কোথায় পাবে তুমি এমন অনুপম মানব। কত চমৎকার পিতা তিনি! সন্তানের প্রতি তার স্নেহ যেন ভোরে মৃদুমন্দ হিমেল হাওয়া। গুরুত্বের সঙ্গে পূরণ করতেন মেয়েদের কচীমনের চাওয়াগুলো।মোহর ও উপহার তাকে আনন্দিত করত।

বস্তুত সহজ বিয়ে গুলোতেই আছে সুখের মিষ্টতা।[৬]

- আল মুনিম
------------------------------------
(১. সহিহ বুখারী: ৫৯৯৫)
(২. সুনানে আবি দাউদ: ২১২৫)
(৩. সহিহ বুখারী: ২৭৫৩)
(৪. সহিহ বুখারী: ২৬১৭)
(৫. সহিহ বুখারী: ৩৬২৪)
(৬. যেমন ছিলেন তিনি; ১ম খন্ড, পৃষ্ঠা ১৯৫)

পঠিত : ৩১৬ বার

মন্তব্য: ০