Alapon

আমার একমাত্র আল্লাহকেই প্রয়োজন...



রাসূলুল্লাহ (স) কোন দোয়া করেছিলেন যখন এই দুনিয়ার সকল আশা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিলেন? কুরআনে উল্লেখ করা হয়েছে যখন সাহাবায়েকেরাম (রা) পরিবেষ্টিত হয়ে পড়েছিলেন 'আহযাব' দ্বারা, মদিনার চারপাশে দশ হাজার শক্তিশালী সৈন্য দ্বারা। আর দশ হাজার সৈন্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার শক্তি আসলেই তাদের ছিল না। তখন তারা কী বলেছিলেন?

আল্লাহ কুরআনে তা উল্লেখ করেছেন। الَّذِينَ قَالَ لَهُمُ النَّاسُ إِنَّ النَّاسَ قَدْ جَمَعُوا لَكُمْ فَاخْشَوْهُمْ فَزَادَهُمْ إِيمَانًا وَقَالُوا حَسْبُنَا اللَّهُ وَنِعْمَ الْوَكِيلُ - "যাদেরকে লোকে খবর দিয়েছিল যে, একটা বড় বাহিনী তোমাদের বিরুদ্ধে জড় হচ্ছে, কাজেই তাদেরকে ভয় কর। তখন তা তাদের ঈমান বৃদ্ধি করে দিল এবং তারা বলল, ‘আমাদের জন্যে আল্লাহ্ই যথেষ্ট এবং তিনি কতই না উত্তম কর্মবিধায়ক!’ " (৩:১৭৩)

সৎ মানুষ হলো তারা যাদেরকে বিশাল একটি বাহিনী যখন আক্রমণ করতে এলো, অন্য লোকেরা যখন তাদেরকে বললো, তোমরা কী ভয় পাচ্ছ না? তোমার কি ভীত নও? তখন কোন বাক্যাংশটি রাসূল (স) এবং সাহাবারা উল্লেখ করেছিলেন? "হাসিবুনাল্লাহু ওয়া নে'মাল ওয়াকি-ল।" এটাই ছিল দোআ। "হাসিবুনাল্লাহু ওয়া নে'মাল ওয়াকি-ল।"

ইবনে আব্বাস (রা) বর্ণনা করেন— যখন ইব্রাহিম (আ) কে আগুনে ফেলে দেওয়ার পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছিলো... তারা ইব্রাহিম (আ) কে আগুনে ফেলে শাস্তি দিতে চেয়েছিল। ইব্রাহিম (আ) এর বয়স তখন খুব কম ছিল, সম্ভবত ১৪, ১৫ বছর। সে সময় সারা দুনিয়াতে তিনিই ছিলেন একমাত্র মুসলিম। সে সময় তিনি ছাড়া গোটা পৃথিবীতে আর কোনো মুসলিম ছিল না। তিনি আল্লাহর প্রতি ঈমান এনেছিলেন এবং মূর্তিপূর্জা পরিত্যাগ করেছিলেন। তাই, যখন মন্দ লোকেরা, যখন শক্তিশালী রাজা এবং তার সাঙ্গপাঙ্গরা তাকে ঘেরাও করে ফেললেন এবং তারা তাঁকে বলল, যদি তুমি ক্ষমা না চাও এবং আমাদের মতাদর্শে ফেরত না আসো, আমরা তোমাকে আগুনে পুড়ে হত্যা করবো।

তারা তিন দিন ধরে তাঁকে নির্যাতন করতে থাকলো। এরপর আগুন জ্বালালো। তাঁকে আগুনে ফেলার পূর্বে তিনি কী বলেছিলেন? ইবনে আব্বাস (রা) বলেন- যখন ইব্রাহিম (আ) কে আগুনে ফেলে দেওয়া হচ্ছিল, তিনি তখন বলেছিলেন- "হাসিবুনাল্লাহু ওয়া নে'মাল ওয়াকি-ল।" এটাই ছিল ইব্রাহিম (আ) এর দুআ।

আর এটা নবী মুহাম্মাদ (আ) এরও দুআ ছিল যখন তিনি কাফেরদের বিশাল এক বাহিনী দ্বারা ঘেরাওয়ের মধ্যে পড়ে গিয়েছিলেন। যখন আরবের সকল সেনাবাহিনী তাঁর বিরুদ্ধে একত্রিত হয়েছিল, তখন ঠিক এ দোয়াটি আমাদের রাসূল (স) এর জিহ্বা দিয়ে উচ্চারিত হয়েছিল।

এই দোয়াটি কেন এতো শক্তিশালী? 'হাসবিয়াল্লাহ' বাক্যাংশের অর্থ হলো— আমার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট। আমার অন্য কাউকে দরকার নেই। হাসবিয়াল্লাহ حسبي الله। আমার শুধু আল্লাহকে দরকার। আমার আর কাউকে প্রয়োজন নেই। "ওয়া নি'মাল ওয়াকিল"। এখানে ওয়াকিল মানে শুধু রক্ষাকর্তা নন, বরং এমন সত্ত্বা যিনি আমার ব্যাপারগুলোর দায়িত্ব নিয়ে নিবেন। আমার যা যা করা দরকার তিনি সেগুলোর দায়িত্ব নিয়ে নিবেন। হাসবিয়াল্লাহ (حسبي الله)। আমার শুধু আল্লাহকে প্রয়োজন। ওয়া নি'মাল ওয়াকিল। "আর কতই না উত্তম এক অভিভাবক তিনি!"

এই দোয়ার অর্থ কী? কেন এটি এতো শক্তিশালী? যখন বলেন হাসবিয়াল্লাহ, আপনি কেবল তখনি হাসবিয়াল্লাহ বলতে পারবেন, যখন জানেন আল্লাহ কে। এটা জানার পরেই কেবল আল্লাহর উপর আস্থা রাখতে পারবেন। যে অন্তরে ঈমান নেই সে অন্তর হাসবিয়াল্লাহ বলার সামর্থ্য রাখে না।

যখন বলেন হাসবিয়াল্লাহ— আপনি দৃঢ়তার সাথে ঘোষণা দিচ্ছেন আল্লাহর ক্ষমতার, আল্লাহর ভালোবাসার। এবং এ ব্যাপারটারও যে আল্লাহ আপনাকে চিনেন, আপনি কী করছেন তা তিনি জানেন, তিনি জানেন তাঁকে আপনার কতটা প্রয়োজন।

যখন বলেন হাসবিয়াল্লাহ— আপনি তখন বলছেন, ও আল্লাহ! আমি জানি আপনি যখন কোনো কিছু করার ইচ্ছা করেন, তখন কেউ আপনার এবং আপনার ইচ্ছার মাঝে এসে দাঁড়াতে পারে না। আমার শুধু আল্লাহকে দরকার। আপনি ছাড়া কোনো শক্তি নেই, কোনো ক্ষমতা নেই।

যখন বলেন হাসবিয়াল্লাহ— আপনি তখন বলছেন, আমার বিপক্ষে কে আছে আমি তার পরোয়া করি না। যদি আল্লাহ আমার পক্ষে থাকেন, সব মিলিয়ে আমার এটাই দরকার।
ইব্রাহিম (আ) এর অন্তরের কথা একবার কল্পনা করুন। সমগ্র শহর দ্বারা তিনি পরিবেষ্টিত, সেনাবাহিনী দ্বারা, তখনকার সবচেয়ে ক্ষমতাশালী রাজা তার সামনে, ভয় দেখাচ্ছে, নির্যাতন করছে। তিনি ছিলেন মাত্র পনের বছরের এক বাচ্চা ছেলে। তিন দিন তিন রাত ধরে আগুন জ্বালিয়ে এর তীব্রতা বাড়ানো হলো। সারা দুনিয়াতে একজন ব্যক্তিও তাঁর পক্ষে ছিল না। এমনকি তাঁর নিজের পিতাও নির্যাতনকারীদের দলে। শুধু কল্পনা করুন...

তাঁকে সাহায্য করার জন্য একজন মানুষও ছিল না। তথাপি, তিনি কী জানতেন? আল্লাহ আমাকে রক্ষা করবেন। হাসবিয়াল্লাহ (حسبي الله)। হে আল্লাহ! আমি আপনার দিকে ফিরেছি। আপনি এই আগুনের মোকাবেলা করুন। সমগ্র দুনিয়া আমার বিরুদ্ধে আজ জড়ো হয়েছে, তাদের মোকাবেলায় আপনিই যথেষ্ট। হাসবিয়াল্লাহ। আমার শুধু আল্লাহকে দরকার। আমার আর কাউকে দরকার নেই।

তো, এরপর কী ঘটলো? যখন ইব্রাহিম (আ) কে সেই আগুনে নিক্ষেপ করা হলো। আগুন নিজেই তাঁর জন্য একটি বাগানে পরিণত হয়। একটি বাগান...। নিশ্চিন্তে পার্কে হাঁটার মত। এটা হয়ে গেলো চমৎকার, সুগন্ধময়, নাতিশীতোষ্ণ। ঠিক এমনটাই ঘটে যখন আপনি আপনার বিশ্বাস আল্লাহর উপর রাখেন।

যখন বলেন হাসবিয়াল্লাহ— আপনি তখন দৃঢ়তার সাথে আল্লাহর ক্ষমতার স্বীকৃতি দিচ্ছেন এবং ঘোষণা দিচ্ছেন, হে আল্লাহ! আমি আপনার ক্ষমতায় বিশ্বাস করি। আমি আপনার শক্তিমত্তায় বিশ্বাস করি। আমি বিশ্বাস করি আপনি হলেন রাহমান, রহিম, সামি, আলিম, কুদ্দুস এবং মালিক। হে আল্লাহ! আপনিই হলেন আসল সম্রাট।

সুতরাং, বিপদে পড়লে যখন বলেন হাসবিয়াল্লাহ— আপনি কেবল তখনি এ কথা বলতে পারবেন যখন এটি আপনার অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে আসে। যখন বুঝতে পারেন আল্লাহ কে এবং আপনি আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার উপর বিশ্বাস স্থাপন করেন।

আল্লাহ আমাদেরকে কুরআনে বলেছেন- وَ مَنۡ یَّتَّقِ اللّٰهَ یَجۡعَلۡ لَّهٗ مَخۡرَجًا - وَّ یَرۡزُقۡهُ مِنۡ حَیۡثُ لَا یَحۡتَسِبُ - “যে কেউ আল্লাহকে ভয় করে, আল্লাহ তার জন্য (সমস্যা থেকে উদ্ধার পাওয়ার) কোন না কোন পথ বের করে দিবেন। এবং তিনি তাকে এমন উৎস থেকে রিযক দিবেন যা সে কল্পনাও করতে পারবে না।”। وَ مَنۡ یَّتَوَکَّلۡ عَلَی اللّٰهِ فَهُوَ حَسۡبُهٗ - যে ব্যক্তি আল্লাহর উপর নির্ভর করে তার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট। (৬৫ঃ ২-৩)

—ড. ইয়াসির কাদি

পঠিত : ৩৪৩ বার

মন্তব্য: ০