Alapon

মহাভারতের পথে...(বই রিভিউ)

১৭৯৯ সালের ৫ই মে। যুদ্ধের ময়দানে শাহাদাত বরণ করলেন, মহান বীর টিপু সুলতান।


শোনা যায়, সুলতানের লাশটি সাধারণ সৈনিকদের লাশের সাথে ক্ষতবিক্ষত অবস্থায় পড়েছিল। সুলতানের হাতের আংটি এবং তাঁর বিখ্যাত তরবারী দিয়ে তাঁর লাশটি চিন্হিত করা হয়। সুলতানের লাশের এই অবস্থা শুনে প্রায় ছুটে আসেন, জেনারেল ওয়েলেসলি। তিনি সুলতানের লাশটাকে অপমানের হাত থেকে রক্ষা করেন। সেই সাথে তিনি সুলতানের লাশকে স্যালুট করে বলেন- ‘হি ওয়াজ দ্য লাস্ট প্যাট্টিয়ট অব ইন্ডিয়া’।


পরের দিন, অর্থাৎ ৬ই মে সুলতানের লাশ দাফন করার দিন ধার্য হল। সুলতানের লাশটি দাফন করার দায়িত্ব পড়ল, মেজর বেইলির উপর।


মেজর বেইলি সেই দিনটির অভিজ্ঞতার কথা বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন- ‘দুপুরের পরপরই আকাশ মাটি যেন পরস্পরের সাথে লড়াই শুরু করল। আমি আমার জীবনে বহুবার সাগর পাড়ি দিয়েছি। ভারতে এবং ইংল্যান্ডে দেখেছি, বহু ঘূর্ণিঝড়। দেখেছি সাইক্লোন এবং টর্নেডো। কিন্তু সুলতান টিপুর মৃত্যুর দিন সত্যিই অলৌকিক কিছু ঘটেছিল। হঠাৎ এতো প্রচন্ড ঝড় শুরু হল যে, আমরা দৌড়ে তাঁবুতে পৌঁছাতে পারলাম না। আমার দশজন লশকরের তিনজন রাস্তায় পড়ে গেল। বাকি সাতজন যেন বজ্রের নিচে ঝলসাচ্ছিল।...


সেদিন আমাদের উপর সারাজীবনের আতংক ভর করেছিল। মধ্যরাতে আমার তাঁবুসহ দুজন লস্করকে প্রচন্ড ঝড় উড়িয়ে নিয়ে গেল। আমরা সামনের বালুতে মুখ গুঁজে মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করছিলাম। কিন্তু ঈশ্বর তখনো এই পাপীদের উপর সদয় ছিলেন । সকালে সব শান্ত হয়ে গলে আমি মাদ্রাজে চলে গেলাম। আমার ভাগ্য ভালো যে, ঈশ্বর আর কখনোই আমাকে শ্রীরঙ্গপাটনায় নিয়ে যান নি।’ (সূত্র: ডায়েরি অব কর্ণেল বেইলি)


এই পুরো ইতিহাসটি পড়লাম শ্রদ্ধেয় লেখক বুলবুল সরওয়ার রচিত- ‘মহাভারতের পথে’ বই থেকে। বইটি দুই খন্ডে রচিত। ভ্রমণ সাহিত্যের সাথে ইতিহাস। বইটি পড়ার সময় মনে হচ্ছিল, আমি যেন দক্ষিণ ভারতের সেইসব ঐতিহাসিক স্থানগুলোতে হাটছি। বইটিতে লেখক টিপু সুলতানের ইতিহাসটি সংক্ষেপে হলেও দারুণ ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। সেখানে গিয়ে লেখক নিজেই যেমন কেঁদে ফেলেছিলেন, তেমনি বইয়ের বর্ণনায় টিপু সুলতানের শাহাদাত আর মহানুভবতা পড়ে পাঠক আমিও কেঁদে ফেলেছি।


বইটিতে স্থানগুলোর বর্ণনা, ইতিহাস এবং সাহিত্য রসের সংমিশ্রণ দেখে আমার মনে হয়েছে, এ যেন ধোঁয়া ওঠা চিকন চালের গরম ভাতের সাথে কুমারী আলুর ভর্তা, গাওয়া ঘিঁ আর এক চিমটি লবণ এর স্বাদ। বরাবরের মতই ওনার বইটি ছিল মুগ্ধ করার মত।

পঠিত : ৭১৭ বার

মন্তব্য: ০