Alapon

সেরা মুসলিম বিজ্ঞানী !



আপনাকে যদি আমি ৫ জন কালজয়ী বিজ্ঞানীর নাম বলতে বলি, তাহলে আপনার উত্তর হবে,,, আলবার্ট আইনস্টাইন, স্যার আইজ্যাক নিউটন, স্টিফেন হকিং, অ্যারিস্টোটল, গ্যালিলিও গ্যালিলেই, ইত্যাদি।

যাদের প্রত্যেকেই অমুসলিম। কিন্তু একজন মুসলিম হিসেবে,, কখনো চিন্তা করেছেন,, এই বিজ্ঞানীদের তালিকায় কোনো মুসলিম বিজ্ঞানীর নাম নেই কেন...

আপনি হয়তো ভাবছেন যে,, তেমন বড় কোনো মুসলিম বিজ্ঞানীই হয়তো নেই, আর সেজন্যই এ তালিকায় তাদের নাম নেই। বিজ্ঞানের শুরুর সময়টা হলো মধ্যযুগের সময়কাল। এবং মধ্যযুগে মুসলমানরাই বিজ্ঞান জগতে রাজ করেছেন। অথচ সেই ইতিহাস গুলো আজ আমাদের থেকে গোপন করা হয়। আমাদেরকে সেই ইতিহাস গুলো পড়ানো হয় না। এখন আমি আপনাদেরকে এমন কিছু মুসলিম বিজ্ঞানীর কথা বলতে যাচ্ছি,, যাদের সম্পর্কে জানলে,, আপনি অবাক তো হবেনই, সাথে আশ্চর্যও হবেন....

1/ আল খাওয়ারিজমি,,,,,
পুরো নাম,, আবু আব্দুল্লাহ্ মুহাম্মাদ ইবনে মুসা আল-খারেজমি। তার জন্ম আনুমানিক ৭৮০ খৃষ্টাব্দে। তিনি ছিলেন বিজগনিতের আবিস্কারক।
আল-খারেজমি রচিত কিতাব আল জাবর ওয়াল মুকাবলাতে তিনি রৈখিক এবং দ্বিঘাত সমীকরণ এর প্রথম পদ্ধতিগত সমাধান উপস্থাপন করেন। বীজগণিতে তার প্রধান সাফল্য ছিল বর্গের সাহায্যে দ্বিঘাত সমীকরণের সমধান, এর জন্য তিনি জ্যামিতিক প্রমাণ প্রদান করেন। সর্বপ্রথম তিনিই বীজগণিতকে গনিতের একটি স্বাধীন শাখা হিসেবে তুলে ধরেন এবং সমীকরণ সমাধানের পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করেন, তাই খাওয়ারিজমিকে বীজগণিতের জনক বা প্রতিষ্ঠাতা বলা হয়। বিজগনিতের বৈজ্ঞানিক নাম "অ্যালজেবরা" শব্দটিই এসেছে তার আল জিবর ওয়াল মুকাবিলা বই এর শিরোনাম থেকে। দ্বাদশ শতাব্দীর দিকে পাটিগণিতের উপর তার বই (Algorithmo de Numero Indorum) এর বর্ণনাকৃত ভারতীয় সংখ্যা এর উপর ভিত্তি করে পশ্চিমা বিশ্ব দশমিক সংখ্যা পদ্ধতি চালু করে।১১৪৫ সালে রবার্ট অব চেস্টার কর্তৃক অনুবাদকৃত আল জিবর ওয়াল মুকাবিলা বইটি ষোড়শ শতাব্দী পর্যন্ত ইউরোপীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গণিতের প্রধান বই হিসেবে পড়ানো হতো। তিনি আনুমানিক ৮৫০ খৃষ্টাব্দে মৃত্যুবরণ করেন, এবং রেখে যান এক অমূল্য সম্পদ।

2/ ইবনে সিনা,,,
পুরো নাম, আবু ʿআলী আল-হোসাইন বিন ʿআব্দিল্লাহ ইবনুল হাসান বিন ʿআলী ইবনে সীনা। তিনি আনুমানিক ৯৮০ খৃষ্টাব্দে বুখারায় জন্ম গ্রহন করেন। তিনি আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের জনক।

এছাড়াও তিনি একজন পারসিক মুসলিম বহুবিদ্যাবিশারদ । যাঁকে একাধারে ইসলামি স্বর্ণযুগের অন্যতম শ্রেষ্ঠ চিকিৎসক, জ্যোতির্বিজ্ঞানী, দার্শনিক, লেখক এবং আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের জনক হিসাবে গণ্য করা হয়। তার হাত ধরেই আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রা। এছাড়াও তিনি ছিলেন সে-যুগের সবচেয়ে প্রভাবশালী দার্শনিক। ধারণা করা হয় যে তিনি ৪৫০টি গ্রন্থ রচনা করেছিলেন,, যার মধ্যে ১৫০টি দর্শনশাস্ত্র বিষয়ক এবং ৪০টি চিকিৎসা বিজ্ঞান বিষয়ক রচনাসহ মোট ২৪০টি গ্রন্থ এখন পর্যন্ত টিকে আছে। তাঁর সর্বাধিক বিখ্যাত রচনাগুলি হল কিতাবুশ শিফা, যা একটি দার্শনিক ও বৈজ্ঞানিক বিশ্বকোষ, এবং কানুন ফিত তিব, যা একটি চিকিৎসাবৈজ্ঞানিক বিশ্বকোষ। বইটি বহু মধ্যযুগীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি প্রামাণিক মেডিকেল পাঠ্যবই হয়ে ওঠে, এবং ১৬৫০ সাল পর্যন্ত এর ব্যবহার হতে থাকে। অবশেষে ১০৩৭ সালে জীবনবাতি নিভে যায় চিকিৎসা বিজ্ঞানে বিপ্লব ঘটানো এই বিজ্ঞানির।

3/ হাসান ইবনুল হায়সাম
পুরো নাম আবু আলি হাসান ইবনুল হাসান ইবনুল হায়সাম। তার জন্ম ৯৬৫ খৃষ্টাব্দে। তিনি ছিলেন আধুনিক আলোক বিজ্ঞানের জনক।

পশ্চিমা বিশ্বে তিনি আলহাজেন নামেও পরিচিত। তিনি ইসলামি স্বর্ণযুগের, একজন আরব গনিতবিদ, জ্যোতির্বিজ্ঞানী ও পদার্থবিজ্ঞানী। তিনি সাধারণত "আলোকবিজ্ঞানের জনক" হিসেবে উল্লেখিত হন। তিনি আলোকবিদ্যায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন, বিশেষ করে দর্শনানুভূতির ব্যাখ্যায়। তার সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ও প্রভাবশালী কাজ হচ্ছে তার লিখিত "কিতাবুল মানাজির গ্রন্থটি। যা, ১০১১ থেকে ১০২১ সাল এর মধ্যে লেখা বলে অনুমান করা হয়। তিনি একজন বহুবিদ্যাবিশারদ ব্যাক্তি ছিলেন, তিনি দর্শন ও ধর্মতত্ত্ব সম্পর্কেও লিখেছেন। ইবনুল হাইছাম প্রায় ২শ'র কাছাকাছি গ্রন্থ প্রণয়ন করেন। যার মধ্যে অংকে ৪১টি ও জ্যামিতিতে ২৬টি গ্রন্থ রয়েছে। এবং বিভিন্ন লাইব্রেরিতে তার ১৩টি পদার্থ বিজ্ঞানের উপর লেখা বই পাওয়া গেছে। পশ্চিমা বিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টিকারী এই মহান বিজ্ঞানীর,,, ল্যাটিন, হিব্রু, স্প্যানিশ, ফরাসী, জার্মান প্রভৃতি ভাষায় প্রায় ২৫টি গ্রন্থ অনুবাদ করা হয়। এছাড়াও, বিশ্বের খ্যাতনামা মিউজিয়াম, লাইব্রেরিসমূহে রক্ষিত আছে তার মূল গ্রন্থের অর্ধশতাধিক পাণ্ডুলিপি। তিনি আনুমানিক ১০৩৯ থেকে ১০৪৪ সালের মধ্যে মারা যান।


4/ জাবির ইবনে হাইয়ান।।
পুরো নাম আবু মুসা জাবির ইবনে হাইয়ান। জন্ম:৭২১ খৃষ্টাব্দ। তাকে বলা হয় রসায়নের জনক। রসায়নে অগাধ জ্ঞানের পাশাপাশি তিনি ছিলেন একজন বহুশাস্ত্রবিদ। পাশ্চাত্য বিশ্বে তিনি জেবার নামে পরিচিত, যা তার নামের লাতিন সংস্করণ। তিনি ছিলেন একাধারে রসায়নবিদ, জ্যোতির্বিজ্ঞানী, জ্যোতিষী, প্রকৌশলী, দার্শনিক, পদার্থবিজ্ঞানী, ঔষধ বিশারদ এবং চিকিৎসক। তার প্রকৃত জাতীয়তা সঠিকভাবে জানা যায়নি। অনেকে বলেন তিনি আরব, অনেকে আবার বলেন তিনি পারস্যের নাগরিক ছিলেন। তাকে "রসায়নের জনক" হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। জাবির ইবনে হাইয়ান আলকেমি বা রসায়নে পরীক্ষণমূলক পদ্ধতির গোড়াপত্তন করেছিলেন।

জাবির ইবনে হাইয়ানকে প্রায় ৩,০০০ থেরাপি এবং নিবন্ধসমূহের কৃতিত্ব দেওয়া হয়েছে। তার রচনার পরিধি ছিল সুবিশাল,,: সৃষ্টিতত্ব, সঙ্গীত, ঔষধ, জাদু, জীববিজ্ঞান, রাসায়নিক প্রযুক্তি, জ্যামিতি, ব্যাকরণ, দর্শনশাস্ত্র, যুক্তিবিদ্যা, জীবিত প্রাণীর কৃত্রিম প্রজন্ম, জ্যোতির্বিদ্যার পূর্বাভাস ইত্যাদি শাখায়, তিনি তার অগাধ জ্ঞানের পরিচয় দিয়ে গেছেন। যা তাকে শ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানীর তকমা পেতে সাহায্য করেছে। জীবদ্দশায় তিনি শতাধিক গ্রন্থ প্রনয়ণ করে গেছেন। অবশেষে তিনি ৮১৫ খৃষ্টাব্দে দুনিয়ার মায়া ত্যাগ করে মৃত্যুবরণ করেন।


5/ আল বাত্তানী
পুরো নাম মুহাম্মদ ইবনে জাবির ইবনে সিনান আল রাক্কি আল হারানী আস সাবী আল-বাত্তানী। জন্ম ৮৫৮ খৃষ্টাব্দে। এযাবতকাল পৃথিবীতে যতজন জ্যোতির্বিজ্ঞানী এসেছেন,, তাদের মধ্যে অন্যতম শ্রেষ্ঠ একজন জ্যোতির্বিজ্ঞানী ছিলেন আল বাত্তানী। জ্যোতির্বিদ্যায় আল বাত্তানীর সর্বাধিক আশ্চর্যজনক আবিষ্কার হলো সৌরবর্ষ নির্ণয়। আল বাত্তানীই প্রথম নির্ভুল পরিমাপ করে দেখিয়েছিলেন যে, এক সৌর বর্ষ সমান ৩৬৫ দিন ৫ ঘণ্টা ৪৬ মিনিট ২৪ সেকেন্ড। যার সাথে আধুনিক প্রযুক্তির সাহায্যে করা পরিমাপের পার্থক্য মাত্র ২ মিনিট ২২ সেকেন্ড কম। ভাবা যায়,, কোনো আধুনিক প্রযুক্তির ব্যাবহার ছাড়ায় তিনি কতটা নির্ভুলভাবে এই পরিমাপটি করেছিলেন..!! শুধু জ্যোতির্বিদই নয়,, তিনি একজন শ্রেষ্ঠ গনিতবিদও ছিলেন। আপনারা যারা, নবম দশম শ্রেণিতে পড়েন, তাদের অবশ্যই ত্রিকোনমিতির সাথে পরিচয় আছে। আর এই ত্রিকোনমিতির অনুপাত প্রকাশ আল-বাত্তানীর অন্যতম প্রধান কীর্তি। গণিতশাস্ত্রের ইতিহাসে ক্রিকোণমিতিকে আল বাত্তানিই সম্পূর্ণ স্বাধীন, স্বতন্ত্র ও পূর্ণাঙ্গভাবে প্রথম তুলে ধরেন। ত্রিকোণমিতির Sine, Cosine, Tangent, Cotangent ইত্যাদি সাংকেতিক নিয়মের তাৎপর্যপূর্ণ ব্যবহার তিনিই প্রথম করেন। এসব সংকেতের মধ্যে বিভিন্ন সম্পর্ক তিনি আবিষ্কার করেন। যেমন,, কোনাে কোণের সাইন জানা থাকলে তার ট্যানজেন্ট বের করা এবং ট্যানজেন্ট জানা থাকলে তার সাইন বের করা। এছাড়া, তার রচিত কিতাবুল আয-জিজ থেকে কোপারনিকাস সহ অনেক মধ্যযুগীয় জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা উদ্ধৃতি প্রদান করেন। অবশেষে ৯২৯ সালে মারা যান এই কালজয়ী বিজ্ঞানী।

এই ৫ জন বিজ্ঞানী ছাড়াও অসংখ্য মুসলিম বিজ্ঞানী আছেন,, যাদের আবিষ্কার বা নির্দেশিত পথ ব্যাবহার করে আধুনিক বিজ্ঞান দাড়িয়ে আছে। তাদের মধ্যে অন্যতম হলো,, আল রাযি, আল বিরূনী, ওমর খৈয়াম এবং ভারতের মিসাইলম্যান খ্যাত পদার্থ ও বিমান বিজ্ঞানী ভারতের সাবেক প্রেসিডেন্ট এ.পি.জে আব্দুল কালাম।

#সকল_তথ্য_উইকিপিডিয়া_এবং_বিভিন্ন_ওয়েবসাইট_থেকে_নেয়া

পঠিত : ১০৬৩ বার

মন্তব্য: ০