Alapon

প্রচলিত এই মীলাদ অনুষ্ঠান নিয়ে হাজার বছরের ওলামায়ে কেরামের অবস্থান কী?




এক ধরনের প্রচণ্ড সালাফি বিদ্বেষ থেকে অনেকে এই যে মীলাদুন্ন নবী, জশনে জুলুসের উৎসবমুখর মাহফিল ইত্যাদি বিষয়কে সেক্যুলারদের শাহবাগী বয়ানের কপি করে হাজার বছরের বাঙালি সংস্কৃতির নামে একটা বয়ান তৈরি করতেছে গত দুই বছর থেকে।

এখন তাদের এহেন হাগার বশরের সংস্কৃতি নিয়ে হাজার বছরের উম্মাহর শ্রেষ্ঠ কিংবদন্তী ওলামায়ে কেরাম কী বলেছেন, কী মতামত প্রদান করেছেন, আসুন একট দেখে নিই :


প্রচলিত এই মীলাদ অনুষ্ঠান, যা সালফে সালিহীনের যুগে ছিল না। যদি এ কাজে কোন ফযিলত ও বরকত থাকত , তবে পূর্বসূরীরা আমাদের চাইতে বেশী হকদার ছিলেন ,কারণ তারা নবী প্রেমের ক্ষেত্রে আমাদের চাইতে অনেক অগ্রগামী এবং ভাল কাজে অধিক আগ্রহী ছিলেন। (ইকতিজা উসসিরাতিল মুস্তাকিমঃ-২৬৫)

~ শাইখ আল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ.


“প্রচলিত মীলাদ না কুরআন সুন্নাহর কোথাও আছে, না পূর্ববর্তী উম্মতের আদর্শ কোন ব্যক্তি থেকে প্রমাণিত। বরং তা সুস্পষ্ট বিদ‘আত, যার আবিষ্কারক হলো একদল পেটপূজারী।” (আল-হাবী লিল ফাতওয়া: ১/২২২-২২৩)


~ইমাম জালালুদ্দিন সুয়ূতী রহ.


“এজাতীয় মীলাদ সর্বোত্তম তিন যুগের সালফে সালিহীনের কারো থেকে সাব্যস্ত নেই। বরং এর পরবর্তী যুগে সূচনা হয়েছে।” (সুবুলুল হুদা ওয়ার রাশাদ: ১/৩৬২)

~ ইমাম হাফেয সাখাবী রহ.


মীলাদ অনুষ্ঠান মূলত বিদ‘আত । শরীয়তে এর কোনো ভিত্তি নেই। তিন পবিত্র যুগ বা সালফে সালিহীনের আমলে এর অস্তিত্ব ছিল না। (হিওয়ার মাআল মালিকী : ১৭৭)


~ইমাম ইবনে হাজার আসক্বালানী রহ.



“চার মাযহাবের উলামায়ে কিরাম এজাতীয় প্রচলিত মীলাদ নিন্দনীয় হওয়ার ক্ষেত্রে ঐক্যমত পোষণ করেন।” (আল ক্বওলুল মু’তামাদ, পৃষ্ঠা: ১৬২)


~ ইমাম আহমাদ ইবনে মুহাম্মাদ মিসরী মালেকী রহ.




★ “মীলাদ মাহফিলের অনুষ্ঠান সর্বাবস্থায় নাজায়িয। মনদুব কাজের জন্য ডাকাডাকি করা শরী‘আতে নিষিদ্ধ”।

★ “বর্তমান যুগের মাহফিলগুলো যথা মীলাদ, ওরশ, তিন দিনা, চল্লিশা, সবই বর্জন করা দরকার। কেননা, এগুলোর অধিকাংশ গুনাহ ও বিদ‘আত থেকে মুক্ত নয়”। (ফাতওয়া রশীদিয়া : ১৩১)

~ আল্লামা রশীদ আহমদ গংগুহী রহ.


“যুক্তি ও শরী‘আত উভয় দিক দিয়ে প্রমাণিত হল যে, এই নবোদ্ভাবিত ঈদে মীলাদুন্নবী নাজায়িয, বিদ‘আত এবং পরিত্যাজ্য”। (আশরাফুল জওয়াব : ১৩৮)


~হাকীমুল উম্মত শাহ আশরাফ আলী থানবী রহ.


এটা ( মিলাদ পালন ) যদি রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওসাল্লামকে ভালোবাসার কারণে হয়, তাহলে সাহাবায়ে কেরাম রাদ্বিয়াল্লাহুম এটা করেননি কেন? আমরা কি সাহাবিদের চাইতে রাসুলুল্লাহকে বেশি ভালোবাসতে পারবো ? এটা রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওসাল্লামের সময় ছিলো না। সাহাবিদের সময় ছিলো না। তাবেয়ীদের সময় ছিলো না। তাবে-তাবেয়ীদের যুগে ছিলো না । এটা রাসুলুল্লাহর ( স.) ইন্তেকালে ছয়শত বছর পরে আবিস্কার হয়েছে। সেজন্যে এমন একটা সুস্পষ্ট বিদ'আত মুসলমানদের পালন করা উচিৎ নয়।


~ আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী হাফি.


এই হলো কথিত হাগার বশরের সংস্কৃতির বিষয়ে পূর্ববর্তী ওলামায়ে কেরাম থেকে শুরু করে হাল আমলের অধিকাংশ হক্কানী মুজতাহিদ ওলামাদের অভিমত। আর এসব অভিমত ও বাংলাদেশের ইসলামী আন্দোলনের মধ্যমপন্থাকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে এক কঠিন সালাফি বিদ্বেষে আক্রান্ত একটা গোষ্ঠী— যারা আগে নিজেরাই এসব বিষয়ে বিদাত হবার ব্যাপারে প্রচার-প্রচারণা করতো— এইসব হিমারুন টাইপের বয়ান দাঁড় করানোর চেষ্টা করছে। যা নিতান্তই দুঃখজনক এবং অগ্রহণযোগ্য ।


~রেদওয়ান রাওয়াহা
০৯-১০-২২

পঠিত : ৯২৫ বার

মন্তব্য: ০