Alapon

জাতীয়তাবাদ : একটি ব্যর্থ আন্দোলন !




জাতীয়তাবাদ যাদের সৃষ্টি। যাদের গর্ভ থেকে জাতীয়তাবাদের জন্ম তাদের দিকে লক্ষ্য করলে কিছু বিষয় পরিস্কার হয় -

১.তাদের ভৌগোলিক অবস্থান একই দিকে।

২.সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তাদের ভৌগলিক আকার আমাদের থেকে বৃহৎ ।

২ নাম্বার কারণটাকেই যদি সামনে নিয়ে আসি তাহলে দেখতে পাই যে- অঞ্চলের আকার এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ। উদাহরণ হিসেবে যদি ইউরোপকে দেখি তাহলে দেখতে পাই যে, ইউরোপের ৪৬টি দেশের মধ্যে ৩১ টি দেশ উইরোপীয় ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত। সবচেয়ে বড় কথা হলো ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে অভিন্ন মুদ্রা ব্যবস্থা বিদ্যমান। এক দেশ থেকে অন্য দেশে যেতে কোন পাসপোর্ট লাগেনা। কী দারুন না বিষয়টা!

ভাগ বাটোয়ারা করে দিয়ে নিজেরা সিংহভাগ দখল করে নেওয়ার মতো।
বিষয়টা ভাবুন তো- বাংলাদেশে কি সব কিছু পাওয়া সম্ভব? রপ্তানির থেকে আমদানির পরিমাণ অনেক বেশি। অথচ আমরা যদি আমদানি কমাতে পারতাম তাহলে আমাদের অর্থনৈতিক অবস্থা অনেক ভালো থাকতো। কারণ ১,৪৭,৫৭০ বর্গকিলোমিটারে কতটুকু জিনিস উৎপাদন সম্ভব!!

কিন্তু পুরো ইউরোপ জুড়ে ৪৭ টি দেশের মধ্যে অভিন্ন বানিজ্য চুক্তি থাকলে কেন তাদের অন্য অঞ্চলের দিকে তাকিয়ে থাকতে হবে? এত বিশাল ভৌগোলিক সীমারেখা থাকলে একদিকে যেমন স্থানের অভাব হয়না। অন্যদিকে উৎপাদন করার মতো পর্যাপ্ত জায়গা পাওয়া যায়।

মোটকথা যারা সম্রাজ্যবাদীদের চোখে দেখতে না পান তারা ইউরোপকে দেখতে পারেন।একদিকে নিজেরা জাতীয়তাবাদকে উস্কে দেয়, অন্যদিকে নিজেরাই সম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করে বসে আছে। শুধু কী তাই! বৃটেনের রানী মারা গেলে আমরাও রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করি তিন দিনের। কী লজ্জা ! যাদের হটাতে তিতুমীর, শরীয়ত উল্লাহরা জীবন দিলো তাদের জন্যই আমাদের কত মায়া-আহা!!

আমাদের দেশের অধিকাংশ কোম্পানিগুলোর মালিক এখনো পাশ্চাত্যের। যদিও চোখে দেখতে পাবেন না।শু ধু কষ্ট করে অনুভব করে যাবেন। কিচ্ছু বলতে পারবেন না।

সম্রাজ্যবাদীরা আসলে কী চায়?

মোটাদাগে বলতে গেলে পৃথিবীতে অন্যায়-অনাচারের মূল হোতা সম্রাজ্যবাদীরা।সম্রাজ্যবাদীরা সব সময় শোষণের মাধ্যমে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করতে চায় । ইউরোপের দিকে তাকান, ইউরোপীয় রেনেসাঁর মাধ্যমে একটা অঞ্চলের আবির্ভাব ঘটে। কোন দেশের কিংবা কোন জাতির আবির্ভাব ঘটেনি। নামে যদিও জাতিতে বিভক্ত কিন্তু কর্মে এরা সবাই এক।

এর পর শুরু হলো শিল্পবিপ্লব নামে টেকনোলজির আবির্ভাব। সেটাও কোন অঞ্চল থেকে দেখুন। এখনতো মনে হয় প্লাস্টিকের বদনা ছাড়া যাবতীয় যন্ত্রপাতি ইউরোপ থেকেই আমদানি করতে হয়। আমাদের দেশের বিজ্ঞাপনগুলো যদি খেয়াল করেন তাহলে দেখবেন- অমুক প্রডাক্টটি ইউরোপ-আমেরিকা থেকে আনা, সুতরাং পন্যগুলোর মান ভালো। হুমড়ি খেয়ে পড়ি সেগুলো কেনার জন্য।

মোট কথা ইউরোপ-আমেরিকা ছাড়া আমাদের যেন চলেই না! তারা যা করবে সেটা না করলে আমরা কীসের সভ্য হলাম!

সবচেয়ে অবাক লাগে আমাদের দেশের জাতীয়তাবাদের বয়ান দিতে থাকা মানুষজনের ইউরোপে একটা বাড়ী না থাকলে হয়না। জাতীয়তা যদি মনে প্রানে ধারণ করেন, তাহলে দেশের এ অবস্থা কেন? লক্ষ লক্ষ মানুষ বেকার হয়ে আছে কেন? অর্থনৈতিক অবস্থা এতো নাজেহাল কেন? হাজার হাজার নারী অর্থের অভাবে পতিতাবৃত্তি করছে কেন? সন্তান বিক্রি করার মতো ঘটনা ঘটছে কেন? সত্যি বলতে এগুলোর কোন ব্যাখ্যা নেই।

আমাদের কাছে এমন একটি দ্বীন আছে, এমন একটি ব্যবস্থা আছে সেখানে জাতীয়তাবাদের মতো ক্ষুদ্র পরিভাষার গ্রহনযোগ্যতা নই। পাশের দেশের মুসলিম ভাইকে সাহায্য না করতে পারলে আমাদের জন্য আরাম আয়েশ করা হারাম। অন্যায়ভাবে পৃথিবীর মানুষকে অত্যাচার করার কোন নজির যে দ্বীনের নেই। বাংলা অঞ্চলের হাজারো বৌদ্ধ, নিম্নশ্রেণীর হিন্দুরা মুক্তির খোঁজে যার পতাকার নিচে আশ্রয় নিয়েছিল সেই দ্বীনকে যারা অপছন্দ করে, তাহলে মনে রাখবেন এরা জাতীয়তাবাদের যত শ্লোগানই দিকনা কেন সময় সুযোগ পেলে এরা ইউরোপ, আমেরিকায় কেটে পড়বে।

আমরা বহন করি উম্মাহকে। রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেছেন মুসলিমরা পরস্পর ভাই ভাই। তারা প্রত্যেকে একটি দেহের ন্যায়। যার এক অংশ ব্যথা পেলে পুরো শরীর ব্যথায় কাতর হয়ে যায়। এমন একটি পরিভাষার স্বাদ কি জাতীয়তাবাদ দিয়ে মিটে???

পঠিত : ৩১১ বার

মন্তব্য: ০