Alapon

মুসতাশরিক তথা প্রাচ্যবিদদের সীরাত বিকৃতি ও এর খন্ডনে উলামায়ে কেরামের ভূমিকা



ইসলাম ও মুসলমানের বিরুদ্ধে বুদ্ধিবৃত্তিক আগ্রাসনের অন্যতম ক্ষেত্র হলো orientalism বা প্রাচ্যতত্ত্ব। আরবী তে যাকে الاستشراق বলে।

ইসতিশরাক বা প্রাচ্যতত্ত্ব হল, ইসলামী দুনিয়ার সভ্যতা, সংস্কৃতি, দ্বীন-ধর্ম, ভাষা - সাহিত্য, ইতিহাস - ঐতিহ্য, প্রথা ও আচার সম্বন্ধে পশ্চিমাদের জ্ঞান অর্জন ও গবেষণা। পাক ভারত উপমহাদেশ থেকে নিয়ে মরক্কের উপকূল এবং আটলান্টিক মহাসাগরের তীর পর্যন্ত ইসলামী দুনিয়ার ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্র বিষয় নিয়ে গবেষণা ও অনুসন্ধানের জন্য গড়ে উঠেছে প্রাচ্যবিদদের অজস্র একাডেমি। উৎসর্গ করেছে হাজারো প্রাচ্যবিদ তাদের মেধা, শ্রম ও সম্পদ।

নিছক জ্ঞান চর্চার প্ররোচনায় কোন কোন প্রাচ্যবিদ ইসলাম ও মুসলমান নিয়ে গবেষণায় রত হলেও অধিকাংশ প্রাচ্যবিদদের পিছনে উদ্দীপক হিসেবে কাজ করে ক্রুসেডীয়, রাজনৈতিক, ঔপনিবেশিক ও অর্থনৈতিক প্ররোচনা। এর মধ্যে ক্রুসেডীয় ইসলাম বিরোধিতার উম্মাদনাই সবচেয়ে বেশি উদ্দীপক হিসাবে কাজ করেছে। এ যাবৎ প্রাচ্যবিদদের যত গবেষণা অস্তিত্বে এসেছে ও তার ফলাফল হিসেবে উদ্ভূত যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে তার উপর অনুসন্ধানী একটি নজর দিলেই এ দাবির সততার প্রমাণ পাওয়া যায়।

মূলত ইসলাম ও মুসলমান নিয়ে তাদের গবেষণার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য থাকে, ইসলামের জ্ঞানগত ভিত্তিমূলে সংশয়সৃষ্টি করা। নিপুনতা ও দক্ষতার সাথে বিভিন্ন বিকৃতি ও ছলচাতুরী কে কাজে লাগিয়ে ইসলাম ও মুসলমানের প্রতি সম্মান, শ্রদ্ধা ও আস্থার জায়গা কে কলঙ্কিত করা। মুসলমানের আকিদা বিশ্বাস এবং চিন্তা চেতনার উপরে সূক্ষ্ম ভাবে হামলা চালানো। ধীরে ধীরে সুকৌশলে ইসলামী জ্ঞান ভান্ডার এবং ইসলামী ব্যক্তিত্বের প্রতি সাধারণ মানুষের ভক্তি শ্রদ্ধা ও সুধারণা কে দুর্বল করে তোলা।

ইসলামের শতশত শাখা প্রশাখা গত বিষয়ে তারা গবেষণার নামে বিকৃতকরণের কাজ অবাধভাবে চালিয়ে গেছে। তার মধ্যে যে সকল বিষয়ে সবচেয়ে বেশি তাদের আগ্রাসনের শিকার হয়েছে তার মধ্যে সীরাতুন্নবী সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব সর্বশেষ রাসূল হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর পবিত্র যিন্দেগী অন্যতম।

একজন মুসলিমের ঈমান, আমল, চিন্তাচেতনা, মন-মানসিকতার বড় জায়গা জুড়ে থাকে সীরাতুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। প্রতিটি মুসলিম তার ভালোবাসা ও আস্থার সবটুকু উজার করে দেয় এই পবিত্র জীবনের উপর। নিজের ধন-সম্পদ, প্রভাব প্রতিপত্তি, সন্তান-সন্ততি, এমনকি নিজের জানটুকুও উৎসর্গ করতে প্রস্তুত থাকে এই সুমহান যিন্দেগীর জন্য।

প্রাচ্যবিদরা ভালো ভাবেই উপলব্ধি করেছে, সীরাতুন্নবীর উপর সামান্য কালেমা লেপন করতে পারলে এর থেকে শ্রদ্ধা সম্মান আবেগ ও মোহাব্বত কে সরিয়ে নিতে পারলে ঈমানের আলো নিস্প্রভ করার সকল পথ সুগম হয়ে যায়। তখন একজন মুসলিম ইসলামের সৌরভময় আলোকিত গন্ডি থেকে বের হয়ে ইরতেদাদের অন্ধকারাচ্ছন্ন দুর্গন্ধময় বন্দিশালায় চলে যেতে রাজি হয়ে যায়।

তাই তারা নিজেদের পূর্ণ মনোযোগ ও মেধা, সকল শ্রম ও প্রচেষ্টা, সর্বপ্রকার কৌশল ও পন্থা ব্যয় করেছে সীরাতুন্নবী কে মুসলিম ও অমুসলিম সকলের সামনে কলুষিত করার জন্য। এই মিশন বাস্তবায়নের জন্য খরচ করেছে কোটি কোটি টাকা। লেখা হয়েছে শত শত বই। সীরাত চর্চার নামে গড়ে তুলেছে সীরাত বিকৃতির বড় সড় এক কুতুবখানা। অবাধ ভাবে ব্যবহার করেছে সকল অনলাইন প্রযুক্তি।

নবী জীবনের প্রায় প্রতিটি শাখাকেই তারা বিকৃত করে উপস্থাপন করেছে। তবে সীরাত বিষয়ে তাদের সকল গবেষণার কেন্দ্রবিন্দু থেকেছে রিসালাতের ইনকার ও ওহীর সম্পৃক্ততার অস্বীকার। তাদের সকল বিকৃতির সারাংশ হল, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রেরিত নন। তিনি যেই কোরআন নিয়ে এসেছেন তা আল্লাহর পক্ষ থেকে অবতীর্ণ নয়। তিনি যেই দ্বীন ও শরীয়ত নিয়ে আগমন করেছেন, যেই আদেশ ও নিষেধ করেছেন তা আল্লাহর পক্ষ থেকে আরোপিত নয়। সব কিছুই তার নিজের বানানো। এসব কিছুই ছিল মানব চিন্তাপ্রসুত।

তাদের একদল নবীজির নামে সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন বিভিন্ন অপবাদ আরোপ করেছে। নবীজিকে ঘৃণিত ও ভীতিকর করে চিত্রায়ন করার জন্য নানা ধরনের কুৎসা রচনা করেছে। বিভিন্ন ঘটনা ও বক্তব্যের অপব্যাখ্যা করে ঘুমপাগল, পেটুক, নারীলোভী, সম্পদ হরণকারী, ক্ষমতা লিপ্সু, নির্দয়, রক্ত পিপাসু ইত্যাদি ভিত্তিহীন বিভিন্ন দোষে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নির্মল চরিত্র হনন করার চেষ্টা করেছে। তাদের আরেকটি দল প্রকাশ্য শত্রুতার শৈলী অবলম্বন না করে পরোক্ষ শৈলী অবলম্বন করেছে। তারা সাবলীল ভাষা, আধুনিক বিন্যাস, চিত্তাকর্ষক রীতি ও যাদুকরি উপস্থাপনায় নবীজিকে এভাবে চিত্রায়ন করেছে:

তিনি ছিলেন সৎ ও সাহসী ব্যক্তি। ন্যায়পরায়ন ও ক্ষমাশীল। কোমল হৃদয়ও উত্তম চরিত্রের অধিকারী। সুসাহিত্যিক ও বাগ্মী। যাদুকরি ভাষা ও হৃদয়গ্রাহী উপস্থাপনায় পারদর্শী।
একজন সফল চিন্তানায়ক। বিচক্ষণ নেতা ও প্রাজ্ঞ রাজনৈতিক ব্যক্তি। ধীমান ও বিদগ্ধ মনোবিজ্ঞানী। প্রখর অনুধাবন শক্তির অধিকারী। সহজেই মানুষের মন কাবু করার এক অসম যোগ্যতা ছিল তার। বংশীয় প্রভাব ও আরবের কেন্দ্র মক্কায় বসবাসের কারণে বিভিন্ন এলাকার লোকদের সাথে উঠাবসার সুযোগ হয়েছে। ইহুদি ও খ্রিস্টান পাদ্রীদের শিষ্যত্ব গ্রহণের সুযোগকেও হাতছাড়া করেন নি। ফলে পূর্বের ধর্মীয় শিক্ষা ও বর্তমান সামাজিক অভিজ্ঞতার ক্ষেত্রেও তিনি ছিলেন অনন্য। তার ছিল সৃষ্টিজীবের প্রতি ব্যাথাতুর মন। শিরক, অজ্ঞতা ও হানাহানি পূর্ণ অন্ধকার সমাজ দেখে তার হৃদয়ে রক্ত ক্ষরণ হত। তিনি একটি আলোকিত সমাজের স্বপ্ন দেখতেন। ফলে একটা সময় তিনি দীর্ঘদিনের জন্য একাকি হয়ে গেলেন এবং সমাজ ও পরিস্থিতি নিয়ে নিবিড় ভাবে পর্যবেক্ষণ করতে লাগলেন। নিজের সকল শিক্ষা ও অভিজ্ঞতা এক করে খুঁজতে লাগলেন একটা যথার্থ সমাধানের। এভাবেই তিনি তার জ্ঞান, অভিজ্ঞতা ও বগ্মীতার বলে এক অনন্য সমাধানের সন্ধান পেলেন। তিনি রচনা করলেন মহাগ্রন্থ আল কুরআন এবং ঘুড়িয়ে দিলেন ইতিহাসের মোড়।

তারা এভাবেই নবীজিকে উপস্থাপন করেছে। এর অর্থ হল, তিনি একজন মহান ব্যাক্তি তো ছিলেন অবশ্যই তবে আল্লাহর রাসূল ছিলেন না। দ্বিতীয় অর্থ হল, একজন ব্যাক্তি যতই মহান হোক তার ভুলচুক হতেই পারে। এজন্য নির্দ্বিধায় যাচাই তার সকল কথা মানা যাবে না।

দ্বিতীয় প্রকার প্রাচ্যবিদরা শুধু সীরাতের ক্ষেত্রেই নয় ইসলামী জ্ঞান, ইতিহাস, সংস্কৃতি ও সভ্যতার প্রায় সকল বিষয় উপস্থাপনের ক্ষেত্রে এই পরোক্ষ পন্থা অবলম্বন করেছে। গুণ বলতে বলতে হঠাৎ এমন একটা দোষ বলে দেয় যা পূর্বে উল্লেখিত সকল গুণ কে ধুয়ে মুছে নিঃশেষ করে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। প্রথম প্রকারের প্রাচ্যবিদদের তুলনায় দ্বিতীয় প্রকারের প্রাচ্যবিদরা অধিক ক্ষতিকারক। কারণ প্রথম প্রকার কে শুরু থেকেই বিরোধী পক্ষ মনে হতে থাকে। তাই তাদের ব্যাপারে শুরুতেই সতর্ক থাকা যায়। এর বিপরিতে দ্বিতীয়প্রকারের প্রাচ্যবিদরা কিছু গুনাগুণ স্বীকার করে নেওয়ার কারণে তাদের কে শুরুতে নীতিবান মনে হতে থাকে। তাদের প্রতি একটা সুধারণা কাজ করে। একটা পর্যায়ে কৌশলে যখন দোষটা বলে ফলে তখন অনেকের পক্ষে তার ব্যপারে সতর্ক হওয়া সম্ভব হয় না। ধারণা হতে থাকে উল্লেখিত গুণগুলোর মত এটাও হয়ত সত্য। ফলে তাদের দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।

উভয়প্রকার প্রাচ্যবিদ্যারা সীরাতকে এভাবে বিকৃত ভাবে উপস্থাপন করতে অনেক অবাস্তব ও মিথ্যার আশ্রয় নিয়েছে। তাদের দাবির বিপরীতে অনেক স্বতঃসিদ্ধ প্রমাণিত বিষয় থেকে চোখ সরিয়ে রেখেছে। অথবা তা অপমানিত করার জন্য যেন আদা জল খেয়ে মাঠে নেমেছে। কোনরকম ভাবে তাদের পক্ষে নেওয়া যায় এমন জাল ও মুনকার বর্ণনাকে প্রমাণসিদ্ধ হিসেবে পেশ করেছে। প্রমাণিত ঘটনা বা বক্তব্যের সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা রেখে তাদের দাবি প্রমাণের জন্য কল্পনা প্রসূত বিকৃত ব্যাখ্যা তৈরি করেছে।

ওহী আগমনের মুহূর্তগুলোকে ব্যাখ্যা দিয়েছে মৃগী রোগ বলে। অথবা বলেছে খুব বেশি চিন্তা ভাবনার কারণে নিজের কল্পনা কে তার কাছে আল্লাহর পক্ষ থেকে ওহী মনে হয়েছে। নবীজীর রিসালাতের প্রমাণ বহনকারী মু'জিযা ও অলৌকিক ঘটনাগুলোর জাগতিক ও বস্তুবাদী ব্যাখ্যা দাঁড় করিয়েছে। যেগুলোর ক্ষেত্রে ব্যাখ্যা সম্ভব হয় নি সেগুলোকে অস্বীকার করে বসেছে। কোরআনকে মানব রচিত প্রমাণের জন্য তার ব্যাকরণগত, শৈলীগত বা তথ্যগত বিভিন্ন ভুল বের করার অপচেষ্টা চালিয়েছে।

তাদের মধ্যে যারা কিছুটা সত্যান্বেষী ও নিজের বিবেকের কাছে দায়বদ্ধতার অনুভূতি রাখে তাদের পক্ষে নবীজীর রিসালাতের সুস্পষ্ট দলিলগুলো অস্বীকার করা সম্ভব হয়নি। নবুওয়াতের প্রমাণবহনকারী ইতিহাসের স্বতঃসিদ্ধ বিষয়গুলো উপেক্ষা করতে তাদের অন্তর বাধা দিয়েছে। ফলে তারা তাদের পূর্ববর্তীদের অপবাদ ও বিকৃতি গ্রহণ না করে বরং তার খন্ডন করেছে এবং নবীজীর নবুওয়াত ও কুরআনের ওহী হওয়া কে মেনে নিয়েছে। কিন্তু জাগতিক স্বার্থের কারণে ঈমানের কাছাকাছি এসেও তারা ঈমানের আলো থেকে বঞ্চিত থেকেছে। তাদের বক্তব্য হল, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহর রাসুল ছিলেন। তবে সমগ্র বিশ্বের জন্য নয়। শুধু আরবদের জন্য। ইসলামকে সমগ্র বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়ার চিন্তা সর্বপ্রথম উমর রাঃ থেকে শুরু হয়েছে। তারা কুরআনের আয়াত وما أرسلناك إلا كافة للناس بشيرا ونذيرا এবং নবীজি কর্তৃক আরব বিশ্বের বাহিরের বিভিন্ন রাজা বাদশাহাদের কাছে ইসলাম গ্রহণের দাওয়াত পাঠানো কে হয় অস্বীকার বা অপব্যাখ্যা করেছে অথবা এর থেকে চোখ বন্ধ করে রেখেছে।

হ্যাঁ, সীরাত চর্চাকারী প্রাচ্যবিদদের মধ্যে অল্প কয়েকজন এমনও আছেন যারা পার্থিব সুখ-শান্তি ও প্রভাব প্রতিপত্তির চিন্তা উপেক্ষা করে ইসলামের সুশীতল ছায়ায় আশ্রয় নিয়েছেন এবং হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে সমগ্র বিশ্ববাসীর জন্য রাসূল হিসেবে মেনে নিয়েছেন। যেমন Mohammad his life based on the earliest source বইয়ের লেখক মার্টিন লিংস। তিনি এই বইটি লেখার পর ইসলাম গ্রহণ করেন এবং আবু বকর সিরাজউদ্দিন নাম ধারণ করেন।

এছাড়াও এ কাতারে আছেন ফ্রান্সের alphonse etienne dinet (১৯২৯), ইংলেন্ডের r.f. bodley (১৯৪৬) ফ্রান্সের Émile Dermenghem (১৯৭১) প্রমুখ সৌভাগ্যবান ব্যাক্তি। তবে যথাযথ পন্থায় দ্বীনী বিষয়ের শিক্ষা গ্রহণ না করার কারণে তাদের লেখায়ও থেকে গেছে কিছু ভুলভ্রান্তি।

আল্লাহ তাআলা স্বয়ং দ্বীন হেফাজতের দায়িত্ব নিয়েছেন। নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সীরাত কে দ্বীনের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে নির্ধারণ করেছেন। তাই সীরাত কে যতই বিকৃত করার চেষ্টা করা হোক সীরাত তার আপন অবস্থায় বহাল থাকবে। আল্লাহ তাআলা এর যথাযথ সংরক্ষণ ও সকল বিকৃতি থেকে প্রতিরক্ষার জন্য একদল আলেমকে নিয়োজিত করেছেন। তাদের কে দ্বীনের দরদ, হিম্মত, মেধা, যোগ্যতা ও প্রয়োজনীয় সকল উপকরণ দান করেছেন। তারা প্রতিযুগেই তাদের সুমহান দায়িত্ব যথাযথ পালন করেছেন।
তাই সীরাতুন্নবীর উপর প্রাচ্যবিদদের অনেক অপবাদ, বিকৃতি ও ছলচাতুরি নতুন হলেও এর খন্ডনের সকল উপকরণ পূর্ববর্তী হাদীস, তাফসীর, সীরাত ও ইতিহাসের কিতাব সমূহে বিদ্যমান আছে। সাথে সাথে আধুনিক অনেক সীরাত লেখকও নবীজীর বাস্তব জীবনী পেশ করার পাশাপাশি প্রাচ্যবিদদের সীরাত কেন্দ্রিক বিকৃতিগুলোর খন্ডনেও মনযোগ দিয়েছেন। ব্যাপক ভাবে প্রাচ্যবিদদের বিভিন্ন মুখি বিকৃতির খন্ডনে যারা লিখেছেন তাদেরও অনেকে তাদের কিতাবে সীরাত বিষয়ক অনেক বিকৃতির খন্ডন করেছেন। এছাড়াও অনেকে শুধু সীরাত কেন্দ্রিক বিকৃতিগুলোর খন্ডনে স্বতন্ত্র কিতাব রচনা করেছেন। এক্ষেত্রে আধুনিক সীরাত সমূহের মধ্যে অন্যতম হলো,

আল্লামা শিবলী নো'মানী ও সুলাইমান নদভী রহ. এর যৌথ সংকলন سيرة النبي صلى الله عليه وسلم (মাকতাবায়ে ইসলামিয়া লাহোর, সাত খন্ডন)। প্রাচ্যবিদদের সীরাত কেন্দ্রিক ভুলভ্রান্তি জানার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি কিতাব।
মুহাম্মদ সুলাইমান মানসুরপুরী রহ. এর رحمة للعالمين,
মুহাম্মদ হুসাইন হাইকালের حياة محمد صلى الله عليه وسلم,
আবুল হাসান নদবী রহ. এর السيرة النبوية,
মুস্তফা সিবায়ী রহ. এর السيرة النبوية دروس وعبر,
মুহাম্মদ আবু শাহবা রহ. এর السيرة النبوية في ضوء القرآن والسنة,
আবু যহরা রহ. এর خاتم النبيين,
সাঈদ রমযান বূতী রহ. এর فقه السيرة,
আকরাম জিয়া উমারীর السيرة النبوية الصحيحة,
মাহদী রিযকুল্লাহ আহমাদের السيرة النبوية في ضوء المصادر الأصلية,
আলী মুহাম্মদ সল্লাবীর السيرة النبوية: عرض وقائع وتحليل أحداث,
আহমাদ আহমাদ গালুশের السيرة النبوية والدعوة في العهد المكي والمدني,
মুহাম্মদ বিন মুস্তফা দাবীসীর السيرة النبوية بين الآثار الصحيحة والآيات القرآنية ,
সলেহ আহমাদ শামীর من معين السيرة,
মুশতাক বশীর গাযযালীর السيره النبوية في ضوء نقد المرويات الإسلامية ورد الشبهات الاستشراقية
ও হিকমাত বিন বাশীরের محمد نبي الرحمة والحكمة।

এই কিতাবগুলোর কয়েকটা বাংলায় অনূদিত হয়েছে। এছাড়াও বাংলা ভাষায় রচিত এ জাতীয় বেশ কয়েকটি সীরাত রয়েছে। যেমন শেখ জমিরুদ্দীন এর “শ্রেষ্ঠ নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও পাদ্রীর ধোঁকা বঞ্জন” এবং মাওলানা মুহাম্মদ তফাজ্জল হোছাইন রহ. এর “হযরত মুহাম্মদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম: সমকালীন পরিবেশ ও জীবন”।

পঠিত : ৮৯৪ বার

মন্তব্য: ০