Alapon

আনন্দময় হোক আমাদের ইবাদাত ও দুআ‌ কবুলের মুহুর্তটুকু...



অনেক দিন বাদে রাত্রিবেলায় বৃষ্টির দেখা পেলাম আর তাও একেবারে এশার নামাজের জন্য বের হবো হবো করছি তখন।আম্মা চিল্লায়ে বলতেছেন,"ছাতা নিয়ে যা,নাহলে ভিজে রাবি।"

কিন্তু, আমার সেদিকে হুশ নেই।ছাতা ছাড়াই যেহেতু বের হয়েছি বাকি পথটাও ছাতা ছাড়াই পাড়ি দিবো। মসজিদ বেশি দূরেও না,বাসা থেকে মাত্র মিনিট দশেকের মতো হাঁটা লাগে।
হেঁটে চলেছি গুড়ো গোড়ো বৃষ্টিতে মাখামাখি হয়ে। মসজিদের কাছাকাছি যেতেই মাটির ঘ্রাণ নাকে এসে লাগল। মসজিদটা কলোনী এলাকায় হ‌ওয়ায় গাছপালা ছিলো কিছু আর তাতেই মন মাতানো এই ঘ্রানখানা নাকে ছুঁয়ে যাচ্ছে। বাচ্চাদের একটা দল কি যে আনন্দ নিয়ে ভিজছে,একেবারে বৃষ্টি আর কাঁদায় মিশে একাকার,কেউ কেউ তো কেবল প্যান্টটাই পড়েছে। মনে চাচ্ছিলো তাদের সাথে যোগ দিই কিন্তু সেই বয়স তো আর নেই আবার অপরদিকে মসজিদে জামাআত ধরতে হবে।

তবে এই বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে আর বাচ্চাদের আনন্দ দেখতে দেখতে মনে পড়ছিলো আমাদের প্রিয় নবীজি সা এর ঘটনা।

একবার নবীজী ﷺ কিছু সাহাবীসহ হেঁটে চলছিলেন,সাথে ছিলো নবীজীর খাদেম,প্রিয় সাহাবী আনাস (রা)।তো এই হেঁটে চলতে চলতেই বৃষ্টির আনাগোনা শুরু হয়ে গেলো।
নবীজী ﷺ তখন তাঁর জামা এমনভাবে সরিয়ে নিলেন রাতে বৃষ্টির পানি তাকে স্পর্শ করতে পারে।

সাহাবায়ে কেরামগণ তো বেশ অবাক। বৃষ্টি আসছে,যেখানে কিনা তারা কোথাও আশ্রয় নিয়ে গা বাঁচাবেন যাতে বৃষ্টিতে না ভিজতে হয় আর সেখানে নবীজী ﷺ এরূপ করলেন!
তাঁরা নবীজী ﷺ কে তাদের বিস্ময়ের কারণ জানিয়ে বললেন,"আপনি কেন এমন করলেন?"
নবীজী ﷺ অত্যন্ত চমৎকার একটা উত্তর দিলেন।তিনি ﷺবললেন,
"কারণ তা তার রবের কাছ থেকে মাত্রই এসেছে।"[১]
সুবহানাল্লাহ!

রবের তরফ থেকে আগত সামান্য বৃষ্টির ফোঁটাকেও নবীজী ﷺ ধারণ করতে চেয়েছেন।রবের অনুগ্রহ ও ভালোবাসায় সিক্ত হতে চেয়েছেন। তাঁর ﷺ দেখাদেখি অন্যান্য সাহাবায়ে কেরামগণ বৃষ্টিতে ভিজলেন।

আর এতেই বৃষ্টিতে ভিজার মতো আনন্দদায়ক একটা বিষয় সুন্নাত হয়ে গেল আমাদের জন্য।কতো সহজ ও আনন্দময় একটা সুন্নাত। ইসলামের সৌন্দর্য এটি, মুসলিমদের জন্য আনন্দ আছে এই সুন্নাতে।

কিন্তু,দেখা যায় অনেকেই বৃষ্টিকে কিংবা বৃষ্টির গুণে সিক্ত বর্ষাকালকে ব্যাপক অপছন্দ করেন, বৃষ্টিতে সামান্য ভিজলে বিরক্ত হন।এরূপ করবেন না,বৃষ্টিও আল্লাহর একটা নিয়ামত, অনেক বড় একটা নিয়ামত।

এই নিয়ামতের একটা ব্যাপার উল্লেখ করলেই বুঝতে পারবেন, আমাদের দক্ষিণ এশিয়ায় বিশেষত বাংলাদেশ ও ভারতে শুধুমাত্র বর্ষাকালীন সময়ের পানি কনটেইনারে জমা রেখে সারাবছর চলা সম্ভব। বাংলাদেশের সারফেস ওয়াটার তথা মাটির উপরের উৎসের পানির মুখ্য উৎস এই বৃষ্টিপাত, যার কারণে আগস্টে নদীতে পানিপ্রবাহ থাকে ১ লক্ষ ৪০ হাজার কিউবিক মিটার প্রতি সেকেন্ড আর বৃষ্টি কমে গেলে ফেব্রুয়ারি মাসে থাকে মাত্র ৭ হাজার কিউবিক মিটার প্রতি সেকেন্ড।[২]

তাই কয়েক ফোঁটা বৃষ্টির পানিতে রাগ করবেন না, সুন্নাত মনে করে ভিজবেন, ইনশাআল্লাহ সোয়াব জমা হয়ে যাবে আপনার একাউন্টে আর সাথে পাবেন আনন্দ, মনে আসবে সজীবতা আর কর্মব্যাস্ত নগরীতে একটুখানি স্বস্তি আপনার আমার রবের অনুগ্রহে।

আর এই অনুগ্রহে কল্যাণ কামনা করে পড়ে নিতে পারেন নবীজী ﷺ এর শেখানো ছোট্ট একটি দুআ,
اللّٰهُمَّ صَيِّباً نَافِعاً
হে আল্লাহ! মুষলধারায় উপকারী বৃষ্টি বর্ষণ করুন।
অর্থাৎ,হে আল্লাহ, এমন বৃষ্টি আমাদের ওপর বর্ষণ করুন যাতে ঢল, ধস বা আজাবের মতো কোনো অমঙ্গল নিহিত নেই।[৩]

ও হ্যা দুআ করতে ভুলবেন না কিন্তু,আমি মাঝেমধ্যে ভুলে যাই,এই আজকেই মসজিদে ঢুকে নামাজ ধরায় দুআ করা হয়নি। নবীজী ﷺ দুআ সম্পর্কে বলেছেন,
"দুই সময়ের দোয়া ফেরত দেয়া হয় না কিংবা খুব কমই ফেরত দেয়া হয়- আজানের সময় দোয়া এবং রণাঙ্গণে শত্রুর মুখোমুখি হওয়াকালের দোয়া। অন্য বর্ণনা মতে, বৃষ্টির সময়ের দোয়া।"[৪]

তাই এটা কিন্তু একটা বোনাস,মিস করবেন না। একদিকে আল্লাহর অনুগ্রহে বৃষ্টির আনন্দ অপরদিকে সুন্নাত পালনে আল্লাহর ইবাদত আর এক‌ই সাথে আল্লাহর থেকে কিছু চেয়ে নেবার সুযোগ। এরকম সুযোগ কিন্তু অন্যান্য সুন্নাত পালনে সচরাচর দেখা যায় না।
তাই যখন‌ই সুযোগ পাই লুফে নেই বৃষ্টিভেজা সুন্নাতটুকু, আনন্দময় হোক আমাদের ইবাদাত ও দুআ‌ কবুলের মুহুর্তটুকু।কে জানে আল্লাহর বিশেষ ভালোবাসা লাভ করলেন এই ছোট্ট একটু আমলে।

[১] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৮৯৮
[২] Water Resources,Banglapedia
[৩] সহীহ বুখারি, হাদীস নং ১০৩২
[৪] আবু দাউদ, হাদীস নং ২৫৪০

পঠিত : ৩২৮ বার

মন্তব্য: ০