Alapon

মাওলানা মওদূদীর রাষ্ট্র চিন্তা কী?



মাওলানা মওদূদী রহিমাহুল্লাহ'র ব্যক্তিগত রাষ্ট্র চিন্তা বলতে কিছুই ছিলো না। তাঁর রাষ্ট্র চিন্তা হচ্ছে এলাহি প্রদত্ত সিয়াসাত।

আল্লাহ কুরআনুল কারিমে বলছেন মানুষের আইন বানানোর কোনো অধিকার নেই। আল্লাহর আইন না মানলে ঈমান থাকে না। যে আল্লাহর আইনের পরিবর্তে মানুষের আইনের অধীন হয়, নিজেদের মন গড়া আইন প্রণয়ন করে, সে জালিম। ফাসিক ও কাফির। আল্লাহর কথা হচ্ছে মানুষ হয়ে মানুষ মানুষের দাসত্ব করবে না। মানুষ দাস শুধু এক আল্লাহর। মানুষ স্বয়ং রহমাতাল্লিল আলামিন মুহাম্মাদ সঃ এরও দাসত্ব করবে না। মানুষ আল্লাহর দাসত্বের শৃঙ্খল গলায় পরবে। এই বাণী, এই আহ্বানই মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিয়ে এসেছেন। মওদূদী রহিমাহুল্লাহ তার শক্তিশালী লেখনী দিয়ে সেটা উম্মতের সামনে তুলে ধরেছেন।

তিনি সংকীর্ণ জাতীয়তাবাদী আদর্শেও বিশ্বাস করতেন না। তিনি জাতীয়তাবাদকে উম্মাহর জন্য বিপজ্জনক ও আত্মপ্রবঞ্চনা মনে করতেন। এর বিপক্ষে মজবুত অবস্থান গ্রহণ করেছেন, কলম ধরেছেন। তিনি যা মনে করতেন, সেটাই প্রকাশ করেছেন। লেখেছেন। বলেছেন।

মাওলানা মওদূদী'র রাষ্ট্র চিন্তা ছিলো শাসিত যেভাবে দায়িত্বহীন প্রজা হবে না, তদ্রূপ শাসকও জবাবদিহিতা থেকে মুক্ত থাকবে না। এবং শাসকের খেয়াল খুশিমতোও রাষ্ট্র বা প্রশাসন চলবে না, চালাবে না তার অধিনস্থদেরকেও।

মাওলানা নিজ চিন্তাধারাকে একটা খুদ্র গণ্ডীর ভেতরে আবদ্ধ রাখার পক্ষে ছিলেন না। তিনি ইসলামের সার্বজনীনতা ও সামগ্রিকতাকে বিশ্বমণ্ডলে ছড়িয়ে দেওয়ার পক্ষে ছিলেন। সে উদ্দেশ্যে তিনি দেশে দেশে সফর করেছেন। লোক তৈরি করেছেন।

তিনি লা-দ্বীনি ব্যবস্থাকে প্রত্যাখ্যান করে দ্বীনের ওপর পরিবার সমাজ ও রাষ্ট্র থেকে শুরু করে বিশ্বব্যবস্থাকে গড়ে তুলতে বলেছেন। আর সে কারণেই পরিবারিক জীবন নিয়ে যেমন তাঁর সৃষ্টিকর্ম রয়েছে, তেমনিভাবে সমাজ ও বিশ্বদর্শন নিয়েও রয়েছে তাঁর সৃষ্টিকর্ম।
তিনি রাষ্ট্র ব্যবস্থাকে শুধু সো-কোল্ড শান্তি আর প্রগতির আধারও মনে করতেন না। তিনি ইসলামের সার্বজনীনতাকে প্রতিষ্ঠার জন্য রাষ্ট্র কর্তৃক জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহর কথাও বলতেন। আপনি মাওলানার কোনো বইয়ে "ইসলাম শান্তির ধর্ম" এই এই ধরনের সো-কোল্ড বয়ান পাবেন না। তিনি ইসলামকে শান্তি প্রতিষ্ঠার দ্বীন মনে করতেন। এই শান্তির পথে অন্তরায় যে বা যারা, অথবা যেই ব্যবস্থা, তিনি প্রয়োজনে সেই ব্যবস্থার বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রামের কথাও বলেছেন। যেমনটি ইসলামের নির্দেশনা।

মাওলানা মওদূদী রহিমাহুল্লাহ সেকুলারিজম নামে মানুষকে লা-দ্বীনি বা দ্বীনহীন বিধানের দাস হবার পথ রুখে দেওয়ার আহ্বান করেছেন। লিবারেলিজমের নামে মানুষকে নীতি-নৈতিকতাহীন, মূল্যবোধ ও আখলাকহীন করার চক্রান্তের বিরুদ্ধে অভ্যুত্থানের ডাক দিয়েছেন। মাওলানাকে সামগ্রিকভাবে পড়বেন যিনি, তিনি এইসব স্পষ্টভাবে বুঝতে শিখবেন।

মওদূদীর কথা ছিলো মানুষ বড়োই মর্যাদাবান সৃষ্টি। সে আল্লাহর খলিফা। সে কেবলই এক আল্লাহর দাস। তাই সে দাস হয়ে স্বাভাবিকভাবে অন্য আরেকজন দাসের দাসত্ব করতে পারেনা। সে দাসত্ব করবে সার্বভৌম ক্ষমতার একচ্ছত্র অধিপতি রাব্বুল আলামিনের। রাব্বুল আলামিনের দাসত্বই মানব জাতিকে অন্য সকল দাসত্ব থেকে মুক্তি দেয়, দিয়েছে ও দেবে। তিনি মুসলমানদের রাষ্ট্রকেও এই একই দৃষ্টিভঙ্গি এবং এই কর্মপদ্ধতির আলোকে গড়ার আহ্বান করেছেন। তিনি বলেছেন, ইসলামি রাষ্ট্র হবে আল্লাহর সার্বভৌমত্ব ও মানুষের প্রতিনিধিত্বভিত্তিক রাষ্ট্র। মানুষ এইখানে কেবল একজন প্রতিনিধি। তাঁর মনিবের প্রতিনিধি।

মওদূদীর রাষ্ট্র চিন্তা হচ্ছে সেটা, যেখানে জাহিলিয়াতের পৃষ্ঠপোষকতা হবে না। শাসক পৃষ্ঠপোষকতা করবে কেবল ইসলামের। প্রয়োজনে শক্তি প্রয়োগ করে হলেও জাহিলিয়াতের বিনাশ করবে শাসক। যদি কোনো শাসক জাহিলিয়াতের পৃষ্ঠপোষকতা করে, তাহলে সেই শাসককে উচ্ছেদের চেষ্টা করতে হবে।

এখন, যার ভেতর ইসলামি রাষ্ট্র বা রাজনৈতিক ব্যবস্থার বিন্দুবিসর্গ জ্ঞানও নেই, সে কীভাবে মাওলানা রাষ্ট্র চিন্তা নিয়ে কলম ধরে, বুঝে আসে না।

সুতরাং এসব জাহিল বামাতি রামাতি মডারেট সেকুলার লিবারেলদের থেকে মাওলানার রাষ্ট্র চিন্তা আমাদের শিখতে হবে না। আমরা মওদূদীকে পড়ি। মওদূদীর চিন্তা বুঝি। মওদূদীকে বুঝতে, তাঁর রাষ্ট্র চিন্তা হৃদয়ঙ্গম করতে হলে সেকুলার লিবারেল কমিউনিজমের চশমা খুলতে হবে।


-রোহান আব্দুল্লাহ

পঠিত : ৩৭৯ বার

মন্তব্য: ০