Alapon

যে প্রেক্ষাপটে ড. কারযাভী ইখওয়ানের ইতিহাস রচনায় হাত দিয়েছিলেন...



একটা সময় আল জাজিরা অ্যারাবিক চ্যানেলে একটি বিখ্যাত অনুষ্ঠান হতো। অনুষ্ঠানটির নাম ছিল ‘আল-ইত্তিজাহুল ‍মুয়াকিস’—যার বাংলা নাম ‘বিরোধীপক্ষের মুখোমুখি।’
সেই অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হয় মিশরের সাবেক সেনাকর্মকর্তা বিগ্রেডিয়ার জেনারেল ফুয়াদ আল্লাম। বিগ্রেডিয়ার ফুয়াদ আল্লাম ইখওয়ানুল মুসলিমিনের উপর নির্যাতন চালানোর জন্য গোটা মিশর জুড়ে কুখ্যাত ছিলেন। মিশরের মানুষ তাকে চিনতো ‘মালাকুত তাযিব’ বা আজাবের ফিরিশতা নামে।

সাধারণ মানুষ আশা করেছিল, বিগ্রেডিয়ার ফুয়াদ আল্লাম হয়তো সেই অনুষ্ঠানে নিজের অপকর্মের কথা স্বীকার করবেন এবং অনুতপ্ত হবেন। কিন্তু তিনি সবাইকে অবাক করে দিয়ে ইখওয়ানের প্রতি যে নির্যাতন ও জুলুম চালানো হয়েছে, সে ব্যাপারে সাফাই গাইলেন। একইসাথে তিনি ইখওয়ান নিয়ে মিথ্যা ইতিহাস বর্ণনা করলেন এবং ইখওয়ানের ব্যাপারে নতুন কিছু মিথ্যা অভিযোগ আরোপ করলেন।

এই অনুষ্ঠানের পর ইখওয়ানের কর্মীরা আল্লামা ইউসুফ আল কারযাভীকে ইখওয়ানুল মুসলিমিনের ইতিহাস রচনার জন্য অনুরোধ করতে থাকে। তাঁরা আল্লামা কারযাভীকে বলে— ‘আপনি কেন এ সম্পর্কে কিছু লিখছেন না? এ বিষয়ে আপনি কলম হাতে নিলে ইখওয়ানুল মুসলিমিনের প্রতি সুবিচার হতো। পাঠকরা ইখওয়ান এবং সেসময়ের ইখওয়ানের প্রকৃত ইতিহাস সম্পর্কে জানতে পারত। একই সাথে মতলববাজদের অভিযোগের জবাবও হয়ে যেত এবং তাদের মুখে তালা পড়ত। আর এটা তো আপনার প্রতি ইখওয়ানের হক। ইখওয়ান তো আপনার কাছে এই দাবি করতেই পারে। তবে এ কথাও সত্য, আপনার সাথে এখন কেবল ইখওয়ানেরই নয়; বরং পুরো মুসলিম উম্মাহরই সম্বন্ধ।’

ইখওয়ানের কর্মীদের দাবির জবাবে আল্লামা ইউসুফ আল কারযাভী বলেন— ‘আমি বেড়ে উঠেছি ইখওয়ানুল মুসলিমিনের ছায়ায়। আমি তালিম-তারবিয়াত গ্রহণ করেছি ইখওয়ানুল মুসলিমিনের ইমাম হাসান আল বান্না রহ.-এর কাছে, তাঁর ছাত্রদের কাছে এবং ইখওয়ানের সদস্যদের কাছে। ইখওয়ানুল মুসলিমিনের মাঝে আমি নিজেকে সমর্পণ করে দিয়েছি, নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছি। তাদের পরিচর্যাতেই আমি পরিপক্ব হয়েছি এবং আজকের ‘আমি’ হয়ে উঠেছি। ইখওয়ানের ছায়াতলেই আমার ইলমে, আমার ফিকিরে সমৃদ্ধি এসেছে। আমার জ্ঞানের, আমার মননের ঋদ্ধি হয়েছে তো এই ইখওয়ানুল মুসলিমিনের সান্নিধ্যেই। এই অনুগ্রহকে, এই অবদানকে আমি কীভাবেই-বা অস্বীকার করি?’

এরপর আল্লামা ইউসুফ আল কারযাভী রচনা করেন ‘ইখওয়ানুল মুসলিমিনের ইতিহাস’ বইটি।

পঠিত : ২৯০ বার

মন্তব্য: ০