Alapon

প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থায় নারীদের করনীয় ও বর্জনীয়।




বাংলাদেশের প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থা মোটাদাগে ইসলাম সম্মত না। উপরন্তু আজকাল ব্যপকহারে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও পরিক্ষার হলে মুসলিম নারীরা হিজাব নিকাব সংক্রান্ত বিড়ম্বনায় পড়ছেন। ছোট বড় সব বিদ্যালয়গুলোতে ইসলাম চর্চা বাঁধাগ্রস্থ হচ্ছে। মুসলিম অধ্যুষিত রাষ্ট্র হিসেবে এটা অত্যন্ত লজ্জার। বাংলাদেশের আইনের সাথেও বিষয়টা সঙ্গতিপূর্ণ না। এ ধরনের পরিস্থিতিতে আমাদের বোনদের করণীয় সম্পর্কে কিছু ইসলামী নির্দেশনা।

১ - জেনারেল শিক্ষা অর্জনের ক্ষেত্রে মেয়েরা অবশ্যই অবশ্যই গার্লস স্কুল বা উইমেন্স কলেজ বেছে নিতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে। পর্দাহীন সহশিক্ষা ব্যবস্থার অধীনে কোনক্রমেই ভর্তি হবেনা। বাবা মায়েরা এ ব্যাপারে সচেতন হতে হবে।

গুরুত্বপূর্ণ কোন বিষয়ে উচ্চশিক্ষার প্রয়োজন হলে সেক্ষেত্রে মেয়েদের স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠানে অথবা যে প্রতিষ্ঠানে ছেলেদের পাশাপাশি মেয়েদের স্বতন্ত্র ব্যাবস্থা আছে সেখানে ভর্তি হবে। এমন কোন ব্যবস্থা না হলে এবং পরিবেশ পরিস্থিতির কারনে ভর্তি হওয়া খুব জরুরী হলে অবশ্যই এমন ইউনিভার্সিটি বেছে নেবে যেখানে সম্মিলিত শিক্ষা ব্যাবস্থা সত্ত্বেও তার পর্দা-নিকাব করার পূর্ণ অধিকার থাকবে। (মুসলমান ছাত্র ছাত্রীরা শুধু সেসব বিষয়েই ভর্তি হবে যেগুলো সত্যিকারার্থে মানবজীবনের জন্য জরুরী। যেমন, অর্থনীতি, চিকিৎসা, ইঞ্জিনিয়ারিং ইত্যাদি। এছাড়া অন্যান্য অপ্রয়োজনীয় বিষয় যেমন, অভিনয়, চারুকলা(মূর্তি, ভাস্কর্য, আঁকাআকি, নৃত্য) ইত্যাদি সেক্টরে পড়াশুনা বৈধ না।)

২- ইউনিভার্সিটির অফিসে/ক্লাসে পরিচয় নিশ্চিত করার জন্য চেহারা দেখাতে হলে সেটা ইউনিভার্সিটির নারী কর্মকর্তা/ম্যামদেরকে দেখাবে। কর্তৃপক্ষকে পরিচয় নিশ্চিত করার পরে আবার ঢেকে ফেলবে। সবাই এক্ষেত্রে একটু স্ট্রিক্ট হলেই অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানে বিষয়টা ম্যানেজ করা সম্ভব। অন্তত সুস্থ বিবেক সম্পন্ন নীতিবান প্রতিটি মানুষ এতে সমর্থন দিবে।

৩ - গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্টস তৈরীর জন্য মুখ খোলা ছবি দেয়া যাবে। তবে প্রয়োজন ছাড়া তা প্রদর্শন করা থেকে বিরত থাকা বাঞ্চনীয়।

৪ - হলে প্রবেশ ও পরিক্ষা দেয়ার জন্য নারী শিক্ষিকাকে চেহারা দেখিয়ে পরিচয় নিশ্চিত করবেন এবং পরিক্ষা চলাকালীন ওড়না/নিকাবের মাধ্যমে ঢেকে রাখবেন। পূর্ব অভিজ্ঞতা আছে এমন একাধিক ভাই বোনের বিবরণের আলোকে আমরা নিশ্চিত হয়েছি যে, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এটা সম্ভব।

৫ - ক্লাসে বা হলে কোন ধর্মবিদ্বেষী অধ্যাপক পর্দা লঙ্ঘনে বাধ্য করতে চাইলে আইনত তা দণ্ডনীয়। তিনি কোন অবস্থাতেই তার ভোগবাদী বিশ্বাস কোন ছাত্র ছাত্রীর উপরে চাপিয়ে দিতে পারেননা। নারী শিক্ষার্থী ও তাদের সহপাঠীদের জোর প্রতিবাদ এসব অন্যায়কে রুদ্ধ করতে পারে।

৬ - শিক্ষালয়গুলোর যেসব কর্মকর্তা ধর্মে বিশ্বাস করেননা তাদেরকে নাগরিক অধিকার/মানবাধিকার ইত্যাদির মাধ্যমে নিবৃত্ত করা সম্ভব।

৭ - কোন প্রতিষ্ঠানে কোন অবস্থায় যদি অমুসলিম চিন্তাধারা লালনকারী কর্তৃপক্ষ/ সিনিয়ররা আপনাদেরকে ধর্ম পালনে বাঁধা দেয়ার ব্যাপারে বদ্ধপরিকর হয় এবং সর্বোচ্চ চেষ্টা করেও সেখানে নিজের আদর্শ অক্ষুন্ন রাখা সম্ভব না হয় তাহলে সেখান থেকে চলে আসা আবশ্যক। উক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়ার চেয়ে নিজের ঈমান ও ধর্মীয় মূল্যবোধ রক্ষা করা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। চাপের মুখে নিজের আদর্শ থেকে পিছিয়ে আসা ও অপশক্তির দাবীতে মাথা নত করাটা অধিকাংশ ক্ষেত্রে মেরুদণ্ডহীনতার প্রমান। মু'মিন কখনো মেরুদণ্ডহীন হতে পারেনা। আমাদের বোনদের আদর্শিক দৃড়তাই পারে নারীদের স্বতন্ত্র ও স্বয়ংসম্পূর্ণ শিক্ষাব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার বীজ বপন করতে ও স্বপ্ন সফল করতে।

৮ - যদি পর্দার জন্য একান্তই পরিক্ষা বা ভর্তি বাতিল করা হয় তাহলে তা আপনার জন্য পরাজয় না বরং আদর্শিক বিজয়। তাছাড়া এমন সংকীর্ণ ও উগ্র শিক্ষক বা প্রতিষ্ঠানের কাছে সত্যিকারের শিক্ষা পাওয়াও অসম্ভব। তাই হারানোর কিছু নেই। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন অবশ্যই এর উত্তম প্রতিদান দিবেন।

৯ - ইসলামের বিধান বজায় রেখে নারীশিক্ষার চর্চা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমরা কখনোই নারীদের প্রয়োজনীয় উচ্চশিক্ষা থেকে নিবৃত্ত করতে চাইনা আমরা চাই উচ্চশিক্ষার ইসলাম সম্মত পরিবেশ নিশ্চিত করতে। তবে যতক্ষণ সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত না হয় ততক্ষণ এই উচ্চশিক্ষা আবশ্যক না।

উপরে উল্লিখিত সকল আলোচনা রুখসতের অন্তর্ভুক্ত। নতুবা আযীমত বা তাক্বওয়ার দাবী হচ্ছে অনৈসলামিক সিস্টেমের সাথে সংযুক্তই না হওয়া। আমরা বিশ্বাস করি জাগতিক শিক্ষার চেয়ে ইসলামের মূল্য অনেকবেশি। আমাদের জীবনের সবকিছুর চেয়ে আল্লাহর সন্তষ্টি অনেকগুন বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

১০ - বাবা মা অথবা গুরুজনরা যদি কখনো সরাসরি অনৈসলামিক কোন পদক্ষেপ নিতে বাধ্য করে তাহলে ভদ্রভাবে বিনয়ের সাথে তা এড়িয়ে যেতে হবে। ইসলাম যেমনিভাবে কোন অবস্থাতেই গুরুজনের অসম্মানকে সমর্থন করেনা তেমনিভাবে কোন অবস্থাতেই কারো ইসলাম বিরোধী নির্দেশ মেনে নেয়াকে অনুমোদন করেনা।

রাসূলুল্লাহ সাঃ বলেছেন, স্রষ্টার অবাধ্য হয়ে সৃষ্টির আনুগত্য করা যাবেনা।
(সৃষ্টির) আনুগত্য শুধুমাত্র (শরীয়তের দৃষ্টিতে) বৈধ ও গ্রহনযোগ্য বিষয়ে করা যাবে।
১১ - যদি কোন নারী পরিবারের চাপে অনৈসলামিক পরিবেশে পড়াশোনা করতে একান্তই বাধ্য হন এবং আর্থসামাজিক সমস্যা সহ অন্যান্য কারনে পরিবারের বিপরীতে সেখান থেকে সরে অসা তার জন্য আক্ষরিক অর্থেই অসম্ভব হয়ে পড়ে, সর্বোচ্চ চেষ্টা করেও তিনি ব্যর্থ হন তাহলে তিনি মা'যুর। অক্ষম। আমরা আশা করি আল্লাহ তায়ালা তাকে ক্ষমা করবেন।
أن النبي صلى الله عليه وسلم قال: «لا طاعة لمخلوق في معصية الخالق»
صحيح البخاري المغازي (4340) ، صحيح مسلم الإمارة (1840) ، سنن النسائي البيعة (4205) ، سنن أبو داود الجهاد (2625) ، مسند أحمد بن حنبل (1/131).
الله أعلم بالصواب.

পঠিত : ১৮৪ বার

মন্তব্য: ০