Alapon

সার্টিফেকট-ই সব কিছু নয়।

একটা স্কুলের ক্লাস নাইনে কেমিস্ট্রি আর ক্লাস এইটে বিজ্ঞান পড়াই। শখে। সকালে অফিসে যাওয়ার আগে।
ক্লাস টেস্ট নিতে হবে। প্রশ্ন করতে বসেছি। টেস্ট পেপার ঘাটছিলাম। সৃজনশীল প্রশ্নগুলো দেখে মোটামুটি কান্না আসছিল। 
একটা প্রশ্নে লেখা ছোট শিশু উৎসব দাদাবাড়িতে গিয়ে দেখল বিড়াল ছানা। সে খুশি হলো। আর দেখল একটা টিকটিকি একটা আস্ত তেলাপোকাকে গিলে খাচ্ছে। সে ভয় পেল। 
প্রশ্ন হচ্ছে এইসব প্রাণীর পর্বের বৈশিষ্ট্য লেখ টাইপের। 
টিকটিকি তেলাপোকা খায়, কিন্তু বড় একটা তেলাপোকাকে আস্ত গিলে খায় না। 
যাই হোক এই খাওয়াখাওয়ি বাদ দিলেও উদ্দীপক হিসেবে যে গল্পটা বলা আছে তার সাথে কর্ডাটা এবং আর্থ্রপোডার বৈশিষ্ট্যের সম্পর্ক কী বুঝলাম না। 
কেন যেন মনে হয় আমাদের সময়ের প্রশ্নগুলোই স্মার্ট ছিল। ফালতু গল্প পড়ে পরীক্ষার হলে সময় নষ্ট হতো না। 
এডএক্সেল এবং ক্যামব্রিজ কারিকুলামের ও লেভেলের বায়োলজির প্রশ্নগুলোর কথা মনে পড়ল। মনে পড়তেই মনটা খারাপ হয়ে গেল। বিলেতের সৃজনশীল বাঘ বাংলায় এসে বেড়াল হয়ে গেছে।

বইগুলোর অবস্থাও খারাপ। 
বায়োলজি বইতে এভলুশনের নাম করে আউটরাইট মিথ্যা কথা লেখা আছে। 
ইংলিশ বইতে প্রেম-ভালোবাসার জয়জয়কার।

ক্লাস এইটের বিজ্ঞান বইটার নামে তথ্য বিষ্ফোরণ আইনে মামলা করে দেওয়া যায়। আর্টস আর কমার্স এর শিক্ষার্থীদের তো আর সামনে পাওয়া যাবে না। এই শেষ সুযোগ বিজ্ঞানের নামে ফিজিক্স, কেমিস্ট্রি, বায়োলজি সব গুলিয়ে খাইয়ে দেওয়ার।

বইয়ের প্রচ্ছদে হুইল চেয়ারে বসা একটা ছাত্রের ছবি ছাড়া আমাদের সময়ের বইয়ের চেয়ে পজিটিভ কোনো পরিবর্তন দেখি না।

অথচ ২০০০ সালের পরে আরো ১৮টা বছর পেরিয়ে গেল। খালি মন খারাপ হয়ে যায়।

চোর ডাকাত লুটেরাতে দেশ ভর্তি হয়ে গেল - কিন্তু কর্তাব্যক্তিদের গলায় শুনি এক সুর - জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস আর নেশা নাকি প্রধান সমস্যা।

ভারতে এক কিলোমিটার রাস্তা বানাতে খরচ হয় ১১-১৩ লাখ ডলার, চীনে ১৩-১৬ লাখ ডলার। বাংলাদেশে সর্বনিম্ন ২৫ লাখ ডলার। সর্বোচ্চ ১ কোটি ১৯ লাখ ডলার।

এই যে দুর্নীতি, ব্যাংক-ডাকাতি, ঋণ খেলাপি - এগুলো কোনো সমস্যা না।

সত্যি সত্যি জঙ্গিবাদ ঠেকাতে চাইলে ডকটর খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীরের বই ক্লাসে পাঠ্য করুন। ইসলাম সম্পর্কে সত্য ধারণা দিন। ইসলাম শিক্ষার নামে আংশিক এবং খন্ডিত ইসলাম শেখানো বন্ধ করুন।

তা তো করছেন না, বরং মিথ্যা অজুহাতে ইসলামিক টিভি, পিসটিভি বন্ধ করে দিলেন। মানুষ ইসলাম শিখবে কোত্থেকে? এখন শুধু ফেসবুক, ইউটিউব আর জাস্টপেস্ট-ই ভরসা।

নেশার বড়ি এ দেশে আনে কে? বেচে কে? নিরাপত্তা দেয় কারা? কারা লাভের বখরা পায়। আমরা সবাই জানি। বলতে পারি না।

এই শিক্ষানীতিতে - এইসব বই পড়ে, চেতনাদীক্ষিত হয়ে, আগের রাতে প্রশ্ন খুঁজে যে প্রজন্ম বড় হচ্ছে তারা সামনে কী করবে আল্লাহ রাব্বুল ইযযাত-ই জানেন।

মাঝে মাঝে অতল সমুদ্রে ডুবে যাওয়ার মতো অনুভূতি হয়।

এ লেখাটা যারা পড়ছেন, যাদের সন্তান বা পরিচিত স্কুল বা কলেজের ছাত্র - তাদের কাছে একটা বিনীত অনুরোধ - ওদের পড়তে শেখান, ভাবতে শেখান। পরীক্ষায় নকল না করে কষ্ট করে বইয়ের কথাগুলো বুঝতে শেখান। যা মুখস্থ করার দরকার সেটা মুখস্থ করতে উৎসাহিত করুন।

স্কুলের বই পড়ছে - পড়ুক। বাইরের বই, বিশেষ করে প্রবন্ধ ধাঁচের লেখা পড়তে দিন। কুরআনের বাংলা অনুবাদটা দিয়ে শুরু করুন।

সার্টিফিকেট সব না। সার্টিফিকেট-ই একমাত্র না।

চাকরির জন্য আবেদন করা ব্যাচেলরস পর্যন্ত পাশ করা অপদার্থ, অথর্ব ছেলেপেলের দেখা পাই।

আপনার সন্তান, আপনার ভাইকে এমন কিছু বানিয়েন না।

পঠিত : ৫৬৬ বার

মন্তব্য: ০