Alapon

শিবিরের জন্ম যেভাবে . . .




১৯৭৫ সাল। এ বছর ঢাকায় যুবকদের জন্যে Youngman Muslim Association গঠন করা হয়। অল্প সময়ের মধ্যেই এই Association ঢাকার যুবকদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সাড়া জাগাতে সক্ষম হয় । একই বছর একটি পরিপূর্ণ প্রকাশ্য ইসলামী ছাত্র সংগঠন গড়ে তোলার লক্ষ্যে পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয় এবং ধীরে ধীরে এ লক্ষ্য অর্জনের জন্য একটি সুবিন্যস্ত প্রকল্প প্রণয়ন করা হয়। সারা বছর ধরে এ প্রকল্পের কাজ চলতে থাকে । এভাবে '৭৫ সাল অতিবাহিত হয়। ইতিমধ্যে জমিন সিক্ত হতে থাকে। আমরা এর উর্বরতা লক্ষ্য করতে থাকি। বাংলাদেশের সর্বত্র একটি প্রকাশ্য ছাত্র আন্দোলন পাওয়ার আকাংখা তীব্র থেকে তীব্রতর হতে থাকে ।

১৯৭৬ সালের ১২ই রবিউল আউয়াল কুমিল্লা শহরের ছোটরায় একটি বিয়ে হয়। উক্ত বিয়েতে সারা দেশের প্রায় ২৫০ জন মেহমান উপস্থিত ছিলেন, তারা এসেছিলেন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, শহর মহকুমা থেকে, এরা ছাত্র দায়িত্বশীল বা প্রতিনিধ স্তরের লোক ছিলেন। এটা ছিল একটা পরিকল্পিত get together বিয়েটা আমারই (আ. ন. ম আবদুজ জাহেরের) ছিল এর ব্যবস্থাপনায় ছিলেন জনাব শরীফ আব্দুল কাদির, জসিম, জেবাল হাবিব ফারুকীরা, বিবাহোত্তর পরবর্তী ভোরের সভা ইতিহাসের এক উল্লেখযোগ্য ঘটনা হিসাবে মনে করা হয়। যা পরিচালনা করেন জনাব মীর কাসেম আলী ।

বছরের বৈঠকে গেল বছরের তৎপরতা পর্যালোচনা করা হয় এবং আল্লাহর রহমতে অতীতের সফলতা আমাদেরকে নতুন বছরের জন্য আরও দৃঢ় পদক্ষেপে এগিয়ে যাওয়ার নির্দেশিকা দেয় ।

১৯৭৬ সালের অক্টোবর মাসে ঢাকার লক্ষ্মীবাজারে অনুষ্ঠিত বৈঠকে একটি নতুন ছাত্র সংগঠন গড়ে তোলার পথে বাধা- বিপত্তি, জটিলতা, সমস্যা-সম্ভাবনা সবকিছু চুলচেরা বিশ্লেষণ হয়। দীর্ঘ ও ফলপ্রসূ আলোচনা শেষে একই বছরের ১৬ই ডিসেম্বরের মহান বিজয় দিবসে ইসলামপন্থী দায়িত্বশীল ছাত্রদের একটি কনভেনশন ডাকার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয় । ১৬ই ডিসেম্বর ১৯৭৬ আমন্ত্রণপ্রাপ্ত ২২১ জন ছাত্র প্রতিনিধি বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে যোগদান করেন। সারাদেশে তৎপরতার Report পেশ এবং একটি প্রকাশ্য নতুন ছাত্র সংগঠন গঠনের লক্ষ্যে ১০০ শত ভাগ সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সর্বাধিকসংখ্যক প্রতিনিধির মতামত অনুযায়ী এ নতুন ছাত্র সংগঠনের নাম “ইসলামী ছাত্রশিবির” হিসাবে চূড়ান্ত হয়। একই সময়ে পরবর্তী নেতৃত্ব নির্ধারণের জন্য নির্বাচনের প্রক্রিয়া চলতে থাকে। অধ্যাপক নাজির আহমদ সাহেব নির্বাচন কমিশনার হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৬ই ডিসেম্বর সন্ধ্যার পর এই সংগঠনের সভাপতি হিসাবে জনাব মীর কাসেম আলীর নাম ঘোষণা করেন। জনাব মু. আবদুল বারী ইসলামী ছাত্রশিবিরের প্রথম সেক্রেটারি জেনারেল মনোনীত হন।

উল্লেখ্য যে, '৭৬ সালের অক্টোবরের বৈঠকেই ৬ই ফেব্রুয়ারি ১৯৭৭ সাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ থেকেই এই সংগঠন তার আনুষ্ঠানিক ঘোষণার মাধ্যমে একটি প্রকাশ্য সংগঠন হিসাবে তৎপরতা শুরু করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় । উক্ত সিদ্ধান্তক্রমেই ১৯৭৭ সালের ৬ই ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের মিম্বারের পাশে বসেই আল্লাহর এই গোলাম বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের নাম আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা দেয়ার বিরল সৌভাগ্য অর্জন করে। সমস্ত শুকরিয়া আল্লাহর। সমস্ত মেহেরবানি আল্লাহর।


আ. ন. ম. আবদুজ জাহেরের লিখা থেকে . . .
#6Feb1977 #Shibir46Yrs

পঠিত : ২০৪ বার

মন্তব্য: ০