Alapon

দৈনিক দিনকাল বন্ধে এম এফ সির বিবৃতি এবং আমেরিকান দূতাবাসের প্রতিক্রিয়া


সরকারের এক আদেশে বাংলাদেশের অতি প্রাচীন দৈনিক পত্রিকা ‘দৈনিক দিনকাল’ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। দৈনিক দিনকাল বি এন পির মূখপাত্র হিসেবে পরিচিত। পত্রিকাটি একটি ট্রাস্টের মালিকানায় পরিচালিত। যে ট্রাস্টের চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমান। বাংলাদেশে বি এন পি একটি জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল এবং সে হিসেবে তারেক রহমানের প্রতি আনুগত্য ও ভালোবাসা প্রদর্শন করেন এ সংখ্যা বর্তমান বাস্তবতায় অন্য যে কোনো দলের চেয়ে বেশি। সেই বি এন পির সামর্থ্যবান কর্মীরা প্রত্যেকে যদি এক কপি করে দৈনিক দিনকাল কিনতো তবে বাংলাদেশের সর্বাধিক সার্কলেশনের পত্রিকা হওয়ার সম্ভাবনা ছিলো। কিন্তু বাস্তবতা হলো বি এন পির অনেক ডাকসাইটে নেতা যেমন দিনকাল কিনেন না এবং পড়েন না, একইভাবে বি এন পির অনেক সক্রিয় কর্মীও এ পত্রিকাটির নাম জানেন বলে মনে হয় না। যদিও আজকের আলোচনা এ বিষয় নিয়ে নয়। আজকের আলোচনা হচ্ছে সরকার দৈনিক দিনকালের ডিক্লারেশন বন্ধ করে দিয়েছে। দিনকাল বন্ধ করার প্রেক্ষাপটে Media Freedom Coalition একটি বিবৃতি দিয়েছে।
সেই বিবৃতি আবার ঢাকাস্থ আমেরিকান দুতাবাসের ওয়েবসাইট এবং ফেইজবুক পেজে বাংলা ও ইংরেজিতে শেয়ার করা হয়েছে। আপাতদৃষ্টিতে বোঝাই যাচ্ছে, সরকার এ পত্রিকাটি বন্ধ করার মাধ্যমে যতটুকু লাভবান হতে চেয়েছে তার চেয়ে সম্ভবত তাদের ক্ষতির পাল্লাই ভারী হচ্ছে। বর্তমান সরকারের আমলে মিডিয়া বন্ধ করে দেয়া, সাংবাদিক হয়রানি, সাংবাদিকদের দেশছাড়া করা, সাংবাদিক নির্যাতন এবং নানান অজুহাতে মামলা দিয়ে তাদেরকে দীর্ঘদিন কারাগারে বন্দী করে রাখার এক ঘৃণ্য নজির স্থাপন করেছে।
ইতঃপূর্বে দৈনিক আমার দেশ, দিগন্ত টেলিভিশন, ইসলামিক টিভি, চ্যানেল ওয়ানসহ অসংখ্য মিডিয়া এই সরকারের আমলে বন্ধ হয়ে গেছে। সাংবাদিক মাহমুদুর রহমান অলিউল্লাহ নোমান, আবুল আসাদ, রুহুল আমীন গাজীসহ শতাধিক সাংবাদিক নিবর্তনমূলক বিভিন্ন মামলায় জেল খেটেছেন। দেশের বাইরে চলে যেতে বাধ্য হয়েছেন অনেকে। বর্তমান সরকারের নিবর্তনমূলক শাসন ব্যবস্থায় মত প্রকাশের স্বাধীনতা অনেটাই সংকুচিত হয়ে আছে। এ সকল বিষয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যারা মিডিয়ার স্বাধীনতা নিয়ে কাজ করেন তারা বক্তব্য বিবৃতি দিয়েছেন। তবে এবারে দৈনিক দিনকাল বন্ধের পর Media Freedom Coalition এর বিবৃতি এবং সেই বিবৃতি আমেরিকান দুতাবাসের ওয়েবসাইট ওফেসবুক পেইজে শেয়ার করা ভিন্ন মাত্রা যোগ করেছে। আমরা হয়তো অনেকেই এ সংস্থা সম্পর্কে জানি না। আন্তর্জাতিকভাবে মিডিয়ার স্বাধীনতা নিয়ে কাজ করা এ সংস্থার সদস্য রাষ্ট্রগুলো হচ্ছে : আমেরিকা, ইংল্যাণ্ড, ফ্রান্স, জার্মানী, নেদারল্যাণ্ড, নিউজিল্যাণ্ড, স্পেন, আর্জেন্টিনা, অষ্ট্রেলিয়া, সুইডেন, সুইজারল্যাণ্ড, বেলিজ প্রজাতন্ত্র, বতসোয়ানা, বুলগেরিয়া, কানাডা, চিলি, কোস্টারিকা, ক্রোয়েশিয়া, সাইপ্রাস, চেজ রিপাবলিক, ডেনমার্ক, এথোনিয়া, ফিনল্যাণ্ড, ঘানা, গ্রিস, গায়ানা, হন্ডুরাস, আইসল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড, ইটালী, জাপান, কসোভো, লাটভিয়া, লেবানন, লিথুনিয়া, লুক্সেমবার্গ, মালদীপ, মনটিগ্রো, নর্থ মেসোডোনিয়া, নরওয়ে, দক্ষিণ কোরিয়া, সার্বিয়া, চিলি, সিয়েরালিওন, স্লোভাকিয়া, স্লোভানিয়া, সুদান, ইউক্রেন, উরুগুয়ে, । অর্থাৎ বিশ্ব রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তারকারী প্রায় সবগুলো রাষ্ট্রই এ সংস্থার সদস্য। আগামী দিনে বিশ্ব বানিজ্য ও অর্থনীতিতে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টায় মরিয়া চীন অবশ্য এ সংস্থার সদস্য নয়। চীনের নিজের দেশে অবশ্য মিডিয়া নিয়ন্ত্রিত। বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় নীতিতে মিডিয়ার স্বাধীনতার যে কথা বলা হয়েছে, সে ঘোষণার সাথে এইভাবে মিডিয়া বন্ধ করে দেয়া বাংলাদেশের স্বাধীন সত্বার সাথে মেলে না।

দৈনিক দিনকালের সার্কুলেশন অতি সামান্যই হবে। এ মিডিয়া যতোই সরকারবিরোধী সংবাদ প্রচার করুক। তাতে যে সরকারের খুব বেশি ক্ষতি করতে পারবে তা মনে করার কোনো কারণ নেই। তরাপরও সরকার যেহেতু ভিন্ন মত পছন্ন করতে চায় না। তাই তারা যে কোনো অজুহাতের একটি সূযোগ পেয়ে গেছে এবং সেই অজুহাতকে কাজে লাগিয়েছে। কিন্তু... এর বিবৃতি এবং আমেরিকান দূতাবাসের ফেসবুক পোইজে তার বাংলা ও ইংরেজি ভার্সনের পোষ্ট সরকারের জন্য অনেকটাই চাপের কারণ হবে।

পঠিত : ২৬৪ বার

মন্তব্য: ০