Alapon

আপনার যাকাত কাকে দেওয়া উচিৎ?




আপনার ওপর যদি যাকাত ফরজ হয়ে থাকে, আর আপনি যদি সত্যিই যাকাতের হক আদায় করতে চান, তাহলে আপনার যাদেরকে যাকাত দেওয়া উচিৎ, তারা হলো :

• নিকটস্থ আত্মীয় স্বজনের মধ্যে যারা অসহায়।

• পাড়াপ্রতিবেশির মধ্যে যারা অসহায়।

• এদেশের মাদরাসা ও ইয়াতিমখানাগুলো।

• আল্লাহর জমিনে আল্লাহর দীন প্রতিষ্ঠায় কাজ করে, এমন সংগঠনগুলো।

• আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের মতো আলিমদের নেতৃত্বে ও পরিচালনায় সেবামূলক সংগঠনগুলো।


আত্মীয়-স্বজন ও পাড়াপড়শিকে যাকাত কীভাবে দিবেন? :

মূলত আপনার আত্মীয় স্বজন ও পাড়াপড়শিকে
যাকাত এমনভাবে দেওয়া উচিৎ যেনো তারা আর কখনোই যাকাতের হকদার না থাকে। মানে কখনো যাকাত গ্রহণের মতো উপযুক্ত না থাকে। তার মানে হচ্ছে তাদেরকে একবছরেই যাকাত দিয়ে সাবলম্ভী করে দেওয়া উচিৎ। সুন্দর করে উপার্জন করতে পারে, এমন একটা ব্যবস্থা করে দেওয়া উচিৎ। এভাবে আমরা যদি যাকাতের হক আদায় করে যাকাত দিতে পারি, তাহলে ইন শা আল্লাহ আমাদের সমাজ থেকে, মুসলমানদের মধ্য থেকে দারিদ্রতা দূর হবে। দারিদ্রতার কারণে যেসব পাপগুলো মুসলমানরা করে, সেটা দূর হবে।

তবে মাদরাসা, ইয়াতিমখানা, দীন প্রতিষ্ঠায় কাজ যারা করে বা জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহর কাজরত সংগঠনগুলোতে তো খরচের নানান খাত আছে, মুজাহিদদের নানান প্রয়োজন আছে, যেকোনো সময়ই যেকোনো পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন হতে পারে, সে কারণে দ্বিতীয় পর্যায়ে তাদেরকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া উচিৎ। তাদের দিকে আমাদের নজর দেওয়া উচিৎ।

এছাড়াও শাইখ আহমদুল্লাহর আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের মতো যেসব সংগঠন আছে, যারা কেবল ইসলামকে একটা সামাজিক শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে কাজ করে, মানুষের আয়ের একটা স্থায়ী ব্যবস্থা করে দেয়, কিংবা স্থায়ীভাবে বেকারত্ব ও দারিদ্রতা দূর করতে চেষ্টা করে যায় তাদেরকেও নির্দ্বিধায় যাকাতের অর্থ প্রদান করা যায়।

তবে মনে রাখবেন, এই যাকাত (যেগুলো আপনি ব্যক্তিগতভাবে দেন, সেগুলো)  আপনার বাসায় ডেকে এনে, লাইন ধরিয়ে দাঁড় করিয়ে দিতে যাবেন না প্লিজ! কারণ, এই যাকাতের হকদার হচ্ছে অসহায় মানুষেরা। যাকাত দেওয়া মানে করুণা করা নয়। এটা অসহায় সম্বলহীন মানুষের অধিকার। আপনার সম্পদের ওপরই আছে তাদের অধিকার। আল্লাহ দিয়ে রেখেছেন তা। এটা কুরআনই আমাদেরকে বলছে। পবিত্র কুরআনুল কারিমে ইরশাদ হচ্ছে -
‘আর তাদের (ধনী লোকদের) সম্পদে অবশ্যই প্রার্থী (দরিদ্র) ও বঞ্চিতদের অধিকার রয়েছে।’ (সুরা আল-যারিআত, আয়াত : ১৯)।

অন্যদিকে রসুলুল্লাহও (সা.) বলেছেন , ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তাদের (সম্পদশালীদের) ওপর সদকা (জাকাত) অপরিহার্য করেছেন, যা তাদের ধনীদের কাছ থেকে আদায় করে দরিদ্রদের মধ্যে বণ্টন করা হবে।’ (বুখারি ও মুসলিম)।

সুতরাং যার হক, তাকে চুপিসারে যত্নসহকারে নিজ দায়িত্বে আপনি নিজে তার বা তাদের কাছে গিয়ে দিয়ে আসাই ভালো। এবং ইসলাম এটাই চায়।


যাকাত একটি সাম্প্রদায়িক ইবাদাত :

এছাড়াও আরেকটা কথা মনে রাখবেন, যাকাত হচ্ছে সাম্প্রদায়িক জিনিস। অথবা এভাবে বলতে পারি যাকাত একটা সাম্প্রদায়িক ইবাদাত। এটা ধর্মীয় বিষয়। তাই ধর্মীয় বিধিবিধান মেনেই যাকাত দিন। অসম্প্রদায়িক দাবিদার, ধর্মনিরপেক্ষ শ্লোগান কপচানো কোনো ব্যক্তি, সংগঠন বা গ্রুপকে আপনার ধর্মীয় অর্থ যাকাত প্রদান করবেন না। কারণ যাকাত পরিপূর্ণভাবেই একটা সাম্প্রদায়িক বিধান তথা ইসলামেরই বিধান। অসম্প্রদায়িক কোনো সুশীলের এটাতে কোনো প্রকার হক নেই। এটাতে তাদের কোনো অধিকার নেই।

হ্যাঁ, আরো একটা কথা মাথায় রাখবেন, উপরে উল্লেখিত কেউ যদি বলে অন্যের চাইতে আমিই বেশি যাকাতের হকদার, (আত্মীয় ও নিকটতম প্রতিবেশী ব্যতীত) তাদেরকেও যাকাত দিবেন না। এখানে যাদের উল্লেখ করা হয়েছে, সবাই আল্লাহর দীনের জন্যই কাজ করে। সবাই মানুষের অর্থনৈতিক সমস্যা সমাধান করার উদ্দেশ্যেই কাজ করে। আল্লাহর গোলামদের সমস্যা সমাধান করারই চেষ্টা করে।


~রেদওয়ান রাওয়াহা
২৮-শে রমাদান
https://t.me/RedwanRawaha

পঠিত : ২৩২ বার

মন্তব্য: ০