Alapon

বুক রিভিউ : ইসলামে বাদ্যযন্ত্রের ব্যবহার




সকালে মাত্র ৩০/৩৫ মিনিটের মধ্যেই এই বইটি পড়ে ফেললাম। লেখকের ভাষায় এই বইটি লেখককে লেখার সর্বাধিক উৎসাহ-অনুপ্রেরণা দিয়েছেন ইসলামী সংগীত জগতের তারকাতূল্য, আমাদের সাবেক কেন্দ্রীয় সাংস্কৃতিক সম্পাদক, সাইমুম শীল্পিগোষ্ঠীর সাবেক পরিচালক, আমাদের শ্রদ্ধেয় মুহতারাম Saifullah Mansur ভাই।

ভাই দ্বীন এবং দ্বীনি আন্দোলনের ক্ষেত্রে জন্মলগ্ন থেকেই নিবেদিতপ্রাণ। তিনি কখনো কিছুটা ইসলাম , কিছুটা শাহবাগীজম নিয়ে দ্বীনি আন্দোলনের রূহকে নষ্ট করতে চাননি। যারা চাইছেন বা চাচ্ছেন, ভাই সাধ্যমত সেটার প্রতিরোধ গড়ে তুলতে চেষ্টা করে যাচ্ছেন। হয়তো সব কিছুই তাঁর দ্বারা সম্ভব হয় না, মানুষ হিসেবে জ্ঞান-প্রজ্ঞা, ইলম-আমল ইত্যাদি নানবিধ বিষয়ে সীমাদ্ধতা আছে বা থাকতেই পারে। কিন্তু তারপরও মুহতারাম ভাই দ্বীনকে দ্বীনের আকৃতিতে বিশেষত ইসলামী সংগীত অঙ্গনকে পরিপূর্ণ ইসলামের রূপেই রাখার যেই চেষ্টাটা করে যাচ্ছেন, সেটা অবশ্যই আমাদের জন্য অনেক বেশী অনুপ্রেরণা-দায়ক। আল্লাহ ভাইয়ের চেষ্টায় বরকত দিন। ভাইকে আল্লাহ দুনিয়া ও আখেরাত, উভয় জাহানেই সম্মানিত করুন।

উক্ত বইতে বাদ্যযন্ত্র হারামের বিষয়ে সম্মানিত লেখক শ্রদ্ধেয় আবুল হুসাইন খান কুরআন-হাদিসের পাশাপাশি ( হাদিসে তো স্পষ্টভাবেই তা হারাম) উম্মাহর শ্রেষ্ট ইমামদের ফতোয়াগুলোও সামনে এনেছেন। হাতেগোনা দুচারজন যারা গায়ের জোর খাটানোর মত করে যুক্তি দিয়ে বাদ্যযন্ত্রকে হালাল করবার সংগ্রাম করেছেন, তাদের সেসব অপযুক্তির অনেকগুলো জবাব দিয়েছেন। ইসলামী আন্দোলনের কর্মীরা কেন এই বিষয়টা এড়িয়ে যাওয়া উচিৎ -বর্ণণা করেছেন। যদিও আরো অনেক জোরালো যুক্তি উপস্থাপন করা যেত, কিন্তু মনে হয় লেখক হাতে সময় খুবই অল্প নিয়ে বইটি লেখার কাজ সমাধা করতে গিয়েছেন বা চেয়েছেন, তাই সামান্য কিছু ঘাটতি আমার দৃষ্টিতে রয়ে গেছে। তবে সার্বিকভাবে যথেষ্ঠ চমৎকর একটি বই হয়েছে। তবে তিনি ব্যক্তিগত যুক্তির তুলনায় আমাদের মনকে কুরআন-সুন্নাহর দিকেই নিবদ্ধ করার চেষ্টা করে গেছেন।

বইটিতে আরো একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উপস্থাপন করা হয়েছে, তা হচ্ছে প্রাপ্ত বয়স্কা নারীদের দিয়ে মিহি-স্বরে গান গাওয়ানো বা কবিতা আবৃত্তি করা, এবং তা পাবলিক প্লেসে উপস্থাপন করা। তবে নারীদের গান গাওয়া নিষেধ এ ধরনের কিছুই বলেননি। আমাদের বোনেরা তাদের পরিমণ্ডলে অবশ্যই গান গাবে, এবং গাওয়াও উচিৎ, কিন্তু তা কোনো নন-মাহরাম পুরুষদের সামনে না। পুরুষদের শোনা এবং শোনানো কিছুই যাবে না। এছাড়া সর্বপ্রথম শয়তান ধোঁকা দেওয়ার জন্যে বলবে হিজাব-নিকাব করেও গাওয়া যায়, এতে কী সমস্যা? এরকম সৎ উদ্দেশ্য নিয়ে, দ্বীনের খাতিরে পথ চলার পর ধীরে ধীরে দিলের সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যই প্রাধান্য পেয়ে যায়। এই বিষয়টাও তুলে এনেছেন। এটা একটা চমৎকার পয়েন্ট ছিল। কারণ ইদানীং এই ফিতনা নতুন করে ঝড়ের গতিতে ছড়িয়ে পড়া শুরু হচ্ছে।
এরপর দাওয়াতের নামে, ইসলামী আন্দোলনের দিকে আকৃষ্ট করার চটুল কথাবার্তা বলে, সংগীত প্রেমিদেরকে ইসলামের দিকে আনার ঠুনকো অজুহাতে নিকৃষ্ট হারাম বাদ্যযন্ত্রকে হালাল ও সহীহ করার অপযুক্তিগুলোর অসরতা তুলে ধরা হয়েছে। যদিও আরো ভালো করে এসবের অসরতা তুলে ধরা যেত।

বইটি খুবই ছোট। এক বসাতেই পড়ে ফেলার মত। তবে লেখক ও প্রকাশকের প্রতি আমার নিবেদন থাকবে, বইটিকে আরেকটু সুন্দর করা যায় কি-না। যেমন অক্ষর-শব্দ বা বাক্য বিন্যাসের বিষয়টা আরকি।

যে সময় ইসলামী জ্ঞান-গবেষণার নামে সামি ইউসুফককে আধ্যাত্মিক পুরুষ এবং হারাম বাদ্যযন্ত্রের মধ্যে আধ্যাত্মিকতার সম্মিলন আবিস্কার করা হচ্ছে, সেরকম একটা গুরুত্বপূর্ণ সময়ে এরকম একটা বই আসলেই ভীষণ দরকারী ছিল।

আমি বইটির লেখক, প্রকাশক, বইটি সংশ্লিষ্ট সবার সাফল্য কামনা করছি। বিশেষত লন্ডন প্রবাসী ইসলামী সংগীত জগতের অন্যতম সফল তাকওয়াবান শিল্পী হাফেজ নওশাদ মাহফুজ ভাই, ইকামাতে দ্বীনের অগ্রসেনানী, ইসলামী সাংস্কৃতিক জগতের তারকা জনাব সাইফুল্লাহ মানসুর ভাইদের হায়াতে এবং কর্মে বরকত কামনা করছি। যারা এই অঙ্গনকে কলুষতামুক্ত করার জন্যে আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছে। এই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে এই বইটি লেখার জন্যে আল্লাহর কাছে লেখকের ইল্ম ও কর্মের বরকত কামনা করছি। হাদিস থাকতেও যুক্তিবাদীদের যুক্তিকে শায়েস্তা করেছেন বা করার চেষ্টা করছেন, সেজন্য লেখক সকল দ্বীনি ভাই-বোনদের অনেক দুয়া ও ভালোবাসা পাবার হকদার।

বইটির প্রকাশক : আল বালাগ পাবলিকেশন, লন্ডন।
মূল্য : ১০০ টাকা

পঠিত : ২৬২ বার

মন্তব্য: ০