Alapon

বিমান দুর্ঘটনা নিয়ে প্রাপ্ত সর্বশেষ তথ্য

৭১ আরোহী নিয়ে নেপালের ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় এপর্যন্ত ৫০ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত হওয়া গেছে। তবে দুর্ঘটনার ঠিক কারণ এখনও জানা যায়নি। বিমানে থাকা আরোহীদের সবার পরিচয় জানা গেছে। ইতিমধ্যে হতাহত বাংলাদেশি নাগরিকদের স্বজনরা নেপালে গিয়ে পৌঁছেছেন। এ ঘটনায় নেপাল সরকার ও ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্সের পক্ষ থেকে দুটি আলাদা তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় এপর্যন্ত যা জানা গেছে:

ঢাকা থেকে সোমবার (১২ মার্চ) ১২টা ৫১ মিনিটে রওনা দিয়ে দুপুর ২টা ২০ মিনিটে কাঠমান্ডু বিমানবন্দরে পৌঁছায়। ত্রিভুবন বিমানবন্দরের মুখপাত্র প্রেম নাথ ঠাকুর জানান, অবতরণের সময় বিমানটিতে আগুন ধরে যায়। বিমানবন্দরের কাছেই একটি ফুটবল মাঠে বিধ্বস্ত হয় এটি।  

বিমানটি বিধ্বস্ত হওয়ার পরপরই উদ্ধার অভিযান শুরু করে ত্রিভুবন বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ ও নেপাল সেনাবাহিনী। বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে—চার জন ক্রু ও ৬৭ জন যাত্রী ছিলেন বিমানটিতে। তাদের মধ্যে ৩৭ জন পুরুষ, ২৭ জন নারী ও দুইজন শিশু।

বিধ্বস্ত হওয়া বিমানের যাত্রীদের মধ্যে ৩২ জন বাংলাদেশি, ৩৩ জন নেপালি, একজন চীনা ও মালদ্বীপের নাগরিক ছিলেন।  এছাড়া ক্যাপ্টেন আবিদ সুলতান, ফার্স্ট অফিসার পৃথুলা রশীদসহ দুজন কেবিন ক্রু ছিলেন। যাত্রীদের মধ্যে পূর্ণবয়স্ক মানুষ ৬৫ জন এবং দুটি শিশু।

মঙ্গলবার (১৩ মার্চ) সকালে বিমানের পাইলট আবিদ সুলতান মারা যাওয়ায় মোট নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫০ এ। বিমানটিতে পাইলট ও ক্রুসহ ৩৬ বাংলাদেশির মধ্যে ২৬ জন নিহত হয়েছেন। ৯ জন চিকিৎসাধীন আছেন, আর একজনের খোঁজ পাওয়া যায়নি। আহত যাত্রীদের মধ্যে চার জনকে চিকিৎসার পর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। বাকি ১৭ জন কাঠমান্ডুর বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

বিধ্বস্ত ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্সের বিমানে যাত্রীদের মধ্যে ছিলেন সিলেটের জালালাবাদ রাগীব-রাবেয়া মেডিক্যাল কলেজের ১৩ শিক্ষার্থী। তারা সবাই নেপালি বংশোদ্ভূত। এমবিবিএস ফাইনাল পরীক্ষা শেষে ওই ১৩ শিক্ষার্থী দেশে যাচ্ছিলেন। কলেজের অধ্যক্ষ ডা. মো. আবেদ হোসেন এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তবে তাদের অবস্থার বিষয়ে বিস্তারিত জানা যায়নি।

সোমবার সন্ধ্যায় বিধ্বস্ত বিমানের ব্ল্যাকবক্স উদ্ধার করা হয়েছে।

নেপালে ১২ মার্চ বিধ্বস্ত হওয়া ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্সের ড্যাশ-৮ কিউ-৪০০ উড়োজাহাজটি আগেও দুর্ঘটনার কবলে পড়েছিল। ২০১৫ সালের ৪ সেপ্টেম্বর সৈয়দপুর বিমানবন্দরে অবতরণের সময় দুর্ঘটনার কবলে পড়ে উড়োজাহাজটি।

মঙ্গলবার সকালে হতাহতদের ৪৬ জন আত্মীয়কে নিয়ে নেপালে পৌঁছেছে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের একটি উড়োজাহাজ। নেপালের স্থানীয় সময় মঙ্গলবার সকাল ১০টা ৩৭ মিনিটে ত্রিভুবন বিমানবন্দরে উড়োজাহাজটি অবতরণ করে। মঙ্গলবার (১৩ মার্চ) সকাল ৯টা ২ মিনিটে স্বজনদের বহনকারী উড়োজাহাজ হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ত্যাগ করে।

ত্রিভুবন বিমানবন্দরে বাংলাদেশি বিমানের দুর্ঘটনায় পতিত হওয়ার কারণ জানতে ছয় সদস্যের তদন্ত কমিশন গঠন করেছে নেপাল। নেপালের প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে হওয়া মন্ত্রীদের সভায় এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে নেপাল সরকার। নেপালের জনসংখ্যা ও পরিবেশবিষয়ক মন্ত্রী লালবাবু পণ্ডিত জানিয়েছেন, মন্ত্রিসভার পক্ষ থেকে কমিশনকে সর্বোচ্চ দ্রুততায় তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।

ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সও দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে বিশেষজ্ঞদের তত্ত্বাবধানে একটি নিজস্ব তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।  এদিকে, সোমবার রাতে গণমাধ্যমে পাঠানো ইউএস-বাংলার জিএম কামরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়।

নেপালে ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্সের বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার কারণ নিয়ে পরস্পরবিরোধী বক্তব্য দিয়েছে এয়ারলাইন্স ও বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। নেপালের ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের দাবি, পাইলটের ভুলেই বিমানটি বিধ্বস্ত হয়েছে। আর ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্সের পক্ষ থেকে জানানো হয়, নিয়ন্ত্রণকক্ষ থেকে বিভ্রান্তিকর তথ্য দেওয়া হচ্ছিলো তাদের।

নেপালের বেসরকারি বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের পরিচালক সঞ্জীব গৌতম বলেন, ‘রানওয়েতে অবতরণের সময় বিমানটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে। এটা দক্ষিণ দিকে নামার কথা থাকলেও উত্তর দিক দিয়ে নামে।’ তিনি বলেন, ‘কারিগরী ত্রুটির কারণে এমনটা হয়ে থাকতে পারে। আমরা বিধ্বস্ত হওয়ার প্রকৃত কারণ খুঁজে বের করার চেষ্টা করছি।’

এ ঘটনায় বাংলাদেশ থেকে চিকিৎসক ও নার্সদের একটি দল নেপালে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ শাহরিয়ার আলম। তিনি বলেন, ‘এজন্য আমরা আমাদের চিকিৎসক দলকে পাঠানোর জন্য বিশেষ অনুমতি চেয়েছি।  অনুমতি পেলেই তাদের পাঠিয়ে দেওয়া হবে।’

পঠিত : ৬১৭ বার

মন্তব্য: ০