Alapon

রাজপুত্র হারানোর ৭ বছর!



২৩ বছর আগের কথা। ছাত্রশিবিরের কর্মী হতে ভাইবা দিতে হবে। তাই প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। দুই/তিন পাতার শীট। পুরো শীট মুখস্ত করতে হবে। ছোট মানুষ ছিলাম। ভাইবার কথা মনে করলেই সব ওলট-পালট হয়ে যেত। যা শিখি তা আবার ভুলে যাই। শীটতো মুখস্ত করতেই হবে, আরো সাধারণ জ্ঞানও মুখস্ত করা চাই। নইলে শিবিরের কর্মী হওয়া যাবে না।

সেই প্রস্তুতি নিতে গিয়ে রুপকথার মতো এই মানুষের নাম প্রথম জানলাম। তিনি শিবিরের ১ম কেন্দ্রীয় সভাপতি। মীর কাশেম আলী নাম। রূপকথার রাজপুত্রকে যেমন সবাই ভালোবাসে আমিও ভালোবাসতে লাগলাম এই রাজপুত্রকে। বড় হওয়ার সাথে সাথে যখন তাকে আরো জানলাম বুঝেছি আমাদের এই রাজপুত্র শুধুমাত্র রূপকথার রাজপুত্র নন, আরো বড় কিছু।

জাহেলিয়্যাতের মোকাবিলায় ইসলামের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমানের চেষ্টায় নিজেকে করেছিলেন আত্মনিয়োগ। যেখানেই হাত দিয়েছেন, সোনা ফলেছে। সাহিত্য-সংস্কৃতি, অর্থনীতি, ব্যবসা, পর্যটন শিল্প, আবাসন খাত, কৃষি, মিডিয়া সব ক্ষেত্রেই তিনি ভূমিকা রেখেছেন রাজার মত। তিনি দেখিয়েছেন অমানবিক পুঁজিবাদী সমাজের বিপরীতে ইসলামের অপার সৌন্দর্য।

কেউ বক্তব্য দেয়, কেউ থিউরি দেয়, কেউ আবার সেই থিউরি কপচায়, কেউ বলে এই করা দরকার, সেই করা দরকার, কেউ উপদেশ দেয়, কেউ আবার সেই উপদেশের ক্রিটিসিজম করে, কেউ সমালোচনা করে, কেউ সেই সমালোচনার সমালোচনা করে বিতর্কের হাট বসায়। মীর কাশেম আলী এসবের লোক নন। তিনি নীরবে কাজ করে যেতেন। যারা কাজ করেন তাদের উৎসাহ দিতেন। তিনি বলার চাইতে করতেন বেশি। জনশক্তিদের উপদেশ দিয়ে শেখানোর চাইতে কাজ করে উদাহরণ হওয়া ছিল তার পছন্দের।

প্রভুকে ভীষন ভালোবাসেন তিনি। প্রভুর সাথে পাঁচবার সাক্ষাতে তিনি আলাদা করে প্রস্তুতি নিতেন। পছন্দের পোষাকগুলো পরে প্রভুর সামনে হাজির হন বিনম্রভাবে। আমরা সবাই নামাজ আদায় করি। কিন্তু আমাদের রাজপুত্র মালিকের সামনে হাজির হতেন আলাদাভাবে যেন তিনি রবকে দেখতে পেতেন। কেউ তার সেজেগুজে নামাজে যাওয়ার বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, দেশের প্রধান আপনাকে ডাকলে আপনি কিভাবে যাবেন? আমাকে তো ডেকেছে তার চাইতে বড়, অনেক বড়, এই মহাবিশ্বের সৃষ্টিকর্তা, মহান প্রভু। আমি কীভাবে অগোছালোভাবে যাই...?

আমাদের রাজপুত্রকে দুর্বল করার জন্য তাকে খুন করার কয়েকদিন আগে তার আইনজীবী ও আদরের পুত্র ব্যারিস্টার আরমানকে গুম করে ইসলামের দুশমনরা। যাতে তিনি সরকারের চাপে নতি স্বীকার করে প্রাণভিক্ষা চান। আমাদের নেতা মীর কাসেম আলীকে এতটুকু টলানো যায়নি। কারণ তিনি সূরা তাওবার ২৪ নং আয়াত নিজে মুখস্ত করেছেন, আমাদের মুখস্ত করিয়েছেন।

কুরআন মুখস্ত তো অনেকে করে। কিন্তু জীবন দিয়ে, প্রাণপ্রিয় সন্তানকে জালিমের আহার বানিয়ে সেই মুখস্তের মর্যাদা কয়জন রাখতে পারে। আমাদের সাইয়েদ শহীদ মীর কাসেম আলী সেটা পেরেছেন। আল্লাহু আকবার! এটা মহান আল্লাহর দয়া। তিনি ইব্রাহিম খলিলুল্লাহর মতো দৃঢ় ঈমান আমাদের নেতাকে দান করেছেন। আলহামদুলিল্লাহ!

সেই থেকে তাঁর ছেলের খবর আমরা এখনো জানিনা! আল্লাহ তায়ালা ব্যারিস্টার আরমানকে সালামতে রাখুন। আমাদের কাছে সুস্থতার সাথে ফিরিয়ে দিন।

প্রাণভিক্ষা চাইতে বলায় আমাদের নেতা বলেন,
"রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাওয়ার প্রশ্নই আসেনা! রাষ্ট্রপতি ক্ষমা করার কে! আমি কেন রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাইবো? বরং, রাষ্ট্রপতির উচিত আমার কাছে ক্ষমা চাওয়া।

৭ বছর আগে আজকের এই দিনে আমাদের রাজপুত্র তার প্রভুর কাছে, তার মালিকের কাছে চিরদিনের জন্য চলে গিয়েছেন। আজকের এই দিনে আমাদের রাজপুত্র মহান প্রভুর মেহমান হয়েছেন। মহান রাব্বুল আলামীন শহীদ মীর কাসেম আলীর প্রতি রহমত দান করুন। তাঁকে দুনিয়া ও আখিরাতে সম্মানিত করুন।

#MirQuasemAli
#WeAreMirQuasemAli

পঠিত : ৩৪৪ বার

মন্তব্য: ০