Alapon

সাহারা খাতুনের পরিচিতিও তাকে রক্ষা করতে পারলো না...

বাসায় গিয়ে দেখা গেল দেয়ালে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুনসহ সরকারের অনেক গুরুত্বপূর্ণ লোকের সঙ্গে তোলা পারিবারিক ছবি টাঙানো। কত মানুষের সাথে দহরম মহরম ছিল। ছিল অনেক প্রভাব প্রতিপত্তি। কিছুই তাকে রক্ষা করতে পারেনি সরকারি গুম বাহিনী থেকে।

বলছি এক ধনাঢ্য ব্যবসায়ীর কথা। থাকেন বসুন্ধরা আবাসিকে। তিনি একাই সংসার পরিচালনা করতেন। জাহাজ ভাঙ্গা শিল্প, তথ্য প্রযুক্তি ব্যবসাসহ বহু ব্যবসার সাথে তিনি জড়িত ছিলেন।

পরিবারটির প্রাণ ছিলেন সজল চৌধুরী। তার স্ত্রী গত হয়েছেন। মা ও ছেলেকে নিয়ে থাকতেন। সম্পত্তি, ব্যবসা, বাসার বাজার সবই তিনি করতেন। মা দেলোয়ারা কিংবা কিশোর ছেলের কাছে কোনো টাকাই থাকত না।

সজলের দুটি গাড়ি থাকলেও সেগুলোর কোনো চালক নেই। সজলের মা দেলোয়ারার কাছে পুলিশের কাছে যাওয়ার মতো গাড়ি ভাড়ার টাকাও নেই। এমনকি বাসায় পর্যাপ্ত খাবারও নেই। বাসায় কিছু চাল আর এক গ্যালন তেল রয়েছে বলে জানান।

রোববারের অপহরণ ঘটনার বর্ণনা দিয়ে দেলোয়ারা বলেন, সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা থেকে আটটা নাগাদ হবে। তাঁরা বাড়ি বদলের জন্য জিনিসপত্র গোছগাছ করছিলেন। ট্রাকের চালক এসেছে বলে নিরাপত্তাকর্মী এসে জানালেন। এ সময়ই ১৫-১৬ জন সাদাপোশাকের লোক হুড়মুড় করে বাসায় ঢুকে পড়ে। তারা নিজেদের ‘ডিবির লোক’ বলে পরিচয় দেয়। বাসায় ঢুকেই তারা সজলকে বেঁধে ফেলে মারধর করে। সজল তখন চিৎকার করে বলছিলেন, ‘মা আমারে বাঁচাও, আমারে মাইরা ফেলব।’

নিজের অসহায়ত্বে কেঁদে ফেলেন দেলোয়ারা। বলেন, ‘আমি আর পারি ষণ্ডামার্কা এতোগুলান লোকের সঙ্গে। চার-পাঁচ মিনিটের মধ্যে আমার পোলাডারে নিয়া গেলো। কিন্তু তাদের পরনে ডিবির কোটি জ্যাকেট ছিল না। আমি তাদের কইছি তোমরা ডিবি না, গুণ্ডা। কিন্তু আটকাইতে পারি নাই।’

বাড়ির অন্য ঘরে তখন সজলের স্কুলপড়ুয়া ছেলে ঘুমাচ্ছিল। সে কিছুই টের পাওয়ার আগেই সজলকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়।

সেদিনের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বাড়িটির নিরাপত্তারক্ষী মো. এমদাদ বলেন, সন্ধ্যার দিকে বাসা বদলের জন্য ট্রাকের চালক এসেছিলেন। এ সময়ই খোলা দরজা দিয়ে কয়েকজন বাসায় ঢুকে দোতলায় সজলের বাসায় উঠে যায়। কিছুক্ষণের মধ্যেই তারা হাতকড়া দিয়ে সজলকে বেঁধে নিচে নামিয়ে অপেক্ষমাণ দুটি মাইক্রোবাসে উঠে চলে যায়।

দেলোয়ারা কাঁদতে কাঁদতে বলেন, অপহরণরে পর তিনি ভাটারা থানায় ছুটে যান। কিন্তু থানার পুলিশ তাঁদের জিডিও নেয়নি। তারা ডিবি বা র‍্যাবের কার্যালয়ে খুঁজতে যেতে বলে। এর পরদিন দেলোয়ারা মিন্টো রেডে ডিবির কার্যালয়ে গেলেও ভেতরেই ঢুকতে পারেননি। বাইরে থেকেই তাঁকে ও তাঁর নাতিকে বিদায় দেওয়া হয়েছে। র‍্যাব-১-এর কার্যালয় থেকেও কোনো সাড়া দেওয়া হয়নি। অপহরণকারীরা যাওয়ার সময় সজলের মুঠোফোন বা অন্য কোনো কিছুই নেয়নি। মঙ্গলবার রাতে ভাটারা থানা পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) শাহীন মোহাম্মদ আমানুল্লাহ বাসায় এসে সজলের একটি মুঠোফোন নিয়ে গেছেন।

তবে গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে ভাটারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম কামরুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, এ বিষয়ে তাঁর কাছে কেউ অভিযোগ করেনি। তিনি বিষয়টি জানেনও না। এসআই শাহীন ওই বাসায় গিয়েছিলেন জানালে ওসি বলেন, তিনি শাহীনের কাছ থেকে জেনে এ বিষয়ে জানাবেন।

যোগাযোগ করা হলে এসআই শাহীন প্রথম আলোকে বলেন, তিনি ধরে নিয়ে যাওয়ার খবর শুনে সেখানে গিয়েছিলেন। তদন্তের জন্য সজল চৌধুরীর দুটো মুঠোফোনই আনতে চেয়েছিলেন। কিন্তু গিয়ে দেখেন তাঁর কিশোর ছেলে একটি মুঠোফোনের সিমকার্ড খুলে ব্যবহার করা শুরু করেছে। পরে তিনি একটি ফোনই নিয়ে আসেন।

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলেও ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের পক্ষ থেকে কিছু জানানো হয়নি।

সজল চৌধুরীর বাসার দেয়ালে ছবি দেখে যোগাযোগ করা হয় সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুনের সঙ্গে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, সজলের মা দেলোয়ারা মহিলা আওয়ামী লীগ করতেন। সজলও তাঁর কাছে মাঝেমধ্যে আসতেন। তবে তাঁকে ধরে নিয়ে যাওয়ার পর কোনো মামলা বা সাধারণ ডায়েরি (জিডি) হয়নি শুনে অবাক হন সাহারা খাতুন। তিনি বিষয়টি দেখবেন বলে জানান।

১১ তারিখ রোববার ডিবির লোকজন তাকে তুলে নিয়ে গেল...

ছোটবেলায় ডাইনীর গল্প শুনেছি। নিজেরাই ডাইনীর কবলে পড়ে যাব ভাবতে পারিনি। প্রতিদিনই তরতাজা মানুষ খেয়ে নিচ্ছে।

পঠিত : ৭৬৭ বার

মন্তব্য: ০