Alapon

হে বাঙাল সমাজ! সত্যিকারের পাঠক হও, অন্ধ ভক্ত বা মুরিদ হইও না।

লেখক হুমায়ূন আহমেদ এর বইয়ের গঠনমূলক সমালোচনা করবেন, তাহলেই সর্বনাশ। আপনার জ্ঞান-গরিমার জাত কূল নিয়ে টানা-টানি শুরু হবে।

হুমায়ূন আহমেদ এর ভক্তকূল আপনার উপর তৃতীয় বিশ্ব যুদ্ধের ন্যায় ঝাপিয়ে পড়বে। বলবে, ‘ব্যাটা সাহিত্য বোঝোস! সাহিত্য কী জানোস! স্যারের বই কয়টা পড়ছোস। আইছে পন্ডিত। নিজের চরকাল তেল দে!’

তেল দিতে দিতে আহমদ ছফার বই নিয়ে দু একটা সমালোচনা করবেন,তাহলেই আপনার উপর বজ্রপাত ঘটবে।

আহমদ ছফার ভক্তকূল বজ্রপাতের ন্যায় ধারালো,ঝাঁঝালো এবং যন্ত্রনাময় শব্দ নিয়ে আপনার উপর হামলে পড়বে। আপনাকে পুড়িয়ে ছারখার করে দিতে চাইবে। কেউ কেউ বলবে, ‘ঐ ব্যাটা, তাত্ত্বিক বিষয় বোঝোস? তোর মাথায় ঘিলু আছে তো? লাইফে কয়টা বই পড়ছোস যে, আহমদ ছফার বইয়ের সমালোচনা করতে আইছোস?’

স্মৃতির পাতা হাতড়িয়ে পঠিত বইয়ের সংখ্যা গুনতে গুনতে আমি ইসলামী সাহিত্যের দিকে আসি। ইদানিংকালে বেশ কিছু তরুণ লেখক, ইসলামি সাহিত্যে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেছেন। কিন্তু তাদের বই নিয়ে একটা সমালোচনা লিখবেন তো, আপনার ঈমান আমল নিয়ে টানাটানি শুরু করবে। আপনার আকীদা নিয়ে গভীর অনুসন্ধান শুরু হবে।

কেউ কেউ আগবাড়িয়ে বলবে, ‘এই ব্যাটা নিশ্চয়ই নাস্তিক নয়তো শাহবাগী।’

প্রখ্যাত আইরিশ কবি টি,এস এলিয়ট তাঁর ‘ট্র্যাডিশান এন্ড ইন্ডিভিজ্যুয়াল ট্যালেন্ট’ নামক প্রবন্ধে বইয়ের সমালোচনা নিয়ে দারুণ কিছু কথা বলেছিলেন।

তিনি বলেছিলেন, ‘আমাদের অবশ্যই মনে রাখতে হবে, সমালোচনা শ্বাস-প্রশ্বাসের মতই অনিবার্য। আমরা যখন কোন বই পড়ি, তার বিষয়ে আমাদের মনে যে ধারণা জন্মায় তা অবশ্যই প্রকাশ করতে হবে। এই অনুভূতি প্রকাশে কখনোই দ্বিধা করা উচিত নয়।’

টি,এস এলিয়ট সাহেবের এসব ভদ্র কথা আমাদের বাঙাল পাঠকদেরকে যে কখনোই নিয়ন্ত্রন করতে পারবে না, তা আমি হলফ করে বলতে পারি।

একটা সত্য কথা কি জানেন?
আমরা বাঙালরা খুব ভালো পাঠক হতে না পারলেও, আমরা পৃথিবী শ্রেষ্ঠ পাঠক মুরিদ। বাঙালের ন্যায় মুরিদ জগতে আর একটি জাতিও আছে কীনা আমার বিস্তর সন্দেহ! হে বাঙাল সমাজ! সত্যিকারের পাঠক হও, অন্ধ ভক্ত বা মুরিদ হইও না।

পঠিত : ৭৮১ বার

মন্তব্য: ০