Alapon

‘৪১’ আবার ফিরে আসুক


১৯২৪ সাল। মুসলিমরা কি যেন হারিয়ে ফেলেছে। মূল্যবান সম্পদ হারিয়ে ফেলছে। অভিভাবক। আস্থা। উসমানী খেলাফতের পতন। এর আগ থেকে আঁচ করা যাচ্ছিল- এমন কিছু একটাই হবে। কেননা তাঁরা তাঁদের আদর্শ-উদ্দেশ্য ভুলে গিয়েছিল। তাঁরা বিলিসিতায় মত্ত হয়েছিল। পুরো মুসলিম জাতি বিভক্ত হয়ে গেল বিভিন্ন পতাকা হাতে। জাতীয়তাবাদ। এই পতাকার ঝাণ্ডা অন্তরের গভীর থেকে গভীরে প্রোথিত। এর সম্মান অনেক; এটা গর্ব,এটাই তাঁদের অহংকার এবং এটাই নাকি মুসলিম ঐতিহ্য!

ভারতীয় উপমহাদেশ। তখন আমরা ইংরেজদের শাসনে। মুসলিমরা তাঁদের আমলে সন্তুষ্ট ছিলে না। শাহ আব্দুল আজিজ রহিমাহুল্লাহর ইংরেজ বিরোধী ফতোয়া তার বড় প্রমান। আলেমরা সংগ্রামী ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়। সায়েদ আহমেদ শহিদ,শাহ আব্দুল আজীজ, শায়খুল হিন্দ মাহমুদুল হাসান, আকরাম খাঁ প্রমুখ ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে ছিল এবং এর কারণ ছিল ইসলামী খেলাফত কায়েম। তৎকালীন জমিয়তে ওলামায়ে হিন্দ প্রথমদিকে কংগ্রেসের সাথে জোট করলেও পরবর্তীতে আলেমদের একাংশ বুঝতে পারে মুসলিমদের উদ্দেশ্য এর দ্বারা হাসিল হবে না। এ বিষয়ে দেখা দেয় আলেমদের মাঝে মতের ভিন্নতা। একদিকে একদল আলেম চাচ্ছিলেন অখণ্ড ভারত আবার অন্যদিকে পাকিস্তান-ভারত দুই দেশ যারা চাচ্ছিলেন উনারাও ছিলেন বড় মাপের সব আলেম। মুসলিম লীগও (প্রতিষ্ঠাঃ১৯০৬) চাচ্ছিল পাকিস্তান রাষ্ট্র গঠন করা হোক। অখণ্ড ভারতের পক্ষের আলেমদের বক্তব্য ছিল, আগে স্বাধীনতা আসুক তারপর ইসলামী খেলাফতের কথা চিন্তা করা যাবে। কিন্তু অন্যদের কথা হল একেবারেই কেন আমরা ইসলামী খেলাফত চাচ্ছি না?

১৯৪৫ সাল। কলকাতায় পাকিস্তান পক্ষের ওলামাদের সম্মলনে গঠন করা হয় জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম। এতে শাব্বির আহমেদ উসমানী,মুহাম্মাদ আলী জিন্নাহসহ আরো অনেকেই উপস্থিত ছিল। এভাবে জমিয়তে ওলামায়ে হিন্দ দু’ভাগে ভাগ হয়ে পড়ে। জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের সভাপতি করা হয় দেওবন্দের সাবেক মুহতামিম শাব্বির আহমেদ উসমানীকে।

১৯৪০ সালে পাকিস্তান রাষ্ট্র গঠন করার প্রস্তাব গৃহীত হয়। মুসলিম লীগ পাকিস্তানে ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার কথা বলছিল। এমন সময় আত্মপ্রকাশ ঘটে মাওলানা মওদূদীর । তিনি বুঝতে পেরেছিলেন ইসলামী খেলাফতের কথা বললেও মুসলিম লীগের দ্বারা ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। তিনি অনেক আগে থেকেই জাহিলিয়্যাতের প্রতিটি ব্যবস্থাকে ক্ষুরধার লিখনীর মাধ্যমে ভুল প্রমাণপূর্বক ইসলামী সমাধান দেখিয়ে দেন। পাশাপাশি তিনি তৎকালীন অখণ্ড ভারতের বিরুদ্ধে লেখালেখি চালিয়ে যান। “ইসলাম ও জাতীয়তাবাদ” তখনই লেখা।

১৯৪১ সাল। জামায়েত ইসলামী গঠন করেন মাওলানা মওদূদী। তিনি বুঝে গিয়েছিলেন ইসলামী রাষ্ট্রের জন্য যেসব উপায় উপাদান দরকার তা মুসলিম লীগের মধ্যে অনুপস্থিত। উনার লেখা জাতীয়তাবাদ বিরোধী এবং অবাস্তব ধারণা বিরোধী। অখণ্ড ভারতের স্বপক্ষের লোকেরা উনার বিপক্ষে লেগে যায়। যা “ইসলাম ও জাতীয়তাবাদ” বইয়ের লেখায় ফুটে উঠেছে। আল্লামা ইকবাল বলতেন, “মওদূদী এই কংগ্রেসী মুসলমানদের দেখে নিবেন” (আজাদী আন্দোলনে আলেম সমাজের ভূমিকা,জুলফিকর আহমেদ কিসমতি, ১১৭)

মাওলানা উনার লেখা এবং বক্তব্য অব্যাহত রাখেন। তিনি বুঝাতে চেয়েছিলেন জাতীয়তাবাদ কিংবা মুসলিম লীগ দিয়ে এদেশের মুসলিমদের ইচ্ছার প্রকাশ ঘঠবে না। বরং আমরা আবারও জাতীয়তাবাদের গণ্ডিতেই আবদ্ধ হব। এটা হবে নামে ইসলামী রাষ্ট্র। তাঁর কথায়ঃ
“ইসলামী রাষ্ট্রের নাম মুখে এরা উচ্চারণ করে বটে, কিন্তু যে শিক্ষা দীক্ষায় বেচারাদের মস্তিস্ক গঠিত হয়েছে, তা থেকে ঘুরে ফিরে কেবল সেই 'জাতীয় রাষ্ট্রের' চিত্রই বার বার তাদের চোখের সামনে ভেসে উঠে। জ্ঞানত কিংবা অজ্ঞতাবশত এরা কেবল জাতি পূজার (Nationalistic Ideology) বেড়াজালেই ফেঁসে যায়। তারা যে পরিকল্পনা ও কর্মসূচীর কথাই চিন্তা করুক না কেন, তা করে থাকে জাতীয়তাবাদেরই ভাবধারার ভিত্তিতে।” (ইসলামী রাষ্ট্র কীভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়,১১)

১৯৪৭ সাল। পাকিস্তানের জন্ম হয়। মুহাম্মাদ আলি জিন্নাহর মতে পাকিস্তান রাষ্ট্রের উদ্দেশ্যঃ
“আমাদের পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য হচ্ছে, পৃথিবীর সামনে ইসলামে স্বাধীনতা, ভ্রাতৃত্ব ও সমতার যে মূলনীতি ও দর্শন রয়েছে-তার প্রায়োগিক দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করা।” (দ্বীন কায়েমের নববী রূপরেখা,ইসরার আহমেদ,১২)
কিন্তু মাওলানার কথাই সত্য হল। তাঁরর কথায়ঃ
“জাতীয়তাবাদী চিন্তাধারা দিয়ে ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়না। (ইসলামী রাষ্ট্র কীভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়,১৯)
নামে ইসলামী রাষ্ট্র হল পাকিস্তান। এবার বুঝা গেল যে, মাওলানার জাতীয়তাবাদ বিরোধীতার কারণ। পাকিস্তান বরাবরই আশা দেখিয়ে গেল যে, ইসলামী শাসন কায়েম করবে। কিন্তু সেই আশায় গুঁড়ে বালি। বরং তাঁরা ইসলাম প্রেমিক মুসলিমদের বিরুদ্ধে লেগে গেল এবং অবস্থা এমন দাঁড়াল যেন পাকিস্তান ইসলামী(?)গণতন্ত্রের জন্যই জন্মলাভ করেছে।
করাচীর জাহাঙ্গীর পার্কে মাওলানা ১৯৪৮ সালে “আদর্শ প্রস্তাব” গ্রহণ করার আহবান্ন জানানেলও তা গৃহীত হয়নি। পরবর্তীতে ১৯৫১-এর জানুয়ারীতে ইসলামী শাসনতন্ত্র ২২ দফা প্রস্তাব প্রদান করা হলেও তা গৃহীত হয়নি।

১৯৫১ সাল। জামায়েত ইসলামী এবার নির্বাচনে অংশগ্রহণ করল। তেমন ভালো ফলাফল করতে পারেনি। এমতাবস্থায় এই কাজের পর্যালোচনা দরকার হয়ে পড়ে। শূরার একাংশ নির্বাচনে অংশগ্রহন করাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেন। কেন্দ্রীয় সভায় কিছুটা বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। যা মোকাবেলা না করলে কাজ সামনে নিয়ে যেতে সমস্যা হচ্ছিল।

১৯৫৭ সাল। শূরার অধিবেশনে সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে নির্বাচনে অংশগ্রহণ সঠিক বলে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। যিনি জাহিলিয়্যাতের বিরুদ্ধে ক্ষুরধার লিখনী দিয়ে একসময় এক বিপ্লবের পথ দেখিয়েছেন; তিনিই এবার ইসলামী (?) গণতন্ত্রের পথে হাঁটা শুরু করলেন। শূরার গুরুত্বপূর্ণ কিছু সদস্য তা মেনে নিতে পারেননি। উনাদের বেশিরভাগ অংশ বের হয়ে যায়। এখানে গণতন্ত্র নিয়ে আলোচনা করা উদ্দেশ্য নয়। এ আলোচনার স্থান অন্য কোথাও করা যাবে, ইনশা আল্লাহ!
তিনি নিয়মতান্ত্রিক পথ বেঁছে নিলেন। এই নিয়ম তো ইসলামের নয়। এরপর থেকে শুরু জামায়েতের সকল কাজে রাজনীতি নিয়ে আসার কাজ। আদত এটা ছিল গোলক ধাঁধা। অথচ খেলাফত কায়েমের থেকেও মূখ্য প্রশ্ন ছিল আমাদের ইমানের প্রশ্ন; আমাদের স্বকীয়তার প্রশ্ন। এই গোলক ধাঁধা থেকে আর বের হয়ে আসতে পারেনি জামায়াত!

১৯৭০ সাল। পাকিস্তান বরাবরই অত্যাচার চালিয়ে আসছিল বাঙ্গালীদের ওপর। এটা যেমন সত্য কথা তেমনি বন্ধু রাষ্ট্র চাচ্ছিল নিজেদের প্রভাব বিস্তার করতে। ৭০-এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জয়লাভ করে। কিন্তু পাকিস্তান সরকার কোনো অমোঘ কারণে তাদের হাতে ক্ষমতা দিতে বিলম্ব করে। এদিকে জামায়েত ইসলামী বারবার সরকারকে আহ্বান করে আওয়ামী লীগের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে। কিন্তু সরকার যেন দেশ বিভাগের কাজ আরো এগিয়ে দিল।
১৭ মার্চ পূর্ব পাকিস্তান জামায়াতে ইসলামীর আমীর অধ্যাপক গোলাম আযম এক বিবৃতিতে বলেন,
“আমি পরিস্থিতি অনুধাবন করা এবং যে দলের প্রতি জনগণ পূর্ণ আস্থা স্থাপন করেছে, সে দলের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের উদ্দেশ্যে প্রয়োজনীয় কাজ সমাপ্ত করার জন্য প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। কোন শাসনতান্ত্রিক সমস্যাই ক্ষমতা হস্তান্তরকে বিলম্বিত করতে পারবে না। জনগণের সরকারের চেয়ে কেউই জাতির উত্তম সেবা করতে পারে ন। … আমি জনাব ভূট্টোর অসৎ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রয়াসের প্রতি প্রেসিডেন্টের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।" ( জামায়াতে ইসলামীর ইতিহাস,খন্ডঃ২,পৃঃ১৮৯)

১৯৭১ সাল। ২৫ শে মার্চ মুজিবুর রহমান সাহেবকে আটক করার পর একটি মহল দেশকে যুদ্ধের দিকে নিয়ে যায়। আগে যেখানে লড়াই ছিল বিজয়ী দলের ক্ষমতা গ্রহণের তা এবার দেশ বিভাগের লড়াই হয়ে গেল। একটার পর একটা উত্তেজিত সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। আর এদিকে এই মহল তাতে আগুন জ্বালিয়েছে। জামায়েত ইসলামী বুঝতে পারে এ যুদ্ধ অধিকার আদায়ের নয় বরং দেশকে বিক্রি করার চক্রান্ত। তাছাড়া ইসলামী মূল্যবোধ এবং মুসলিম জাতীয়তার প্রশ্ন চলে আসে। ফলে জামায়েত ইসলামী কখনোই এ যুদ্ধকে সমর্থন জানায়নি। আবার উনারা পাকিস্তান সরকারের অন্যায়ের বিরোধিতা জারি রাখে। উনাদের উদ্দেশ্য ছিল দেশকে কথিত বন্ধুর হাতে সঁপে দেওয়ার হাত থেকে রক্ষা করা। এই পক্ষ নিরপেক্ষতার নয়-তা আমাদের বুঝতে হবে।
মুসলিম জাতীয়তার কথা চিন্তা করে অনেকেই নামেন পাকিস্তান রাষ্ট্রকে রক্ষায়। তাঁরা সরকারের অত্যাচার যেমন মেনে নিতে পারেননি তেমনি দেশবিভাগকেও মানতে পারেননি। এখানে একটা বিষয় মনে করিয়ে দেওয়া দরকার, পাকিস্তান আমাদের খেলাফতের আশাপূরন করবে এ আশা মুসলিমদের মনে ছিল। তাই উনারা কোনোভাবেই পাকিস্তান সরকারকে মেনে নিতে পারেননি। তাঁরা সর্বদা পাকিস্তান সরকারকে সতর্ক করেছেন এবং পাকিস্তান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য পূরন করার জন্য তাগিদ দিয়েছেন। তাঁরাই দেশবিভাগকে মেনে নিতে পারেনি। অন্যদিকে আরেকটি দল ছিল যারা সরকারের পক্ষ হয়ে দেশবিভাগের বিরোধীতা করেছে তবে প্রথমদলের সাথে এদের উদ্দেশ্য এবং পথ দুটিই আলাদা; এরা ছিল দুষ্কৃতিকারী।

জামায়েত ইসলামী মনে-প্রানে পাকিস্তান রাষ্ট্রের বিভক্তিকে বিরোধিতা করেছে। আদতে এমনি হওয়া উচিত। কেননা নিজের দেশকে বিভক্ত করতে কে চাইবে? মুসলিম ভাইদের হত্যা করতে কোন মুসলিম চাইবে? নিজের দেশকে চক্রান্তকারীদের হাতে কে তুলে দিতে চাইবে?
ইসলামী রাষ্ট্র কীভাবে প্রতিষ্ঠিত হয় বইয়ের মূল্যায়নেঃ
“১৯৪০ সালে যখন এই বক্তৃতাটি (ইসলামী হুকুমাত কিস্তারাহ কায়েম হোতি হ্যায়) উপস্থাপন করা হয়, তখন এই উপমহাদেশের মুসলমানদেরকে নিছক একটি জাতি মনে করে তাদেরকে জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে সংগঠিত করার পরিণতি কারো বুঝে আসেনি বটে, কিন্তু ১৯৭১ সালে যখন ভাষাভিত্তিক জাতীয়তাবাদ মুসলমানকে বিভক্ত করে দিলো এবং স্বয়ং মুসলমানের হাতে মুসলমানের ইতিহাসের নজীরবিহীন গণহত্যা অনুষ্ঠিত হলো, তখন বিষয়টি সকলের কাছে দিবালোকের মতো স্পষ্ট হয়ে গেলো। অতঃপর ১৯৭২ সালে বিশ্ববাসী সিন্ধুর ভাষা ভিত্তিক জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের চেহারাও দেখে নিল। এ আন্দোলনের দাবী ছিলো সিন্ধুভাষী সকল মুসলমান অমুসলমান এক জাতি। আর সেখানকার যেসব মুসলমান সিন্ধু ভাষী নয়, তারা ভিন্নজাতি এবং তাদের সিন্ধুতে থাকার অধিকার নেই” (ইসলামী রাষ্ট্র কীভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়,১১,টীকা দ্রষ্ঠব্য)

১৯৭১-২০০৭ সাল। এ সময়ে জামায়েত ইসলামী নিজেকে করেছে দেশের হাল অনুযায়ী পরিবর্তন। তথাকথিত নিয়মতান্ত্রিক ও গণতান্ত্রিক দল হওয়ার জন্য। স্বাধীনতার প্রশ্নে তুলে ধরেছেন নিজেদের ভুল। আবার তুলে ধরেছেন ভারতের হিন্দুত্ববাদী রাষ্ট্র কায়েমের চিন্তা। আবার উনারাই ৭১-এর প্রশ্নে উনাদের সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক ভুল ছিল বলে বেড়াচ্ছেন। কোনটা আসল কথা ৭১-এ ভারতের বিরোধীতায় গিয়ে উনারা ভুল কাজ করেছেন নাকি ৭১-এ দেশবিভাগ ও ভারতের অঙ্গরাজ্য বানানোর হাত থেকে রক্ষার জন্য যুদ্ধের বিরোধীতা?
বর্তমান। জামায়েত ইসলামীর পূর্বের ইতিহাস আর এখন উনাদের দিকে তাকালে মনে হবে যেন, এটা ১৯৪১-এ মহান উদ্দেশ্য নিয়ে গঠিত জামায়াত -এ জামায়াত নয়। উনারা যেন পথ হারিয়ে ফেলেছেন। ১৯৫৭-এর পর একটার পর একটা ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তথাকথিত নিয়মতান্ত্রিক হওয়ার জন্য। কিন্তু এই নিয়ম না উনারা পালন করতে পেরেছেন আর না তা কোনো দিন পালিত হয়েছে অন্যদের দ্বারা। গণতন্ত্র নিয়ে আলোচনা করা এইখানে উদ্দেশ্য নয়। এখানে এটাই উদ্দেশ্য যে, জাতীয়তাবাদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে যে দলটির উত্থান হয়েছিল তাঁরা আজ জাতীয়তাবাদের নকল মুখোশ পরেছেন। এই চেষ্টায় না উনারা ইসলামী হতে পেরেছেন আর না জাতীয়তাবাদী হতে পেরেছেন। স্বাধীনতা দিবস পালন করে কি জামায়েত ইসলামী এই দিনকে স্বাধীনতার দিন বুঝাতে চাচ্ছেন? নাকি উনাদের মতে ৭১-এ ভারত ও কুচক্রী লোকদের হাতে এ দিনে তুলে দেওয়া হয়েছে বাংলাদেশকে? জামায়েত ইসলামী সর্বদা ভারতের হিন্দুত্ববাদীতার ভয় দেখিয়েছে আমাদেরকে। দেশবিভাগের ফলে ইসলামী আন্দোলন কতটা বাঁধাগ্রস্ত হয়েছে তা অধ্যাপক গোলাম আযম সাহেবের “জীবনে যা দেখলাম” বইয়ে উঠে এসেছে। বর্তমান জামায়াত বাংলাদেশ ‘আমাদের নেতাদের সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক ভুল ছিল’ ‘মুক্তিযুদ্ধের সময়কার লোকদের ফাঁসি হয়ে গিয়েছে’ ‘ জামাতের বর্তমান নেতাদের বেশিরভাগ ৭১-এর পরে জন্ম’ এসব বলে নিজেদের কলঙ্ক মুক্ত করতে চাচ্ছেন দেশবাসী ও মিডিয়ার সামনে। কিন্তু ঠিকই সিরাজুল হক সাহেব আল বদর-আল শামসের প্রশংসা করে ভিডিও দেয় আর আমরা তাঁর প্রশংসা করি। এ রকম দ্বিমুখী নীতি কেন? তবে কি আমাদের যে দেশে থাকি সে দেশের আদর্শের সাথে নিজেদের আদর্শ বিলীন করে দিয়ে বক্তব্য দিতে হবে?

পরিশেষে বলতে চায় , জামায়েত ইসলামীর চেতনার মূলে প্রোথিত রয়েছে ইসলাম। আর মূলে ফিরে না গেলে জামায়াত নিজের অস্তিত্ব সংকটে পড়বে। যেদিন জামায়াত সিদ্ধান্ত নিবে আমরা নিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নয় বরং ইসলামের দেখানো পথে হাঁটবো সেদিন জামায়াত হবে আল্লাহর কাছে প্রিয় দল। হয়ত তাকে মৌলবাদী বলবে আমেরিকা কিংবা লক্ষ্যে পৌঁছুতে অনেক সময় লেগে যাবে কিন্তু আল্লাহর রহমতে জামায়াত হবে স্থিতিশীল এবং মুসলিমদের প্রতিনিধিত্বকারী। আমরা চায়, আবার ১৯৪১ ফিরে আসুক। আমরা মনে করি, জামাত সেদিন মুসলিম ভ্রাতৃত্বের কথা চিন্তা করে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছিল এবং বাংলাদেশের ইসলাম প্রিয় নাগরিকরা এটাই উপলব্ধি করছে যে, ৭১-এ যুদ্ধ করা মুসলিমদের জন্য আত্মঘাতী ছিল এবং জামায়াত ও পাকিস্তান রক্ষায় যারা নেমে পড়েছিল তাঁরা ছিল প্রকৃত দেশপ্রেমিক ও মর্দে মুজাহিদ।


নোটঃ
১। এটা অনেক বড় একটা লেখার ছোট্ট একটা অংশ। বড় লেখাটি হারিয়ে ফেলেছি। এখন যতটুকু মনে পড়েছে তা এখানে লেখার চেষ্টা করলাম। আগের লেখাটি ছিল আরো সমৃদ্ধি। ইনশা আল্লাহ, এই লেখাটিকে আরো সমৃদ্ধি করব।
২। লেখার যত ভুল রয়েছে তা আমার ও শয়তানের পক্ষ থেকে এবং সকল ভালো কথা আল্লাহর পক্ষ থেকে। কোনো ভুল পরিলক্ষিত হলে আমাকে অবগত করলে খুশি হব।
হে আল্লাহ! আপনি আমার মাঝে এবং যারা এই লেখাটি পড়েছেন উনাদের মাঝে মুসলিম ভ্রাতৃত্ব বাড়িয়ে দিন। সকল ধরণের জাহিলিয়্যাত থেকে আমাদের মুক্ত করুন এবং একমাত্র আপনার সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য আপনার রাসূলের দেখানো পথে চলার তৌফিক দান করুন, আমীন!

মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম

পঠিত : ১৫৭ বার

মন্তব্য: ০